(মহাস্মৃতিপ্রস্থান সূত্রান্ত)

৩৭২. আমি এইরূপ শ্রবণ করিয়াছি। একসময়ে ভগবান কুরুরাজ্যে অবস্থান করিতেছিলেন। কম্মাসধম্ম নামে কুরুদেশে একটি নগর আছে। সেইস্থানে ভগবান ভিক্ষুগণকে সম্বোধন করিলেন, “ভিক্ষুগণ,” ভিক্ষুগণ উত্তর করিলেন “ভন্তে,” তখন ভগবান বলিলেন :

৩৭৩. ভিক্ষুগণ, সত্ত্বগণের বিশুদ্ধির নিমিত্ত, শোক ও বিলাপের বিনাশের জন্য, দুঃখ ও দৌর্মনস্য দূর করিবার জন্য, সত্য প্রাপ্তি ও নির্বাণের সাক্ষাৎকারের নিমিত্ত চারি স্মৃতিপ্রস্থান একমাত্র মার্গ।

ওই চারিটি কী কী? ভিক্ষুগণ? এই শাসনে ভিক্ষু কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া, উদ্দীপনা, সম্প্রজ্ঞান ও স্মৃতিসম্পন্ন হইয়া লোকসুলভ অভিধ্যা দৌর্মনস্য বিদূরিত করিয়া বিহার করেন-বেদনায় বেদনানুদর্শী হইয়া উদ্দীপনা, সম্প্রজ্ঞান ও স্মৃতিসম্পন্ন হইয়া লোকসুলভ অভিধ্যা দৌর্মনস্য বিদূরিত করিয়া বিহার করেন-চিত্তে চিত্তানুদর্শী হইয়া উদ্দীপনা, সম্প্রজ্ঞান ও স্মৃতিসম্পন্ন হইয়া লোকসুলভ অভিধ্যা দৌর্মনস্য বিদূরিত করিয়া বিহার করেন-ধর্মে ধর্মানুদর্শী হইয়া উদ্দীপনা, সম্প্রজ্ঞান ও স্মৃতিসম্পন্ন হইয়া লোকসুলভ অভিধ্যা দৌর্মনস্য বিদূরিত করিয়া বিহার করেন।

৩৭৪. কিরূপে ভিক্ষু কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া বিহার করেন?

ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু অরণ্য, বৃক্ষমূল অথবা শূন্যাগারে গমন করিয়া পর্যঙ্কাবদ্ধ হইয়া দেহকে ঋজুভাবে রক্ষা করিয়া পরিমুখে স্মৃতি উপস্থাপিত করিয়া উপবেশন করেন। তিনি স্মৃতিসম্পন্ন হইয়া শ্বাস ত্যাগ করেন, স্মৃতিসম্পন্ন হইয়া উহা গ্রহণ করেন। দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করিলে “দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করিতেছি” ইহা জানেন। দীর্ঘশ্বাস গ্রহণ করিলে “দীর্ঘশ্বাস গ্রহণ করিতেছি” ইহা জানেন। হ্রস্বশ্বাস ত্যাগ করিলে “হ্রস্বশ্বাস ত্যাগ করিতেছি” ইহা জানেন; হ্রস্বশ্বাস গ্রহণ করিলে “হ্রস্বশ্বাস গ্রহণ করিতেছি” ইহা জানেন। “সর্বদেহের অনুভূতিসম্পন্ন হইয়া “শ্বাস ত্যাগ করিতেছি” এইরূপ অভ্যাস করেন; সর্বদেহের অনুভূতিসম্পন্ন হইয়া “শ্বাস গ্রহণ করিতেছি” এইরূপ অভ্যাস করেন। “কায়-সংস্কারকে প্রশ্রব্ধ করিয়া শ্বাস ত্যাগ করিতেছি” এইরূপ অভ্যাস করেন; কায়-সংস্কারকে প্রশ্রব্ধ করিয়া শ্বাস গ্রহণ করিতেছি” এইরূপ অভ্যাস করেন।

ভিক্ষুগণ, যেরূপ কোনো দক্ষ ভ্রমকার অথবা তাহার শিক্ষার্থী দীর্ঘ সূত্র আকর্ষণ করিলে “দীর্ঘ আকর্ষণ করিতেছি” ইহা জানে; অথবা হ্রস্ব আকর্ষণ করিলে “হ্রস্ব আকর্ষণ করিতেছি” ইহা জানে, সেইরূপই, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু দীর্ঘশ্বাস ত্যাগকালে… “দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করিতেছি… প্রশ্রব্ধ করিয়া শ্বাস গ্রহণ করিতেছি” এইরূপ অভ্যাস করেন।

এইরূপে তিনি অধ্যাত্মে কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, বাহিরে কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, অথবা অধ্যাত্মে ও বাহিরে কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া বিহার করেন; কায়ে উৎপত্তি ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন; অথবা কায়ে বিনাশ ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন; অথবা কায়ে উৎপত্তি ও বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন; অথবা “কায় বিদ্যমান” তাঁহার এই স্মৃতি উৎপন্ন হয় কেবল জ্ঞান ও প্রতিস্মৃতির জন্য; তিনি অনিশ্রিত হইয়া অবস্থান করেন, জগতের কোনো বস্তুতেই আসক্তির উৎপাদন করেন না। ভিক্ষুগণ, এইরূপেই ভিক্ষু কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

৩৭৫. পুনশ্চ, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু গমনকালে “গমন করিতেছি” ইহা উত্তমরূপে জানেন; দণ্ডায়মান থাকিলে “দণ্ডায়মান রহিয়াছি” ইহা উত্তমরূপে জানেন, “উপবিষ্ট থাকিলে “উপবিষ্ট আছি” ইহা উত্তমরূপে জানেন; শায়িত থাকিলে “শয়ন করিয়া আছি” ইহা উত্তমরূপে জানেন। এইরূপে যখন তাঁহার দেহ যেরূপে অবস্থিত হয় তখন তিনি তাহা সেইরূপেই দেখেন।

এইরূপে তিনি অধ্যাত্মে, বাহিরে, অথবা অধ্যাত্মে ও বাহিরে কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন; কায়ে উৎপত্তি-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, উৎপত্তি ও বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন; “কায় বিদ্যমান” তাঁহার এই স্মৃতি উৎপন্ন হয় কেবল জ্ঞান ও প্রতিস্মৃতির জন্য; তিনি অনিশ্রিত হইয়া অবস্থান করেন, জগতের কোনো বস্তুতেই আসক্তির উৎপাদন করেন না। ভিক্ষুগণ, এইরূপেই ভিক্ষু কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

৩৭৬. পুনশ্চ, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু গমনে প্রত্যাগমনে সম্প্রজ্ঞান অনুশীলনকারী হন; অবলোকনে, বিলোকনে, সঙ্কোচনে, প্রসারণে, সংঘাটি-পাত্র-চীবর ধারণে, আহারে, পানে, খাদনে, আস্বাদনে, শরীরকৃত্য সম্পাদনে, গতিতে, স্থিতিতে, উপবেশনে, শয়নে, জাগরণে, ভাষণে, তূষ্ণীম্ভাবে সম্প্রজ্ঞান অনুশীলন করেন।

এইরূপে তিনি অধ্যাত্মে, বাহিরে অথবা অধ্যাত্মে ও বাহিরে কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন; কায়ে উৎপত্তি-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, উৎপত্তি ও বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন; “কায় বিদ্যমান” তাঁহার এই স্মৃতি উৎপন্ন হয় কেবল জ্ঞান ও প্রতিস্মৃতির জন্য; তিনি অনিশ্রিত হইয়া অবস্থান করেন, জগতের কোনো বস্তুতেই আসক্তির উৎপাদন করেন না। এইরূপেই, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

