১১১. আমি এইরূপ শ্রবণ করিয়াছি। এক সময় ভগবান শ্রাবস্তী নগরে পূর্বারাম নামক মিগার-মাতার প্রাসাদে অবস্থান করিতেছিলেন। ওই সময়ে বাসেট্ঠ এবং ভারদ্বাজ ভিক্ষুব্রত গ্রহণাভিলাষী হইয়া ভিক্ষুদিগের সহিত পরিবাস করিতেছিলেন। তখন একদিন ভগবান সায়াহ্ন সময়ে ধ্যান হইতে উত্থিত হইয়া প্রাসাদ হইতে অবতরণপূর্বক সৌধচ্ছায়ায় উন্মুক্ত স্থানে ভ্রমণ করিতেছিলেন।

১১২. ভগবানকে ওইরূপে ভ্রমণ করিতে দেখিয়া বাসেট্ঠ ভারদ্বাজকে বলিলেন, “ভারদ্বাজ, ভগবান সায়াহ্নে ধ্যান সমাপ্ত করিয়া প্রাসাদ হইতে অবতরণপূর্বক সৌধচ্ছায়ায় উন্মুক্ত স্থানে বিচরণ করিতেছেন। এসো, আমরা ভগবানের নিকট গমন করি। আমরা ভগবানের নিকট ধর্মকথা শুনিবার সুযোগ লাভ করিব।”

“সৌম্য, উত্তম” বলিয়া ভারদ্বাজ বাসেট্ঠকে সম্মতি জানাইলে উভয়ে ভগবানের নিকট গমনপূর্বক ভ্রমণনিরত ভগবানের পশ্চাদনুসরণ করিতে লাগিলেন।

১১৩. তখন ভগবান বাসেট্ঠকে বলিলেন, “বাসেট্ঠ, তোমরা ব্রাহ্মণ জাতীয় কুলীন ব্রাহ্মণ, ব্রাহ্মণকুল পরিত্যাগপূর্বক গৃহহীন প্রব্রজ্যা আশ্রয় করিয়াছ। ব্রাহ্মণগণ কী তোমাদিগকে তিরস্কার করেন না, তোমাদিগের নিন্দা করেন না?”

“ভন্তে, ব্রাহ্মণগণ আমাদের প্রতি আপনাদের স্বভাবানুযায়ী তিরস্কার এবং নিন্দার প্রয়োগ করেন, বিন্দুমাত্রও কার্পণ্য না করিয়া পরিপূর্ণরূপেই প্রয়োগ করেন।”

বাসেট্ঠ, ব্রাহ্মণগণ কিরূপভাবে উহা করেন?”

“ভন্তে, ব্রাহ্মণগণ এইরূপ বলেন, “ব্রাহ্মণগণই শ্রেষ্ঠবর্ণ, অন্য বর্ণ হীন; ব্রাহ্মণগণই শুক্লবর্ণ, অন্যে কৃষ্ণবর্ণ; ব্রাহ্মণগণই শুদ্ধ হন, অব্রাহ্মণেরা হয় না; ব্রাহ্মণগণ ব্রহ্মার ঔরস মুখজাত পুত্র, ব্রহ্মজ, ব্রহ্ম-নির্মিত, ব্রহ্ম-দায়াদ। আর আপনি শ্রেষ্ঠ বর্ণ পরিত্যাগপূর্বক মুন্ডিত-মস্তক, শ্রমণনামধারী ইভ্য, কৃষ্ণ, ব্রহ্মার পাদদেশ হইতে উদ্ভূত সম্প্রদায়কে আশ্রয় করিয়া হীন হইয়া গিয়াছেন। আপনার এইরূপ আচরণ অনুচিত, অনুপযুক্ত।” ভন্তে, এইরূপে ব্রাহ্মণগণ আমাদের প্রতি আপনাদের স্বভাবানুযায়ী তিরস্কার এবং নিন্দার প্রয়োগ করেন, বিন্দুমাত্রও কার্পণ্য না করিয়া পরিপূর্ণরূপেই প্রয়োগ করেন।”

১১৪. “বাসেট্ঠ, ব্রাহ্মণগণ পূর্বকথা বিস্মৃত হইয়াই তোমাদিগকে বলেন, “ব্রাহ্মণগণই শ্রেষ্ঠবর্ণ, অন্য বর্ণ হীন; ব্রাহ্মণগণই শুক্লবর্ণ, অন্যে কৃষ্ণবর্ণ; ব্রাহ্মণগণই শুদ্ধ হন, অব্রাহ্মণেরা হয় না; ব্রাহ্মণগণ ব্রহ্মার ঔরস মুখজাত পুত্র, ব্রহ্মজ, ব্রহ্ম-নির্মিত, ব্রহ্ম- দায়াদ।” বাসেট্ঠ, ইহা দৃষ্ট হয় যে ব্রাহ্মণগণের ব্রাহ্মণীগণ ঋতুমতীও হন, গর্ভিণীও হন, প্রসবও করেন, সন্তানকে স্তন্যদানও করেন; এইসকল ব্রাহ্মণেরা যোনিজ হইয়াও বলিয়া থাকেন, “ব্রাহ্মণগণই শ্রেষ্ঠবর্ণ, অন্য বর্ণ হীন; ব্রাহ্মণগণই শুক্লবর্ণ, অন্যে কৃষ্ণবর্ণ; ব্রাহ্মণগণই শুদ্ধ হন, অব্রাহ্মণেরা হয় না; ব্রাহ্মণগণ ব্রহ্মার ঔরস মুখজাত পুত্র, ব্রহ্মজ, ব্রহ্ম-নির্মিত, ব্রহ্ম-দায়াদ।” ওই সকল ব্রাহ্মণ ব্রহ্মারও অপবাদ করেন, মিথ্যাও বলেন এবং বহু অপুণ্য প্রসব করেন।

