৯৫. আমি এইরূপ শ্রবণ করিয়াছি, একসময় ভগবান কুরুরাজ্যে কম্মাসধম্ম নামক নগরে অবস্থান করিতেছিলেন। আয়ুষ্মান আনন্দ ভগবানের নিকট উপস্থিত হইয়া তাঁহাকে অভিবাদনপূর্বক একপ্রান্তে উপবেশন করিলেন। পরে তিনি ভগবানকে এইরূপ বলিলেন, “ভন্তে, আশ্চর্য! অদ্ভুত! এই প্রতীত্য-সমুৎপাদ যেমন গভীর তেমনই গভীররূপে প্রতীয়মান হয়; অথচ আমার নিকট উহা অতি সুস্পষ্ট।”

আনন্দ, এরূপ কহিও না, এরূপ কহিও না। এই প্রতীত্য-সমুৎপাদ যেমন গভীর তেমনই গভীররূপে প্রতীয়মান হয়। ইহার অর্থ অবধারণ না করিয়া, ইহার অভ্যন্তরে প্রবেশ না করিয়া জনগণ জড়ীভূত গ্রন্থিল সূত্রগুলের ন্যায়, মুঞ্জা বল্বজ তৃণের ন্যায় হইয়া অপায় দুর্গতি বিনিপাতে প্রবেশপূর্বক সংসার অতিক্রম করিতে অসমর্থ হয়।

৯৬. আনন্দ, যদি তুমি জিজ্ঞাসিত হও “জরা-মরণের কোনো বিশেষ হেতু আছে কি?” তাহা হইলে তুমি বলিবে “আছে”। “জরা-মরণের হেতু কী?” এইরূপ প্রশ্ন হইলে, “জাতি-জরা-মরণের হেতু” এইরূপ বলিবে।

আনন্দ, যদি তুমি জিজ্ঞাসিত হও, “জাতির কোনো বিশেষ হেতু আছে কি?” তাহা হইলে তুমি বলিবে, “আছে”। “জাতির হেতু কী?” এইরূপ প্রশ্ন হইলে “ভব জাতির হেতু” এইরূপ বলিবে।

আনন্দ, যদি তুমি জিজ্ঞাসিত হও, “ভবের কোনো বিশেষ হেতু আছে কি?” তাহা হইলে তুমি বলিবে “আছে”। “ভবের হেতু কী?” এইরূপ প্রশ্ন হইলে “উপাদান ভবের হেতু” এইরূপ কহিবে।

আনন্দ, যদি তুমি জিজ্ঞাসিত হও, “উপাদানের কোনো বিশেষ হেতু আছে কি?” তাহা হইলে তুমি বলিবে “আছে”। উপাদানের হেতু কী? এইরূপ প্রশ্ন হইলে, “তৃষ্ণা উপাদানের হেতু”, এইরূপ কহিবে।

আনন্দ, যদি তুমি জিজ্ঞাসিত হও, তৃষ্ণার কোনো বিশেষ হেতু আছে কি?” তাহা হইলে তুমি বলিবে “আছে”। “তৃষ্ণার হেতু কী?” এইরূপ প্রশ্ন হইলে, “বেদনা তৃষ্ণার হেতু” এইরূপ কহিবে।

আনন্দ, যদি তুমি জিজ্ঞাসিত হও, “বেদনার বিশেষ কোনো হেতু আছে কি?” তাহা হইলে তুমি বলিবে “আছে”। “বেদনার হেতু কী?” এইরূপ প্রশ্ন হইলে, স্পর্শ বেদনার হেতু” এইরূপ কহিবে।

আনন্দ, যদি তুমি জিজ্ঞাসিত হও, “স্পর্শের বিশেষ কোনো হেতু আছে কি?” তাহা হইলে তুমি বলিবে “আছে”। “স্পর্শের হেতু কী?” এইরূপ প্রশ্ন হইলে, “নামরূপ স্পর্শের হেতু” এইরূপ কহিবে।

আনন্দ, যদি তুমি জিজ্ঞাসিত হও, “নামরূপের বিশেষ কোনো হেতু আছে কি?” তাহা হইলে তুমি বলিবে “আছে”। “নামরূপের হেতু কী?” এইরূপ প্রশ্ন হইলে, “বিজ্ঞান নামরূপের হেতু” এইরূপ কহিবে।

আনন্দ, যদি তুমি জিজ্ঞাসিত হও, বিজ্ঞানের কোনো বিশেষ হেতু আছে কি?” তাহা হইলে তুমি বলিবে “আছে”। “বিজ্ঞানের হেতু কী?” এইরূপ প্রশ্ন হইলে, “নামরূপ বিজ্ঞানের হেতু” এইরূপ কহিবে।

৯৭. “এইরূপে, আনন্দ, নামরূপ হইতে বিজ্ঞানের উৎপত্তি, বিজ্ঞান হইতে নামরূপের উৎপত্তি, নামরূপ হইতে স্পর্শ, স্পর্শ হইতে বেদনা, বেদনা হইতে তৃষ্ণা, তৃষ্ণা হইতে উপাদান, উপাদান হইতে ভব, ভব হইতে জাতি, জাতি হইতে জরা-মরণ, জরা-মরণ হইতে শোক, পরিদেবনা, দুঃখ, দৌর্মনস্য, অশান্তির উৎপত্তি হয়। এইরূপে এই সমগ্র দুঃখ স্কন্ধের উৎপত্তি হয়।

৯৮. ইহা উক্ত হইয়াছে যে, “জাতি হইতে জরা-মরণ উৎপন্ন হয়।” আনন্দ, ইহা এইরূপে বুঝিতে হইবে, যদি কাহারও কুত্রাপি কোনো প্রকার জন্ম না হয়, যথা দেবগণের দেবরূপে, গন্ধর্বগণের গন্ধর্বরূপে, যক্ষগণের যক্ষরূপে, ভূতগণের ভূতরূপে, মনুষ্যগণের মনুষ্যরূপে, চতুষ্পদগণের চতুষ্পদরূপে, পক্ষীগণের পক্ষীরূপে, সরীসৃপগণের সরীসৃপরূপে, অন্যান্য প্রাণীগণের তাহাদের রূপে জন্ম না হয়, তাহা হইলে সর্বতোভাবে জাতির অভাবে, জাতির নিরোধে, জরা-মরণের আবির্ভাব হইবে কি?

“ভন্তে, হইবে না।”

আনন্দ, সেই জন্যই জাতি জরামরণের হেতু, নিদান, সমুদয় এবং প্রত্যয়।

৯৯. “ইহা উক্ত হইয়াছে যে, “ভব হইতে জাতির উৎপত্তি হয়।” আনন্দ, ইহা এইরূপে বুঝিতে হইবে, আনন্দ, যদি কাহারও কুত্রাপি কোনো প্রকার “ভব” না হয়; যথা : কাম-ভব , অথবা রূপ-ভব , অথবা অরূপ-ভব , তাহা হইলে সর্বতোভাবে “ভবের” অভাবে, “ভবের” নিরোধে জাতির আবির্ভাব হইবে কি?

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

আনন্দ, সেই জন্যই “ভব” জাতির হেতু, নিদান, সমুদয় এবং প্রত্যয়।

১০০. ইহা উক্ত হইয়াছে যে, “উপাদান হইতে ভবের উৎপত্তি হয়।” আনন্দ, ইহা এইরূপে বুঝিতে হইবে, যদি কাহারও কুত্রাপি কোনো প্রকার উপাদান না হয়; যথা : কাম-উপাদান, দৃষ্টি-উপাদান শীলব্রত-উপাদান অথবা আবাদ-উপাদান, তাহা হইলে সর্বতোভাবে উপাদানের অভাবে, উপাদানের নিরোধে ভবের আবির্ভাব হইবে কি?

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

আনন্দ, সেই জন্যই উপাদান ভবের হেতু, নিদান, সমুদয়, এবং প্রত্যয়।

১০১. ইহা উক্ত হইয়াছে যে, “তৃষ্ণা হইতে উপাদানের উৎপত্তি হয়।” আনন্দ, ইহা এইরূপে বুঝিতে হইবে, যদি কাহারও কুত্রাপি কোনো প্রকার তৃষ্ণা না হয়; যথা : রূপ-তৃষ্ণা, শব্দ-তৃষ্ণা, গন্ধ-তৃষ্ণা, রস-তৃষ্ণা, স্পর্শ-তৃষ্ণা, ধর্ম-তৃষ্ণা , তাহা হইলে সর্বতোভাবে, তৃষ্ণার অভাবে, তৃষ্ণার নিরোধে উপাদানের আবির্ভাব হইবে কি?

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

আনন্দ, সেই জন্যই তৃষ্ণা উপাদানের হেতু, নিদান, সমুদয় এবং প্রত্যয়।

১০২. ইহা উক্ত হইয়াছে যে, “বেদনা হইতে তৃষ্ণার উৎপক্তি হয়।” আনন্দ, ইহা এইরূপে বুঝিতে হইবে, যদি কাহারও কুত্রাপি কোনো প্রকার বেদনা না হয়; যথা : চক্ষু-সংস্পর্শজ বেদনা, শ্রোত্র-সংস্পর্শজ বেদনা, ঘ্রাণ-সংস্পর্শজ বেদনা, জিহ্বা-সংস্পর্শজ বেদনা, কায়-সংস্পর্শজ বেদনা, মন-সংস্পর্শজ বেদনা, তাহা হইলে সর্বতোভাবে বেদনার অভাবে বেদনার নিরোধে তৃষ্ণার আবির্ভাব হইবে কি?

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

আনন্দ, সেই জন্যই বেদনা, তৃষ্ণার হেতু, নিদান, সমুদয় এবং প্রত্যয়।

১০৩. “এইরূপে, আনন্দ, বেদনা হইতে তৃষ্ণার উৎপত্তি হয়, তৃষ্ণা হইতে পর্যেষণা, পর্যেষণা হইতে লাভ, লাভ হইতে বিনিশ্চয় , বিনিশ্চয় হইতে ছন্দ-রাগ, ছন্দ-রাগ হইতে সংসক্তি, সংসক্তি হইতে পরিগ্রহ, পরিগ্রহ হইতে মাৎসর্য, মাৎসর্য হইতে আরক্ষ, আরক্ষ হইতে দণ্ড-গ্রহণ, শস্ত্র-গ্রহণ, কলহ-বিগ্রহ-বিবাদ-দ্বন্দ্ব পৈশুণ্য-মৃষাবাদ রূপ অনেক পাপ ও অকুশলের উৎপত্তি হয়।”

১০৪. ইহা উক্ত হইয়াছে যে, “আরক্ষ হইতে দণ্ড-গ্রহণ, শস্ত্র-গ্রহণ, কলহ-বিগ্রহ-বিবাদ-দ্বন্দ্ব পৈশুণ্য-মৃষাবাদ রূপ অনেক পাপ ও অকুশলের উৎপত্তি হয়।” আনন্দ ইহা এইরূপে বুঝিতে হইবে, যদি কাহারও কুত্রাপি কোনো প্রকার আরক্ষ না থাকে, তাহা হইলে সর্বতোভাবে আরক্ষের অভাবে আরক্ষের নিরোধে দণ্ড-গ্রহণ, শস্ত্র গ্রহণ, কলহ-বিগ্রহ-বিবাদ-দ্বন্দ্ব-পৈশুণ্য-মৃষাবাদ রূপ অনেক পাপ ও অকুশলের উৎপত্তি হইবে কি?

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

আনন্দ, সেই জন্যই আরক্ষ দণ্ড-গ্রহণ, শস্ত্র-গ্রহণ, কলহ-বিগ্রহ-বিবাদ-দ্বন্দ্ব-পৈশুণ্য মৃষাবাদ রূপ অনেক পাপ ও অকুশলের উৎপত্তির হেতু, নিদান, সমুদয় এবং প্রত্যয়।

১০৫. ইহা উক্ত হইয়াছে যে, “মাৎসর্য হইতে আরক্ষের উৎপত্তি হয়।” আনন্দ, ইহা এইরূপে বুঝিতে হইবে, যদি কাহারও কুত্রাপি কোনো প্রকার মাৎসর্য না থাকে, তাহা হইলে সর্বতোভাবে মাৎসর্যের অভাবে মাৎসর্যের নিরোধে আরক্ষের আবির্ভাব হইবে কি?

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

আনন্দ, সেই জন্যই মাৎসর্য আরক্ষের হেতু, নিদান, সমুদয় এবং প্রত্যয়।

১০৬. ইহা উক্ত হইয়াছে যে, “পরিগ্রহ হইতে মাৎসর্যের উৎপত্তি হয়।” আনন্দ ইহা এইরূপে বুঝিতে হইবে, যদি কাহারও কুত্রাপি কোনো প্রকার পরিগ্রহ না থাকে, তাহা হইলে সর্বতোভাবে পরিগ্রহের অভাবে পরিগ্রহের নিরোধে মাৎসর্যের আবির্ভাব হইবে কি?

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

আনন্দ, সেই জন্যই পরিগ্রহ মাৎসর্যের হেতু, নিদান, সমুদয় এবং প্রত্যয়।

১০৭. ইহা উক্ত হইয়াছে যে, “সংসক্তি হইতে পরিগ্রহের উৎপত্তি হয়।” আনন্দ, ইহা এইরূপে বুঝিতে হইবে, যদি কাহারও কুত্রাপি কোনো প্রকার সংসক্তি না থাকে, তাহা হইলে সর্বতোভাবে সংসক্তির অভাবে সংসক্তির নিরোধে পরিগ্রহের আবির্ভাব হইবে কি?

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

আনন্দ, সেই জন্যই সংসক্তি পরিগ্রহের হেতু, নিদান, সমুদয় এবং প্রত্যয়।

১০৮. ইহা উক্ত হইয়াছে যে, “ছন্দ-রাগ হইতে সংসক্তির উৎপত্তি হয়।” আনন্দ, ইহা এইরূপে বুঝিতে হইবে, যদি কাহারও কুত্রাপি কোনো প্রকার ছন্দ-রাগ না থাকে, তাহা হইতে সর্বতোভাবে ছন্দ-রাগের অভাবে ছন্দ-রাগের নিরোধে সংসক্তির আবির্ভাব হইবে কি?

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

আনন্দ, সেই জন্যই ছন্দ-রাগ সংসক্তির হেতু, নিদান, সমুদয় এবং প্রত্যয়।

১০৯. ইহা উক্ত হইয়াছে যে, “বিনিশ্চয় হইতে ছন্দ-রাগের উৎপত্তি হয়।” আনন্দ, ইহা এইরূপে বুঝিতে হইবে, যদি কাহারও কুত্রাপি কোনো প্রকার বিনিশ্চয় না থাকে, তাহা হইলে সর্বতোভাবে বিনিশ্চয়ের অভাবে বিনিশ্চয়ের নিরোধে ছন্দ-রাগের উৎপত্তি হইবে কি?

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

আনন্দ, সেই জন্যই বিনিশ্চয় ছন্দ-রাগের হেতু, নিদান, সমুদয় এবং প্রত্যয়।

১১০. ইহা উক্ত হইয়াছে যে, “লাভ হইতে বিনিশ্চয়ের উৎপত্তি হয়।” আনন্দ, ইহা এইরূপে বুঝিতে হইবে, যদি কাহারও কুত্রাপি কোনো প্রকার লাভ না থাকে, তাহা হইলে সর্বতোভাবে লাভের অভাবে লাভের নিরোধে বিনিশ্চয়ের উৎপত্তি হইবে কি?

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

আনন্দ, সেই জন্যই লাভ বিনিশ্চয়ের হেতু, নিদান, সমুদয় এবং প্রত্যয়।

১১১. ইহা উক্ত হইয়াছে যে, “পর্যেষণা হইতে লাভের উৎপত্তি হয়।” আনন্দ, ইহা এইরূপে বুঝিতে হইবে, যদি কাহারও কুত্রাপি কোনো প্রকার পর্যেষণা না থাকে, তাহা হইলে সর্বতোভাবে পর্যেষণার অভাবে পর্যেষণার নিরোধে লাভের উৎপত্তি হইবে কি?

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

আনন্দ, সেই জন্যই পর্যেষণা লাভের হেতু, নিদান, সমুদয় এবং প্রত্যয়।

১১২. ইহা উক্ত হইয়াছে যে, “তৃষ্ণা হইতে পর্যেষণার উৎপত্তি হয়।” আনন্দ, ইহা এইরূপে বুঝিতে হইবে, যদি কাহারও কুত্রাপি কোনো প্রকার তৃষ্ণা না থাকে, তাহা হইলে সর্বতোভাবে তৃষ্ণার অভাবে তৃষ্ণার নিরোধে পর্যেষণার উৎপত্তি হইবে কি?

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

আনন্দ, সেই জন্যই তৃষ্ণা পর্যেষণার হেতু, নিদান, সমুদয় এবং প্রত্যয়।

“আনন্দ এইরূপে [তৃষ্ণার] এই দুইটি দিক দ্বিত্ব হইতে বেদনার দ্বারা একত্বে পরিণত হয়!”

১১৩. ইহা উক্ত হইয়াছে যে, “স্পর্শ হইতে বেদনার উৎপত্তি হয়।” আনন্দ, ইহা এইরূপে বুঝিতে হইবে, যদি কাহারও কুত্রাপি কোনো প্রকার স্পর্শ না থাকে; যথা : চক্ষু-সংস্পর্শ, শ্রোত্র-সংস্পর্শ, ঘ্রাণ-সংস্পর্শ, জিহ্বা-সংস্পর্শ, কায়-সংস্পর্শ, মনো-সংস্পর্শ, তাহা হইলে সর্বতোভাবে স্পর্শের অভাবে স্পর্শের নিরোধে বেদনার উৎপত্তি হইবে কি?

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

আনন্দ, সেই জন্যই স্পর্শ বেদনার হেতু, নিদান, সমুদয় এবং প্রত্যয়।

১১৪. ইহা উক্ত হইয়াছে যে, “নামরূপ হইতে স্পর্শের উৎপত্তি হয়।” আনন্দ, ইহা এইরূপে বুঝিতে হইবে, যে সকল আকার, লিঙ্গ, নিমিত্ত এবং উদ্দেশ হইতে নাম-কায়ের প্রকাশ হয় ওই সকল আকার, লিঙ্গ, নিমিত্ত এবং উদ্দেশ না থাকিলে কি রূপ-কায়ে অধিবচন জ্ঞাত হইবে?

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

“আনন্দ, যে সকল আকার, লিঙ্গ, নিমিত্ত এবং উদ্দেশ হইতে রূপ-কায়ের প্রকাশ হয়, ওই সকল আকার, লিঙ্গ, নিমিত্ত এবং উদ্দেশ না থাকিলে নাম-কায়ে প্রতিঘ-সংস্পর্শের উৎপত্তি হইবে কি?”

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

“আনন্দ, যে সকল আকার, লিঙ্গ, নিমিত্ত এবং উদ্দেশ হইতে নাম-কায় এবং রূপ-কায়ের প্রকাশ হয়, ওই সকলের অভাবে অধিবচন-সংস্পর্শ অথবা প্রতিঘ-সংস্পর্শের উৎপত্তি হইবে কি?”

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

“আনন্দ, যে সকল আকার, লিঙ্গ, নিমিত্ত এবং উদ্দেশ হইতে নামরূপের প্রকাশ হয়, ওই সকলের অভাবে স্পর্শের উৎপত্তি হইবে কি?”

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

আনন্দ, সেই জন্যই নামরূপ স্পর্শের হেতু, নিদান, সমুদয় এবং প্রত্যয়।

১১৫. ইহা কথিত হইয়াছে যে, “বিজ্ঞান হইতে নামরূপের উৎপত্তি হয়।” আনন্দ, ইহা এইরূপে বুঝিতে হইবে, আনন্দ, যদি বিজ্ঞান মাতৃগর্ভে প্রবেশ না করে, তাহা হইলে কি মাতৃগর্ভে নামরূপের প্রতিষ্ঠা হইবে?

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

“আনন্দ, যদি বিজ্ঞান মাতৃগর্ভে প্রবেশ করিয়া নিষ্ক্রান্ত হয়, তাহা হইলে কি পার্থিব অস্তিত্বের নিমিত্ত নামরূপের উৎপত্তি হইবে?”

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

“আনন্দ, যদি বিজ্ঞান শিশুকালে, কুমার অথবা কুমারীকালে নিষ্ক্রান্ত হয়, তাহা হইলে কি নামরূপের বৃদ্ধি, বিকাশ, প্রসারণ হইবে?”

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

আনন্দ, সেই জন্যই বিজ্ঞান নামরূপের হেতু, নিদান, সমুদয় এবং প্রত্যয়।

১১৬. ইহা কথিত হইয়াছে যে, “নামরূপ হইতে বিজ্ঞানের উৎপত্তি হয়।” আনন্দ, ইহা এইরূপে বুঝিতে হইবে, যদি নামরূপে বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠা লাভ না করে, তাহা হইলে কি ভবিষ্যতে জন্ম, জরা, মরণ-রূপ দুঃখসমূহের উৎপত্তি হইবে?

“ভন্তে, তাহা হইবে না।”

আনন্দ, সেই জন্যই নামরূপ বিজ্ঞানের হেতু, নিদান, সমুদয়, প্রত্যয়।

আনন্দ, জন্ম বার্ধক্য মৃত্যু চ্যুতি উৎপত্তি অধিবচন-প্রণালি, নিরুক্তি প্রণালি, প্রজ্ঞপ্তি-প্রণালি, জ্ঞান-ক্ষেত্র, পার্থিব বর্তের আবর্তন-এই সমস্তই বিজ্ঞানসহ নামরূপের জন্য।

১১৭. আনন্দ, যিনি আত্মার ঘোষণা করেন, তিনি কিরূপে উহা করেন? আত্মাকে রূপযুক্ত এবং সূক্ষ্ম এইরূপ ঘোষণা করিয়া তিনি কহিয়া থাকেন, “আমার আত্মা রূপী এবং সূক্ষ্ম।” যিনি আত্মাকে রূপী এবং অনন্তরূপে ঘোষণা করেন, তিনি কহিয়া থাকেন, “আমার আত্মা রূপী এবং অনন্ত।” যিনি আত্মাকে অরূপী এবং সূক্ষ্মরূপে ঘোষণা করেন, তিনি কহিয়া থাকেন, “আমার আত্মা অরূপী এবং সূক্ষ্ম।” যিনি আত্মাকে অরূপী এবং অনন্তরূপে ঘোষণা করেন, তিনি কহিয়া থাকেন, “আমার আত্মা অরূপী এবং অনন্ত।

১১৮. আনন্দ, যে আত্মাকে রূপী ও সূক্ষ্মরূপে ঘোষণা করে, সে বর্তমান জীবনের সম্পর্কে ওইরূপ কহিয়া থাকে অথবা ভবিষ্যৎ জীবনের সম্বন্ধে; অথবা তাহার মনে হয়, “ওইরূপ না হইলেও আমি উহাকে ওইরূপে সাজাইব।” এইরূপে আনন্দ, “আত্মা রূপী ও সূক্ষ্ম” এইরূপ অনুদৃষ্টি সে আশ্রয় করে, ইহা বলা সঙ্গত।

আনন্দ, যাহারা আত্মার সম্বন্ধে পূর্বোক্ত অপরাপর মতসমূহ পোষণ করে, তাহারা একই যুক্তির বশবর্তী হইয়া আত্মার সম্বন্ধে আপনাপন অনুদৃষ্টি আশ্রয় করে, ইহা বলা সঙ্গত।

আনন্দ, আত্মার সম্বন্ধে এইরূপে বিবিধ মত ঘোষিত হয়।

১১৯. আনন্দ, যিনি আত্মার ঘোষণা করেন না, তিনি কী প্রকারে ওই ঘোষণা হইতে বিরত হন? আত্মাকে রূপী ও সূক্ষ্মরূপে ঘোষণায় নিরত হইয়া তিনি “আমার আত্মা-রূপী ও সূক্ষ্ম” এইরূপ কহেন না; আত্মাকে রূপী ও অনন্তরূপে ঘোষণায় বিরত হইয়া তিনি “আমার আত্মা রূপী ও অনন্ত” এইরূপ কহেন না; আত্মাকে অরূপী ও সূক্ষ্মরূপে ঘোষণায় বিরত হইয়া তিনি “আমার আত্মা অরূপী ও সূক্ষ্ম” এইরূপ কহেন না, আত্মাকে অরূপী ও অনন্তরূপে ঘোষণায় বিরত হইয়া তিনি “আমার আত্মা অরূপী ও অনন্ত” এইরূপ কহেন না।

১২০. আনন্দ, যিনি আত্মাকে রূপী ও সূক্ষ্মরূপে ঘোষণায় বিরত, তিনি বর্তমান অথবা ভবিষ্যৎ জীবনের সম্পর্কে ওইরূপ ঘোষণা করেন না; অথবা ইহাও তাঁহার মনে হয় না “ওইরূপ না হইলেও আমি উহাকে ওইরূপে সাজাইব।” এইরূপে, আনন্দ, আত্মা রূপী ও সূক্ষ্ম এইরূপ অনুদৃষ্টি তিনি আশ্রয় করেন না, ইহা বলা সঙ্গত।

আনন্দ, যাঁহারা আত্মার সম্বন্ধে পূর্বোক্ত অপরাপর ঘোষণাসমূহে বিরত, তাঁহারা একই যুক্তির বশবর্তী হইয়া ওই সম্বন্ধে কোনো প্রকার অনুদৃষ্টি আশ্রয় করেন না, ইহা বলা সঙ্গত।

আনন্দ, এইরূপ বিভিন্ন প্রকারে অনাত্মবাদী আত্মার ঘোষণায় বিরত।

১২১. আনন্দ, আত্মবাদী কী কী রূপে আত্মাকে অনুভব করেন? তিনি “বেদনা আমার আত্মা” ইহা কহিয়া বেদনায় আত্মা অনুভব করেন; অথবা “বেদনা আমার আত্মা নহে, আমার আত্মা অনুভূতিহীন এইরূপে আত্মাকে দর্শন করেন; অথবা “বেদনা আমার আত্মা নহে, আমার আত্মা যে অনুভূতিহীন তাহাও নহে, আমার আত্মা অনুভূতিসম্পন্ন এবং অনুভূতি তাহার ধর্ম” এইরূপে তিনি আত্মাকে দর্শন করেন।

১২২. আনন্দ, যে বলে “বেদনা আমার আত্মা,” তাহাকে এইরূপ বলিতে হইবে, “মহাশয়, বেদনা তিন প্রকার-সুখবেদনা, দুঃখবেদনা, না-দুঃখ না-সুখ-বেদনা। এই তিন প্রকার বেদনার মধ্যে কোনটিকে আপনার আত্মারূপে গ্রহণ করেন?”

আনন্দ, যখন সুখবেদনা অনুভূত হয়, তখন দুঃখবেদনা অথবা না-সুখ না-দুঃখ-বেদনা অনুভূত হয় না, ওই সময় কেবল মাত্র সুখ-বেদনাই অনুভূত হয়। আনন্দ, যখন দুঃখবেদনা অনুভূত হয়, তখন সুখবেদনা অথবা না-সুখ না-দুঃখ বেদনা অনুভূত হয় না, ওই সময় কেবল মাত্র দুঃখবেদনাই অনুভূত হয়। আনন্দ, যে সময় না দুঃখ না সুখবেদনা অনুভূত হয়, তখন সুখবেদনা অথবা দুঃখবেদনা অনুভূত হয় না, ওই সময়ে কেবল মাত্র না দুঃখ না সুখবেদনাই অনুভূত হয়।

১২৩. অধিকন্তু, আনন্দ, সুখবেদনা অনিত্য, কৃত, প্রতীত্যসমুৎপন্ন, ক্ষয়-ধর্ম, ব্যয়ধর্ম, বিরাগ-ধর্ম এবং নিরোধ-ধর্মবিশিষ্ট। আনন্দ, দুঃখবেদনাও অনিত্য, কৃত, প্রতীত্যসমুৎপন্ন, ক্ষয়-ধর্ম, ব্যয়ধর্ম, বিরাগ-ধর্ম এবং নিরোধ-ধর্মবিশিষ্ট। আনন্দ, না-দুঃখ না সুখবেদনাও অনিত্য, কৃত, প্রতীত্যসমুৎপন্ন, ক্ষয়ধর্ম, ব্যয়ধর্ম, বিরাগ-ধর্ম এবং নিরোধ-ধর্মবিশিষ্ট। যে সুখবেদনা অনুভব করে, তাহার মনে হয় “ইহাই আমার আত্মা,” ওই সুখবেদনার নিরোধে তাহার মনে হয় “আমার আত্মা অন্তর্হিত হইয়াছে।” যে দুঃখবেদনা অনুভব করে, তাহার মনে হয় “ইহাই আমার আত্মা,” ওই দুঃখ বেদনার নিরোধে তাহার মনে হয় “আমার আত্মা অন্তর্হিত হইয়াছে।” যে না-দুঃখ না-সুখ বেদনা অনুভব করে, তাহার মনে হয় “ইহাই আমার আত্মা,” ওই না-দুঃখ না-সুখ বেদনার নিরোধে তাহার মনে হয় “আমার আত্মা অন্তর্হিত হইয়াছে।

এইরূপে যে “বেদনা আমার আত্মা” এইরূপ কহে সে এই জগতে যাহা অনিত্য, সুখ-দুঃখ মিশ্রিত, উৎপাদ-ব্যয়-ধর্মশীল, তাহাকেই আত্মারূপে দর্শন করে। আনন্দ, সেইজন্য “বেদনা আমার আত্মা” এইরূপ উক্তি অযুক্ত।

১২৪. পুনশ্চ, আনন্দ, যে এইরূপ কহে, “বেদনা আমার আত্মা নহে, আমার আত্মা অনুভূতিহীন,” তাহাকে এইরূপ বলিতে হইবে, “মহাশয়, যেখানে কোনো প্রকার বেদনার অস্তিত্ব নাই, সেখানে কি “আমি বিদ্যমান” এইরূপ উক্তি সম্ভব?

“ভন্তে, তাহা সম্ভব নয়।”

আনন্দ, সেইজন্য “বেদনা আমার আত্মা নহে, আমার আত্মা অনুভূতিহীন,” এইরূপ উক্তি অযুক্ত।

১২৫. পুনশ্চ, আনন্দ, যে কহে, “বেদনা আমার আত্মা ইহাও নহে, আমার আত্মা অনুভূতিহীন ইহাও নহে, আমার আত্মা অনুভব করে, ইহা বেদনা ধর্মসম্পন্ন,” তাহাকে এইরূপ বলিতে হইবে, “মহাশয়, যদি সর্বশ্রেণির সর্বপ্রকার বেদনা সম্পূর্ণরূপে নিরুদ্ধ হয়, তাহা হইলে বেদনার নিরোধহেতু উহার সম্পূর্ণ অভাবে, “আমি বিদ্যমান” এইরূপ উক্তি কি সম্ভব?

“ভন্তে, তাহা সম্ভব নয়।”

সেই জন্য, আনন্দ, “বেদনা আমার আত্মা ইহাও নহে, আমার আত্মা অনুভূতিহীন ইহাও নহে, আমার আত্মা অনুভব করে, ইহা বেদনা ধর্মসম্পন্ন,” এইরূপ উক্তি অযুক্ত।

১২৬. আনন্দ, ভিক্ষু যখন বেদনাকে আত্মারূপে দর্শন করেন না, কিংবা উহাকে অনুভূতিহীন অথবা অনূভূতিসম্পন্ন বেদনা-ধর্ম বিশিষ্টরূপে দর্শন করেন না, তখন ওইরূপ দর্শনসমূহে বিরত হইয়া তিনি কোনো পার্থিব বস্তুতে আসক্ত হন না, অনাসক্ত হইয়া তিনি ত্রাসহীন হন, ত্রাসহীন হইয়া তিনি অধ্যাত্মে পরিনির্বাণ প্রাপ্ত হন, “জন্ম ক্ষয় হইয়াছে, ব্রহ্মচর্য্য উদ্‌যাপিত হইয়াছে, করণীয় সম্পন্ন হইয়াছে, পুনর্জন্ম আর নাই,” তিনি ইহা জানিতে পারেন। আনন্দ, যদি কেহ কহে, ঈদৃশ বিমুক্ত-চিত্ত পুরুষ “মৃত্যুর পর তথাগত বিদ্যমান থাকেন” এইরূপ দৃষ্টিসম্পন্ন, তাহা হইলে তাহার কথা মিথ্যা; অথবা “মরণের পর তথাগত বিদ্যমান থাকেন না” এইরূপ দৃষ্টিসম্পন্ন তাহা হইলে তাহার কথা মিথ্যা; অথবা “মরণের পর তথাগত বিদ্যমান থাকেন এবং থাকেন না” এইরূপ দৃষ্টিসম্পন্ন, তাহা হইলে তাহার কথা মিথ্যা; অথবা মরণের পর তথাগত বিদ্যমান থাকেন না এবং বিদ্যমান যে থাকেন না তাহাও নয়” এইরূপ দৃষ্টিসম্পন্ন, তাহা হইলে তাহার কথা মিথ্যা। কী কারণে? আনন্দ, যাবতীয় অধিবচন সংজ্ঞা, যাবতীয় অধিবচন প্রণালি, যাবতীয় নিরুক্তি এবং নিরুক্তি প্রণালি, যাবতীয় প্রজ্ঞপ্তি এবং প্রজ্ঞপ্তি প্রণালি যাবতীয় প্রজ্ঞা এবং প্রজ্ঞা-পথ, যাবতীয় সংসারবর্ত এবং উহার ভ্রমণ, এই সমস্ত উত্তমরূপে জ্ঞাত হইয়া ভিক্ষু বিমুক্ত, এইরূপে বিমুক্ত “ভিক্ষু জানেন না, দর্শন করেন না” এইরূপ দৃষ্টি মিথ্যা।

১২৭. আনন্দ, বিজ্ঞানস্থিতি সপ্তবিধ, আয়তন দ্বিবিধ। সপ্তবিধ কী কী? সত্ত্বগণ বিদ্যমান যাহারা নানারূপ দেহসম্পন্ন এবং নানারূপ সংজ্ঞাসম্পন্ন; যথা : মনুষ্যগণ, কোনো কোনো দেবতা এবং কোনো কোনো বিনিপাতিক নিরয়বাসী। ইহাই প্রথম বিজ্ঞানস্থিতি।

সত্ত্বগণ বিদ্যমান যাহারা নানারূপ দেহসম্পন্ন কিন্তু একই রূপসংজ্ঞাবিশিষ্ট; যথা : ব্রহ্মলোকবাসী দেবগণ যাঁহারা প্রথম ধ্যানের অনুশীলনে ওইস্থানে উৎপন্ন হইয়াছেন। ইহাই, দ্বিতীয় বিজ্ঞানস্থিতি।

সত্ত্বগণ বিদ্যমান যাঁহারা একইরূপ দেহবিশিষ্ট কিন্তু নানারূপ সংজ্ঞাসম্পন্ন; যথা : আভাস্বর দেবগণ। ইহাই তৃতীয় বিজ্ঞানস্থিতি।

সত্ত্বগণ বিদ্যমান যাঁহারা একইরূপ দেহ ও সংজ্ঞাবিশিষ্ট; যথা : শুভকৃৎস্ন দেবগণ। ইহাই চতুর্থ বিজ্ঞানস্থিতি।

সত্ত্বগণ বিদ্যমান যাঁহারা রূপ সংজ্ঞাকে সর্বতোভাবে অতিক্রম করিয়া, প্রতিঘ-সংজ্ঞা বিনাশ করিয়া, নানাত্ব সংজ্ঞায় উদাসীন হইয়া “আকাশ অনন্ত” এই অনুভূতির সহিত “আকাশ-অনন্ত আয়তন” স্তরে গমন করিয়াছেন। ইহাই পঞ্চম বিজ্ঞানস্থিতি।

সত্ত্বগণ বিদ্যমান যাঁহারা “আকাশ-অনন্ত আয়তন” সর্বতোভাবে অতিক্রম করিয়া “বিজ্ঞান অনন্ত” এই অনুভূতির সহিত “বিজ্ঞান-অনন্ত-আয়তন” স্তরে গমন করিয়াছেন। ইহাই যষ্ঠ বিজ্ঞানস্থিতি।

সত্ত্বগণ বিদ্যমান যাঁহারা “বিজ্ঞান-অনন্ত-আয়তন” সর্বতোভাবে অতিক্রম করিয়া “কিছুই নাই” এই অনুভূতির সহিত “আকিঞ্চন আয়তন” স্তরে গমন করিয়াছেন। ইহাই সপ্তম বিজ্ঞানস্থিতি।

অসংজ্ঞসত্ত্বায়তন এবং নৈবসংজ্ঞা-না-অসংজ্ঞায়তন-এই দুই আয়তন।

১২৮. আনন্দ, এক্ষণে এই যে প্রথম বিজ্ঞানস্থিতি, নানা দেহ এবং নানা সংজ্ঞাসম্পন্ন সত্ত্ব; যথা : মনুষ্য, কোনো কোনো দেবতা এবং কোনো কোনো বিনিপাতিক, যে ওই স্থিতির জ্ঞানসম্পন্ন, উহার উৎপত্তি, বিনাশ, আস্বাদ, দৈন্য এবং উহা হইতে মুক্তির উপায়ের জ্ঞানসম্পন্ন, তাহার পক্ষে উহার অভিনন্দন করা কি যুক্ত?

“ভন্তে, যুক্ত নহে।”

আনন্দ, যে অপর ছয়টি বিজ্ঞানস্থিতি এবং দুইটি আয়তনের জ্ঞানসম্পন্ন, উহাদের উৎপত্তি, বিনাশ, আস্বাদ, দৈন্য এবং উহাদিগের হইতে মুক্তির উপায়ের জ্ঞানসম্পন্ন, তাহার পক্ষে উহাদের অভিনন্দন করা কি যুক্ত?

“ভন্তে, যুক্ত নহে।”

আনন্দ, যখন ভিক্ষু এই সাত বিজ্ঞানস্থিতি এবং আয়তনদ্বয়ের উৎপত্তি, বিনাশ, আস্বাদ, দৈন্য এবং ওই সকল হইতে মুক্তির উপায় যথাযথরূপে জ্ঞাত ও উপাদান-রহিত হইয়া বিমুক্ত হন, তখন তিনি প্রজ্ঞা বিমুক্ত ভিক্ষু কথিত হন।

১২৯. “আনন্দ, আট বিমোক্ষ। কী কী? রূপী রূপ দর্শন করে। ইহা প্রথম বিমোক্ষ।

অধ্যাত্মে অরূপ-সংজ্ঞী বাহিরে রূপ দর্শন করে। ইহা দ্বিতীয় বিমোক্ষ।

“সুন্দর!” এই চিন্তায় অভিনিবিষ্ট হয়। ইহা তৃতীয় বিমোক্ষ।

রূপ-সংজ্ঞাকে সর্বতোভাবে অতিক্রম করিয়া, প্রতিঘ-সংজ্ঞা বিনাশ করিয়া, নানাত্ব-সংজ্ঞায় উদাসীন হইয়া “আকাশ-অনন্ত” এই অনুভূতির সহিত আকাশ-অনন্ত আয়তন উপলব্ধি করিয়া বিহার করে। ইহা চতুর্থ বিমোক্ষ।

আকাশ-অনন্ত-আয়তন সর্বতোভাবে অতিক্রম করিয়া “বিজ্ঞান-অনন্ত” এই অনুভূতির সহিত বিজ্ঞান-অনন্ত-আয়তন উপলব্ধি করিয়া বিহার করে। ইহা পঞ্চম বিমোক্ষ।

বিজ্ঞান-অনন্ত আয়তন সর্বতোভাবে অতিক্রম করিয়া “কিছুই নাই” এই অনুভূতির সহিত আকিঞ্চন-আয়তন উপলব্ধি করিয়া বিহার করে। ইহা ষষ্ঠ বিমোক্ষ।

আকিঞ্চন-আয়তন সর্বতোভাবে অতিক্রম করিয়া নৈবসংজ্ঞা-না-অসংজ্ঞা আয়তন উপলব্ধি করিয়া বিহার করে ইহা সপ্তম বিমোক্ষ।

“নৈবসংজ্ঞা-না-অসংজ্ঞা আয়তন সর্বতোভাবে অতিক্রম করিয়া সংজ্ঞা-বেদয়িত নিরোধ উপলব্ধি করিয়া বিহার করে। ইহা অষ্টম বিমোক্ষ।

১৩০. আনন্দ, যখন ভিক্ষু এই অষ্টবিধ বিমোক্ষ ক্রমানুসারে এবং প্রতিলোমরূপে আয়ত্তীভূত করেন, অনুলোম প্রতিলোমরূপে আয়ত্তীভূত করেন, যেখানে ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা, যতক্ষণ ইচ্ছা উহাতে বিলীন হইতে এবং উহা হইতে নির্গত হইতে পারেন, আসবক্ষয় হেতু এই জগতেই অনাসব চিত্ত-বিমুক্তি এবং প্রজ্ঞা-বিমুক্তি স্বয়ং জ্ঞাত হইয়া ও উপলব্ধি করিয়া উহাতে বিহার করেন, তখন তিনি উভয়-ভাগ-বিমুক্ত কথিত হন। আনন্দ, এই উভয়-ভাগ-বিমুক্তি অপেক্ষা অন্য শ্রেষ্ঠতর অথবা প্রণীততর উভয়-ভাগ-বিমুক্তি আর নাই।”

ভগবান এইরূপ বলিলেন। আনন্দিত হইয়া আয়ুষ্মান আনন্দ ভগবদ্বাক্যের অভিনন্দন করিলেন।

মহানিদান সূত্রান্ত সমাপ্ত।

The Long Discourses

|_II. The Great Chapter

DN15. মহানিদান সূত্রান্ত

Translations [25]

English

繁體字

Français

Deutsch

Italiano

Español

Português

Русский

Norsk

Magyar

Srpski

Čeština

Română

עִבְרִית

हिंदी

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference

Translations [25]

English

繁體字

Français

Deutsch

Italiano

Español

Português

Русский

Norsk

Magyar

Srpski

Čeština

Română

עִבְרִית

हिंदी

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference

Commentaries [0]