৩৭৭. পুনশ্চ, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু পদতল হইতে ঊর্ধ্বে এবং কেশাগ্র হইতে নিম্নে ত্বকপরিবেষ্টিত নানাপ্রকার অশুচিপূর্ণ এই দেহকে প্রত্যবেক্ষণ করেন, “এই দেহে কেশ, লোম, নখ, দন্ত, ত্বক, মাংস, স্নায়ু, অস্থি, মজ্জা, মূত্রাশয়, হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ, ক্লোম পিত্তকোষ, প্লীহা, ফুসফুস, অন্ত্র, ক্ষুদ্রান্ত্র, উদর, পুরীষ, পিত্ত, শ্লেষ্মা, পূয, রক্ত, স্বেদ, মেদ, অশ্রু, লালা, নাসামল, লসিকা ও মূত্র আছে।”

যেরূপ, ভিক্ষুগণ, শালি, বৃহি, মুগ, মাষ, তিল, তণ্ডুলাদি নানাবিধ শস্যপূর্ণ দ্বিমুখবিশিষ্ট গোণী অনাবৃত করিয়া চক্ষুষ্মান পুরুষ প্রত্যবেক্ষণ করেন, “ইহা শালি, ইহা বৃহি, ইহা মুগ, ইহা মাষ, ইহা তিল, ইহা তণ্ডুল”, সেইরূপই ভিক্ষু পদতল হইতে ঊর্ধ্বে এবং কেশাগ্র হইতে নিম্নে ত্বক পরিবেষ্টিত নানাপ্রকার অশুচিপূর্ণ এই দেহকে প্রত্যবেক্ষণ করেন, “এই দেহে কেশ, লোম, নখ, দন্ত, ত্বক, মাংস, স্নায়ু, অস্থি, মজ্জা, মূত্রাশয়, হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ, ক্লোম পিত্তকোষ, প্লীহা, ফুসফুস, অন্ত্র, ক্ষুদ্রান্ত্র, উদর, পুরীষ, পিত্ত, শ্লেষ্মা, পূয, রক্ত, স্বেদ, মেদ, অশ্রু, লালা, নাসামল, লসিকা ও মূত্র আছে।”

এইরূপে তিনি অধ্যাত্মে, বাহিরে অথবা অধ্যাত্মে ও বাহিরে কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন; কায়ে উৎপত্তি-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, উৎপত্তি ও বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন; “কায় বিদ্যমান” তাঁহার এই স্মৃতি উৎপন্ন হয় কেবল জ্ঞান ও প্রতিস্মৃতির জন্য; তিনি অনিশ্রিত হইয়া অবস্থান করেন, জগতের কোনো বস্তুতেই আসক্তির উৎপাদন করেন না। এইরূপেই, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

৩৭৮. পুনশ্চ, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু এই দেহ যেরূপেই স্থাপিত হউক, যেরূপেই অবস্থিত হউক, উহাকে উহার মূল তত্ত্বানুসারে প্রত্যবেক্ষণ করেন, “এই দেহে ক্ষিতি, আপ, তেজ এবং বায়ুধাতু আছে।”

যেরূপ, ভিক্ষুগণ, দক্ষ গো-ঘাতক অথবা তাহার সহকারী গাভী বধ করিয়া উহা খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত করিয়া চতুর্মহাপথে উপবিষ্ট থাকে, সেইরূপেই ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু এই দেহ যেরূপেই স্থাপিত হউক, যেরূপেই অবস্থিত হউক, উহাকে উহার মূল তত্ত্বানুসারে প্রত্যবেক্ষণ করেন, “এই দেহে ক্ষিতি, আপ, তেজ এবং বায়ুধাতু আছে।”

এইরূপে তিনি অধ্যাত্মে, বাহিরে অথবা অধ্যাত্মে ও বাহিরে কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন; কায়ে উৎপত্তি-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, উৎপত্তি ও বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন; “কায় বিদ্যমান” তাঁহার এই স্মৃতি উৎপন্ন হয় কেবল জ্ঞান ও প্রতিস্মৃতির জন্য; তিনি অনিশ্রিত হইয়া অবস্থান করেন, জগতের কোনো বস্তুতেই আসক্তির উৎপাদন করেন না। এইরূপেই, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

৩৭৯. পুনশ্চ, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু শ্মশানে পরিত্যক্ত একদিনের মৃত, দুই দিনের অথবা তিন দিনের মৃত, স্ফীত, বিনীল, পূযপূর্ণ দেহ দেখেন, তখন তিনি ওই দেহকে স্বীয় দেহের সহিত তুলনা করিয়া চিন্তা করেন, “এই দেহও ওইরূপ ধর্মবিশিষ্ট, ওইরূপ পরিণামসম্পন্ন, ইহা ওই নিয়মের অনতীত।”

এইরূপে তিনি অধ্যাত্মে, বাহিরে অথবা অধ্যাত্মে ও বাহিরে কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন; কায়ে উৎপত্তি-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, উৎপত্তি ও বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন; “কায় বিদ্যমান” তাঁহার এই স্মৃতি উৎপন্ন হয় কেবল জ্ঞান ও প্রতিস্মৃতির জন্য; তিনি অনিশ্রিত হইয়া অবস্থান করেন, জগতের কোনো বস্তুতেই আসক্তির উৎপাদন করেন না। এইরূপেই, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

পুনশ্চ, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু দেখিতে পান শ্মশানে পরিত্যক্ত দেহকে কাক, কুলাল, গৃধ্র, কুক্কুর, শৃগাল প্রভৃতি বিবিধ প্রাণী ভক্ষণ করিতেছে, তখন তিনি ওই দেহকে স্বীয় দেহের সহিত তুলনা করিয়া চিন্তা করেন, “এই দেহও ওইরূপ ধর্মবিশিষ্ট, ওইরূপ পরিণামসম্পন্ন, ইহা ওই নিয়মের অনতীত।”

এইরূপে তিনি অধ্যাত্মে, বাহিরে অথবা অধ্যাত্মে ও বাহিরে কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন; কায়ে উৎপত্তি-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, উৎপত্তি ও বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন; “কায় বিদ্যমান” তাঁহার এই স্মৃতি উৎপন্ন হয় কেবল জ্ঞান ও প্রতিস্মৃতির জন্য; তিনি অনিশ্রিত হইয়া অবস্থান করেন, জগতের কোনো বস্তুতেই আসক্তির উৎপাদন করেন না। এইরূপেই, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

পুনশ্চ, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু দেখিতে পান শ্মশানে পরিত্যক্ত দেহ অস্থি-শৃঙ্খল, রক্তমাংসযুক্ত স্নায়ুবদ্ধ… অস্থিশৃঙ্খল মাংসহীন রক্তমক্ষিত স্নায়ুবদ্ধ… অস্থিশৃঙ্খল রক্তমাংসহীন স্নায়ুসম্বন্ধ… চতুর্দিকে বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন অস্থিপুঞ্জ, একস্থানে হস্তাস্থি, একস্থানে পাদাস্থি, একস্থানে জঙ্ঘা-অস্থি, একস্থানে ঊর্ব-অস্থি, একস্থানে কটি-অস্থি, এক স্থানে পৃষ্ঠাস্থি, একস্থানে শীর্ষকটাহ; তখন তিনি ওই দেহকে স্বীয় দেহের সহিত তুলনা করিয়া চিন্তা করেন :

“এই দেহও ওইরূপ ধর্মবিশিষ্ট, ওইরূপ পরিণামসম্পন্ন, ইহা ওই নিয়মের অনতীত।”

এইরূপে তিনি অধ্যাত্মে, বাহিরে অথবা অধ্যাত্মে ও বাহিরে কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন; কায়ে উৎপত্তি-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, উৎপত্তি ও বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন; “কায় বিদ্যমান” তাঁহার এই স্মৃতি উৎপন্ন হয় কেবল জ্ঞান ও প্রতিস্মৃতির জন্য; তিনি অনিশ্রিত হইয়া অবস্থান করেন, জগতের কোনো বস্তুতেই আসক্তির উৎপাদন করেন না। এইরূপেই, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

পুনশ্চ, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু দেখিতে পান শ্মশানে পরিত্যক্ত দেহ, উহা শ্বেত শঙ্খবর্ণনিভ… উহার বর্ষাধিকের পুঞ্জীভূত গলিত চূর্ণীকৃত অস্থিপুঞ্জ; তখন তিনি ওই দেহকে স্বীয় দেহের সহিত তুলনা করিয়া চিন্তা করেন, “এই দেহও ওইরূপ ধর্মবিশিষ্ট, ওইরূপ পরিণামসম্পন্ন, ইহা ওই নিয়মের অনতীত।”

এইরূপে তিনি অধ্যাত্মে, বাহিরে অথবা অধ্যাত্মে ও বাহিরে কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন; কায়ে উৎপত্তি-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, উৎপত্তি ও বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন; “কায় বিদ্যমান” তাঁহার এই স্মৃতি উৎপন্ন হয় কেবল জ্ঞান ও প্রতিস্মৃতির জন্য; তিনি অনিশ্রিত হইয়া অবস্থান করেন, জগতের কোনো বস্তুতেই আসক্তির উৎপাদন করেন না। এইরূপেই, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

৩৮০. ভিক্ষুগণ, কী প্রকারে ভিক্ষু বেদনায় বেদনানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন?

ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু সুখবেদনা অনুভবকালে “সুখবেদনা অনুভব করিতেছি” ইহা জানেন, দুঃখবেদনা অনুভব কালে “দুঃখবেদনা অনুভব করিতেছি” ইহা জানেন, অ-দুঃখ অ-সুখ বেদনা অনুভবকালে “অ-দুঃখ অ-সুখ বেদনা অনুভব করিতেছি” ইহা জানেন, সামিষ পার্থিব সুখ-বেদনা অনুভবকালে “সামিষ সুখবেদনা অনুভব করিতেছি, ইহা জানেন, নিরামিষ সুখবেদনা অনুভবকালে “নিরামিষ সুখবেদনা অনুভব করিতেছি” ইহা জানেন, সামিষ দুঃখবেদনা অনুভবকালে “সামিষ দুঃখবেদনা অনুভব করিতেছি” ইহা জানেন, নিরামিষ দুঃখবেদনা অনুভবকালে “নিরামিষ দুঃখবেদনা অনুভব করিতেছি” ইহা জানেন, সামিষ অ-দুঃখ অ-সুখ বেদনা অনুভবকালে “সামিষ অ-দুঃখ অ-সুখ বেদনা অনুভব করিতেছি” ইহা জানেন, নিরামিষ অ-দুঃখ অ-সুখ বেদনা অনুভবকালে “নিরামিষ অ-দুঃখ অ-সুখ বেদনা অনুভব করিতেছি” ইহা জানেন।

এইরূপে তিনি অধ্যাত্মে, বাহিরে অথবা অধ্যাত্মে ও বাহিরে বেদনায় বেদনানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন; বেদনায় উৎপত্তি-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, উৎপত্তি ও বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন; “বেদনা বিদ্যমান,” তাঁহার এই স্মৃতি উৎপন্ন হয় কেবল জ্ঞান ও প্রতিস্মৃতির জন্য; তিনি অনিশ্রিত হইয়া অবস্থান করেন, জগতের কোনো বস্তুতেই আসক্তির উৎপাদন করেন না। এইরূপেই, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু বেদনায় বেদনানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

৩৮১. ভিক্ষুগণ, কিরূপে ভিক্ষু চিত্তে চিত্তানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন?

ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু চিত্ত সরাগ হইলে উহা সরাগ তাহা অবগত হন, অথবা চিত্ত বিরাগ হইলে উহা বিরাগ তাহা অবগত হন, অথবা চিত্ত দ্বেষযুক্ত হইলে উহা দ্বেষযুক্ত তাহা অবগত হন, দ্বেষহীন হইলে উহা দ্বেষহীন তাহা অবগত হন, মোহযুক্ত হইলে উহা মোহযুক্ত তাহা অবগত হন, মোহমুক্ত হইলে উহা মোহমুক্ত তাহা অবগত হন, একাগ্র হইলে উহা একাগ্র তাহা অবগত হন, বিক্ষিপ্ত হইলে উহা বিক্ষিপ্ত তাহা অবগত হন, উন্নত মহদ্গত হইলে উহা উন্নত তাহা অবগত হন, অনুন্নত হইলে উহা অনুন্নত তাহা অবগত হন, আদর্শের নিম্নে অবস্থিত হইলে উহা ওই অবস্থাসম্পন্ন তাহা অবগত হন, আদর্শে উপনীত হইলে উহা আদর্শ তাহা অবগত হন, সমাহিত হইলে উহা সমাহিত তাহা অবগত হন, অসমাহিত হইলে উহা অসমাহিত তাহা অবগত হন, বিমুক্ত হইলে উহা বিমুক্ত তাহা অবগত হন, অবিমুক্ত হইলে উহা অবিমুক্ত তাহা অবগত হন।

এইরূপে তিনি অধ্যাত্মে, বাহিরে অথবা অধ্যাত্মে ও বাহিরে চিত্তে চিত্তানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন, চিত্তে উৎপত্তি-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, উৎপত্তি ও বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন; “চিত্ত বিদ্যমান” তাঁহার এই স্মৃতি উৎপন্ন হয় কেবল জ্ঞান ও প্রতিস্মৃতির জন্য; তিনি অনিশ্রিত হইয়া অবস্থান করেন, জগতের কোনো বস্তুতেই আসক্তির উৎপাদন করেন না। এইরূপেই, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু চিত্তে চিত্তানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

৩৮২. ভিক্ষুগণ, কিরূপে ভিক্ষু ধর্মে ধর্মানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন?

ভিক্ষু পঞ্চনীবরণ সম্বন্ধে ধর্মানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

কিরূপে?

তিনি অধ্যাত্মে কামচ্ছন্দ বর্তমান থাকিলে, “অধ্যাত্মে কামচ্ছন্দ বিদ্যমান” ইহা অবগত হন, অধ্যাত্মে কামচ্ছন্দ বর্তমান না থাকিলে, “অধ্যাত্মে কামচ্ছন্দ নাই” ইহা অবগত হন, যেরূপে অনুৎপন্ন কামচ্ছন্দ উৎপন্ন হয় তাহা অবগত হন, যেরূপে উৎপন্ন কামচ্ছন্দ প্রহীন হয় তাহা অবগত হন, যেরূপে প্রহীন কামচ্ছন্দের ভবিষ্যতে উৎপত্তি না হয় তাহা অবগত হন।

তিনি অধ্যাত্মে ব্যাপাদ বর্তমান থাকিলে, “অধ্যাত্মে ব্যাপাদ বিদ্যমান” ইহা অবগত হন, অধ্যাত্মে ব্যাপাদ বর্তমান না থাকিলে, “অধ্যাত্মে ব্যাপাদ নাই” ইহা অবগত হন। যেরূপে অনুৎপন্ন ব্যাপাদ উৎপন্ন হয় তাহা অবগত হন, যেরূপে উৎপন্ন ব্যাপাদ প্রহীন হয় তাহা অবগত হন, যেরূপে প্রহীন ব্যাপাদের ভবিষ্যতে উৎপত্তি না হয় তাহা অবগত হন।

তিনি অধ্যাত্মে স্ত্যান-মিদ্ধ বর্তমান থাকিলে, অধ্যাত্মে স্ত্যানমিদ্ধ বিদ্যমান” ইহা অবগত হন, অধ্যাত্মে স্ত্যানমিদ্ধ বর্তমান না থাকিলে, “অধ্যাত্মে স্ত্যানমিদ্ধ নাই” ইহা অবগত হন, যেরূপে অনুৎপন্ন স্ত্যান-মিদ্ধ উৎপন্ন হয় তাহা অবগত হন, যেরূপে উৎপন্ন স্ত্যানমিদ্ধ প্রহীন হয় তাহা অবগত হন, যেরূপে প্রহীন স্ত্যানমিদ্ধের ভবিষ্যতে উৎপত্তি না হয় তাহা অবগত হন।

তিনি অধ্যাত্মে ঔদ্ধত্য-কৌকৃত্য বর্তমান থাকিলে অধ্যাত্ম ঔদ্ধত্য-কৌকৃত্য বর্তমান” ইহা অবগত হন, উহা বর্তমান না থাকিলে “উহা নাই” ইহা অবগত হন, যেরূপে উহার উৎপত্তি হয় তাহা অবগত হন, উৎপন্ন হইলে যেরূপে উহা প্রহীন হয় তাহা অবগত হন, প্রহীন হইবার পর ভবিষ্যতে যেরূপে উহার উৎপত্তি না হয় তাহা অবগত হন।

অধ্যাত্মে বিচিকিৎসা বর্তমান থাকিলে তিনি “উহা বর্তমান” ইহা অবগত হন, উহা বর্তমান না থাকিলে “উহা নাই” ইহা অবগত হন, যেরূপে উহার উৎপত্তি হয় তাহা অবগত হন, উৎপন্ন হইলে যেরূপে উহা প্রহীন হয় তাহা অবগত হন, প্রহীন হইবার পর ভবিষ্যতে যেরূপে উহার উৎপত্তি না হয় তাহা অবগত হন।

এইরূপে তিনি অধ্যাত্মে, বাহিরে অথবা অধ্যাত্মে ও বাহিরে ধর্মে ধর্মানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন, ধর্মে উৎপত্তি-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, উৎপত্তি ও বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন; “ধর্মসমূহ বিদ্যমান” তাঁহার এই স্মৃতি উৎপন্ন হয় কেবল জ্ঞান ও প্রতিস্মৃতির জন্য; তিনি অনিশ্রিত হইয়া অবস্থান করেন, জগতের কোনো বস্তুতেই আসক্তির উৎপাদন করেন না। এইরূপেই ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু পঞ্চনীবরণ সম্বন্ধে ধর্মানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

৩৮৩. পুনশ্চ, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু পঞ্চ উপাদান স্কন্ধ সম্পর্কে ধর্মানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

কিরূপে?

তিনি জানিতে পান “ইহা রূপ, ইহা রূপের উৎপত্তি, ইহা রূপের নিরোধ ধ্বংস; ইহা বেদনা, ইহা বেদনার উৎপত্তি, ইহা বেদনার নিরোধ, ইহা সংজ্ঞা, ইহা সংজ্ঞার উৎপত্তি, ইহা সংজ্ঞার নিরোধ; ইহা সংস্কার, ইহা সংস্কারের উৎপত্তি, ইহা সংস্কারের নিরোধ; ইহা বিজ্ঞান, ইহা বিজ্ঞানের উৎপত্তি, ইহা বিজ্ঞানের নিরোধ।

এইরূপে তিনি অধ্যাত্মে, বাহিরে অথবা অধ্যাত্মে ও বাহিরে ধর্মে ধর্মানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন, ধর্মে উৎপত্তি-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, উৎপত্তি ও বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন; “ধর্মসমূহ বিদ্যমান” তাঁহার এই স্মৃতি উৎপন্ন হয় কেবল জ্ঞান ও প্রতিস্মৃতির জন্য; তিনি অনিশ্রিতি হইয়া অবস্থান করেন, জগতের কোনো বস্তুতেই আসক্তির উৎপাদন করেন না। এইরূপেই, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু পঞ্চ উপাদান স্কন্ধ সম্বন্ধে ধর্মানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

৩৮৪. পুনশ্চ, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু ছয় আধ্যাত্মিক ও ছয় বাহির আয়তন সম্পর্কে ধর্মানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

কিরূপে?

ভিক্ষু চক্ষু কি তাহা জানেন, রূপ কি তাহা জানেন, উভয়ের কারণে যে সংযোজনের উৎপত্তি হয় তাহাও জানেন, যেরূপে অনুৎপন্ন সংযোগের উৎপত্তি হয় তাহা জানেন, যেরূপে উৎপন্ন সংযোজন প্রহীন হয় তাহা জানেন, যেরূপে প্রহীন সংযোজনের ভবিষ্যতে উৎপত্তি না হয় তাহা জানেন… শ্রোত এবং শব্দ… ঘ্রাণ এবং গন্ধ… জিহ্বা এবং রস… কায় এবং স্পর্শ… মন এবং ধর্ম কি তাহা জানেন, উভয়ের কারণে যে সংযোজনের উৎপত্তি হয় তাহাও জানেন, যেরূপে অনুৎপন্ন সংযোজনের উৎপত্তি হয় তাহা জানেন, যেরূপে উৎপন্ন সংযোজন প্রহীন হয় তাহা জানেন, যেরূপে প্রহীন সংযোজনের ভবিষ্যতে উৎপত্তি না হয় তাহা জানেন।

এইরূপে তিনি অধ্যাত্মে, বাহিরে অথবা অধ্যাত্মে ও বাহিরে ধর্মে ধর্মানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন, ধর্মে উৎপত্তি-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, উৎপত্তি ও বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন; “ধর্মসমূহ বিদ্যমান” তাঁহার এই স্মৃতি উৎপন্ন হয় কেবল জ্ঞান ও প্রতিস্মৃতির জন্য; তিনি অনিশ্রিত হইয়া অবস্থান করেন, জগতের কোনো বস্তুতেই আসক্তির উৎপাদন করেন না। এইরূপেই, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু ছয় আধ্যাত্মিক ও ছয় বাহির আয়তন সম্পর্কে ধর্মানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

৩৮৫. পুনশ্চ, ভিক্ষুগণ ভিক্ষু সপ্ত বোজ্ঝাঙ্গে ধর্মে ধর্মানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

কিরূপে?

অধ্যাত্মে স্মৃতি-সম্বোজ্ঝাঙ্গ বর্তমান থাকিলে তিনি “উহা বর্তমান” ইহা অবগত হন, উহা বর্তমান না থাকিলে “উহা নাই” ইহা অবগত হন, যেরূপে উহার উৎপত্তি হয় তাহা অবগত হন, যেরূপে ভাবনার দ্বারা উহার পরিপূর্ণতা সাধিত হয় তাহাও জানেন।

… অধ্যাত্মে ধর্মবিচয়-সম্বোজ্ঝাঙ্গ থাকিলে তিনি “উহা বর্তমান” ইহা অবগত হন, উহা বর্তমান না থাকিলে “উহা নাই” ইহা অবগত হন, যেরূপে উহার উৎপত্তি হয় তাহা অবগত হন, যেরূপে ভাবনার দ্বারা উহার পরিপূর্ণতা সাধিত হয় তাহাও জানেন।

… অধ্যাত্মে বীর্য-সম্বোজ্ঝাঙ্গ বর্তমান থাকিলে তিনি “উহা বর্তমান” ইহা অবগত হন, উহা বর্তমান না থাকিলে “উহা নাই” ইহা অবগত হন, যেরূপে উহার উৎপত্তি হয় তাহা অবগত হন, যেরূপে ভাবনার দ্বারা উহার পরিপূর্ণতা সাধিত হয় তাহাও জানেন।

… অধ্যাত্মে প্রীতি-সম্বোজ্ঝাঙ্গ বর্তমান থাকলে তিনি “উহা বর্তমান” ইহা অবগত হন, উহা বর্তমান না থাকিলে “উহা নাই” ইহা অবগত হন, যেরূপে উহার উৎপত্তি হয় তাহা অবগত হন, যেরূপে ভাবনার দ্বারা উহার পরিপূর্ণতা সাধিত হয় তাহাও জানেন।

… অধ্যাত্মে প্রশ্রদ্ধি-সম্বোজ্ঝাঙ্গ বর্তমান থাকিলে তিনি “উহা বর্তমান” ইহা অবগত হন, উহা বর্তমান না থাকিলে “উহা নাই” ইহা অবগত হন, যেইরূপে উহার উৎপত্তি হয় তাহা অবগত হন, যেইরূপে ভাবনার দ্বারা উহার পরিপূর্ণতা সাধিত হয় তাহাও জানেন।

… অধ্যাত্মে সমাধি-সম্বোজ্ঝাঙ্গ বর্তমান থাকিলে তিনি “উহা বর্তমান” ইহা অবগত হন, উহা বর্তমান না থাকিলে “উহা নাই” ইহা অবগত হন, যেরূপে উহার উৎপত্তি হয় তাহা অবগত হন, যেরূপে ভাবনার দ্বারা উহার পরিপূর্ণতা সাধিত হয় তাহাও জানেন।

… অধ্যাত্মে উপেক্ষা-সম্বোজ্ঝাঙ্গ বর্তমান থাকিলে “উহা বর্তমান” ইহা অবগত হন, উহা বর্তমান না থাকিলে “উহা নাই” ইহা অবগত হন, যেরূপে অনুৎপন্ন উপেক্ষা সম্বোজ্ঝাঙ্গের উৎপত্তি হয় তাহা অবগত হন, যেরূপে উহার পরিপূর্ণতা সাধিত হয় তাহাও জানেন।

এইরূপে তিনি অধ্যাত্মে, বাহিরে অথবা অধ্যাত্মে ও বাহিরে ধর্মে ধর্মানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন, ধর্মে উৎপত্তি-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, উৎপত্তি ও বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন; “ধর্মসমূহ বর্তমান” তাঁহার এই স্মৃতি উৎপন্ন হয় কেবল জ্ঞান ও প্রতিস্মৃতির জন্য; তিনি অনিশ্রিত হইয়া অবস্থান করেন, জগতের কোনো বস্তুতেই আসক্তির উৎপাদন করেন না। এইরূপেই ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু সপ্ত বোজ্ঝাঙ্গ সম্পর্কে ধর্মে ধর্মানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

৩৮৬. পুনশ্চ, ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু চারি আর্যসত্য ধর্মে ধর্মানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন।

কিরূপে?

ভিক্ষু “ইহা দুঃখ” যথার্থরূপে অবগত হন, “ইহা দুঃখের উৎপত্তি” যথার্থরূপে অবগত হন, “ইহা দুঃখের নিরোধ” যথার্থরূপে অবগত হন, “ইহা দুঃখ নিরোধের মার্গ” যথার্থরূপে অবগত হন।

৩৮৭. ভিক্ষুগণ, দুঃখ আর্যসত্য কী?

জাতি দুঃখ, জরা দুঃখ, ব্যাধি দুঃখ, মরণ দুঃখ, শোক বিলাপ দুঃখ, দৌর্মনস্য, উপায়াস দুঃখ, ইচ্ছিতের অপ্রাপ্তি দুঃখ, সংক্ষেপে পঞ্চ উপাদান স্কন্ধ দুঃখ।

৩৮৮. ভিক্ষুগণ, জাতি কী? ভিন্ন ভিন্ন প্রাণীর ভিন্ন ভিন্ন যোনিতে জন্ম, উৎপত্তি, আবির্ভাব, পুনর্জন্ম, স্কন্ধসমূহের প্রকাশ, আয়তন লাভ; ভিক্ষুগণ ইহাই জাতি কথিত হয়।

৩৮৯. ভিক্ষুগণ, জরা কী? ভিন্ন ভিন্ন প্রাণীর ভিন্ন ভিন্ন দেহে জরা, জীর্ণতা দন্তহীনতা, কেশের শুভ্রতা, ত্বকের কুঞ্চন, আয়ুক্ষীণতা, ইন্দ্রিয়সমূহের বিকৃতি; ভিক্ষুগণ, ইহাই জরা কথিত হয়।

৩৯০. ভিক্ষুগণ, মরণ কী? প্রাণীগণের আপন আপন যোনি হইতে চ্যুতি, চ্যবন, ভেদ, অন্তর্ধান, মৃত্যু, মরণ, কালক্রিয়া, স্কন্ধসমূহের ভেদ, কলেবরের নিক্ষেপ; ভিক্ষুগণ, ইহাই মরণ কথিত হয়।

৩৯১. ভিক্ষুগণ, শোক কী? ভিক্ষুগণ, বিভিন্ন ব্যসনাপন্ন বিভিন্ন দুঃখধর্মস্পৃষ্টের শোক, শোচনা, মর্মপীড়া, প্রিয়বিয়োগদ্ভূত চিত্তসন্তাপ ও বিহ্বলতা; ভিক্ষুগণ, ইহাই শোক কথিত হয়।

৩৯২. ভিক্ষুগণ, বিলাপ কী? বিবিধ ব্যসনাপন্ন বিবিধ দুঃখধর্মস্পৃষ্টের আদেব, পরিদেব, আবেদনা, পরিদেবনা, আদেবিতত্ত, পরিদেবিতত্ত; ভিক্ষুগণ, ইহাই বিলাপ কথিত হয়।

৩৯৩. ভিক্ষুগণ, দুঃখ কী? দৈহিক ক্লেশ, দৈহিক বেদনা, অ-সাত অনুভব রূপ কায়সংস্পর্শজ বেদনা; ভিক্ষুগণ, ইহাই দুঃখ কথিত হয়।

৩৯৪. ভিক্ষুগণ, দৌর্মনস্য কী? মানসিক ক্লেশ, মানসিক বেদনা, অ-সাত অনুভবরূপ চিত্তসংস্পর্শজ বেদনা; ভিক্ষুগণ, ইহাই দৌর্মনস্য কথিত হয়।

৩৯৫. ভিক্ষুগণ, উপায়াস কী? বিভিন্ন ব্যসনাপন্ন বিভিন্ন দুঃখধর্মস্পৃষ্টের ক্লান্তি, শরীর দৌর্বল্য, অশান্তি, অস্থৈর্য; ভিক্ষুগণ, ইহাই উপায়াস কথিত হয়।

৩৯৬. ভিক্ষুগণ, অপ্রিয় সংযোগ দুঃখ কী? এ জগতে তার যা অনীপ্সিত, অনিষ্টকর, অপ্রিয়, অমনোজ্ঞ রূপ, শব্দ, গন্ধ, রস, স্পর্শ অথবা যারা তার অনর্থকামী, অহিতকামী, অসুখ (দুঃখ)-কামী, অসহযোগকামী (বিদ্বেষী) তাদের সহিত যদি সঙ্গতি বা মিলন, সমাগম, সম্মিলন মিশ্রভাবে (সহবাসে থাকতে) হয়, ইহাই অপ্রিয় সংযোগ দুঃখ কথিত হয়।

৩৯৭. ভিক্ষুগণ, প্রিয় বিয়োগ দুঃখ কী? এ জগতে তার যা ইষ্ট, প্রিয়, মনোজ্ঞ রূপ, শব্দ, গন্ধ, রস, স্পর্শ অথবা যারা তার অর্থকামী, হিতকামী, সুখকামী, মৈত্রীপরায়ণ মাতা-পিতা-ভ্রাতা-ভগ্নি, মিত্র, অমাত্য ও রক্তসম্বন্ধীয় (সগোত্র) জ্ঞাতিগণের সহিত যদি অসঙ্গতি, অসমাগম, অসংযোগ, অমিশ্র (অসাক্ষাৎ) ভাব হয়, ইহাই প্রিয় বিয়োগ দুঃখ কথিত হয়।

৩৯৮. ভিক্ষুগণ, ইচ্ছিতের অপ্রাপ্তি দুঃখ কী? ভিক্ষুগণ, জাতিধর্মসম্পন্ন প্রাণীগণের এইরূপ ইচ্ছা উৎপন্ন হয় : “হায়! যদি আমরা জাতিধর্মসম্পন্ন না হইতাম, যদি আমরা জাতি হইতে মুক্ত হইতাম!” কিন্তু মাত্র ইচ্ছাতেই এই অবস্থা লাভ করা যায় না। ইহাই ইচ্ছিতের অপ্রাপ্তি দুঃখ। জরা, ব্যাধি, মরণ, শোক-বিলাপ-দুঃখ-দৌর্মনস্য-উপায়াস ধর্মসম্পন্ন প্রাণীগণের এইরূপ ইচ্ছা উৎপন্ন হয়, “যদি আমরা জরা, ব্যাধি, মরণ, শোক-বিলাপ-দুঃখ-দৌর্মনস্য-উপায়াস ধর্মসম্পন্ন না হইতাম, যদি আমরা ওই সকল হইতে মুক্ত হইতাম!” কিন্তু মাত্র ইচ্ছাতেই এই অবস্থা লাভ করা যায় না। ইহাও ইচ্ছিতের অপ্রাপ্তি দুঃখ।

৩৯৯. ভিক্ষুগণ, “সংক্ষেপে পঞ্চ উপাদান স্কন্ধ দুঃখ, ইহা কী? যথা : রূপ-উপাদান স্কন্ধ, বেদনা-উপাদান স্কন্ধ, সংজ্ঞা উপাদান স্কন্ধ, সংস্কার উপাদান স্কন্ধ, বিজ্ঞান-উপাদান স্কন্ধ; ভিক্ষুগণ, ইহাই “সংক্ষেপে পঞ্চ উপাদান স্কন্ধ দুঃখ।” ভিক্ষুগণ, ইহাই দুঃখ আর্যসত্য কথিত হয়।

৪০০. ভিক্ষুগণ, দুঃখের উৎপত্তি আর্যসত্য কী?

ইহা সেই তৃষ্ণা, যাহা জীবগণকে পুনর্জন্মের অভিমুখে চালিত করে, যাহা ভোগানন্দরাগযুক্ত, যাহা স্থান হইতে স্থানান্তরে কামপ্রবৃত্তির চরিতার্থতা অনুভব করে; যথা : কামতৃষ্ণা, ভবতৃষ্ণা, বিভবতৃষ্ণা।

ভিক্ষুগণ, সেই তৃষ্ণা কোথায় উৎপন্ন হয়, কোথায় স্থিত হয়? জগতে যাহা প্রিয়, যাহা আনন্দপ্রদ, সেই তৃষ্ণা তাহাতেই উৎপন্ন হয় তাহাতেই স্থিত হয়।

জগতে কোন বস্তু প্রিয়, কোন বস্তু আনন্দপ্রদ? জগতে চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক এবং মন প্রিয়, ইহারা আনন্দপ্রদ, ইহাতেই তৃষ্ণা উৎপন্ন হয়, ইহাতেই স্থিত হয়।

জগতে রূপ, শব্দ, গন্ধ, রস, স্পর্শ এবং ধর্ম প্রিয়, ইহারা আনন্দপ্রদ, ইহাতেই তৃষ্ণা উৎপন্ন হয়, ইহাতেই স্থিত হয়।

জগতে চক্ষু-বিজ্ঞান, শ্রোত্র-বিজ্ঞান, ঘ্রাণ-বিজ্ঞান, জিহ্বা-বিজ্ঞান, কায়-বিজ্ঞান, মনো-বিজ্ঞান প্রিয়, ইহারা আনন্দপ্রদ, ইহাতেই তৃষ্ণা উৎপন্ন হয়, ইহাতেই স্থিত হয়।

চক্ষু-সংস্পর্শ, শ্রোত্র-সংস্পর্শ, ঘ্রাণ-সংস্পর্শ, জিহ্বা-সংস্পর্শ, কায়-সংস্পর্শ, মনো-সংস্পর্শ জগতে প্রিয়, ইহারা আনন্দপ্রদ, ইহাতেই তৃষ্ণা উৎপন্ন হয়, ইহাতেই স্থিত হয়।

চক্ষু-সংস্পর্শজ বেদনা, শ্রোত্র-সংস্পর্শজ বেদনা, ঘ্রাণ-সংস্পর্শজ বেদনা, জিহ্বা-সংস্পর্শজ বেদনা, কায়-সংস্পর্শজ বেদনা, মনো-সংস্পর্শজ বেদনা জগতে প্রিয়, ইহারা আনন্দপ্রদ, ইহাতেই তৃষ্ণা উৎপন্ন হয়, ইহাতেই স্থিত হয়।

রূপ-সংজ্ঞা, শব্দ-সংজ্ঞা, গন্ধ-সংজ্ঞা, রস-সংজ্ঞা, স্পর্শ-সংজ্ঞা, ধর্ম-সংজ্ঞা জগতে প্রিয়, ইহারা আনন্দপ্রদ, ইহাতেই তৃষ্ণা উৎপন্ন হয়, ইহাতেই স্থিত হয়।

রূপ-সঞ্চেতনা, শব্দ-সঞ্চেতনা, গন্ধ-সঞ্চেতনা, রস-সঞ্চেতনা, স্পর্শ-সঞ্চেতনা, ধর্ম-সঞ্চেতনা জগতে প্রিয়, ইহারা আনন্দপ্রদ, ইহাতেই তৃষ্ণা উৎপন্ন হয়, ইহাতেই স্থিত হয়।

রূপ-তৃষ্ণা, শব্দ-তৃষ্ণা, গন্ধ-তৃষ্ণা, রস-তৃষ্ণা, স্পর্শ-তৃষ্ণা, ধর্ম-তৃষ্ণা জগতে প্রিয়, ইহারা আনন্দপ্রদ, ইহাতেই তৃষ্ণা উৎপন্ন হয়, ইহাতেই স্থিত হয়।

রূপ-বিতর্ক, শব্দ-বিতর্ক, গন্ধ-বিতর্ক, রস-বিতর্ক, স্পর্শ-বিতর্ক, ধর্ম-বিতর্ক জগতে প্রিয়, ইহারা আনন্দপ্রদ, ইহাতেই তৃষ্ণা উৎপন্ন হয়, ইহাতেই স্থিত হয়।

রূপ-বিচার, শব্দ-বিচার, গন্ধ-বিচার, রস-বিচার, স্পর্শ-বিচার, ধর্ম-বিচার জগতে প্রিয়, ইহারা আনন্দপ্রদ, ইহাতেই তৃষ্ণা উৎপন্ন হয়, ইহাতেই স্থিত হয়। ভিক্ষুগণ, ইহাই দুঃখের উৎপত্তি আর্যসত্য।

৪০১. ভিক্ষুগণ, দুঃখের নিরোধ আর্যসত্য কী?

উহা সেই তৃষ্ণায় সম্পূর্ণ বৈরাগ্য, তৃষ্ণার সম্পূর্ণ নিরোধ, ত্যাগ, বর্জন উহা হইতে মুক্তি, উহাতে অপ্রবৃত্তি।

ভিক্ষুগণ, সেই তৃষ্ণা কোথায় পরিত্যক্ত হয়, কোথায় নিরুদ্ধ হয়? জগতে যাহা প্রিয়, যাহা আনন্দপ্রদ তাহাতেই উহা পরিত্যক্ত হয়, তাহাতেই নিরুদ্ধ হয়।

জগতে প্রিয় এবং আনন্দপ্রদ কী? জগতে চক্ষু প্রিয়, আনন্দপ্রদ, এইস্থানেই তৃষ্ণা পরিত্যক্ত, এইস্থানেই নিরুদ্ধ হয়। শ্রোত্র, ঘ্রাণ, জিহ্বা, কায়, মন জগতে প্রিয়, আনন্দপ্রদ, এই সকল স্থানেই তৃষ্ণা পরিত্যক্ত হয়, এই সকল স্থানেই নিরুদ্ধ হয়।

রূপ, শব্দ, গন্ধ, রস, স্পর্শ, ধর্ম জগতে প্রিয়, আনন্দপ্রদ, এই সকল স্থানেই তৃষ্ণা পরিত্যক্ত হয়, এই সকল স্থানেই নিরুদ্ধ হয়।

চক্ষু-বিজ্ঞান, শ্রোত্র-বিজ্ঞান, ঘ্রাণ-বিজ্ঞান, জিহ্বা-বিজ্ঞান, কায়-বিজ্ঞান, মনো-বিজ্ঞান জগতে প্রিয়, আনন্দপ্রদ, এই সকল স্থানেই তৃষ্ণা পরিত্যক্ত হয়, এই সকল স্থানেই নিরুদ্ধ হয়।

চক্ষু-সংস্পর্শ… মনোসংস্পর্শ জগতে প্রিয়, আনন্দপ্রদ, ইহাতেই তৃষ্ণা পরিত্যক্ত হয়, ইহাতেই নিরুদ্ধ হয়।

চক্ষুসংস্পর্শজ বেদনা… মনোসংস্পর্শজ বেদনা জগতে প্রিয়, আনন্দপ্রদ, এইস্থানেই তৃষ্ণা পরিত্যক্ত হয়, এই স্থানেই নিরুদ্ধ হয়।

রূপ-সংজ্ঞা… ধর্ম-সংজ্ঞা জগতে প্রিয়, আনন্দপ্রদ, এই স্থানেই তৃষ্ণা পরিত্যক্ত হয়, এই স্থানেই নিরুদ্ধ হয়।

রূপ-সঞ্চেতনা… ধর্ম-সঞ্চেতনা জগতে প্রিয়, আনন্দপ্রদ, এই স্থানেই তৃষ্ণা পরিত্যক্ত হয়, এই স্থানেই নিরুদ্ধ হয়।

রূপ-তৃষ্ণা… ধর্ম-তৃষ্ণা জগতে প্রিয়, আনন্দপ্রদ, এই স্থানেই তৃষ্ণা পরিত্যক্ত হয়, এই স্থানেই নিরুদ্ধ হয়।

রূপ-বিতর্ক… শব্দ-বিতর্ক… গন্ধ-বিতর্ক… রস-বিতর্ক, স্পর্শ-বিতর্ক… ধর্ম-বিতর্ক জগতে প্রিয়, আনন্দপ্রদ, এই স্থানেই তৃষ্ণা পরিত্যক্ত হয়, এই স্থানেই নিরুদ্ধ হয়।

রূপ-বিচার… শব্দ-বিচার… গন্ধ-বিচার… রস-বিচার… স্পর্শ-বিচার… ধর্ম-বিচার জগতে প্রিয়, আনন্দপ্রদ, এই স্থানেই তৃষ্ণা পরিত্যক্ত হয়, এই স্থানেই নিরুদ্ধ হয়।

৪০২. ভিক্ষুগণ, দুঃখ নিরোধের মার্গ আর্যসত্য কী?

ইহা আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ; যথা : সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্মান্ত, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি এবং সম্যক সমাধি।

ভিক্ষুগণ, সম্যক দৃষ্টি কী?

ভিক্ষুগণ, ইহা দুঃখের জ্ঞান, দুঃখের উৎপত্তি জ্ঞান, দুঃখের নিরোধের জ্ঞান, এবং দুঃখের নিরোধের মার্গের জ্ঞান; ভিক্ষুগণ, ইহাই সম্যক দৃষ্টি।

ভিক্ষুগণ, সম্যক সংকল্প কী?

ইহা নৈষ্কাম্য-সংকল্প, অ-ব্যাপাদ সংকল্প, অবিহিংসা সংকল্প; ইহাই, ভিক্ষুগণ, সম্যক সংকল্প।

ভিক্ষুগণ, সম্যক বাক্য কী?

মিথ্যাভাষণ হইতে বিরতি, পিশুন বাক্য হইতে বিরতি, পরুষ বাক্য হইতে বিরতি, তুচ্ছপ্রলাপ হইতে বিরতি; ভিক্ষুগণ, ইহাই সম্যক বাক্য।

ভিক্ষুগণ, সম্যক কর্মান্ত কী?

প্রাণিহত্যা হইতে বিরতি, অদত্তের গ্রহণ হইতে বিরতি, ব্যভিচার হইতে বিরতি; ভিক্ষুগণ, ইহাই সম্যক কর্মান্ত।

ভিক্ষুগণ, সম্যক আজীব কী?

ভিক্ষুগণ, আর্যশ্রাবক মিথ্যা জীবিকা পরিহারপূর্বক সম্যক জীবিকা দ্বারা জীবন-যাপন করেন; ভিক্ষুগণ, ইহাই সম্যক আজীব।

ভিক্ষুগণ, সম্যক ব্যায়াম কী?

ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু অনুৎপন্ন পাপ অকুশলধর্মসমূহের উৎপত্তি নিবারণের জন্য সংকল্প উৎপাদন করেন, এই উদ্দেশ্যে উদ্যমসম্পন্ন হন, বীর্য প্রয়োগ করেন, চিত্তকে আয়ত্তীভূত করিয়া উহাকে বশীভূত করেন। উৎপন্ন পাপ অকুশলধর্মসমূহের দূরীকরণের জন্য সংকল্প উৎপাদন করেন, এই উদ্দেশ্যে উদ্যমসম্পন্ন হন, বীর্য প্রয়োগ করেন, চিত্তকে আয়ত্তীভূত করিয়া উহাকে বশীভূত করেন। অনুৎপন্ন কুশলধর্মসমূহের উৎপত্তির নিমিত্ত সংকল্প উৎপাদন করেন, এই উদ্দেশ্যে উদ্যমসম্পন্ন হন, বীর্য প্রয়োগ করেন, চিত্তকে আয়ত্তীভূত করিয়া উহাকে বশীভূত করেন। উৎপন্ন কুশলধর্মসমূহের স্থিতির নিমিত্ত, রক্ষার নিমিত্ত, বৃদ্ধির নিমিত্ত, বিপুলতার নিমিত্ত, ভাবনার পূর্ণতার নিমিত্ত সংকল্প উৎপাদন করেন, এই উদ্দেশ্যে উদ্যমসম্পন্ন হন, বীর্য প্রয়োগ করেন, চিত্তকে আয়ত্তীভূত করিয়া উহাকে বশীভূত করেন। ভিক্ষুগণ, ইহাই সম্যক ব্যায়াম।

ভিক্ষুগণ, সম্যক স্মৃতি কী?

ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু কায়ে কায়ানুদর্শী হইয়া, উদ্দীপনা, সম্প্রজ্ঞান ও স্মৃতিসম্পন্ন হইয়া, লোক সুলভ অভিধ্যা দৌর্মনস্য বিদূরিত করিয়া বিহার করেন, বেদনায়… চিত্তে… ধর্মে ধর্মানুদর্শী হইয়া উদ্দীপনা, সম্প্রজ্ঞান ও স্মৃতিসম্পন্ন হইয়া লোকসুলভ অভিধ্যা ও দৌর্মনস্য বিদূরিত করিয়া বিহার করেন। ভিক্ষুগণ, ইহাই সম্যক স্মৃতি।

ভিক্ষুগণ, সম্যক সমাধি কী?

ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু কাম হইতে বিবিক্ত হইয়া, অকুশলধর্ম হইতে বিবিক্ত হইয়া, সবিতর্ক সবিচার বিবেকজ প্রীতিসুখ-মণ্ডিত প্রথম ধ্যান লাভ করিয়া বিহার করেন। বিতর্কবিচারের উপশমে তিনি অধ্যাত্মসম্প্রসাদী, চিত্তের একীভাব আনয়নকারী, অবিতর্ক, অবিচার, সমাধিজ, প্রীতিসুখ-মণ্ডিত দ্বিতীয় ধ্যান লাভ করিয়া বিহার করেন। তিনি প্রীতিতেও বৈরাগ্য উৎপাদন করিয়া উপেক্ষাসম্পন্ন স্মৃতিমান ও সম্প্রজ্ঞাত হইয়া বিহার করেন; তিনি কায়ে সুখ অনুভব করেন; যে সুখ সম্বন্ধে আর্যগণ কহিয়া থাকেন “উপেক্ষক, স্মৃতিমান, সুখবিহারী এবং এইরূপে তৃতীয় ধ্যান লাভ করিয়া বিরাজ করেন। ভিক্ষু সুখ ও দুঃখ উভয়ই বর্জন করিয়া, পূর্বেই সৌমনস্য-দৌর্মনস্যের তিরোভাব সাধন করিয়া, না-দুঃখ না-সুখরূপ উপেক্ষা ও স্মৃতি দ্বারা পরিশুদ্ধ চিত্তে চতুর্থ ধ্যান লাভ করিয়া বিহার করেন। ভিক্ষুগণ, ইহাই সম্যক সমাধি।

ভিক্ষুগণ, ইহাই দুঃখ নিরোধের মার্গ আর্যসত্য।

৪০৩. এইরূপে ভিক্ষু অধ্যাত্মে, বাহিরে অথবা অধ্যাত্মে ও বাহিরে ধর্মে ধর্মানুদর্শী হইয়া অবস্থান করেন, ধর্মে উৎপত্তি-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন, উৎপত্তি ও বিনাশ-ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন; “ধর্মসমূহ বিদ্যমান” তাঁহার এই স্মৃতি উৎপন্ন হয় কেবল জ্ঞান ও প্রতিস্মৃতির জন্য; তিনি অনিশ্রিত হইয়া অবস্থান করেন, জগতের কোনো বস্তুতেই আসক্তির উৎপাদন করেন না। ভিক্ষুগণ, এইরূপেই ভিক্ষু চারি আর্যসত্যে ধর্মে ধর্মানুদর্শী হইয়া বিহার করেন।

৪০৪. ভিক্ষুগণ, যে কেহ এই চতুর্বিধ স্মৃতি-প্রস্থান এইরূপ সপ্তবর্ষকাল ভাবনা করিবেন, তাঁহার দ্বিবিধ ফলের যেকোনো একটি প্রাপ্য, এই জগতেই অর্হত্ত্ব লাভ, অথবা দেহান্তে অনাগামিতা। ভিক্ষুগণ, সপ্তবর্ষের প্রয়োজন নাই, যে কেহ এই চতুর্বিধ স্মৃতি-প্রস্থান ছয় বৎসরকাল, এইরূপে ভাবনা করিবেন, অথবা পাঁচ বৎসর, অথবা চারি বৎসর, অথবা তিন বৎসর, অথবা দুই বৎসর, অথবা এক বৎসর, এইরূপে ভাবনা করিবেন, তাঁহার দ্বিবিধ ফলের যেকোনো একটি প্রাপ্য, এই জগতেই অর্হত্ত্ব লাভ, অথবা দেহান্তে অনাগামিতা। ভিক্ষুগণ, এক বৎসরের প্রয়োজন নাই, যে কেহ এই চতুর্বিধ স্মৃতি-প্রস্থান সাত মাস, অথবা ছয় মাস, অথবা পাঁচ মাস, অথবা চারি মাস, অথবা তিন মাস, অথবা দুই মাস, অথবা এক মাস, অথবা অর্ধমাস এইরূপে ভাবনা করিবেন, তাঁহার দ্বিবিধ ফলের যে কোনো একটি প্রাপ্য, এই জগতেই অর্হত্ত্ব লাভ, অথবা দেহান্তে অনাগামিতা। ভিক্ষুগণ, অর্ধমাসের প্রয়োজন নাই, যে কেহ এই চতুর্বিধ স্মৃতিপ্রস্থান একসপ্তাহ এইরূপে ভাবনা করিবেন, তাঁহার দ্বিবিধ ফলের যে কোনো একটি প্রাপ্য, এই জগতেই অর্হত্ত্ব লাভ, অথবা দেহান্তে অনাগামিতা।

৪০৫. এই নিমিত্তই উক্ত হইয়াছে, “ভিক্ষুগণ, সত্ত্বগণের বিশুদ্ধির নিমিত্ত, শোক ও বিলাপের জন্য, দুঃখ ও দৌর্মনস্য দূর করিবার জন্য, সত্য প্রাপ্তি ও নির্বাণের সাক্ষাৎকারের নিমিত্ত চারি স্মৃতিপ্রস্থান একমাত্র মার্গ।

ভগবান এইরূপ বলিলেন। আনন্দিত হইয়া ভিক্ষুগণ ভগবদ্বাক্যের অভিনন্দন করিলেন।

মহাসতিপট্ঠান সূত্রান্ত সমাপ্ত।

The Long Discourses

|_II. The Great Chapter

DN22. মহাসতিপট্ঠান সূত্রান্ত

Translations [32]

English

繁體字

日本語

Français

Deutsch

Italiano

Español

Português

Русский

Nederlands

Norsk

Magyar

Srpski

Čeština

Română

Slovenščina

עִבְרִית

فارسی

हिंदी

ಕನ್ನಡ

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference

Translations [32]

English

繁體字

日本語

Français

Deutsch

Italiano

Español

Português

Русский

Nederlands

Norsk

Magyar

Srpski

Čeština

Română

Slovenščina

עִבְרִית

فارسی

हिंदी

ಕನ್ನಡ

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference

Commentaries [0]