১১৫. বাসেট্ঠ, এই চারি বর্ণ : ক্ষত্রিয়, ব্রাহ্মণ, বৈশ্য, শূদ্র। বাসেট্ঠ ক্ষত্রিয়ের মধ্যেও জীবহিংসাকারী আছে, অদত্তের গ্রহণকারী আছে, ব্যভিচারী আছে, মিথ্যাবাদী আছে, পিশুনবাদী আছে, পরুষভাষী আছে, তুচ্ছ প্রলাপরত আছে, লোভী, দ্বেষ-পরায়ণ মিথ্যাদৃষ্টিসম্পন্ন আছে। এইরূপে, বাসেট্ঠ, যে-সকল ধর্ম অকুশল এবং অকুশলরূপে জ্ঞাত, নিন্দনীয় এবং ওইরূপে জ্ঞাত, অসেবিতব্য এবং ওইরূপে জ্ঞাত, যাহা অনার্য এবং ওইরূপে জ্ঞাত, পাপ এবং পাপপ্রসূ পণ্ডিত নিন্দিত, ওই সকল ধর্ম ক্ষত্রিয়ের মধ্যেও দৃষ্ট হয়। বাসেট্ঠ, ব্রাহ্মণ, বৈশ্য এবং শূদ্রের মধ্যেও জীবহিংসাকারী আছে, অদত্তের গ্রহণকারী আছে, ব্যভিচারী আছে, মিথ্যাবাদী আছে, পিশুনবাদী আছে, পরুষভাষী আছে, তুচ্ছ প্রলাপরত আছে, লোভী, দ্বেষ-পরায়ণ মিথ্যাদৃষ্টিসম্পন্ন আছে। এইরূপে, বাসেট্ঠ, যে-সকল ধর্ম অকুশল এবং অকুশলরূপে জ্ঞাত, নিন্দনীয় এবং ওইরূপে জ্ঞাত, অসেবিতব্য এবং ওইরূপে জ্ঞাত, যাহা অনার্য এবং ওইরূপে জ্ঞাত, পাপ এবং পাপপ্রসূ পণ্ডিত নিন্দিত, ওই সকল ধর্ম ব্রাহ্মণ, বৈশ্য এবং শূদ্রের মধ্যেও আছে।

“বাসেট্ঠ, ক্ষত্রিয়ের মধ্যেও এমন কেহ আছেন যিনি জীবহিংসা হইতে বিরত, অদত্তের গ্রহণ হইতে বিরত, ব্যভিচার হইতে বিরত, মৃষাবাদ হইতে বিরত, পিশুন বাদ হইতে বিরত, পরুষভাষ হইতে বিরত, তুচ্ছ প্রলাপ হইতে বিরত, লোভ হইতে বিরত, দ্বেষ-মুক্ত এবং সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন। এইরূপে, বাসেট্ঠ, যে-সকল ধর্ম কুশল এবং কুশলরূপে জ্ঞাত, অনিন্দ্য এবং ওইরূপে জ্ঞাত সেবিতব্য এবং ওইরূপে জ্ঞাত, আর্য এবং ওইরূপে জ্ঞাত, পুণ্য এবং পুণ্যপ্রসূ পণ্ডিত-প্রশংসিত, ওই সকল ধর্ম ক্ষত্রিয়ের মধ্যেও দৃষ্ট হয়। বাসেট্ঠ, ব্রাহ্মণ, বৈশ্য এবং শূদ্রের মধ্যেও এমন কেহ আছেন যিনি জীবহিংসা হইতে বিরত, অদত্তের গ্রহণ হইতে বিরত, ব্যভিচার হইতে বিরত, মৃষাবাদ হইতে বিরত, পিশুন বাদ হইতে বিরত, পরুষভাষ হইতে বিরত, তুচ্ছ প্রলাপ হইতে বিরত, লোভ হইতে বিরত, দ্বেষ-মুক্ত এবং সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন। এইরূপে, বাসেট্ঠ, যে-সকল ধর্ম কুশল এবং কুশলরূপে জ্ঞাত, অনিন্দ্য এবং ওইরূপে জ্ঞাত সেবিতব্য এবং ওইরূপে জ্ঞাত, আর্য এবং ওইরূপে জ্ঞাত, পুণ্য এবং পুণ্যপ্রসূ পণ্ডিত-প্রশংসিত, ওই সকল ধর্ম ব্রাহ্মণ, বৈশ্য ও শূদ্রের মধ্যেও দৃষ্ট হয়।

১১৬. “বাসেট্ঠ, পণ্ডিত-নিন্দিত এবং পণ্ডিত-প্রশংসিত অকুশল এবং কুশল এই উভয় ধর্মই, ওই চারিবর্ণের মধ্যে বিদ্যমান, এইস্থলে ব্রাহ্মণগণের বাক্য-ব্রাহ্মণই শ্রেষ্ঠবর্ণ অন্য বর্ণ হীন; ব্রাহ্মণগণই শুক্লবর্ণ, অন্যে কৃষ্ণবর্ণ; ব্রাহ্মণগণই শুদ্ধ হন, অব্রাহ্মণেরা হয় না; ব্রাহ্মণগণ ব্রহ্মার ঔরস মুখজাত পুত্র, ব্রহ্মজ, ব্রহ্ম-নির্মিত, ব্রহ্ম-দায়াদ পণ্ডিতগণ অনুমোদন করেন না। কী কারণে? এই চতুর্বর্ণের মধ্যে যিনি ভিক্ষু, অর্হৎ, ক্ষীণাসব, উদ্‌যাপিত-ব্রহ্মচর্য্য, কৃত-কৃত্য, ভারমুক্ত, পরমার্থ-প্রাপ্ত, ভববন্ধন-মুক্ত, সম্যক জ্ঞান-বিমুক্ত, তিনি উহাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কথিত হন, এবং ধর্মানুসারেই ওইরূপ কথিত হন, অধর্মানুসারে নহে। বাসেট্ঠ, মনুষ্যের মধ্যে ইহলোকে এবং পরলোকে ধর্মই শ্রেষ্ঠ।

১১৭. “বাসেট্ঠ, মনুষ্যের মধ্যে ইহলোকে এবং পরলোকে যে ধর্মই শ্রেষ্ঠ, তাহা এই দৃষ্টান্ত হইতেও জ্ঞাতব্য, “বাসেট্ঠ, কোশলরাজ প্রসেনজিৎ জানেন, “অতুলনীয় শ্রমণ গৌতম শাক্যকুল হইতে প্রব্রজিত।” কিন্তু, বাসেট্ঠ, শাক্যগণ কোশলরাজ প্রসেনজিতের অধীনস্থ। বাসেট্ঠ, শাক্যগণ কোশলরাজ প্রসেনজিতের নিকট প্রণতি করেন, তাঁহাকে অভিবাদন করেন, তাঁহার সম্মুখে প্রত্যুত্থান করেন, কৃতাঞ্জলি হন এবং তাঁহাকে যথারূপ সম্মান প্রদর্শন করেন। এইরূপে, বাসেট্ঠ, শাক্যগণ কোশলরাজ প্রসেনজিতের প্রতি যেইরূপ আচরণ করেন, কোশলরাজ প্রসেনজিৎ তথাগতের প্রতি সেইরূপ আচরণ করেন। তিনি চিন্তা করেন, “শ্রমণ গৌতম কি সুজাত নহেন? আমি দুর্জাত; শ্রমণ গৌতম বলবান, আমি দুর্বল; শ্রমণ গৌতম রূপবান, আমি রূপহীন; শ্রমণ গৌতম শক্তিমান, আমি শক্তিহীন।” কোশলরাজ প্রসেনজিৎ যখন তথাগতের নিকট প্রণতি করেন, তাঁহাকে অভিবাদন করেন, তাঁহার সম্মুখে প্রত্যুত্থান করেন, কৃতাঞ্জলি হন এবং তাঁহাকে যথারূপ সম্মান প্রদর্শন করেন, তখন উক্ত ধর্মেরই সৎকার, সম্মান, শ্রদ্ধা, পূজা, এবং অর্চনা করেন। বাসেট্ঠ, মনুষ্যগণের মধ্যে ইহলোকে এবং পরলোকে যে ধর্মই শ্রেষ্ঠ, তাহা এই দৃষ্টান্ত হইতে জ্ঞাতব্য।

১১৮. “বাসেট্ঠ, তোমরা নানাজাতি, নানানাম, নানা গোত্রবিশিষ্ট, নানাকুল হইতে গৃহত্যাগ করিয়া তোমরা গৃহহীন প্রব্রজ্যা আশ্রয় করিয়াছ। যদি তোমরা জিজ্ঞাসিত হও “তোমরা কে?” তাহা হইলে “আমরা শাক্যপুত্রীয় শ্রমণ” এইরূপ উত্তর দিবে। বাসেট্ঠ, তথাগতের প্রতি যাহার শ্রদ্ধা নিবিষ্ট, মূলজাত, প্রতিষ্ঠিত, দৃঢ় এবং যে শ্রদ্ধা শ্রমণ-ব্রাহ্মণ-দেব-মার-ব্রহ্মা অথবা পৃথিবীতে অপর কাহারও কর্তৃক বিচলিত হয় না তিনি যথার্থরূপে এইরূপ উক্তি করিতে পারেন, “আমি ভগবানের ঔরস মুখণ্ডজাত পুত্র, ধর্ম-জ, ধর্ম-নির্মিত, ধর্ম-দায়াদ।” কী কারণে? বাসেট্ঠ, যেহেতু “ধর্ম-কায়” “ব্রহ্ম-কায়” “ধর্ম-ভূত” “ব্রহ্ম-ভূত” এই সকল তথাগতেরই অধিবচন।

১১৯. “বাসেট্ঠ, এমন সময় আসে যখন, আজই হউক, কিংবা কালই হউক, দীর্ঘকাল অতীত হইবার পর এই জগৎ লয় প্রাপ্ত হয়। ওইরূপ সময়ে জীবগণ বহুল পরিমাণে আভাস্বর জগতে পুনর্জন্ম লাভ করে। তাহারা তথায় মনোময় হইয়া থাকে, প্রীতি তাহাদের ভক্ষ্যস্বরূপ হয়, তাহারা স্বয়ংপ্রভ, অন্তরীক্ষচর এবং শুভস্থায়ী হইয়া সুদীর্ঘকাল অবস্থান করে। বাসেট্ঠ, এমন সময় আসে যখন, আজই হউক কিংবা কালই হউক, দীর্ঘকাল অতীত হইবার পর এই জগতের বিবর্তন হয়। ওই বিবর্তনকালে সত্ত্বগণ বহুল পরিমাণে আভাস্বর-কায় হইতে চ্যুত হইয়া এই জগতে আবির্ভূত হয়। তাহারা মনোময় হইয়া থাকে, প্রীতি তাহাদের ভক্ষ্যস্বরূপ হয়, তাহারা স্বয়ংপ্রভ, অন্তরীক্ষচর এবং শুভস্থায়ী হইয়া সুদীর্ঘকাল অবস্থান করে।

১২০. “বাসেট্ঠ, তখন সমস্ত পৃথিবী জলময় ও অন্ধকার হয়, তমিস্র অন্ধকারক হয়। চন্দ্র-সূর্যের আবির্ভাব হয় না, নক্ষত্র-তারকাদির প্রকাশ হয় না, রাত্রি-দিবা নাই, মাসার্ধ অথবা মাস নাই, ঋতু এবং সংবৎসর নাই, স্ত্রীও নাই পুরুষও নাই। সত্ত্বগণ সত্ত্বরূপেই গণিত হয়। বাসেট্ঠ, এইরূপে দীর্ঘকাল অতীত হইবার পর এমন সময় আসিল যখন ওই সকল সত্ত্বগণের নিকট জলোপরি রসসংযুক্ত পৃথিবী বিস্তৃত হইল। যেইরূপ উত্তপ্ত দুগ্ধ শীতলীভূত হইবার কালে উহার উপর শর বিস্তৃত হয়, সেইরূপ পৃথিবীর আবির্ভাব হইল। উহা বর্ণ-গন্ধ-রসসম্পন্ন হইল, উত্তমরূপে সম্পাদিত ঘৃত অথবা নবনীত যেইরূপ হয়, সেইরূপ বর্ণসম্পন্ন হইল; বিশুদ্ধ ক্ষুদ্রা-মধুর ন্যায় আস্বাদসম্পন্ন হইল।”

১২১. “অনন্তর, বাসেট্ঠ, কোনো লোভ-প্রকৃতিসম্পন্ন প্রাণী “দেখো, ইহা কী হইতে পারে?” বলিয়া অঙ্গুলির সাহায্যে রস-সংযুক্ত মৃত্তিকা আস্বাদ করিল, উহার ফলে সে রসাভিভূত হইল এবং তাহার তৃষ্ণা উৎপন্ন হইল। অন্য প্রাণীগণও উক্ত সত্ত্বের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিয়া রস-মৃত্তিকা অঙ্গুলির দ্বারা আস্বাদ করিল। তাহারাও রসাভিভূত হইয়া তৃষ্ণার দ্বারা আক্রান্ত হইল। তদনন্তর, বাসেট্ঠ, ওই সকল সত্ত্ব হস্ত দ্বারা রসমৃত্তিকা হইতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পিণ্ড বিচ্ছিন্ন করিয়া উহা আহার করিতে আরম্ভ করিল। উহার ফলে ওই সকল সত্ত্বের স্বয়ংপ্রভা অন্তর্হিত হইল। স্বয়ংপ্রভার অন্তর্ধানের সহিত চন্দ্র-সূর্যের আবির্ভাব হইল। চন্দ্রসূর্যের আবির্ভাবের সহিত নক্ষত্রসমূহ ও তারকাগণের আবির্ভাব হইল, রাত্রি ও দিনের প্রকাশ হইল। সঙ্গে সঙ্গে মাসার্ধ, মাস, ঋতু ও সম্বৎসরের প্রকাশ হইল। বাসেট্ঠ, জগতের পুনরায় এইরূপ বিবর্তন হইল।”

১২২. “তৎপরে, বাসেট্ঠ, ওই সকল সত্ত্ব রসমৃত্তিকা উপভোগ করিয়া মৃত্তিকাভোজী হইয়া উহাতে পুষ্ট হইয়া সুদীর্ঘকাল অবস্থান করিল। যে পরিমাণে তাহারা এইরূপে পুষ্ট হইল সেই পরিমাণে তাহাদের দেহ কঠিনত্ব প্রাপ্ত হইল এবং তাহাদের বর্ণেও বৈচিত্র্য প্রকাশিত হইল। কোনো সত্ত্ব সুরূপ হইল, কোনো সত্ত্ব কুরূপ। এইস্থলে যাহারা সুরূপ হইল তাহারা কুরূপগণকে অবজ্ঞা করিল, “আমরা এই সকল সত্ত্ব অপেক্ষা সুরূপ, ইহারা আমাদিগের অপেক্ষা কুরূপ।” ওই সকল গর্বিত এবং অহমিকাসম্পন্ন প্রাণীগণের বর্ণাভিমান হেতু রস-পৃথিবী অন্তর্হিত হইল। রস-পৃথিবীর অন্তর্ধানের পর তাহারা একত্রিত হইয়া বিলাপ করিল, “হায় রস! হায় রস!” বর্তমানেও মনুষ্যগণ কোনো স্বাদু রস লাভ করিয়া এইরূপ বলিয়া থাকে, “অহো রস, অহো রস!” তাহারা পুরাণ আদিম বাক্যেরই অনুসরণ করে, কিন্তু উহার অর্থ অবগত নয়।”

১২৩. “অতঃপর, বাসেট্ঠ, ওই সকল সত্ত্বগণের নিকট হইতে রস-পৃথিবী অন্তর্হিত হইলে ভূমি-পর্পটের আবির্ভাব হইল, যেইরূপ অহিচ্ছত্রের উৎপত্তি হয় সেইরূপেই উহা আবির্ভূত হইল। উহা বর্ণ, গন্ধ ও রসসম্পন্ন হইল। উহা সুসম্পাদিত ঘৃত অথবা নবনীতের ন্যায় বর্ণবিশিষ্ট হইল; বিশুদ্ধ ক্ষুদ্রা-মধুর ন্যায় আস্বাদবিশিষ্ট হইল। তখন ওই সকল সত্ত্ব ভূমি-পর্পট আহার করিতে আরম্ভ করিল। তাহারা উহা উপভোগ করিয়া উহার ভোজনে নিরত হইয়া, উহাতে পুষ্ট হইয়া সুদীর্ঘকাল অবস্থান করিল। যে পরিমাণে তাহারা এইরূপ পুষ্ট হইল সেই পরিমাণে তাহাদের দেহ অধিকতর কঠিনত্ব প্রাপ্ত হইল এবং তাহাদের বর্ণেও অধিকতররূপে বৈচিত্র্য প্রকাশিত হইল। কোনো সত্ত্ব সুরূপ হইল, কোনো সত্ত্ব কুরূপ। এইস্থলে যাহারা সুরূপ হইল তাহারা কুরূপগণকে অবজ্ঞা করিল, “আমরা এই সকল সত্ত্ব অপেক্ষা সুরূপ, ইহারা আমাদিগের অপেক্ষা কুরূপ।” ওই সকল গর্বিত এবং অহমিকাসম্পন্ন প্রাণীগণের বর্ণাভিমান হেতু ভূমি-পর্পট অন্তর্হিত হইল। তৎপরে বদালতার উৎপত্তি হইল। যেইরূপ কলম্বুকার উৎপত্তি হয় সেইরূপেই উহা আবির্ভূত হইল। উহা বর্ণ, গন্ধ ও রসসম্পন্ন হইল। উহা সুসম্পাদিত ঘৃত অথবা নবনীতের ন্যায় বর্ণবিশিষ্ট হইল; বিশুদ্ধ ক্ষুদ্রা-মধুর ন্যায় আস্বাদবিশিষ্ট হইল।

১২৪. “তখন, বাসেট্ঠ, ওই সকল সত্ত্বগণ বদালতা আহার করিতে আরম্ভ করিল। তাহারা উহা উপভোগ করিয়া, উহার ভোজনে নিরত হইয়া, উহাতে পুষ্ট হইয়া সুদীর্ঘকাল অবস্থান করিল। যে পরিমাণে তাহারা এইরূপে পুষ্ট হইল সেই পরিমাণে তাহাদের দেহ অধিকতর কঠিনত্ব প্রাপ্ত হইল এবং তাহাদের বর্ণেও অধিকতররূপে বৈচিত্র্য প্রকাশিত হইল। কোনো সত্ত্ব সুরূপ হইল, কোনো সত্ত্ব কুরূপ। এইস্থলে যাহারা সুরূপ হইল তাহারা কুরূপগণকে অবজ্ঞা করিল, “আমরা এই সকল সত্ত্ব অপেক্ষা সুরূপ, ইহারা আমাদিগের অপেক্ষা কুরূপ।” ওই সকল গর্বিত এবং অহমিকাসম্পন্ন প্রাণীগণের বর্ণাভিমান হেতু বদালতা অন্তর্হিত হইল। বদালতার অন্তর্ধানের পর তাহারা একত্রিত হইয়া বিলাপ করিল, “আমাদের বদালতা! হায়, আমাদের বদালতা নাই!” বর্তমানেও মনুষ্যগণ কোনো প্রকার দুঃখ-দৌর্মনস্য দ্বারা স্পৃষ্ট হইয়া এইরূপ বলিয়া থাকে, “আমাদের যাহা ছিল তাহা হারাইয়াছি! তাহারা পুরাণ আদিম বাক্যেরই অনুসরণ করে, কিন্তু উহার অর্থ অবগত নয়।”

১২৫. “অতঃপর, বাসেট্ঠ, ওই সকল সত্ত্বগণের নিকট হইতে বদালতা অন্তর্হিত হইলে বনহীন ক্ষেত্র হইতে শালি উদ্গত হইল। উহা কণহীন, তুষহীন, সুগন্ধ তণ্ডল। সান্ধ্যভোজনের নিমিত্ত সায়ংকালে উহা যেইস্থান হইতে সংগৃহীত হইত সেই স্থানে উহা প্রাতে পুনরায় উৎপন্ন ও পক্ব অবস্থায় দৃষ্ট হইত। প্রাতরাশের নিমিত্ত প্রাতে উহা যেইস্থান হইতে সংগৃহীত হইত, সেইস্থানে উহা সন্ধ্যায় পুনরায় উৎপন্ন ও পক্ব অবস্থায় দৃষ্ট হইত। উৎপাটনের স্থান দৃষ্ট হইত না।

১২৬. তৎপরে, বাসেট্ঠ, ওই সকল সত্ত্ব উক্ত শালি উপভোগ করিয়া, উহার ভোজনে নিরত হইয়া, উহাতে পুষ্ট হইয়া সুদীর্ঘকাল অবস্থান করিল। যে পরিমাণে তাহারা এইরূপে পুষ্ট হইল সেই পরিমাণে তাহাদের দেহ অধিকতর কঠিনত্ব প্রাপ্ত হইল এবং তাহাদের বর্ণেও অধিকতররূপে বৈচিত্র্য প্রকাশিত হইল। স্ত্রী-জাতীয় জীবগণের স্ত্রী-লিঙ্গের বিকাশ হইল, পুরুষ-জাতীয়গণের পুরুষ-লিঙ্গ প্রাদুর্ভূত হইল। স্ত্রীগণ অত্যধিকরূপে পুরুষগণের প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে লাগিল, পুরুষগণ স্ত্রীদিগের প্রতি ওইরূপই করিল। পরস্পরের প্রতি অত্যধিকরূপে দৃষ্টিপাত করিবার ফলে তাহাদের রাগের উৎপত্তি হইল, দেহে প্রদাহ প্রবেশ করিল। ওই প্রদাহ হেতু তাহারা মৈথুন ধর্মের সেবা করিল। বাসেট্ঠ, মৈথুন-নিরত সত্ত্বগণকে দেখিয়া কেহ কেহ ধূলি নিক্ষেপ করিল, কেহ ভস্ম, কেহ বা গোময় নিক্ষেপ করিল, “দূর হও! সত্ত্ব সত্ত্বের প্রতি কেন এইরূপ আচরণ করিবে?” বর্তমানেও কোনো কোনো স্থানে নববিবাহিতা বধূকে লইয়া যাইবার সময় কেহ কেহ ধূলি নিক্ষেপ করে, কেহ ভস্ম, কেহ বা গোময় নিক্ষেপ করে। তাহারা পুরাণ আদিম প্রথারই অনুসরণ করে, কিন্তু উহার অর্থ অবগত নয়।

১২৭. “বাসেট্ঠ, ওই সময় যাহা অধর্ম বিবেচিত হইত এক্ষণে তাহা ধর্ম বিবেচিত হয়। ওই সময়ে যে-সকল সত্ত্ব মৈথুন ধর্মের সেবা করিত তাহারা এক মাস, এমনকি দুই মাস পর্যন্ত গ্রামে অথবা নগরে প্রবেশ করিতে পাইত না। যেহেতু, বাসেট্ঠ, ওই সকল সত্ত্ব ওই সময়ে অসদ্ধর্মে অত্যধিকরূপে অধঃপতিত হইয়াছিল, সেই হেতু তাহারা ওই অধর্ম গোপন করিবার জন্য গৃহ নির্মাণ করিতে আরম্ভ করিল। অতঃপর, বাসেট্ঠ কোনো এক অলস প্রকৃতি সত্ত্ব চিন্তা করিল, “সায়াহ্নে সায়মাশের নিমিত্ত প্রাতে প্রাতরাশের নিমিত্ত শালি সংগ্রহ করিয়া কি আমি বিনষ্ট হইব? অতএব আমি সায়মাশ এবং প্রাতরাশের জন্য শালি একবারেই সংগ্রহ করিব।” অনন্তর, বাসেট্ঠ, সেই সত্ত্ব সায়-প্রাতরাশের নিমিত্ত একবারেই শালি সংগ্রহ করিল। তখন অন্য এক সত্ত্ব পূর্বোক্তের নিকট গমন করিয়া তাহাকে বলিল, “এসো, সত্ত্ব, শালি আহরণে যাই।” “হে সত্ত্ব, প্রয়োজন নাই, সায়-প্রাতরাশের শালি আমি একবারেই সংগ্রহ করিয়াছি।” অনন্তর, বাসেট্ঠ, সেই সত্ত্ব অপরের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিয়া দুইদিনের জন্য শালি একবারেই সংগ্রহ করিল এবং বলিল, “ইহাই উত্তম।” তখন এক সত্ত্ব তাহার নিকট গমন পূর্বক বলিল, “এসো, সত্ত্ব, শালি আহরণে যাই। “হে সত্ত্ব, প্রয়োজন নাই, আমি দুই দিনের শালি একবারেই সংগ্রহ করিয়াছি।” তৎপরে সেই সত্ত্ব অপরের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিয়া চারি দিনের জন্য শালি একবারেই সংগ্রহ করিল এবং বলিল, “ইহাই উত্তম।” অতঃপর অপর এক সত্ত্ব তাহার নিকট গমন করিয়া বলিল, “এসো, সত্ত্ব শালি আহরণে যাই।” “হে সত্ত্ব, প্রয়োজন নাই, আমি একবারেই চারি দিনের শালি সংগ্রহ করিয়াছি।” তখন সেই সত্ত্ব অপরের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিয়া আট দিনের জন্য শালি একবারেই সংগ্রহ করিল এবং বলিল, “ইহাই উত্তম।” বাসেট্ঠ, যখন হইতে ওই সকল সত্ত্ব সঞ্চিত শালি আহার করিতে আরম্ভ করিল তখন হইতেই তণ্ডল কণবদ্ধও হইল, তুষবদ্ধও হইল, যেইস্থান হইতে উহা উৎপাথিত হইয়াছিল সেইস্থানে উহা পুনরায় উৎপন্ন হইল না এবং উৎপাটন-স্থান দৃষ্ট হইল, শালি-স্থাণুসমূহ গুল্মাকারে অবস্থান করিল।

১২৮. “তৎপরে, বাসেট্ঠ, সত্ত্বগণ একত্রিত হইয়া বিলাপ করিল, “সত্ত্বগণের মধ্যে পাপধর্মের প্রাদুর্ভাব হইয়াছে, আমরা পূর্বে মনোময় ছিলাম, প্রীতি আমাদের ভক্ষ্য ছিল, আমরা স্বয়ংপ্রভ, অন্তরীক্ষচর শুভস্থায়ী হইয়া সুদীর্ঘকাল যাপন করিয়াছিলাম। দীর্ঘকাল অতীত হইবার পর এমন সময় আসিল যখন আমাদের নিকট জলোপরি রস-পৃথিবীর আবির্ভাব হইল। উহা বর্ণ-গন্ধ-রসসম্পন্ন হইয়াছিল। আমরা হস্ত দ্বারা রসমৃত্তিকা হইতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পিণ্ড বিচ্ছিন্ন করিয়া উহা আহার করিতে আরম্ভ করিলাম। উহার ফলে আমাদের স্বয়ংপ্রভা অন্তর্হিত হইল। স্বয়ংপ্রভার অন্তর্ধানের সহিত চন্দ্র-সূর্যের আবির্ভাব হইল। উহাদের আবির্ভাবের সহিত নক্ষত্রসমূহ ও তারকাগণের আবির্ভাব হইল, রাত্রি ও দিনের প্রকাশ হইল। সঙ্গে সঙ্গে মাসার্ধ, মাস, ঋতু ও সম্বৎসরের প্রকাশ হইল। আমরা রস-মৃত্তিকা উপভোগ করিয়া, মৃত্তিকা-ভোজী হইয়া, উহাতে পুষ্ট হইয়া দীর্ঘকাল অবস্থান করিলাম। আমাদের মধ্যে পাপ-অকুশল ধর্মের প্রাদুর্ভাব হওয়ায় রস-পৃথিবী অন্তর্হিত হইল। তৎপরে ভূমি-পর্পটের আবির্ভাব হইল। উহা বর্ণ-গন্ধ-রসসম্পন্ন হইল। আমরা উহা আহার করিতে আরম্ভ করিলাম। উহা উপভোগ করিয়া, উহার ভোজনে নিরত হইয়া, উহাতে পুষ্ট হইয়া আমরা দীর্ঘকাল অতিবাহিত করিলাম। আমাদের মধ্যে পাপ-অকুশল ধর্মের প্রাদুর্ভাব হওয়ায় ভূমি-পর্পট অন্তর্হিত হইল। তৎপরে বদালতার উৎপত্তি হইল। উহা বর্ণ, গন্ধ ও রসসম্পন্ন হইল। আমরা বদালতা আহার করিতে আরম্ভ করিলাম। আমরা উহা উপভোগ করিয়া, উহার ভোজনে নিরত হইয়া, উহাতে পুষ্ট হইয়া দীর্ঘকাল অবস্থান করিলাম। আমাদের মধ্যে পাপ-অকুশল ধর্মের প্রাদুর্ভাব হওয়ায় বদালতা অন্তর্হিত হইল। তৎপরে বনহীন ক্ষেত্র হইতে শালি উদ্গত হইল, উহা কণহীন, তুষহীন সুগন্ধ তণ্ডল। সায়মাশের নিমিত্ত সন্ধ্যায় আমরা যেইস্থান হইতে সংগ্রহ করিতাম, সেই স্থানে উহা প্রাতে পুনরায় উৎপন্ন ও পক্ব অবস্থায় দৃষ্ট হইত। এইরূপে প্রাতে যেইস্থান হইতে উহা সংগৃহীত হইত, সন্ধ্যায় উহা সেই স্থানে পুনরায় উৎপন্ন ও পক্ব অবস্থায় দৃষ্ট হইত। উৎপাটনের স্থান প্রকাশ পাইত না। আমরা ওই শালি উপভোগ করিয়া, উহার ভোজনে নিরত হইয়া, উহাতে পুষ্ট হইয়া দীর্ঘকাল অবস্থান করিয়াছিলাম। আমাদের মধ্যে পাপ-অকুশল ধর্মের প্রাদুর্ভাব হওয়ায় তণ্ডল কণবদ্ধও হইল, তুষবদ্ধও হইল, যেইস্থান হইতে উহা উৎপাথিত হইয়াছিল সেই স্থানে উহা পুনরায় উৎপন্ন হইল না এবং উৎপাটন স্থান প্রকাশ পাইল, শালিস্থাণুসমূহ গুল্মাকারে অবস্থান করিল। অতএব আমরা শালিক্ষেত্র বিভক্ত করিয়া উহার সীমা নির্দেশ করিব।”

অতঃপর, বাসেট্ঠ, ওই সকল সত্ত্ব শালিক্ষেত্র বিভক্ত করিয়া উহার সীমা নির্দেশ করিল।

১২৯. “অনন্তর, বাসেট্ঠ, লোভপ্রকৃতিসম্পন্ন কোনো এক সত্ত্ব আপনার অংশ রক্ষা করিতে করিতে অদত্ত অপরের অংশ গ্রহণপূর্বক উহা উপভোগ করিল। সত্ত্বগণ তাহাকে ধৃত করিয়া বলিল, “হে সত্ত্ব, তুমি পাপ করিয়াছ, যেহেতু স্বকীয় অংশ রক্ষণকালে তুমি অদত্ত অপরের অংশ গ্রহণ পূর্বক উপভোগ করিয়াছ। হে সত্ত্ব, পুনরায় এইরূপ করিও না।” সেই সত্ত্ব “তথাস্তু” বলিয়া প্রতিশ্রুতি দান করিল। ওই সত্ত্ব দ্বিতীয়বার ওইরূপই করিল, তৃতীয়বারও করিল। সে ধৃত হইয়া সত্ত্বগণ কর্তৃক পাপকর্ম করিতে নিষিদ্ধ হইল। কোনো কোনো সত্ত্ব তাহাকে হস্তদ্বারা, কেহ বা মৃৎপিণ্ডদ্বারা, কেহ বা দণ্ড দ্বারা প্রহার করিল। বাসেট্ঠ, ওই সময় হইতেই চৌর্যের প্রকাশ হইল, নিন্দা, মৃষাবাদ এবং দণ্ড-প্রয়োগের আবির্ভাব হইল।”

১৩০. “তৎপরে, বাসেট্ঠ, সত্ত্বগণ একত্রিত হইয়া বিলাপ করিল, “সত্ত্বগণের মধ্যে পাপধর্মের প্রাদুর্ভাব হইয়াছে, চৌর্য, নিন্দা, মৃষাবাদ এবং দণ্ড-প্রয়োগের আবির্ভাব হইয়াছে, অতএব আমরা এক সত্ত্বকে নির্বাচিত করিব। ওই সত্ত্ব ক্রোধের উপযুক্ত স্থানে ক্রোধ প্রকাশ করিবেন, নিন্দার স্থানে নিন্দার প্রয়োগ করিবেন, যে নির্বাসনের যোগ্য তাহার প্রতি নির্বাসনের ব্যবস্থা করিবেন। আমরা শালির অংশ তাঁহাকে প্রদান করিব।” তখন, বাসেট্ঠ, ওই সকল সত্ত্ব তাহাদিগের মধ্যে যে সত্ত্ব অপেক্ষাকৃত, অভিরূপ, দর্শনীয়, প্রাসাদিক এবং মহাশক্তিশালী তাহার নিকট গমন করিয়া বলিল, “এসো সত্ত্ব, ক্রোধের উপযুক্ত স্থানে ক্রোধ প্রয়োগ করো, নিন্দার স্থানে নিন্দার প্রয়োগ করো, যে নির্বাসনের যোগ্য তাহার প্রতি নির্বাসনের প্রয়োগ করো। আমরা তোমাকে শালির অংশ প্রদান করিব।” ওই সত্ত্ব সম্মত হইয়া যথাস্থানে ক্রোধ, নিন্দা ও নির্বাসনের প্রয়োগ করিল। সত্ত্বগণও তাঁহাকে শালির অংশ প্রদান করিল।”

১৩১. “বাসেট্ঠ, মহাজন-নির্বাচিত এই অর্থে মহা-সম্মত, মহা-সম্মত” এই প্রথম নামের আবির্ভাব হইল। ক্ষেত্রের পতি এই অর্থে “ক্ষত্রিয়” রূপ দ্বিতীয় নামের আবির্ভাব হইল। ধর্মের দ্বারা অপরের প্রীতি উৎপাদন করেন এই অর্থে “রাজা” রূপ তৃতীয় নামের আবির্ভাব হইল। এইরূপে, বাসেট্ঠ, পুরাতন আদিম অক্ষরানুসারে এই ক্ষত্রিয়মণ্ডলের উৎপত্তি। তাহাদের উৎপত্তি ওই সকল সত্ত্বগণ হইতেই, অন্য কোনো সত্ত্ব হইতে নহে, সদৃশ সত্ত্বগণ হইতেই, অসদৃশ সত্ত্বগণ হইতে নহে এবং উহা ধর্মানুসারেই হইয়াছিল, অধর্মানুসারে নহে। বাসেট্ঠ, মনুষ্যের মধ্যে ইহলোকে এবং পরলোকে ধর্মই শ্রেষ্ঠ।”

১৩২. “বাসেট্ঠ, ওই সকল সত্ত্বগণের কেহ কেহ চিন্তা করিল, “সত্ত্বগণের মধ্যে পাপধর্মের প্রাদুর্ভাব হইয়াছে, চৌর্য, নিন্দা ও মৃষাবাদের আবির্ভাব হইয়াছে, দণ্ডপ্রয়োগ এবং নির্বাসনের আবির্ভাব হইয়াছে। অতএব আমরা পাপ-অকুশলধর্ম বর্জন করিব।” তাহারা পাপ-অকুশলধর্ম বর্জন করিল। বাসেট্ঠ, পাপ-অকুশলধর্ম বর্জন করে এই অর্থে “ব্রাহ্মণ, ব্রাহ্মণ” এই নামের প্রথম আবির্ভাব হইল। তাহারা অরণ্যে পর্ণকুটির নির্মাণ পূর্বক উহাতে ধ্যানরত হইল। তাহাদের অঙ্গার নাই, ধূম নাই, মুষল পরিত্যক্ত, তাহারা সায়ংকালে সায়মাশের নিমিত্ত, প্রাতে প্রাতরাশের নিমিত্ত আহারান্বেষণে গ্রামণ্ডনগর রাজধানীতে ভ্রমণ করিতে লাগিল। তাহারা আহার লাভান্তে পুনরায় অরণ্য-কুটিরে ধ্যানরত হইল। মনুষ্যগণ তাহাদিগকে দেখিয়া বলিল, “এই সকল সত্ত্ব অরণ্যে পর্ণকুটির নির্মাণপূর্বক উহাতে ধ্যানরত, উহাদের অঙ্গার নাই, ধূম নাই, মুষল নাই; সায়াহ্নে সায়মাশের নিমিত্ত প্রাতে প্রাতরাশের নিমিত্ত আহারান্বেষণে তাহারা গ্রাম-নিগম-রাজধানীতে ভ্রমণ করে। আহার লাভান্তে তাহারা পুনরায় অরণ্য-কুটিরে ধ্যানরত হয়।” “ধ্যান করে,” এই নিমিত্ত, বাসেট্ঠ, “ধ্যায়ী, ধ্যায়ী” এইরূপ দ্বিতীয় নামের আবির্ভাব হইল।”

“বাসেট্ঠ, ওই সকল সত্ত্বের কেহ কেহ অরণ্যে পর্ণকুটিরে ধ্যানসম্পন্ন করিতে অসমর্থ হইয়া গ্রাম-নিগমসমূহের নিকটস্থ স্থানে গমনপূর্বক গ্রন্থ রচনায় প্রবৃত্ত হইল। মনুষ্যগণ তাহাদিগকে দেখিয়া বলিল, “এই সকল সত্ত্ব অরণ্যে পর্ণকুটিরে ধ্যানসম্পন্ন করিতে অসমর্থ হইয়া গ্রাম ও নিগমসমূহের নিকটস্থ স্থানে গমনপূর্বক গ্রন্থ রচনায় প্রবৃত্ত। ইহারা এক্ষণে ধ্যান করে না।” বাসেট্ঠ, “ইহারা এক্ষণে ধ্যান করে না” ইহা হইতে “অধ্যায়ক” রূপ তৃতীয় নামের আবির্ভাব হইল। ওই সময় ইহারা হীনরূপে জ্ঞাত হইত, এক্ষণে তাহারা শ্রেষ্ঠরূপে গৃহীত। এইরূপে, বাসেট্ঠ, পুরাতন আদিম অক্ষরানুসারে এই ব্রাহ্মণ মণ্ডলের উৎপত্তি। তাহাদের উৎপত্তি ওই সকল সত্ত্বগণ হইতেই, অন্য কোনো সত্ত্ব হইতে নহে, সদৃশ সত্ত্বগণ হইতেই, অসদৃশগণ হইতে নহে, এবং উহা ধর্মানুসারেই হইয়াছিল, অধর্মানুসারে নহে। বাসেট্ঠ, মনুষ্যের মধ্যে ইহলোকে এবং পরলোকে ধর্মই শ্রেষ্ঠ।”

১৩৩. বাসেট্ঠ, ওই সকল সত্ত্বের মধ্যে কেহ কেহ মৈথুন-ধর্মে যুক্ত হইয়া বিভিন্ন ব্যবসায়ে প্রবৃত্ত হইল। “মৈথুন-ধর্ম যুক্ত হইয়া বিভিন্ন ব্যবসায়ে প্রবৃত্ত” ইহা হইতে, বাসেট্ঠ “বৈশ্য” এই নামের আবির্ভাব হইল। এইরূপে, বাসেট্ঠ, পুরাতন আদিম অক্ষরানুসারে এই বৈশ্যমণ্ডলের উৎপত্তি। তাহাদের উৎপত্তি ওই সকল সত্ত্বগণ হইতেই, অন্য কোনো সত্ত্ব হইতে নহে, সদৃশ সত্ত্বগণ হইতেই, অসদৃশগণ হইতে নহে, এবং উহা ধর্মানুসারেই হইয়াছিল, অধর্মানুসারে নহে। বাসেট্ঠ, মনুষ্যের মধ্যে ইহলোকে এবং পরলোকে ধর্মই শ্রেষ্ঠ।

১৩৪. বাসেট্ঠ, ওই সকল সত্ত্বের যাহারা অবশিষ্ট রহিল তাহারা ক্ষুদ্রাচারসম্পন্ন হইল। “ক্ষুদ্রাচার, ক্ষুদ্রাচার” ইহা হইতে, বাসেট্ঠ, “শূদ্র, শূদ্র” এই নামের উৎপত্তি হইল। এইরূপে, বাসেট্ঠ, পুরাতন আদিম অক্ষরানুসারে এই শূদ্রমণ্ডলের উৎপত্তি। তাহাদের উৎপত্তি ওই সকল সত্ত্বগণ হইতেই, অন্য কোনো সত্ত্ব হইতে নহে, সদৃশ সত্ত্বগণ হইতেই, অসদৃশগণ হইতে নহে, এবং উহা ধর্মানুসারেই হইয়াছিল, অধর্মানুসারে নহে, বাসেট্ঠ, মনুষ্যের মধ্যে ইহলোকে এবং পরলোকে ধর্মই শ্রেষ্ঠ।”

১৩৫. “বাসেট্ঠ, এমন সময় আসিল যখন ক্ষত্রিয়ও স্বধর্মের প্রতি বিরূপ হইয়া গৃহত্যাগপূর্বক গৃহহীন প্রব্রজ্যা আশ্রয় করিয়া বলিল, “আমি শ্রমণ হইব।” ব্রাহ্মণ, বৈশ্য এবং শূদ্রও ওইরূপ করিল। বাসেট্ঠ, এই চতুর্বিধ মণ্ড হইতে শ্রমণ-মণ্ডলের উৎপত্তি হইল। তাহাদের উৎপত্তি ওই সকল সত্ত্বগণ হইতেই, অন্য কোনো সত্ত্ব হইতে নহে, সদৃশগণ হইতেই, অসদৃশগণ হইতে নহে, এবং উহা ধর্মানুসারেই হইয়াছিল, অধর্মানুসারে নহে। বাসেট্ঠ, মনুষ্যের মধ্যে ইহলোকে এবং পরলোকে ধর্মই শ্রেষ্ঠ।”

১৩৬. “বাসেট্ঠ, ক্ষত্রিয়ও কায়, বাক্য এবং মনের দ্বারা দুরাচারে রত হইয়া, মিথ্যাদৃষ্টিসম্পন্ন হইয়া, ওইরূপ দৃষ্টির অনুযায়ী কর্মের ফলে মরণান্তে দেহের বিনাশে অপায়-দুর্গতিসম্পন্ন বিনিপাত নিরয়ে উৎপন্ন হয়; ব্রাহ্মণ, বৈশ্য, শূদ্র, শ্রমণও ওইরূপ আচরণের ফলে ওইরূপ গতি প্রাপ্ত হয়।”

“বাসেট্ঠ, ক্ষত্রিয়ও কায়, বাক্য এবং মনের দ্বারা সদাচারে রত হইয়া, সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হইয়া, ওইরূপ দৃষ্টির অনুযায়ী কর্মের ফলে মরণান্তে দেহের বিনাশে সুগতিসম্পন্ন স্বর্গলোকে উৎপন্ন হয়; ব্রাহ্মণ, বৈশ্য, শূদ্র, শ্রমণও ওইরূপ আচরণের ফলে ওইরূপ গতি প্রাপ্ত হয়।”

১৩৭. “বাসেট্ঠ, ক্ষত্রিয়ও কায়, বাক্য ও মনের দ্বারা দ্বয়-কারী হয়, মিশ্র-দৃষ্টিসম্পন্ন হয় এবং ওইরূপ দৃষ্টির অনুসরণ করিয়া তদনুযায়ী কর্মের ফলে মরণান্তে দেহের বিনাশে সুখ-দুঃখ বেদনা অনুভব করে। ব্রাহ্মণ, বৈশ্য, শূদ্র, শ্রমণও ওইরূপ আচরণের ফলে ওইরূপ গতি প্রাপ্ত হয়।”

১৩৮. “বাসেট্ঠ, ক্ষত্রিয়ও কায়-সংযত, বাক্‌-সংযত, চিত্ত-সংযত হইয়া সপ্ত বোধিপক্ষীয় ধর্মের ভাবনা করিয়া ইহলোকেই পরিনির্বাণ লাভ করে। ব্রাহ্মণ, বৈশ্য, শূদ্র ও শ্রমণও ওইরূপ আচরণের ফলে ইহলোকেই পরিনির্বাণ লাভ করে।”

১৩৯. “বাসেট্ঠ, এই চতুর্বণের মধ্যে যিনি ভিক্ষু, অর্হৎ, ক্ষীণাসব, কৃত-কৃত্য, ভারমুক্ত, সদর্থ-প্রাপ্ত, ভববন্ধন-মুক্ত, সম্যক-জ্ঞান-বিমুক্ত হন, তিনি উহাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আখ্যা লাভ করেন, এবং তাহা ধর্মানুসারেই হইয়া থাকে, অধর্মানুসারে নহে। বাসেট্ঠ, মনুষ্যের মধ্যে ইহলোকে এবং পরলোকে ধর্মই শ্রেষ্ঠ।”

১৪০. “বাসেট্ঠ, ব্রহ্মা সনৎকুমারও এই গাথায় উচ্চারণ করিয়াছেন :

“যাহারা গোত্রসেবী তাহাদের মধ্যে ক্ষত্রিয় শ্রেষ্ঠ,
যিনি বিদ্যাচরণসম্পন্ন, তিনি দেবমনুষ্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।”

বাসেট্ঠ, ব্রহ্মা সনৎকুমার কর্তৃক গীত সেই গাথা সুগীত, দুর্গীত নহে; সুভাষিত, দুভার্ষিত নহে; অর্থ-সংহিত, নিরর্থক নহে। আমিও উহার অনুমোদন করি। আমিও কহি :

“যাহারা গোত্র-সেবী তাহাদের মধ্যে ক্ষত্রিয় শ্রেষ্ঠ,
যিনি বিদ্যাচরণসম্পন্ন, তিনি দেবমনুষ্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।”

ভগবান এইরূপ বলিলেন। বাসেট্ঠ ও ভারদ্বাজ আনন্দিত হইয়া ভগবদ্বাক্যের অভিনন্দন করিলেন।

অগ্গঞ্ঞ সূত্রান্ত সমাপ্ত।

The Long Discourses

|_III. The Chapter with Pāṭikaputta

DN27. অগ্গঞ্ঞ সূত্রান্ত

Translations [23]

English

繁體字

日本語

Deutsch

Italiano

Español

Português

Русский

Norsk

Magyar

Srpski

עִבְרִית

हिंदी

ಕನ್ನಡ

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference