২৪১. আমি এইরূপ শ্রবণ করিয়াছি। একসময় ভগবান কুশিনারার উপবর্তন নামক মল্লদিগের শালবনে যুগ্মশালতরুর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করিতেছিলেন। তখন তাঁহার পরিনির্বাণের সময়।

ওই সময় আনন্দ ভগবানের নিকট উপস্থিত হইয়া তাঁহাকে অভিবাদনপূর্বক একপ্রান্তে উপবেশন করিলেন। পরে তিনি ভগবানকে বলিলেন :

“দেব, এই ক্ষুদ্র, পরিত্যক্ত শাখানগরে যেন ভগবান পরিনির্বৃত না হন। অন্যান্য মহানগরসমূহ বিদ্যমান; যথা : চম্পা, রাজগৃহ, শ্রাবস্তী, সাকেত, কৌশাম্বী, বারাণসী। এই সকলের যেকোনো স্থানে ভগবানের পরিনির্বাণ হউক, এই সকল স্থানের বহু ক্ষত্রিয়, ব্রাহ্মণ ও গৃহপতি মহাশালগণ তথাগতে অভিপ্রসন্ন, তাঁহারা তথাগতের শরীর পূজা করিবেন।”

২৪২. “আনন্দ, ইহা ক্ষুদ্র, পরিত্যক্ত শাখানগর, এরূপ কথা বলিও না। আনন্দ, পূর্বকালে মহাসুদর্শন নামে রাজা ছিলেন। তিনি মূর্ধাভিষিক্ত, চতুরন্তবিজেতা, প্রজাবর্গের নিরাপত্তা-প্রাপ্ত ছিলেন। আনন্দ, এই কুশিনারা কুশাবতী নামে রাজা মহাসুদর্শনের রাজধানী ছিল। উহা পশ্চিম ও পূর্বদিকে দৈর্ঘে দ্বাদশ যোজন পরিমিত ছিল, উত্তর ও দক্ষিণ দিকে সপ্ত যোজন বিস্তৃত ছিল। আনন্দ, কুশাবতী রাজধানী সমৃদ্ধ, স্ফীত, জনবহুল, মনুষ্যাকীর্ণ এবং সুভিক্ষ ছিল। আনন্দ, যেরূপ দেবতাদিগের আলকনন্দা নামক রাজধানী-সমৃদ্ধ, স্ফীত, জনবহুল, যক্ষাকীর্ণ, সুভিক্ষ, সেইরূপ রাজধানী কুশাবতী সমৃদ্ধ, স্ফীত, জনবহুল, যক্ষাকীর্ণ এবং সুভিক্ষ ছিল। আনন্দ রাজধানী কুশাবতী দিবা-রাত্রি অবিশ্রান্ত দশবিধ শব্দে ধ্বনিত হইত, হস্তীশব্দ, রথশব্দ, ভেরীশব্দ, মৃদঙ্গশব্দ, বীণাশব্দ, গীতশব্দ, করতালশব্দ, খঞ্জনীশব্দ, “আহার করো, পান করো, চর্বণ করো” ইত্যাদি দশবিধ শব্দে ধ্বনিত হইত।”

“আনন্দ, রাজধানী কুশাবতী সপ্ত প্রাকার দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। একটি প্রাকার সুবর্ণময়, একটি রজতময়, একটি বৈদূর্যমণিময়, একটি স্ফটিকময়, একটি লোহিতকময় পদ্মরাগমণি, একটি মরকতময়, একটি সর্বরত্নময়।”

“আনন্দ, রাজধানী কুশাবতীর প্রবেশ দ্বারগুলি চারি বর্ণবিশিষ্ট ছিল। একটি দ্বার সুবর্ণময়, একটি রজতময়, একটি বৈদূর্যমণিময়, একটি স্ফটিকময়। প্রত্যেক দ্বারে সাতটি স্তম্ভ স্থাপিত, উহাদের উচ্চতা একটি মানুষের উচ্চতার ত্রিগুণ অথবা চতুর্গুণ। একটি স্তম্ভ সুবর্ণময়, একটি বৈদূর্যমণিময়, একটি স্ফটিকময়, একটি লোহিতকময়, একটি মরকতময়, একটি সর্বরত্নময়।”

“আনন্দ, রাজধানী কুশাবতী সাতটি তালপংক্তি দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। একটি সুবর্ণময় তালপংক্তি, একটি রজতময়, একটি বৈদূর্যমণিময়, একটি স্ফটিকময়, একটি লোহিতকময়, একটি মরকতময়, একটি সর্বমণিময়। সুবর্ণময় তালের সুবর্ণময় স্কন্ধ এবং রজতময় পত্র ও ফল; রজতময় তালের রজতময় স্কন্ধ এবং সুবর্ণময় পত্র ও ফল; বৈদূর্যমণিময় তালের বৈদূর্যমণিময় স্কন্ধ, এবং স্ফটিকময় পত্র ও ফল; স্ফটিকময় তালের স্ফটিকময় স্কন্ধ এবং বৈদূর্যমণিময় পত্র ও ফল; লোহিতকময় তালের লোহিতকময় স্কন্ধ এবং মরকতময় পত্র ও ফল; মরকতময় তালের মরকতময় স্কন্ধ এবং লোহিতকময় পত্র ও ফল; সর্বমণিময় তালের সর্বমণিময় স্কন্ধ এবং সর্বমণিময় পত্র ও ফল। আনন্দ, বাতকম্পিত ওই সকল তালপংক্তির শব্দ মধুর, চিত্তরঞ্জক, কমনীয় এবং মুগ্ধকর। আনন্দ, স্বরলয়যুক্ত পঞ্চাঙ্গিক তূর্য তালনিপুণগণ কর্তৃক বাদিত হইলে উহার শব্দ যেরূপ মধুর, চিত্তরঞ্জক, কমনীয় এবং মুগ্ধকর হয়, সেইরূপই ওই সকল বাতকম্পিত তালপংক্তির শব্দ মধুর, চিত্তরঞ্জক, কমনীয় এবং মুগ্ধকর। আনন্দ, ওই সময়ে রাজধানী কুশাবতীর দ্যূতাসক্ত, পানোন্মক্ত, পানাসক্তগণ বাতকম্পিত সেই তালশ্রেণির শব্দের সহিত নৃত্য করিত।

২৪৩. “আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন সপ্ত রত্ন এবং চারি ঋদ্ধিসম্পন্ন ছিলেন। সাত রত্ন কী কী?”

“আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন পূর্ণিমার উপোসথ দিবসে স্নানান্তে উপোসথ ব্রত পালনে রত হইয়া প্রাসাদের উপরিতলে গমন করিলে তাঁহার সম্মুখে সহস্র অর, নেমি ও নাভিযুক্ত সর্বাকার পরিপূর্ণ দিব্য চক্ররত্ন প্রাদুর্ভূত হইল। উহা দেখিয়া রাজা মহাসুদর্শন চিন্তা করিলেন, “আমি এইরূপ শুনিয়াছি, “যে মূর্ধাভিষিক্ত ক্ষত্রিয় রাজা পূর্ণিমার উপোসথ দিবসে স্নানান্তে উপোসথ ব্রত পালনে রত হইয়া প্রাসাদের উপরিতলে গমন করিলে তাঁহার সম্মুখে সহস্র অর, নেমি ও নাভিযুক্ত সর্বাকার পরিপূর্ণ দিব্য চক্ররত্ন প্রাদুর্ভূত হয়, তিনি রাজা চক্রবর্তী হন।” আমি কি রাজা চক্রবর্তী হইব?”

২৪৪. “আনন্দ, তখন রাজা মহাসুদর্শন আসন হইতে উত্থান করিয়া একাংশ উত্তরাসঙ্গে আবৃত করিয়া বাম হস্তে ভৃঙ্গার গ্রহণপূর্বক দক্ষিণ হস্তে চক্ররত্নের উপর বারি সিঞ্চন করিতে করিতে বলিলেন, হে চক্ররত্ন! আপনি প্রবর্তিত এবং জয়যুক্ত হউন।” আনন্দ, তখন সেই চক্ররত্ন পূর্বদিকে ধাবিত হইল, রাজা মহাসুদর্শনও চতুরঙ্গিনী সেনা সমভিব্যাহারে উহার পশ্চাদনুসরণ করিল। আনন্দ, যে স্থানে চক্ররত্ন স্থিত হইল, ওই স্থানে রাজা মহাসুদর্শন চতুরঙ্গিনী সেনাসহ বাস গ্রহণ করিলেন।

“আনন্দ, পূর্বদিকস্থ প্রতিদ্বন্দ্বী রাজগণ রাজা মহাসুদর্শনের নিকট আসিয়া তাঁহাকে বলিল, “আসুন, মহারাজ! স্বাগত, মহারাজ! মহারাজ! সকলই আপনার, মহারাজ! আপনিই শাসন করুন।”

“রাজা মহাসুদর্শন বলিলেন। “প্রাণিহত্যা করিবে না। অদত্তের গ্রহণ করিবে না। ব্যভিচার করিবে না। মিথ্যা কহিবে না। মদ্যপান করিবে না। পরিমিতরূপে ভোজন করো।”

“আনন্দ, পূর্বদিকের বিপক্ষ রাজগণ রাজা মহাসুদর্শনের অধীনতা স্বীকার করিলেন।”

২৪৫. অনন্তর, আনন্দ, চক্ররত্ন পূর্ব সমুদ্রে অবগাহনান্তে উত্তরণপূর্বক দক্ষিণগামী হইল… দক্ষিণ সমুদ্রে অবগাহনপূর্বক উত্তরণ করিয়া পশ্চিমগামী হইল… পশ্চিম সমুদ্রে অবগাহনান্তে উত্তরণপূর্বক উত্তরগামী হইল, পশ্চাতে চতুরঙ্গিনী সেনাসহ রাজা মহাসুদর্শন। আনন্দ, যে স্থানে চক্ররত্ন স্থিত হইল, তথায় রাজা মহাসুদর্শন চতুরঙ্গিনী সেনাসহ বাস গ্রহণ করিলেন।

“আনন্দ, উত্তর দিকের বিপক্ষ রাজগণ রাজা মহাসুদর্শনের নিকট আসিয়া বলিল,

“মহারাজ, আসুন, স্বাগত! সকলই আপনার, আপনিই শাসন করুন।”

“রাজা মহাসুদর্শন এইরূপ বলিলেন, “প্রাণিহত্যা করিবে না। অদত্তের গ্রহণ করিবে না। ব্যভিচার করিবে না। মিথ্যা কহিবে না। মদ্যপান করিবে না। পরিমিতরূপে ভোজন করো।”

“আনন্দ, উত্তর দিকের বিপক্ষ রাজগণ রাজা মহাসুদর্শনের অধীনতা স্বীকার করিলেন।”

“আনন্দ, অতঃপর সেই রত্নচক্র সসাগরা পৃথিবী জয় করিয়া কুশাবতী রাজধানীতে প্রত্যাগমনপূর্বক প্রাসাদদ্বারে ন্যায়াধিকরণের সম্মুখে অক্ষভগ্নের ন্যায় গতিহীন হইয়া, রাজা মহাসুদর্শনের প্রাসাদ শোভিত করিল।”

“আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শনের সম্মুখে এইরূপ চক্ররত্নের আবির্ভাব হইয়াছিল।”

২৪৬. “পুনশ্চ, আনন্দ, রাজা সুদর্শনের নিকট হস্তীরত্নের আবির্ভাব হইল, সর্বশ্বেত, সপ্তপ্রতিষ্ঠ, ঋদ্ধিমান, আকাশে গমনক্ষম উপোসখ নামক নাগরাজা। উহা দেখিয়া রাজা মহাসুদর্শনের চিত্ত প্রসন্ন হইল, “এই হস্তী যদি শিক্ষণীয় হয়, তাহা হইলে উহাতে আরোহণ মঙ্গলপ্রদ হইবে!” তখন আনন্দ, সেই হস্তীরত্ন দীর্ঘকাল সুশিক্ষিত বিনীত জাতিসম্পন্ন হস্তীর ন্যায় শিক্ষা গ্রহণ করিল। আনন্দ, পূর্বকালে রাজা মহাসুদর্শন সেই হস্তীরত্ন পরীক্ষা করিবার নিমিত্ত পূর্বাহ্নে উহাতে আরূঢ় হইয়া সসাগরা পৃথিবী পরিভ্রমণপূর্বক কুশাবতী রাজধানীতে প্রত্যাগমন করিয়া প্রাতরাশ সম্পন্ন করিলেন। আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শনের নিকট এইরূপ হস্তীরত্নের আবির্ভাব হইয়াছিল।”

২৪৭. “পুনশ্চ, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শনের নিকট অশ্বরত্নের আবির্ভাব হইল, সর্বশ্বেত, কাকশীর্ষ, কৃষ্ণকেশর, ঋদ্ধিমান, আকাশগামী বলাহক নামক অশ্বরাজ। উহা দেখিয়া রাজা মহাসুদর্শনের চিত্ত প্রসন্ন হইল, “এই অশ্ব যদি শিক্ষণীয় হয়, তাহা হইলে উহাতে আরোহণ মঙ্গলপ্রসূ হইবে!” তখন, আনন্দ, সেই অশ্বরত্ন দীর্ঘকাল সুশিক্ষিত বিনীত জাতিসম্পন্ন অশ্বের ন্যায় শিক্ষা গ্রহণ করিল। আনন্দ, পূর্বকালে রাজা মহাসুদর্শন সেই অশ্বরত্ন পরীক্ষা করিবার নিমিত্ত পূর্বাহ্নে উহাতে আরূঢ় হইয়া সসাগরা পৃথিবী পরিভ্রমণপূর্বক কুশাবতী রাজধানীতে প্রত্যাগমন করিয়া প্রাতরাশ সম্পন্ন করিলেন। আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শনের নিকট এইরূপ অশ্বরত্নের আবির্ভাব হইয়াছিল।”

২৪৮. “পুনশ্চ, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শনের নিকট মণিরত্নের আবির্ভাব হইল। উহা বৈদূর্যমণি-শুভ্র, উচ্চশ্রেণিভুক্ত, অষ্টমুখ, সকর্তিত, স্বচ্ছ, সুনির্মল, সর্বায়বসম্পন্ন। আনন্দ, সেই মণিরত্নের আভা চতুর্দিকে যোজন পরিমিত স্থানে বিস্তৃত হইয়াছিল। আনন্দ, পূর্বাকালে রাজা মহাসুদর্শন সেই মণিরত্ন পরীক্ষা করিবার জন্য চতুরঙ্গিনী সেনা সজ্জিত করিয়া মণিরত্ন ধ্বজাগ্রে আরোপণপূর্বক রাত্রির গাঢ় অন্ধকারে বহির্গত হইলেন। আনন্দ, চতুর্দিকস্থ গ্রামের অধিবাসীগণ মণি নিঃসৃত আলোক হেতু “রাত্রি প্রভাত হইয়াছে” মনে করিয়া আপনাপন কর্মে নিযুক্ত হইল। আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শনের নিকট এইরূপ মণিরত্নের আবির্ভাব হইয়াছিল।”

২৪৯. পুনশ্চ, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শনের নিকট স্ত্রীরত্নের আবির্ভাব হইল, অভিরূপা, ওই দর্শনীয়া, মনোহরা, পরম বর্ণসৌন্দর্যশালিনী, নাতিদীর্ঘা, নাতিহ্রস্বা, নাতিকৃশা, নাতিস্থূলা, নাতিকৃষ্ণা, নাতিশুভ্রা, মনুষ্যাতীতবিশিষ্ট বর্ণসম্পন্না, অপ্রাপ্ত-দিব্য-বর্ণা। আনন্দ, সেই স্ত্রীরত্নের কায়সংস্পর্শ কার্পাস অথবা কার্পাসতুলার ন্যায়। আনন্দ, সেই স্ত্রীরত্নের গাত্র শীতকালে উষ্ণ এবং গ্রীষ্মকালে শীতল। আনন্দ, সেই স্ত্রীরত্নের দেহ হইতে চন্দনগন্ধ এবং মুখ হইতে পদ্মগন্ধ নির্গত হইত। আনন্দ, সেই স্ত্রীরত্ন রাজা মহাসুদর্শনের পূর্বেই শয্যাত্যাগ করিতেন এবং তাঁহার পরে শয়ন করিতেন, তিনি রাজার আজ্ঞাপালন ও মনোরঞ্জনের নিমিত্ত সর্বদা প্রস্তুত থাকিতেন, তিনি প্রিয়বাদিনী ছিলেন। আনন্দ, সেই স্ত্রীরত্ন রাজা মহাসুদর্শনের প্রতি মনেও অবিশ্বাসিনী হইতেন না, কায় দ্বারা কিরূপে হইবেন? আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শনের নিকট এইরূপ স্ত্রীরত্নের আবির্ভাব হইয়াছিল।

২৫০. “পুনশ্চ, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শনের নিকট গৃহপতিরত্নের আবির্ভাব হইল। তিনি কর্মবিপাকজ দিব্যচক্ষুসম্পন্ন ছিলেন। ওই দিব্যচক্ষু দ্বারা তিনি স্বামীসম্পন্ন অথবা স্বামীহীন নিধি দেখিতে পাইতেন। তিনি রাজা মহাসুদর্শনের নিকট গমন করিয়া বলিলেন, “দেব, আপনি উৎকন্ঠিত হইবেন না, আপনার ধনবৃদ্ধির জন্য যাহা করণীয় তাহা আমি করিব।”

“আনন্দ, পূর্বকালে রাজা মহাসুদর্শন সেই গৃহপতিরত্নকে পরীক্ষা করিবার নিমিত্ত নৌকায় আরোহণ করিয়া উহা গঙ্গা নদীর মধ্যবর্তী স্থানে স্রোতে ভাসাইয়া গৃহপতিরত্নকে বলিলেন :

“গৃহপতি, আমার সুবর্ণমুদ্রার প্রয়োজন।”

“মহারাজ, তাহা হইলে নৌকা তীরসংলগ্ন হউক।”

“এইস্থানেই আমার সুবর্ণমুদ্রার প্রয়োজন।”

“আনন্দ, তখন গৃহপতিরত্ন উভয় হস্তে জল স্পর্শ করিয়া সুবর্ণমুদ্রাপূর্ণ কুম্ভ উদ্ধার করিয়া রাজা মহাসুদর্শনকে বলিলেন, “মহারাজ ইহা কি পর্যাপ্ত? ইহাতে কি আপনার প্রয়োজন সাধিত হইবে?”

“রাজা মহাসুদর্শন বলিলেন, “গৃহপতি, ইহা পর্যাপ্ত, ইহাতে আমার প্রয়োজন সাধিত হইবে, আমি সন্তুষ্ট হইয়াছি।”

“আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শনের নিকট এইরূপ গৃহপতিরত্নের আবির্ভাব হইয়াছিল।”

২৫১. “পুনশ্চ, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শনের নিকট পরিণায়করত্নের আবির্ভাব হইল, তিনি পণ্ডিত, ব্যক্ত, মেধাবী, রাজা মহাসুদর্শনকে গ্রহণযোগ্য বিষয় গ্রহণ করাইতে, ত্যজ্য বিষয় ত্যাগ করাইতে, প্রতিষ্ঠার যোগ্য বিষয় প্রতিষ্ঠিত করাইতে সমর্থ।”

তিনি রাজা মহাসুদর্শনের নিকট গমন করিয়া বলিলেন, “দেব, আপনি উৎকন্ঠিত হইবেন না, আমি অনুশাসন করিব।”

“আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শনের নিকট এইরূপ পরিণায়করত্নের আবির্ভাব হইয়াছিল।”

“আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন এই সপ্তরত্ন সমন্বিত ছিলেন।”

২৫২. “পুনশ্চ, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন চারি ঋদ্ধিসম্পন্ন ছিলেন। কী কী? আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন অন্যান্য মনুষ্য অপেক্ষা বহুলাংশে অভিরূপ, দর্শনীয়, মনোহর, পরম বর্ণসৌন্দর্যশালী ছিলেন। আনন্দ ইহাই রাজা মহাসুদর্শনের প্রথম ঋদ্ধি।”

“পুনশ্চ, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন দীর্ঘায়ু ছিলেন, তাঁহার স্থিতিকাল অন্যান্য মনুষ্যের অপেক্ষা বহুলাংশে দীর্ঘ ছিল। আনন্দ, ইহাই তাঁহার দ্বিতীয় ঋদ্ধি।”

“পুনশ্চ, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন অপরাপর মনুষ্য অপেক্ষা নীরোগ ও দৈহিক ক্লেশমুক্ত ছিলেন, নাতিশীতোষ্ণ পরিপাক শক্তিসম্পন্ন ছিলেন। আনন্দ, ইহাই রাজার তৃতীয় ঋদ্ধি।”

“পুনশ্চ, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন ব্রাহ্মণ গৃহপতিগণের প্রিয় ও মনোজ্ঞ ছিলেন। যেরূপ পিতা পুত্রগণের প্রিয় ও মনোজ্ঞ হন, সেইরূপ, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন ব্রাহ্মণ-গৃহপতিগণের প্রিয় ও মনোজ্ঞ ছিলেন। ব্রাহ্মণ-গৃহপতিগণও রাজার প্রিয় ও মনোজ্ঞ ছিলেন। যেরূপ, আনন্দ, পুত্রগণ পিতার প্রিয় ও মনোজ্ঞ হয়, ব্রাহ্মণ-গৃহপতিগণও রাজার প্রিয় ও মনোজ্ঞ ছিলেন। আনন্দ, পূর্বকালে রাজা মহাসুদর্শন চতুরঙ্গিনী সেনাসহ উদ্যান ভূমিতে গমন করিয়াছিলেন। তখন ব্রাহ্মণ-গৃহপতিগণ, রাজার নিকট উপস্থিত হইয়া তাঁহাকে বলিলেন, “দেব মন্দ মন্দ গমন করুন, যাহাতে আমরা অপেক্ষাকৃত দীর্ঘকাল আপনার দর্শনলাভ করিতে পারি!” রাজাও সারথিকে বলিলেন, “সারথি, ধীরে ধীরে রথ চালনা করো, যাহাতে আমি ব্রাহ্মণ ও গৃহপতিগণকে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘকাল দেখিতে পাই।” আনন্দ, ইহাই রাজা মহাসুদর্শনের চতুর্থ ঋদ্ধি।”

“আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন এই চারি ঋদ্ধি সমন্বিত ছিলেন।”

২৫৩. “অনন্তর, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন চিন্তা করিলেন, “আমি এই তালকুঞ্জের মধ্যে প্রতি শতধনু অন্তর পুষ্করিণী খনন করাইব।”

“আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন সেই তালকুঞ্জে প্রতি শতধনু অন্তর পুষ্করিণীসমূহ খনন করাইলেন। ওই সকল পুষ্করিণী চারি প্রকার ইষ্টকের গ্রন্থন বিশিষ্ট ছিল, স্বর্ণময়, রৌপ্যময়, বৈদূর্যময় এবং স্ফটিকময়, এই চারি প্রকার। আনন্দ, ওই সকল পুষ্করিণীর চারি প্রকারের চারিটি করিয়া সোপান ছিল, একটি সোপান সুবর্ণময়, একটি রৌপ্যময়, একটি বৈদূর্যময় এবং একটি স্ফটিকময়। সুবর্ণময় সোপানের সুবর্ণময় স্তম্ভ, রজতময় সূচি ও উষ্ণীষ; রৌপ্যময় সোপানের রৌপ্যময় স্তম্ভ, সুবর্ণময় সূচি ও উষ্ণীষ; বৈদূর্যময় সোপানের বৈদূর্যময় স্তম্ভ, স্ফটিকময় সূচি ও উষ্ণীষ; স্ফটিকময় সোপানের স্ফটিকময় স্তম্ভ, বৈদূর্যময় সূচি ও উষ্ণীষ ছিল। আনন্দ, ওই পুষ্করিণীসমূহ দুইটি বেদিকা দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল, একটি বেদিকা সুবর্ণময়, একটি রজতময়; সুবর্ণময় বেদিকার সুবর্ণময় স্তম্ভ, রজতময় সূচি এবং উষ্ণীষ ছিল; রজতময় বেদিকার রজতময় স্তম্ভ, সুবর্ণময় সূচি এবং উষ্ণীষ ছিল।”

২৫৪. “অতঃপর আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন চিন্তা করিলেন, “আমি এই সকল পুষ্করিণীতে বর্ষস্থায়ী সর্বজনদুর্লভ উৎপল, পদ্ম, কুমুদ, পুণ্ডরীকসমূহ রোপণ করিব।” আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন ওই সকল পুষ্করিণীতে বর্ষস্থায়ী সর্বজন-দুর্লভ উৎপল, পদ্ম, কুমুদ, এবং পুণ্ডরীক রোপণ করিলেন।”

“তদনন্তর, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্র্শন এইরূপ চিন্তা করিলেন, “আমি এই সকল পুষ্করিণীর তীরে স্নাপক পুরুষ নিযুক্ত করিব, তাহারা আগতাগত জনগণকে স্নান করাইবে।” আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন সেই সকল পুষ্করিণীর তীরে স্নাপক পুরুষ নিযুক্ত করিলেন, তাহারা আগতাগত জনগণকে স্নান করাইবে।

“তৎপরে, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন চিন্তা করিলেন, “আমি এই সকল পুষ্করিণীর তীরে দানের প্রতিষ্ঠা করিব, অন্নার্থীকে অন্ন, পানার্থীকে পান, বস্ত্রার্থীকে বস্ত্র, যানার্থীকে যান, শয়নার্থীকে শয়ন, স্ত্রী-অর্থীকে স্ত্রী, হিরণ্যার্থীকে হিরণ্য, সুবর্ণার্থীকে সুবর্ণ দানের নিমিত্ত।” আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন সেই সকল পুষ্করিণীর তীরে দানের প্রতিষ্ঠা করিলেন, অন্নার্থীকে অন্ন, পানার্থীকে পান, বস্ত্রার্থীকে বস্ত্র, যানার্থীকে যান, শয়নার্থীকে শয়ন, স্ত্রী-অর্থীকে স্ত্রী, হিরণ্যার্থীকে হিরণ্য, সুবর্ণার্থীকে সুবর্ণ দানের নিমিত্ত।”

২৫৫. “আনন্দ, তখন ব্রাহ্মণ-গৃহপতিগণ প্রভূত ধন-সম্পত্তিসহ রাজা মহাসুদর্শনের নিকট উপস্থিত হইয়া তাঁহাকে বলিলেন, “দেব, এই সকল প্রভূত ধন-সম্পত্তি আপনারই জন্য আহৃত, আপনি ইহা গ্রহণ করুন।”

“ক্ষান্ত হউন, আমারও ন্যায় সঙ্গত বলিরূপে সংগৃহীত প্রভূত ধন-সম্পত্তি আছে। আপনারা যাহা লাভ করিয়াছেন তাহা আপনাদেরই ভোগ্য হউক, আমার নিকট হইতে আরও গ্রহণ করুন।”

“তাঁহারা রাজা কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হইয়া একপ্রান্তে গমন করিয়া চিন্তা করিলেন, “এই সকল ধন-সম্পত্তি পুনরায় স্বগৃহে লইয়া যাওয়া আমাদের উচিত নয়। অতএব, আমরা রাজা মহাসুদর্শনের নিমিত্ত বাসস্থান নির্মাণ করিব।”

“তাঁহারা রাজা মহাসুদর্শনের নিকট গমন করিয়া বলিলেন, “দেব, আপনার জন্য গৃহনির্মাণ করিব।”

“তখন, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন মৌন দ্বারা সম্মতি জ্ঞাপন করিলেন।”

২৫৬. “অনন্তর, আনন্দ, দেবরাজ ইন্দ্র স্বচিত্তে রাজা মহাসুদর্শনের চিত্তবিতর্ক জ্ঞাত হইয়া দেবপুত্র বিশ্বকর্মাকে বলিলেন, “সৌম্য বিশ্বকর্মা! রাজা মহাসুদর্শনের নিমিত্ত ধর্মপ্রাসাদ নামক বাসভবন নির্মাণ করো।”

“আনন্দ, দেবপুত্র বিশ্বকর্মা “তথাস্তু” বলিয়া দেবরাজ ইন্দ্রকে প্রতিশ্রুতি দানপূর্বক যেরূপ বলবান পুরুষ সংকুচিত বাহু প্রসারিত করেন, অথবা প্রসারিত বাহু সংকুচিত করেন, সেইরূপ ত্রয়স্ত্রিংশ দেবলোক হইতে অন্তর্হিত হইয়া রাজা মহাসুদর্শনের সম্মুখে আবির্ভূত হইলেন। পরে, আনন্দ, তিনি রাজা মহাসুদর্শনকে বলিলেন, “দেব, আপনার নিমিত্ত ধর্ম নামক প্রাসাদ নির্মাণ করিব।”

“আনন্দ, রাজা মৌন দ্বারা সম্মতি জ্ঞাপন করিলেন। তৎপরে দেবপুত্র বিশ্বকর্মা রাজার নিমিত্ত ধর্ম-প্রাসাদ নামক বাসভবন নির্মাণ করিলেন।”

“আনন্দ, ধর্ম-প্রাসাদ পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দৈর্ঘে যোজন পরিমাণ হইল, উত্তর ও দক্ষিণ দিকে বিস্তারে অর্ধযোজন পরিমাণ হইল।”

“আনন্দ, ধর্ম-প্রাসাদের ত্রিপুরুষোচ্চ ভিত্তি চতুর্বর্ণ ইষ্টকে নির্মিত হইল-সুবর্ণময়, রজতময়, বৈদূর্যময় এবং স্ফটিকময়।”

“আনন্দ, ধর্ম-প্রাসাদের চতুর্বর্ণের চতুরশীতি সহস্র স্তম্ভ ছিল, সুবর্ণময়, রজতময়, বৈদূর্যময় এবং স্ফটিকময়।”

“আনন্দ, ধর্ম-প্রাসাদ চতুর্বর্ণবিশিষ্ট আসনে সজ্জিত ছিল, সুবর্ণময়, রজতময়, বৈদূর্যময় এবং স্ফটিকময়।”

“আনন্দ, ধর্ম-প্রাসাদের চতুর্বিংশতি সংখ্যক চতুর্বিধ সোপান ছিল, সুবর্ণময়, রজতময়, বৈদূর্যময় এবং স্ফটিকময়। সুবর্ণময় সোপানের সুবর্ণময় স্তম্ভ, রজতময় সূচি ও উষ্ণীষ; রজতময় সোপানের রজতময় স্তম্ভ, সুবর্ণময় সূচি ও উষ্ণীষ; বৈদূর্যময় সোপানের বৈদূর্যময় স্তম্ভ, স্ফটিকময় সূচি ও উষ্ণীষ; স্ফটিকময় সোপানের স্ফটিকময় স্তম্ভ, বৈদূর্যময় সূচি ও উষ্ণীষ ছিল।”

“আনন্দ, ধর্ম-প্রাসাদে চতুরশীতি সহস্র কূটাগার ছিল, উহারা চতুর্বিধ-সুবর্ণময়, রৌপ্যময় বৈদূর্যময় এবং স্ফটিকময়। সুবর্ণময় কূটাগারে রজতময় পালঙ্ক স্থাপিত ছিল; রজতময় কূটাগারে সুবর্ণময় পালঙ্ক, বৈদূর্যময় কূটাগারে গজদন্ত নির্মিত পালঙ্ক, স্ফটিকময় কূটাগারে সারময় পালঙ্ক স্থাপিত ছিল। সুবর্ণময় কূটাগারের দ্বারে রৌপ্যময় তালবৃক্ষ ছিল, উহার রৌপ্যময় স্কন্ধ, সুবর্ণময় পত্র ও ফল; রজতময় কূটাগারের দ্বারে সুবর্ণময় তালবৃক্ষ, উহার সুবর্ণময় স্কন্ধ, রজতময় পত্র ও ফল; বৈদূর্যময় কূটাগারের দ্বারে স্ফটিকময় তালবৃক্ষ, উহার স্ফটিকময় স্কন্ধ, বৈদূর্যময় পত্র ও ফল, স্ফটিকময় কূটাগারের দ্বারে বৈদূর্যময় তালবৃক্ষ, উহার বৈদূর্যময় স্কন্ধ, স্ফটিকময় পত্র ও ফল।”

২৫৭. “অনন্তর, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন এইরূপ চিন্তা করিলেন, “আমি বৃহত্তম কূটাগারের দ্বারে দিবাভাগে বিশ্রামের জন্য সর্বসুবর্ণময় তালবন নির্মাণ করিব।”

“আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন বৃহত্তম কূটাগারের দ্বারে দিবা বিহারের নিমিত্ত সর্বসুবর্ণময় তালবন নির্মাণ করিলেন।”

২৫৮. “আনন্দ, ধর্ম-প্রাসাদ দুইটি বেদিকা দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল, একটি সুবর্ণময়, একটি রজতময়; সুবর্ণময় বেদিকার সুবর্ণময় স্তম্ভ, রজতময় সূচি ও উষ্ণীষ ছিল; রজতময় বেদিকার রজতময় স্তম্ভ, সুবর্ণময় সূচি ও উষ্ণীষ ছিল।”

“আনন্দ, ধর্ম-প্রাসাদ দুইটি কিঙ্কিণী জালে পরিবেষ্টিত ছিল, একটি জাল সুবর্ণময়, অপর রৌপ্যময়; সুবর্ণজালের রৌপ্যকিঙ্কিণী এবং রৌপ্যজালের সুবর্ণকিঙ্কিণী ছিল। আনন্দ, বাতালোড়িত ওই কিঙ্কিণী জাল হইতে মধুর, চিত্তরঞ্জক, কমনীয়, মুগ্ধকর শব্দ নির্গত হইত। আনন্দ, স্বরলয়যুক্ত পঞ্চাঙ্গিক তূর্যতাল নিপুণগণ কর্তৃক বাদিত হইলে উহার শব্দ যেরূপ মধুর, চিত্তরঞ্জক, কমনীয় এবং মুগ্ধকর হয়, সেইরূপই, আনন্দ, ওই সকল কিঙ্কিণী জাল বাতালোড়িত হইলে উহা হইতে মধুর, চিত্তরঞ্জক, কমনীয়, মুগ্ধকর শব্দ নির্গত হইত। আনন্দ, ওই সময়ে রাজধানী কুশাবতীর দ্যূতাসক্ত, পানোন্মত্ত, পানাসক্তগণ বাতকম্পিত সেই কিঙ্কিণী জালের শব্দের সহিত নৃত্য করিত।”

“আনন্দ, ধর্ম-প্রাসাদের নির্মাণ কার্য সমাপ্ত হইলে উহার দিকে দৃষ্টিপাত করা দুঃসাধ্য হইল, উহা চক্ষু অন্ধকর হইল। আনন্দ, যেরূপ বর্ষার শেষমাসে শারদ সময়ে নির্মল মেঘনির্মুক্ত আকাশে উদীয়মান আদিত্য দুর্নিরীক্ষ হয়, অন্ধকার হয়, এইরূপই, আনন্দ, ধর্ম-প্রাসাদ দুর্দর্শ ও অন্ধকার হইল।”

২৫৯. “অনন্তর আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন চিন্তা করিলেন, “আমি ধর্ম-প্রাসাদের সম্মুখে ধর্মনামক পুষ্করিণী খনন করাইব।”

“আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন ধর্ম-প্রাসাদের সম্মুখে ধর্ম নামক পুষ্করিণী খনন করাইলেন।

“আনন্দ, ধর্ম-পুষ্করিণী পূর্বে ও পশ্চিমে দৈর্ঘে যোজন পরিমিত ছিল; উত্তর ও দক্ষিণে অর্ধযোজন বিস্তারসম্পন্ন ছিল।”

“আনন্দ, ধর্ম-পুষ্করিণী চতুর্বিধ ইষ্টকের গ্রন্থন বিশিষ্ট ছিল, এক প্রকার সুবর্ণময়, এক প্রকার রৌপ্যময়, এক প্রকার বৈদূর্যময়, এক প্রকার স্ফটিকময়।”

“আনন্দ, ধর্ম-পুষ্করিণীর চতুর্দিকে চতুর্বিংশতি সোপান ছিল, এক সুবর্ণময়, এক রৌপ্যময়, এক বৈদূর্যময়, এক স্ফটিকময়। সুবর্ণময় সোপানের সুবর্ণময় স্তম্ভ এবং রৌপ্যময় সূচি ও উষ্ণীষ ছিল; রৌপ্যময় সোপানের রৌপ্যময় স্তম্ভ এবং সুবর্ণময় সূচি ও উষ্ণীষ ছিল; বৈদূর্যময় সোপানের বৈদূর্যময় স্তম্ভ এবং স্ফটিকময় সূচি ও উষ্ণীষ ছিল; স্ফটিকময় সোপানের স্ফটিকময় স্তম্ভ এবং বৈদূর্যময় সূচি ও উষ্ণীষ ছিল।”

“আনন্দ, ধর্ম-পুষ্করিণী দুইটি বেদিকা দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল, একটি বেদিকা সুবর্ণময়, একটি রৌপ্যময়। সুবর্ণময় বেদিকার সুবর্ণময় স্তম্ভ এবং রৌপ্যময় সূচি ও উষ্ণীষ ছিল; রৌপ্যময় বেদিকার রৌপ্যময় স্তম্ভ এবং সুবর্ণময় সূচি ও উষ্ণীষ ছিল।”

“আনন্দ, ধর্ম-পুষ্করিণী সাতটি তালপংক্তি দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল, একটি সুবর্ণময়, একটি রৌপ্যময়, একটি বৈদূর্যময়, একটি স্ফটিকময়, একটি লোহিতকময়, একটি মরকতময়, একটি সর্বরত্নময়। সুবর্ণময় তালের সুবর্ণময় স্কন্ধ এবং রৌপ্যময় পত্র ও ফল ছিল। রৌপ্যময় তালের রৌপ্যময় স্কন্ধ এবং সুবর্ণময় পত্র ও ফল; বৈদূর্যময় তালের বৈদূর্যময় স্কন্ধ এবং স্ফটিকময় পত্র ও ফল; স্ফটিকময় তালের স্ফটিকময় স্কন্ধ এবং বৈদূর্যময় পত্র ও ফল; লোহিতকময় তালের লোহিতকময় স্কন্ধ এবং মরকতময় পত্র ও ফল; মরকতময় তালের মরকতময় স্কন্ধ এবং লোহিতকময় পত্র ও ফল; সর্বরত্নময় তালের সর্বরত্নময় স্কন্ধ এবং সর্বরত্নময় পত্র ও ফল ছিল। আনন্দ, বাতকম্পিত ওই সকল তালপংক্তির শব্দ মধুর, চিত্তরঞ্জক, কমনীয় এবং মুগ্ধকর ছিল। আনন্দ, স্বরলয়যুক্ত পঞ্চাঙ্গিক তূর্য তাল-নিপুণগণ কর্তৃক বাদিত হইলে উহার শব্দ যেরূপ মধুর, চিত্তরঞ্জক, কমনীয় এবং মুগ্ধকর হয়, সেইরূপই বাতকম্পিত ওই সকল তালপংক্তির শব্দ মধুর, চিত্তরঞ্জক, কমনীয় এবং মুগ্ধকর ছিল। আনন্দ, ওই সময় রাজধানী কুশাবতীর দ্যূতাসক্ত, পানোন্মত্ত, পানাসক্তগণ বাতকম্পিত সেই তালপংক্তির শব্দের সহিত নৃত্য করিত।”

“আনন্দ, ধর্ম-প্রাসাদের নির্মাণকার্য এবং ধর্ম-পুষ্করিণীর খনন কার্য সম্পন্ন হইলে রাজা মহাসুদর্শন ওই সময়ে শ্রমণ ও ব্রাহ্মণগণের মধ্যে যাঁহারা সম্মানিত ছিলেন তাঁহাদের সর্বকামনা পূর্ণ করিয়া ধর্ম প্রাসাদে আরোহণ করিলেন।”

প্রথম ভাণবার সমাপ্ত।

দ্বিতীয় অধ্যায়

২৬০. “অতঃপর, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন চিন্তা করিলেন, “আমি যে এক্ষণে এতাদৃশ মহাপরাক্রমশালী ও মহানুভাব হইয়াছি, ইহা কোন কর্মের ফল, কোন কর্মের বিপাক?”

“তখন, আনন্দ, রাজা সুদর্শনের মনে এই চিন্তার উদয় হইল, “আমি যে এক্ষণে এতাদৃশ পরাক্রমশালী ও মহানুভাব হইয়াছি, ইহা তিন কর্মের ফল, তিন কর্মের বিপাক-দান, দম এবং সংযম।”

২৬১. “অনন্তর, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন মহাব্যূহ কূটাগারে গমনপূর্বক দ্বারদেশে দণ্ডায়মান হইলে তাঁহার মুখ হইতে উদান নির্গত হইল, “কাম-বিতর্ক! নিবৃত্ত হও, ব্যাপাদ-বিতর্ক! নিবৃত্ত হও, বিহিংসা-বিতর্ক! নিবৃত্ত হও। কাম-বিতর্ক আর নয়! ব্যাপাদ-বিতর্ক আর নয়! বিহিংসা বিতর্ক আর নয়!”

“অনন্তর, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন মহাব্যূহ কূটাগারে প্রবেশপূর্বক সুবর্ণময় পালঙ্কে উপবিষ্ট হইলেন এবং কাম ও অকুশলধর্ম হইতে বিবিক্ত হইয়া সবিতর্ক সবিচার বিবেকজ প্রীতিসুখ-মণ্ডিত প্রথম ধ্যান লাভ করিয়া উহাতে বিহার করিতে লাগিলেন। বিতর্ক বিচারের উপশমে অধ্যাত্ম-সম্প্রসাদী, চিত্তের একীভাব আনয়নকারী অবিতর্ক অবিচার সমাধিজ প্রীতিসুখ-মণ্ডিত দ্বিতীয় ধ্যান লাভ করিয়া উহাতে বিহার করিতে লাগিলেন। প্রীতিতেও বৈরাগ্য উৎপাদন করিয়া উপেক্ষাসম্পন্ন, স্মৃতিমান ও সম্প্রজ্ঞাত হইয়া বিহারপূর্বক তিনি কায়ে সুখ অনুভব করিলেন, যে সুখ সম্বন্ধে আর্যগণ কহিয়া থাকেন “উপেক্ষক, স্মৃতিমান, সুখবিহারী,” এবং এইরূপে তৃতীয় ধ্যান লাভ করিয়া উহাতে বিহার করিতে লাগিলেন। তিনি সুখ ও দুঃখ উভয়ই বর্জন করিয়া পূর্বেই সৌমনস্য-দৌর্মনস্যের অস্তগমনে না-দুঃখ না-সুখ রূপ উপেক্ষা ও স্মৃতি দ্বারা পরিশুদ্ধ চিত্তে চতুর্থ ধ্যান লাভ করিয়া উহাতে বিহার করিলেন।”

২৬২. “অনন্তর, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন মহাব্যূহ কূটাগার হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া সুবর্ণময় কূটাগারে প্রবেশপূর্বক রজতময় পালঙ্কে উপবিষ্ট হইয়া মৈত্রীসহগত চিত্তে একদিক, দুইদিক-এইরূপে যথাক্রমে চারিদিক ব্যাপ্ত করিয়া বিহার করিলেন। তিনি ঊর্ধ্ব, অধঃ, সর্বলোক সর্বদিক নিরবচ্ছিন্ন মৈত্রীসহগত চিত্তের দ্বারা বিপুল, মহদ্গত, অপ্রমেয় অবৈর এবং অহিংসা দ্বারা স্ফুরিত করিয়া বিহার করিলেন… করুণাসহগত চিত্তের দ্বারা… মুদিতাসহগত চিত্তের দ্বারা… উপেক্ষাসহগত চিত্তের দ্বারা এক, দুই-যথাক্রমে চারিদিক স্ফুরিত করিয়া বিহার করিলেন।”

২৬৩. “আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শনের রাজধানী কুশাবতী প্রমুখ চতুরশীতি সহস্র নগর ছিল।”

“ধর্ম-প্রাসাদ প্রমুখ চতুরশীতি সহস্র প্রাসাদ ছিল।”

“মহাব্যূহ কূটাগার প্রমুখ চতুরশীতি সহস্র কূটাগার ছিল।”

“চতুরশীতি সহস্র পালঙ্ক ছিল, কদলীমৃগ-প্রত্যস্তরণসম্পন্ন গোণক এবং পটলিকাস্তৃত চন্দ্রাতপ-শোভিত এবং উভয় পার্শ্বে লোহিত উপাধান বিশিষ্ট।”

“উপোসখ নাগরাজা প্রমুখ চতুরশীতি সহস্র হস্তী ছিল, সুবর্ণালংকার শোভিত, সুবর্ণধ্বজ, হেমজালাচ্ছাদিত।”

“বলাহক অশ্বরাজ প্রমুখ চতুরশীতি সহস্র অশ্ব ছিল, সুবর্ণালংকার শোভিত, সুবর্ণধ্বজ, হেমজালাচ্ছাদিত।”

“বৈজয়ন্ত রথ প্রমুখ চতুরশীতি সহস্র রথ ছিল, সিংহচর্ম পরিবৃত, ব্যাঘ্রচর্ম পরিবৃত, দ্বীপিচর্ম পরিবৃত, পাণ্ডু-কম্বল পরিবৃত, সুবর্ণালংকার শোভিত, সুবর্ণধ্বজ, হেমজালাচ্ছাদিত।”

“মণিরত্ন প্রমুখ চতুরশীতি সহস্র মণি ছিল।”

“সুভদ্রা দেবী প্রমুখ চতুরশীতি সহস্র স্ত্রী ছিল।”

“গৃহপতি রত্ন প্রমুখ চতুরশীতি সহস্র গৃহপতি ছিল।”

“পরিণায়ক রত্ন প্রমুখ চতুরশীতি ক্ষুদ্র রাজা ছিল।”

“দুকূল-বন্ধন এবং কংসভা-সহ চতুরশীতি সহস্র ধেনু ছিল।”

“চতুরশীতি সহস্র কোটি সূক্ষ্ম ক্ষৌম, কার্পাস, কৌশেয় এবং কম্বল নির্মিত পরিধেয় বস্ত্র ছিল।”

“চতুরশীতি সহস্র স্থালিপাক ছিল, উহাতে সায়ংকালে ও প্রাতে অন্ন পরিবেশিত হইত।”

২৬৪. “আনন্দ, ওই সময় রাজা মহাসুদর্শনের চতুরশীতি সহস্র হস্তী সায়াহ্নে ও প্রাতে তাঁহার সেবায় আসিত। রাজা চিন্তা করিলেন, “এই সকল চতুরশীতি সহস্র হস্তী সন্ধ্যায় ও প্রাতে আমার সেবায় আগমন করে। এখন হইতে প্রতি শত বৎসরের অবসানে দ্বি-চত্বারিংশ সহস্র হস্তী এক একবার আমার সেবায় আগমন করুক।”

“অনন্তর, আনন্দ, রাজা পরিণায়করত্নকে বলিলেন, “সৌম্য পরিণায়করত্ন! এই সকল চতুরশীতি সহস্র হস্তী সায়াহ্নে ও প্রাতে আমার সেবায় আগমন করে, এখন হইতে প্রতি শত বৎসরের অবসানে দ্বিচত্বারিংশ সহস্র হস্তী এক একবার আমার সেবায় আগমন করুক।”

“আনন্দ, পরিণায়করত্ন “দেব, তথাস্তু” কহিয়া প্রতিশ্রুত হইলেন। অতঃপর, আনন্দ, পরবর্তীকালে প্রতি শত বর্ষের অবসানে দ্বিচত্বারিংশ সহস্র হস্তী এক এক একবার মহাসুদর্শনের সেবায় আসিতে লাগিল।”

২৬৫. “তদনন্তর, আনন্দ, বহু শত, বহু সহস্র, বহু শত সহস্র বৎসরের অবসানে সুভদ্রা দেবীর মনে এইরূপ চিন্তার উদয় হইল, “আমি বহুদিন রাজা মহাসুদর্শনের দর্শন লাভ করি নাই, অতএব আমি তাঁহার দর্শনের নিমিত্ত গমন করিব।”

“তখন, আনন্দ, সুভদ্রা দেবী অন্তঃপুরচারিণীগণকে বলিলেন, “তোমরা স্নান করিয়া পীতবস্ত্র পরিধান করো, আমি বহুকাল রাজা মহাসুদর্শনকে দেখি নাই, আমরা রাজা মহাসুদর্শনের দর্শনার্থে গমন করিব।”

“আর্যে, তথাস্তু” বলিয়া অন্তঃপুরনারীগণ সুভদ্রা দেবীর নিকট প্রতিশ্রুত হইয়া স্নান সমাপনান্তে পীতবস্ত্র পরিধানপূর্বক সুভদ্রাদেবীর নিকট গমন করিল।”

“তখন, আনন্দ, সুভদ্রাদেবী পরিণায়করত্নকে বলিলেন, “সৌম্য পরিণায়করত্ন! চতুরঙ্গিনী সেনা সজ্জিত করো। আমরা রাজা মহাসুদর্শনকে বহু দিন দেখি নাই, তাঁহাকে দেখিবার জন্য গমন করিব।”

“আনন্দ, “দেবী, তথাস্তু” বলিয়া পরিণায়করত্ন সুভদ্রাদেবীর নিকট প্রতিশ্রুত হইয়া চতুরঙ্গিনী সেনা সজ্জিত করিয়া সুভদ্রাদেবীর নিকট সংবাদ প্রেরণ করিলেন, “দেবী, চতুরঙ্গিনী সেনা প্রস্তুত, এখন দেবীর ইচ্ছা।”

“তখন, আনন্দ, সুভদ্রাদেবী চতুরঙ্গিনী সেনাসহ পুরনারীগণের সহিত ধর্ম-প্রাসাদে গমন করিলেন, এবং প্রাসাদে আরোহণপূর্বক মহাব্যূহ কূটাগারে গমন করিয়া উহার দ্বারবাহু অবলম্বন করিয়া দণ্ডায়মান হইলেন।”

“অনন্তর, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন চিন্তা করিলেন, “বৃহৎ জনতার শব্দ, ইহার অর্থ কী?” তৎপরে তিনি মহাব্যূহ কূটাগার হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া সুভদ্রাদেবীকে দ্বারবাহু অবলম্বন করিয়া দণ্ডায়মান দেখিলেন এবং তাঁহাকে বলিলেন, “দেবী, এই স্থানেই অবস্থান করো, প্রবেশ করিও না।”

“অতঃপর, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন জনৈক কর্মচারীকে বলিলেন, “তুমি মহাব্যূহ কূটাগার হইতে সুবর্ণময় পালঙ্ক বাহির করিয়া সর্বসুবর্ণময় তালবনে স্থাপন করো।”

“আনন্দ, কর্মচারী “দেব, তথাস্তু” বলিয়া প্রতিশ্রুতি দানপূর্বক মহাব্যূহ কূটাগার হইতে সুবর্ণময় পালঙ্ক বহিষ্কৃত করিয়া সর্বসুবর্ণময় তালবনে স্থাপন করিলেন।”

“তৎপরে, আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন পাদোপরি পাদ স্থাপনপূর্বক স্মৃতি ও সম্প্রজ্ঞান সমন্বিত হইয়া দক্ষিণ পার্শ্ব আশ্রয় করিয়া সিংহ-শয্যায় শয়ন করিলেন।”

২৬৬. আনন্দ, তখন সুভদ্রাদেবী চিন্তা করিলেন, “রাজা মহাসুদর্শনের অঙ্গ প্রত্যঙ্গাদি শান্ত! ছবিবর্ণ পরিশুদ্ধ ও পর্যবদাত! রাজা মহাসুদর্শনের যেন মৃত্যু না হয়!”

“তিনি রাজা মহাসুদর্শনকে বলিলেন, “দেব, রাজধানী কুশাবতী প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র নগর, উহাতে প্রবৃত্তি উৎপাদন করুন, জীবনের কামনা করুন।”

“ধর্ম-প্রাসাদ প্রমুখ আপনার চতুরশীতি প্রাসাদ, উহাতে প্রবৃত্তি উৎপাদন করুন, জীবনের কামনা করুন।”

“মহাব্যূহ কূটাগার প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র কূটাগার উহাতে প্রবৃত্তি উৎপাদন করুন, জীবনের কামনা করুন।”

“আপনার চতুরশীতি সহস্র পালঙ্ক সুবর্ণময়, রৌপ্যময়, দন্তময়, সারময়, কদলীমৃগ প্রত্যস্তরণসম্পন্ন, গোণক এবং পটলিকাস্তৃত, চন্দ্রাতপ শোভিত, এবং উভয় পার্শ্বে লোহিত উপাধানবিশিষ্ট। দেব, উহাতে প্রবৃত্তি উৎপাদন করুন, জীবনের কামনা করুন।”

“উপোসখ নাগরাজ প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র হস্তী সুবর্ণালংকার শোভিত, সুবর্ণধ্বজ, হেমজালাচ্ছাদিত; দেব, উহাতে প্রবৃত্তি উৎপাদন করুন, জীবনের কামনা করুন।”

“দেব, বলাহক অশ্বরাজ প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র অশ্ব সুবর্ণালংকার শোভিত, সুবর্ণধ্বজ, হেমজালাচ্ছাদিত; দেব, উহাতে প্রবৃত্তি উৎপাদন করুন, জীবনের কামনা করুন।”

“বৈজয়ন্ত রথ প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র রথ সিংহচর্ম পরিবৃত, ব্যাঘ্রচর্ম পরিবৃত, দীপিচর্ম পরিবৃত, পাণ্ডু-কম্বল পরিবৃত, সুবর্ণালংকার শোভিত, সুবর্ণধ্বজ, হেমজালাচ্ছাদিত; দেব, উহাতে প্রবৃত্তি উৎপাদন করুন, জীবনের কামনা করুন।”

“মণিরত্ন প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র মণি; দেব, উহাতে প্রবৃত্তি উৎপাদন করুন, জীবনের কামনা করুন।”

“স্ত্রীরত্ন প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র স্ত্রী; উহাতে প্রবৃত্তি উৎপাদন করুন, জীবনের কামনা করুন।”

“গৃহপতিরত্ন প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র গৃহপতি; উহাতে প্রবৃত্তি উৎপাদন করুন, জীবনের কামনা করুন।”

“পরিণায়করত্ন প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র ক্ষুদ্র রাজা; উহাতে প্রবৃত্তি উৎপাদন করুন, জীবনের কামনা করুন।”

“দেব, আপনার দুকূল-বন্ধন এবং কংসভা-সহ চতুরশীতি সহস্র ধেনু; উহাতে প্রবৃত্তি উৎপাদন করুন, জীবনের কামনা করুন।”

“দেব, আপনার চতুরশীতি সহস্র কোটি সূক্ষ্ম ক্ষৌম, কার্পাস, কৌশেয় এবং কম্বল নির্মিত পরিধেয় বস্ত্র; উহাতে প্রবৃত্তি উৎপাদন করুন, জীবনের কামনা করুন।”

“দেব, সায়ংকালে ও প্রাতে আহার পরিবেশনের জন্য আপনার চতুরশীতি সহস্র স্থালিপাক; উহাতে প্রবৃত্তি উৎপাদন করুন, জীবনের কামনা করুন।”

২৬৭. “আনন্দ, এইরূপ উক্ত হইলে রাজা মহাসুদর্শন সুভদ্রাদেবীকে বলিলেন, “দেবী, তুমি দীর্ঘকাল আমার সহিত ইষ্ট, কান্ত, মনোজ্ঞ আচরণ করিয়াছ, অথচ আমার অন্তিমকালে তুমি যে আচরণ করিতেছ তাহা অনিষ্ট, অকান্ত, অমনোজ্ঞ।”

“দেব, তবে আমি কীরূপ আচরণ করিব?”

“দেবী, তুমি বল, দেব, যাহা কিছু আমাদের প্রিয় ও মনোজ্ঞ তৎসমুদয় হইতে আমাদিগকে বিচ্ছিন্ন হইতে হইবে, তাহাদিগকে ত্যাগ করিতে হইবে। দেব, আপনি কামনাযুক্ত হইয়া প্রাণত্যাগ করিবেন না। কামনাযুক্ত মৃত্যু দুঃখময়, কামনাযুক্ত হইয়া যে প্রাণত্যাগ করে সে নিন্দিত হয়।”

“দেব, কুশাবতী রাজধানী প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র নগর; ইহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, ধর্ম-প্রাসাদ প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র প্রাসাদ; ইহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, মহাব্যূহ কূটাগার প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র কূটাগার; ইহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, আপনার চতুরশীতি সহস্র পালঙ্ক-সুবর্ণময়, রৌপ্যময়, দন্তময়, সারময়, কদলীমৃগ প্রত্যাস্তরণসম্পন্ন, গোণক এবং পটলিকাস্তৃত, চন্দ্রাতপশোভিত এবং উভয় পার্শ্বে লোহিত উপাধানবিশিষ্ট। দেব, ইহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, উপোসখ নাগরাজ প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র হস্তী সুবর্ণালংকার শোভিত, সুবর্ণধ্বজ, হেমজালাচ্ছাদিত; দেব, উহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, বলাহক অশ্বরাজ প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র অশ্ব সুবর্ণালংকার শোভিত, সুবর্ণধ্বজ, হেমজালাচ্ছাদিত; দেব, উহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, বৈজয়ন্ত রথ প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র রথ-সিংহচর্ম পরিবৃত, ব্যাঘ্রচর্ম পরিবৃত, দ্বীপিচর্ম পরিবৃত, পাণ্ডুকম্বল পরিবৃত, সুবর্ণালংকার শোভিত, সুবর্ণধ্বজ, হেমজালাচ্ছাদিত; দেব, উহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, মণিরত্ন প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র মণি; উহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, সুভদ্রাদেবী প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র স্ত্রী; ইহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, গৃহপতিরত্ন প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র গৃহপতি; ইহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, পরিণায়করত্ন প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র ক্ষুদ্র রাজা; ইহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, দুকূল-বন্ধন এবং কংসভা-সহ আপনার চতুরশীতি সহস্র ধেনু; উহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, আপনার চতুরশীতি সহস্র কোটি সূক্ষ্ম ক্ষৌম, কার্পাস, কৌশেয় এবং কম্বল-নির্মিত পরিধেয় বস্ত্র; উহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, সায়ংকালে ও প্রাতে আহার পরিবেশনের জন্য আপনার চতুরশীতি সহস্র স্থালিপাক; উহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

২৬৮. “আনন্দ, এইরূপ উক্ত হইলে সুভদ্রাদেবী রোদন ও অশ্রুমোচন করিলেন। অতঃপর, আনন্দ, সুভদ্রাদেবী অশ্রু মুছিয়া রাজা মহাসুদর্শনকে বলিলেন, “সর্ববিধ প্রিয় ও মনোজ্ঞ হইতে বিভিন্নতা, বিচ্ছেদ ও পার্থক্য হয়। দেব, আপনি কামনাযুক্ত হইয়া দেহত্যাগ করিবেন না। কামনাযুক্ত মৃত্যু দুঃখময়, কামনাযুক্ত হইয়া যে প্রাণত্যাগ করে সে নিন্দিত হয়।”

“দেব, কুশাবতী রাজধানী প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র নগর; ইহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, ধর্ম-প্রাসাদ প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র প্রাসাদ; ইহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, মহাব্যূহ কূটাগার প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র কূটাগার; ইহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, আপনার চতুরশীতি সহস্র পালঙ্ক সুবর্ণময়, রৌপ্যময়, দন্তময়, সারময়, কদলীমৃগ প্রত্যাস্তরণসম্পন্ন, গোণক এবং পটলিকাস্তৃত, চন্দ্রাতপ শোভিত এবং উভয় পার্শ্বে লোহিত উপাধানবিশিষ্ট। দেব, ইহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, উপোসখ নাগরাজ প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র হস্তী সুবর্ণালংকার শোভিত, সুবর্ণধ্বজ, হেমজালাচ্ছাদিত; দেব, উহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, বলাহক অশ্বরাজ প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র অশ্ব সুবর্ণালংকার শোভিত, সুবর্ণধ্বজ, হেমজালাচ্ছাদিত; দেব, উহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, বৈজয়ন্ত রথ প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র রথ সিংহচর্ম পরিবৃত, ব্যাঘ্রচর্ম পরিবৃত, দ্বীপিচর্ম পরিবৃত, পাণ্ডুকম্বল পরিবৃত, সুবর্ণালংকার শোভিত, সুবর্ণধ্বজ, হেমজালাচ্ছাদিত; দেব, উহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, মণিরত্ন প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র মণি; উহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, সুভদ্রাদেবী প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র স্ত্রী; ইহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, গৃহপতিরত্ন প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র গৃহপতি; ইহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, পরিণায়করত্ন প্রমুখ আপনার চতুরশীতি সহস্র ক্ষুদ্র রাজা; ইহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, দুকূল-বন্ধন এবং কংসভা-সহ আপনার চতুরশীতি সহস্র ধেনু; উহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, আপনার চতুরশীতি সহস্র কোটি সূক্ষ্ম ক্ষৌম, কার্পাস, কৌশেয় এবং কম্বল-নির্মিত পরিধেয় বস্ত্র; উহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

“দেব, সায়ংকালে ও প্রাতে আহার পরিবেশনের জন্য আপনার চতুরশীতি সহস্র স্থালিপাক; উহাতে কামনা ত্যাগ করুন, জীবনের কামনা করিবেন না।”

২৬৯. “আনন্দ, তৎপরে রাজা মহাসুদর্শন অনতিবিলম্বে প্রাণত্যাগ করিলেন। আনন্দ, যেরূপ উত্তম আহারান্তে গৃহপতি অথবা গৃহপতি-পুত্র তন্দ্রাভিভূত হইয়া থাকেন, রাজা মহাসুদর্শনের অন্তিমকালের বেদনাও সেইরূপ হইয়াছিল। আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন মৃত্যুর পর সুখময় ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হইলেন। আনন্দ, রাজা মহাসুদর্শন চতুরশীতি সহস্র বৎসর রাজকুমারের জীবন-যাপন করিয়াছিলেন, চতুরশীতি সহস্র বৎসর ঔপরাজ্য করিয়াছিলেন, চতুরশীতি সহস্র বৎসর রাজত্ব করিয়াছিলেন, চতুরশীতি সহস্র বৎসর গৃহী হইয়া ধর্ম-প্রাসাদে ব্রহ্মচর্য্য পালন করিয়াছিলেন। তিনি চারি ব্রহ্মবিহারের ভাবনা করিয়া মরণান্তে দেহের বিনাশে ব্রহ্মলোকে গমন করিয়াছিলেন।

২৭০. “আনন্দ, তোমার মনে হইতে পারে, “অপর কেহ ওই সময়ে রাজা মহাসুদর্শন ছিলেন, কিন্তু, আনন্দ, তাহা নয়। আমি ওই সময়ে রাজা মহাসুদর্শন ছিলাম।”

“রাজধানী কুশাবতী প্রমুখ চতুরশীতি সহস্র নগর আমারই ছিল;

“ধর্ম-প্রাসাদ প্রমুখ চতুরশীতি সহস্র প্রাসাদ আমারই ছিল;

“মহাব্যূহ কূটাগার প্রমুখ চতুরশীতি সহস্র কূটাগার আমারই ছিল;

“ওই সকল চতুরশীতি সহস্র পালঙ্ক সুবর্ণময়, রৌপ্যময়, দন্তময়, সারময়, কদলীমৃগ-প্রত্যাস্তরণসম্পন্ন, গোণক এবং পটলিকাস্তৃত, চন্দ্রাতপ শোভিত, এবং উভয় পার্শ্বে লোহিত উপাধান বিশিষ্ট আমারই ছিল;

“উপোসখ নামক নাগরাজ প্রমুখ চতুরশীতি সহস্র হস্তী সুবর্ণালঙ্কারে শোভিত, সুবর্ণধ্বজ, হেমজালাচ্ছাদিত আমারই ছিল;

“বলাহক নামক অশ্বরাজ প্রমুখ চতুরশীতি সহস্র অশ্ব সুবর্ণালংকার শোভিত, সুবর্ণধ্বজ, হেমজালাচ্ছাদিত আমারই ছিল;

“বৈজয়ন্ত নামক রথ প্রমুখ চতুরশীতি সহস্র রথ্তসিংহচর্ম পরিবৃত, ব্যাঘ্রচর্ম পরিবৃত, দ্বীপিচর্ম পরিবৃত, পাণ্ডুকম্বল পরিবৃত, সুবর্ণালংকার শোভিত, সুবর্ণধ্বজ, হেমজালাচ্ছাদিত আমারই ছিল;

“মণিরত্ন প্রমুখ চতুরশীতি সহস্র রত্ন আমারই ছিল;

“সুভদ্রাদেবী প্রমুখ চতুরশীতি সহস্র স্ত্রী আমারই ছিল;

“গৃহপতিরত্ন প্রমুখ চতুরশীতি সহস্র গৃহপতি আমারই ছিল;

“পরিণায়করত্ন প্রমুখ চতুরশীতি সহস্র ক্ষুদ্র রাজা আমারই ছিল;

“দুকূল-বন্ধন ও কংসভা-সহ চতুরশীতি সহস্র ধেনু আমারই ছিল;

“চতুরশীতি সহস্র কোটি সূক্ষ্ম ক্ষৌম, কার্পাস, কৌশেয় এবং কম্বল নির্মিত পরিধেয় বস্ত্র আমারই ছিল;

“সায়ংকালে ও প্রাতে আহার পরিবেশনের জন্য চতুরশীতি সহস্র স্থালিপাক আমারই ছিল;

২৭১. “আনন্দ, ওই সকল চতুরশীতি সহস্র নগরের মধ্যে একটি ছিল যেখানে আমি বাস করিতাম, উহা রাজধানী কুশাবতী।”

“চতুরশীতি সহস্র প্রাসাদের মধ্যে একটি ছিল যাহাতে আমি বাস করিতাম, উহা ধর্ম-প্রাসাদ।”

“চতুরশীতি সহস্র কূটাগারের মধ্যে একটি ছিল যাহাতে আমি বাস করিতাম, উহা মহাব্যূহ কূটাগার।”

“চতুরশীতি সহস্র পালঙ্কের মধ্যে একটি ছিল যাহাতে আমি উপবেশন করিতাম, উহা সুবর্ণময়, রজতময়, দন্তময় অথবা সারময়।

“চতুরশীতি সহস্র নাগের মধ্যে একটি ছিল যাহাতে আমি আরোহণ করিতাম, উহা উপোসখ নাগরাজ।”

“চতুরশীতি সহস্র অশ্বের মধ্যে একটি ছিল যাহাতে আমি আরোহণ করিতাম, উহা বলাহক অশ্বরাজ।”

“চতুরশীতি সহস্র রথের মধ্যে একটি ছিল যাহাতে আমি আরোহণ করিতাম, উহা বৈজয়ন্ত রথ।”

“চতুরশীতি সহস্র স্ত্রীর মধ্যে একজন ছিল যে ওই সময় আমার সেবায় রত থাকিত ক্ষত্রিয়ানী অথবা বেলামিকানী।”

“ওই সকল চতুরশীতি সহস্র কোটি বস্ত্রের মধ্যে একটি ছিল সূক্ষ্ম, ক্ষৌম, কার্পাস, কৌশেয় অথবা কম্বল নির্মিত যাহা আমি পরিধান করিতাম।”

“চতুরশীতি সহস্র স্থালিপাকের মধ্যে একটি ছিল যাহা হইতে আমি নালি পরিমিত উৎকৃষ্ট অন্ন অনুরূপ ব্যঞ্জনসহ গ্রহণ করিতাম।”

২৭২. “আনন্দ, দেখ, ওই সকল বস্তু, অতীত, নিরুদ্ধ, বিপরিণত। এইরূপই, আনন্দ, সর্বসংস্কার অনিত্য, এতই, আনন্দ, সর্বসংস্কার অধ্রূব, এতই, আনন্দ, সর্বসংস্কার অবিশ্বাস্য। অতএব, আনন্দ, সর্বসংস্কারে বিরাগোৎপাদনই উচিত, উহা হইতে বিবিক্ত ও বিমুক্ত হওয়াই উচিত।”

“আনন্দ, আমি স্মরণ করিতেছি যে, এইস্থানে আমি ছয়বার দেহ নিক্ষেপ করিয়াছিলাম। যখন আমি এই স্থানে ধর্মপরায়ণ রাজচক্রবর্তী, ধর্মরাজ, চতুরন্তবিজেতা, জনপদের নিরাপত্তা প্রাপ্ত, সপ্তরত্ন সমন্বিত বাস করিয়াছিলাম, সেই সময়েই আমার সপ্তম দেহ নিক্ষেপ হইয়াছিল। আনন্দ, দেবলোকসহ পৃথিবীতে, মার লোকে, ব্রহ্মলোকে, শ্রমণ, ব্রাহ্মণ, দেব ও মনুষ্যের মধ্যে আমি এমন কোনো স্থানই দেখিতেছি না যেখানে আমি অষ্টমবার দেহ নিক্ষেপ করিব।”

ভগবান এইরূপ বলিলেন। সুগত শাস্তা পুনরায় বলিলেন :

সংস্কারসমূহ অনিত্য, তাহারা উৎপত্তি
ও ধ্বংসশীল, উৎপন্ন হইয়া তাহারা
নিরুদ্ধ হয়, তাহাদের উপশমই সুখ।”

মহাসুদর্শন সূত্রান্ত সমাপ্ত।

The Long Discourses

|_II. The Great Chapter

DN17. মহাসুদর্শন সূত্রান্ত

Translations [19]

English

繁體字

日本語

Deutsch

Italiano

Português

Norsk

Srpski

עִבְרִית

हिंदी

ಕನ್ನಡ

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference