১৪১. আমি এইরূপ শ্রবণ করিয়াছি। এক সময় ভগবান নালন্দায় পাবারিক আম্রবনে অবস্থান করিতেছিলেন। ওই সময় আয়ুষ্মান সারিপুত্র ভগবানের নিকট গমনপূর্বক তাঁহাকে অভিবাদনান্তে একপ্রান্তে উপবেশন করিলেন। তৎপরে তিনি ভগবানকে বলিলেন, “দেব, আমি আপনার প্রতি এতই শ্রদ্ধাবান যে আমার মতে উচ্চতর জ্ঞান সম্বন্ধে আপনার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর কখনো কেহই ছিল না, কখনো হইবে না এবং এখনো নাই।”

১৪২. “সারিপুত্র, তোমার বাক্য সুন্দর ও সুস্পষ্ট, তুমি সত্যই সিংহনাদ করিয়াছ। তাহা হইলে অতীতে যাঁহারা অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ হইয়াছিলেন, স্বচিত্তে তাঁহাদের চিত্ত পরিজ্ঞাত হইয়া, তুমি জানিয়াছ তাঁহারা কিরূপ শীলসম্পন্ন, কিরূপ মতবিশিষ্ট, কিরূপ প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন, কিরূপ তাঁহাদের জীবন যাত্রার প্রণালি ছিল এবং কিরূপ মুক্তি তাঁহারা লাভ করিয়াছিলেন?”

“ভন্তে, তাহা নহে।”

“তবে কি ভবিষ্যতে যাঁহারা অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ হইবেন, স্বচিত্তে তাঁহাদের চিত্ত পরিজ্ঞাত হইয়া, তুমি জানিয়াছ তাঁহারা কিরূপ শীলসম্পন্ন, কিরূপ মতবিশিষ্ট, কিরূপ প্রজ্ঞার অধিকারী হইবেন, কিরূপ তাঁহাদের জীবন যাত্রার প্রণালি হইবে এবং কিরূপ মুক্তি তাঁহারা লাভ করিবেন?”

“ভন্তে, তাহা নহে।”

“তাহা হইলে, সারিপুত্র, বর্তমানে আমি অর্হৎ, সম্যকসম্বুদ্ধ, তুমি স্বচিত্তে আমার চিত্ত পরিজ্ঞাত হইয়া জানিয়াছ আমি কিরূপ শীলসম্পন্ন, কিরূপ মতবিশিষ্ট, কিরূপ প্রজ্ঞার অধিকারী, কিরূপ আমার জীবন যাত্রার প্রণালি এবং কিরূপ মুক্তি আমি লাভ করিয়াছি?”

“ভন্তে, তাহা নহে।”

“সারিপুত্র, তাহা হইলে অতীত, ভবিষ্যত ও বর্তমান বুদ্ধগণ সম্বন্ধে তোমার চেত-পর্যায় জ্ঞান নাই; তবে কিরূপে তুমি এইরূপ মহৎ ও স্পষ্ট উক্তি করিলে, এইরূপ সিংহনাদ করিলে?”

১৪৩. “ভন্তে, অতীত ভবিষ্যৎ ও বর্তমান বুদ্ধগণ সম্বন্ধে আমার চেত-পর্যায় জ্ঞান নাই, তথাপি, ভন্তে, ধর্ম-অন্বয় আমার বিদিত। মনে করুন কোনো রাজার সীমান্তে স্থিত নগরী সুদৃঢ় ভিত্তির উপর গঠিত, দুর্ভেদ্য প্রাচীর বেষ্টিত, উহার মাত্র একটি দ্বার; রাজা সেখানে বন্ধু ভিন্ন অপর সকলের প্রবেশ নিষিদ্ধ করিবার জন্য চতুর, দক্ষ এবং বুদ্ধিমান প্রহরী নিযুক্ত করিয়াছেন। রাজা নগরাভিমুখী পথগুলি পরিদর্শনে যাইয়া প্রাকারে এমন কোনো সন্ধি অথবা বিবর দেখিতে পাইলেন না যাহার মধ্য দিয়া বিড়ালের ন্যায় একটি ক্ষুদ্র প্রাণীও বাহির হইতে পারে। তিনি চিন্তা করিলেন, “যে-সকল বৃহত্তর প্রাণী এই নগরে প্রবেশ করিবে অথবা উহা হইতে নিষ্ক্রান্ত হইবে, তাহারা সকলেই এই দ্বার দিয়া প্রবেশ করিবে অথবা নিষ্ক্রান্ত হইবে।” ভন্তে, এইরূপেই ধর্মার্থ আমার বিদিত। অতীতে যাঁহারা অর্হৎ, সম্যকসম্বুদ্ধ হইয়াছিলেন, সেই সকল ভগবান চিত্তের উপক্লেশ-ভূত, প্রজ্ঞার দৌর্বল্যজনক পঞ্চনীবরণ পরিহার করিয়া, চতুর্বিধ স্মৃতিপ্রস্থানে সুপ্রতিষ্ঠিত হইয়া, যথারূপে সপ্তবোধ্যঙ্গের ভাবনা করিয়া অনুত্তর সম্যক সম্বোধি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। যাঁহারা ভবিষ্যতে অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ হইবেন তাঁহারাও ওইরূপেই সম্যক সম্বোধি লাভ করিবেন। এইক্ষণে ভগবান অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ, তিনিও ওইরূপেই সম্যক সম্বোধি প্রাপ্ত হইয়াছেন।

১৪৪. ভন্তে, আমি ধর্ম শ্রবণার্থে একসময় এইস্থানে ভগবানের নিকট উপস্থিত হইয়াছিলাম। ওই সময় ভগবান সুন্দর-অসুন্দর বিভক্ত করিয়া আমাকে উত্তরোত্তর প্রণীত প্রণীত ধর্মের উপদেশ দিয়াছিলেন। ভন্তে, ভগবান আমাকে যে যে ধর্মের উপদেশ দিয়াছিলেন, ওই সকলে জ্ঞান লাভ করিয়া উহাদের মধ্যে আমি একটির পূর্ণতা সাধন করিয়াছিলাম, আমি ভগবানের প্রতি শ্রদ্ধাপূর্ণ হইয়াছিলাম, “ভগবান সম্যকসম্বুদ্ধ, ভগবান কর্তৃক ধর্ম স্বাখ্যাত, সংঘ সুপ্রতিপন্ন।”

১৪৫. “পুনশ্চ, ভন্তে, ভগবান কুশলধর্ম সম্বন্ধে যে উপদেশ দান করেন তাহা অতুলনীয়। এই সকল কুশলধর্ম ; যথা : চতুর্বিধ স্মৃতিপ্রস্থান, চতুর্বিধ সম্যক প্রধান, চতুর্বিধ ঋদ্ধিপাদ, পঞ্চইন্দ্রিয়, পঞ্চবল, সপ্ত বোধ্যঙ্গ, আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ। ইহার অনুশীলনে ভিক্ষু আসবসমূহের ক্ষয়হেতু অনাসবচিত্তবিমুক্তি ও প্রজ্ঞাবিমুক্তি এই জগতেই স্বয়ং জানিয়া ও সাক্ষাৎ করিয়া বিহার করেন। ভন্তে, কুশলধর্ম সম্বন্ধে ইহার তুলনা নাই। ভগবান তাহা সম্পূর্ণরূপে অবগত আছেন। ভগবান যাহা অশেষে জ্ঞাত আছেন তাঁহার অধিক জানিবার এমন কিছুই নাই যাহা জানিয়া অন্য শ্রমণ অথবা ব্রাহ্মণ কুশলধর্ম সম্বন্ধে ভগবান অপেক্ষা অধিকতর জ্ঞানসম্পন্ন হইবে।”

১৪৬. “পুনশ্চ, ভন্তে, ভগবান আয়তন-প্রজ্ঞপ্তি বিষয়ে যে উপদেশ দান করেন তাহাও অতুলনীয়। এই সকল ছয় আধ্যাত্মিক এবং বাহির আয়তনসমূহ-চক্ষু ও রূপ, শ্রোত্র এবং শব্দ, ঘ্রাণ এবং গন্ধ, জিহ্বা এবং রস, কায় এবং স্পর্শ, মন এবং ধর্ম। ভন্তে, আয়তন-প্রজ্ঞপ্তি বিষয়ে ইহা অতুলনীয়। ভগবান তাহা সম্পূর্ণরূপে অবগত আছেন। ভগবান যাহা অশেষে জ্ঞাত আছেন তাহার অধিক জানিবার এমন কিছুই নাই যাহা জানিয়া অন্য শ্রমণ অথবা ব্রাহ্মণ আয়তন-প্রজ্ঞপ্তি বিষয়ে ভগবান অপেক্ষা অধিকতর জ্ঞানসম্পন্ন হইবে।”

১৪৭. “পুনশ্চ, ভন্তে, ভগবান গর্ভপ্রবেশ সম্বন্ধে যে উপদেশ দান করেন তাহাও অতুলনীয়। ভন্তে, এই চারি প্রকার গর্ভপ্রবেশ : কেহ সম্মূঢ়াবস্থায় মাতৃগর্ভে প্রবেশ করে, ওই অবস্থায় তথায় অবস্থান করে, ওই অবস্থায় ওই স্থান হইতে নিষ্ক্রান্ত হয়। ইহা প্রথম প্রকার গর্ভপ্রবেশ। পুনরায়, ভন্তে, কেহ সজ্ঞানে মাতৃগর্ভে প্রবেশ করে, সম্মূঢ়াবস্থায় তথায় অবস্থান করে, সম্মূঢ়াবস্থায় তথা হইতে নিষ্ক্রান্ত হয়। ইহা দ্বিতীয় প্রকার গর্ভপ্রবেশ। পুনশ্চ, ভন্তে, কেহ সজ্ঞানে মাতৃগর্ভে প্রবেশ করে, ওই অবস্থায় তথায় অবস্থান করে, সম্মূঢ়াবস্থায় তথা হইতে নিষ্ক্রান্ত হয়। ইহা তৃতীয় প্রকার গর্ভপ্রবেশ। পুনশ্চ, ভন্তে, কেহ সজ্ঞানে মাতৃগর্ভে প্রবেশ করে, ওই অবস্থায় তথায় অবস্থান করে, ওই অবস্থায় তথা হইতে নিষ্ক্রান্ত হয়। ইহা চতুর্থ প্রকার গর্ভপ্রবেশ । ভন্তে, গর্ভপ্রবেশের বিষয়ে ইহার তুলনা নাই।”

১৪৮. “পুনশ্চ, ভন্তে, ভগবান পরচিত্ত উদ্‌ঘাটন সম্বন্ধে যে উপদেশ দান করেন তাহাও অতুলনীয়। উহা চারি প্রকারে কৃত হয়; যথা : কেহ নিমিত্তের দ্বারা পরচিত্ত প্রকাশ করে, এইরূপ তোমার মন, এইস্থানে তোমার মন, এইরূপ তোমার চিত্ত। সে যতই প্রকাশ করুক তাহার উক্তি ওই প্রকারই হইবে, অন্যপ্রকার নহে, ইহাই প্রথম প্রকার পরচিত্ত উদ্‌ঘাটন। পুনশ্চ, ভন্তে, কেহ নিমিত্তের দ্বারা পরচিত্ত প্রকাশ না করিয়া, মনুষ্য, অমনুষ্য অথবা দেবতাগণের শব্দ শ্রবণ করিয়া উহা করিয়া থাকে, এইরূপ তোমার মন, এইস্থানে তোমার মন, এইরূপ তোমার চিত্ত। সে যতই প্রকাশ করুক তাহার উক্তি ওই প্রকারই হইবে, অন্যপ্রকার নহে, ইহা দ্বিতীয় প্রকার পরচিত্ত উদ্‌ঘাটন। পুনশ্চ, ভন্তে, কেহ নিমিত্তের দ্বারাও পরচিত্ত প্রকাশ করে না, মনুষ্য, অমনুষ্য অথবা দেবতাগণের শব্দ শ্রবণ করিয়াও উহা করে না, কিন্তু বিতর্ক এবং বিচাররতের বিতর্ক-বিস্ফার শব্দ শ্রবণ করিয়া উহা করিয়া থাকে, এইরূপ তোমার মন, এইস্থানে তোমার মন, এইরূপ তোমার চিত্ত। সে যতই প্রকাশ করুক তাহার উক্তি ওই প্রকারই হইবে, অন্যপ্রকার নহে, ইহা তৃতীয় প্রকার পরচিত্ত-উদ্‌ঘাটন। পুনশ্চ, ভন্তে, কেহ নিমিত্তের দ্বারাও পরচিত্ত প্রকাশ করেনা, মনুষ্য, অমনুষ্য অথবা দেবতাগণের শব্দ শ্রবণ করিয়াও উহা করে না, বিতর্ক-বিচাররতের বিতর্ক-বিস্ফার শব্দ শ্রবণ করিয়াও উহা করে না, কিন্তু অবিতর্ক অবিচার সমাধিসম্পন্নের চিত্ত দ্বারা অপরের চিত্ত-পর্যায় অবগত হয়, এই পুরুষের মানসিক সংস্কার যেরূপে প্রণিহিত, সেইরূপে সে পরমুহূর্তে এই এই প্রকার বিতর্ক করিবে। সে যতই প্রকাশ করুক তাহার উক্তি ওই প্রকারই হইবে, অন্যপ্রকার নহে, ইহা চতুর্থ প্রকার পরচিত্ত-উদ্‌ঘাটন। ভন্তে, পরচিত্ত উদ্‌ঘাটনের বিষয়ে ইহার তুলনা নাই।

১৪৯. “পুনশ্চ, ভন্তে, ভগবান দর্শন-সমাপত্তি বিষয়ে যে উপদেশ দান করেন তাহাও অতুলনীয়। ভন্তে, চারি প্রকার দর্শন সমাপত্তি-কোনো শ্রমণ বা ব্রাহ্মণ উৎসাহ, উদ্যোগ, অনুযোগ, অপ্রমাদ, সম্যক চিন্তার দ্বারা এইরূপ চিত্ত-সমাধি প্রাপ্ত হন যে, ওইরূপ সমাধির অবস্থায় তিনি এই দেহকে পদতল হইতে ঊর্ধ্বে এবং মস্তকের কেশাগ্র হইতে নিম্নে ত্বক-পরিবেষ্টিত নানাপ্রকার অশুচির আধাররূপে প্রত্যবেক্ষণ করেন, এই দেহে কেশ, লোম, নখ, দন্ত, ত্বক, মাংস, স্নায়ু, অস্থি, মজ্জা, মূত্রাশয়, হৃদ-যন্ত্র, যকৃৎ, পিত্ত-কোষ, প্লীহা, বায়ু-কোষ, অন্ত্র, অন্ত্রগুণ, উদর, করীষ, পিত্ত, শ্লেষ্মা, পূয, লোহিত, স্বেদ, মেদ, অশ্রু, বসা, খেল, নাসামল, লসীকা, মূত্র আছে। ইহা প্রথম দর্শনসমাপত্তি। পুনশ্চ, ভন্তে, ওই শ্রমণ অথবা ব্রাহ্মণ পূর্বোক্তরূপ চিত্ত-সমাধিতে উপনীত হইয়া সেই প্রত্যবেক্ষণ সমাপ্তে আরও অগ্রসর হইয়া চর্ম-মাংস-রক্তাবৃত পুরুষ-কঙ্কাল প্রত্যবেক্ষণ করেন। ইহা দ্বিতীয় দর্শন-সমাপত্তি। ভন্তে, পুনশ্চ, ওইরূপ শ্রমণ অথবা ব্রাহ্মণ আরও অগ্রসর হইয়া ইহলোক ও পরলোক উভয়ত্র অবিচ্ছিন্নরূপে প্রতিষ্ঠিত পুরুষের বিজ্ঞান-স্রোত প্রত্যবেক্ষণ করেন। ইহা তৃতীয় দর্শন-সমাপত্তি। পুনশ্চ, ভন্তে, তিনি আরও অগ্রসর হইয়া দেখিতে পান ওই বিজ্ঞানস্রোত ইহলোক এবং পরলোকে অপ্রতিষ্ঠিত । ইহা চতুর্থ দর্শন-সমাপত্তি! ভন্তে, দর্শন-সমাপত্তি বিষয়ে ইহার তুলনা নাই।”

১৫০. “পুনশ্চ, ভন্তে, ভগবান পুদ্গল প্রজ্ঞপ্তি সম্বন্ধে যে উপদেশ দান করেন, তাহাও অতুলনীয়। ভন্তে, এই সাত পুদ্গল : উভয়ভাগ বিমুক্ত, প্রজ্ঞা-বিমুক্ত, কায়ানুদর্শী, দৃষ্টিপ্রাপ্ত, শ্রদ্ধা-বিমুক্ত, ধর্মানুসারী, শ্রদ্ধানুসারী। ভন্তে, পুদ্গল-প্রজ্ঞপ্তি সম্বন্ধে ইহার তুলনা নাই।”

১৫১. “পুনশ্চ, ভন্তে, ভগবান প্রধানসমূহ সম্বন্ধে যে উপদেশ দেন তাহাও অতুলনীয়। বোজ্ঝাঙ্গ এই সাত প্রকার-স্মৃতি-সম্বোজ্ঝাঙ্গ, ধর্মবিচয়-সম্বোজ্ঝাঙ্গ, বীর্যসম্বোজ্ঝাঙ্গ, প্রীতি-সম্বোজ্ঝাঙ্গ, প্রশ্রব্ধি-সম্বোজ্ঝাঙ্গ, সমাধি সম্বোজ্ঝাঙ্গ, উপেক্ষা সম্বোজ্ঝাঙ্গ। ভন্তে, প্রধানসমূহ সম্বন্ধে ইহা অতুলনীয়।”

১৫২. “পুনশ্চ, ভন্তে, ভগবান প্রতিপদাসমূহ সম্বন্ধে যে উপদেশ দান করেন, তাহাও অতুলনীয়। এই সকল চারি প্রতিপদা-দুঃসাধ্য এবং বিলম্বিত-জ্ঞানপ্রসূ প্রতিপদা, দুঃসাধ্য এবং ত্বরিতে জ্ঞানদায়ী প্রতিপদা, সুসাধ্য এবং বিলম্বিত-জ্ঞানপ্রসূ প্রতিপদা, সুসাধ্য এবং ত্বরিতে জ্ঞানদায়ী প্রতিপদা। ইহাদের মধ্যে প্রথমোক্ত প্রতিপদা দুঃসাধ্যতা এবং ধীরগামিতা উভয় কারণেই হীন উক্ত হয়; দ্বিতীয় প্রতিপদা দুঃসাধ্যতার নিমিত্ত হীন কথিত হয়; তৃতীয় প্রতিপদা ধীরগামিতার নিমিত্ত হীন কথিত হয়; চতুর্থ প্রতিপদা সুসাধ্যতা এবং ক্ষিপ্রগতি এই উভয় কারণেই উৎকৃষ্ট কথিত হয়। ভন্তে, প্রতিপদাসমূহ সম্বন্ধে ইহার তুলনা নাই।”

১৫৩. “পুনশ্চ, ভন্তে, বাক্‌-সমাচার বিষয়ে ভগবানের উপদেশ অতুলনীয়। কেহ মিথ্যাবাদ-উপসংহিত বাক্য বলেন না, জয়াপেৰী হইয়া ভেদ-জনক, পিশুন, ক্রোধজনক বাক্য বলেন না, যথাসময়ে জ্ঞানগর্ভ মূল্যবান বাক্য বলিয়া থাকেন। বাক্‌-সমাচার বিষয়ে ইহা অতুলনীয়।”

“পুনশ্চ, ভন্তে, মনুষ্যের শীলাচার সম্বন্ধে ভগবানের উপদেশ অতুলনীয়। কেহ সৎ, শ্রদ্ধাবান হইয়া থাকেন, কূহক ও লপক হন না, নৈমিত্তিক হন না, নিষ্পেষিক হন না, লাভোপরি লাভগৃধ্‌নু হন না, রক্ষিতেন্দ্রিয় হন, ভোজনে মাত্রাজ্ঞ হন, অপক্ষপাতী, জাগর্যানুযুক্ত, অতন্দ্রিত, বীর্যবান, ন্যায়-প্রতিপন্ন, স্মৃতিমান, বাকপটু, গতিমান, ধৃতিমান, মতিমান হন, পার্থিব ভোগে লোভপরায়ণ হন না, অবহিত ও প্রাজ্ঞ হন। ভন্তে, মনুষ্যের শীলাচার সম্বন্ধে ইহা অতুলনীয়।”

১৫৪. “ভন্তে, পুনশ্চ, অনুশাসন-বিধি সম্বন্ধে ভগবানের যে উপদেশ তাহা অতুলনীয়। চারি অনুশাসন-বিধি। ভগবান সম্যক মনঃসংযোগ দ্বারা প্রত্যেক মনুষ্যকে জানিতে পারেন, ওই মনুষ্য শিক্ষানুরূপ আচরণসম্পন্ন হইয়া ত্রিবিধ সংযোজনের ক্ষয়হেতু স্রোতাপন্ন হইয়া দুর্গতিমুক্ত নিয়ত সম্বোধিপরায়ণ হইবেন। ওইরূপে ভগবান জানিতে পারেন, এই মনুষ্য শিক্ষানুরূপ আচরণসম্পন্ন হইয়া ত্রিবিধ সংযোজনের ক্ষয়হেতু রাগ, দ্বেষ ও মোহের নাশে সকৃদাগামী হইয়া মাত্র একবার এই জগতে আগমন করিয়া দুঃখের অন্তসাধন করিবেন; এই মনুষ্য শিক্ষানুরূপ আচরণসম্পন্ন হইয়া পঞ্চ অপরভাগীয় সংযোজনের ক্ষয়হেতু স্বর্গলোকে উৎপন্ন হইবেন এবং ওইস্থান হইতে পুনরাগমন না করিয়া তথায় পরিনির্বাণপ্রাপ্ত হইবেন; এই মনুষ্য শিক্ষানুরূপ আচরণসম্পন্ন হইয়া আসবসমূহের ক্ষয়হেতু অনাসব চিত্তবিমুক্তি এবং প্রজ্ঞাবিমুক্তি এই জগতেই স্বয়ং জানিয়া ও উপলব্ধি করিয়া বিহার করিবেন। ভন্তে, অনুশাসনবিধি সম্বন্ধে ভগবানের এই উপদেশ অতুলনীয়।”

১৫৫. “পুনশ্চ, ভন্তে, মনুষ্যের বিমুক্তিবিষয়ক জ্ঞানে ভগবানের উপদেশ অতুলনীয়। ভগবান সম্যক মনঃসংযোগের দ্বারা প্রত্যেক মনুষ্যকে জানিতে পারেন, এই মনুষ্য ত্রিবিধ সংযোজনের ক্ষয়হেতু স্রোতাপন্ন হইয়া দুর্গতি-মুক্ত নিয়ত সম্বোধিপরায়ণ; এই মনুষ্য ত্রিবিধ সংযোজনের ক্ষয়হেতু রাগ, দ্বেষ ও মোহের নাশে সকৃদাগামী হইয়া মাত্র একবার এই জগতে আগমন করিয়া দুঃখের অন্তসাধন করিবেন; এই মনুষ্য পঞ্চ অবরভাগীয় সংযোজনের ক্ষয়হেতু স্বর্গলোকে উৎপন্ন হইবেন এবং ওইস্থান হইতে পুনরাগমন না করিয়া তথায় পরিনির্বাণপ্রাপ্ত হইবেন; এই মনুষ্য আসবসমূহের ক্ষয়হেতু অনাসব চিত্তবিমুক্তি এবং প্রজ্ঞাবিমুক্তি এই জগতেই স্বয়ং জানিয়া ও উপলব্ধি করিয়া বিহার করিবেন। ভন্তে, মনুষ্যের বিমুক্তিবিষয়ক জ্ঞান সম্বন্ধে ইহা অতুলনীয়।

১৫৬. “পুনশ্চ, ভন্তে, শাশ্বতবাদ সম্বন্ধে ভগবানের উপদেশ অতুলনীয়। ভন্তে, শাশ্বতবাদ ত্রিবিধ। কোনো শ্রমণ বা ব্রাহ্মণ উৎসাহ, উদ্যোগ, অনুযোগ, অপ্রমাদ, সম্যক চিন্তার দ্বারা এইরূপ চিত্ত-সমাধি প্রাপ্ত হন যে, এইরূপ সমাধির অবস্থায় তিনি অনেক পূর্ব-নিবাস স্মরণ করেন-এক জন্ম, দুই জন্ম, তিন, চারি, পাঁচ, দশ, বিশ, ত্রিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ, একশত, এক সহস্র, এক লক্ষ, অনেক শত, অনেক সহস্র, অনেক লক্ষ জন্ম। “অমুক স্থানে আমার এই নাম, এই গোত্র, এই বর্ণ, এইরূপ আহার ছিল, আমি এই প্রকার সুখদুঃখ অনুভব করিয়াছিলাম, এত বৎসর আমার আয়ু ছিল। সেখান হইতে চ্যুত হইয়া আমি অমুক স্থানে জন্মিয়াছিলাম। তথায় আমার এই নাম, এই গোত্র, এই বর্ণ, এইরূপ আহার ছিল, আমি এই প্রকার সুখদুঃখ অনুভব করিয়াছিলাম, এত বৎসর আমার আয়ু ছিল। সেই স্থান হইতে চ্যুত হইয়া এই স্থানে জন্মিয়াছি।” এইরূপ বহুবিধ পূর্বজন্মের আকার ও প্রকার তিনি স্মরণ করেন। তৎপরে তিনি বলেন, “অতীত কালে জগতের সংবর্ত ও বিবর্ত উভয়ই আমার জ্ঞাত, ভবিষ্যতে জগতের সংবর্ত অথবা বিবর্ত হইবে তাহা আমার জ্ঞাত। আত্মা ও জগৎ শাশ্বত, অপরিণামী, কূটস্থ এবং অচল; যদিও সত্ত্বগণ জন্ম হইতে জন্মান্তরে গমন করে, চ্যুত হয় এবং পুনর্বার উৎপন্ন হয়, তথাপি অস্তিত্ব শাশ্বত।” ইহা প্রথম শাশ্বতবাদ। পুনশ্চ, ভন্তে, কোনো শ্রমণ বা ব্রাহ্মণ উৎসাহ, উদ্যোগ, অনুযোগ, অপ্রমাদ, সম্যক চিন্তার দ্বারা এইরূপ চিত্ত-সমাধি প্রাপ্ত হন যে, এইরূপ সমাধির অবস্থায় তিনি অনেক পূর্বনিবাস স্মরণ করেন; যথা : এক সংবর্ত-বিবর্ত, দুই, তিন, চারি, পাঁচ, দশ, বিশ সংবর্ত-বিবর্ত। “অমুক স্থানে আমার এই নাম, এই গোত্র, এই বর্ণ, এইরূপ আহার ছিল, আমি এই প্রকার সুখদুঃখ অনুভব করিয়াছিলাম, এত বৎসর আমার আয়ু ছিল। সেখান হইতে চ্যুত হইয়া আমি অমুক স্থানে জন্মিয়াছিলাম। তথায় আমার এই নাম, এই গোত্র, এই বর্ণ, এইরূপ আহার ছিল, আমি এই প্রকার সুখদুঃখ অনুভব করিয়াছিলাম, এত বৎসর আমার আয়ু ছিল। সেই স্থান হইতে চ্যুত হইয়া এই স্থানে জন্মিয়াছি।” এইরূপ বহু পূর্বজন্মের আকার ও প্রকার তিনি স্মরণ করেন। তৎপরে তিনি বলেন, “অতীতকালে জগতের সংবর্ত ও বিবর্ত উভয়ই আমার জ্ঞাত, ভবিষ্যতে জগতের সংবর্ত অথবা বিবর্ত হইবে তাহাও আমার জ্ঞাত। আত্মা ও জগৎ শাশ্বত, অপরিণামী, কূটস্থ এবং অচল; যদিও সত্ত্বগণ জন্ম হইতে জন্মান্তরে গমন করে, চ্যুত হয় এবং পুনর্বার উৎপন্ন হয়, তথাপি অস্তিত্ব শাশ্বত।” ইহা দ্বিতীয় শাশ্বতবাদ। পুনশ্চ, ভন্তে, কোনো শ্রমণ বা ব্রাহ্মণ উৎসাহ, উদ্যোগ, অনুযোগ, অপ্রমাদ, সম্যক চিন্তার দ্বারা এইরূপ চিত্ত-সমাধি প্রাপ্ত হন যে, এইরূপ সমাধির অবস্থায় তিনি অনেক পূর্বনিবাস স্মরণ করেন; যথা : দশ সংবর্ত-বিবর্ত, বিশ, ত্রিশ, চল্লিশ সংবর্ত-বিবর্ত। “অমুক স্থানে আমার এই নাম, এই গোত্র, এই বর্ণ, এইরূপ আহার ছিল, আমি এই প্রকার সুখ-দুঃখ অনুভব করিয়াছিলাম, এত বৎসর আমার আয়ু ছিল। সেখান হইতে চ্যুত হইয়া আমি অমুক স্থানে জন্মিয়াছিলাম। তথায় আমার এই নাম, এই গোত্র, এই বর্ণ, এইরূপ আহার ছিল, আমি এই প্রকার সুখদুঃখ অনুভব করিয়াছিলাম, এত বৎসর আমার আয়ু ছিল। সেই স্থান হইতে চ্যুত হইয়া এই স্থানে জন্মিয়াছি।” এইরূপ বহু পূর্বজন্মের আকার ও প্রকার তিনি স্মরণ করেন। তৎপরে তিনি বলেন, “অতীতকালে জগতের সংবর্ত ও বিবর্ত উভয়ই আমার জ্ঞাত, ভবিষ্যতে জগতের সংবর্ত অথবা বিবর্ত হইবে তাহাও আমার জ্ঞাত। আত্মা ও জগৎ শাশ্বত, অপরিণামী, কূটস্থ এবং অচল; যদিও সত্ত্বগণ জন্ম হইতে জন্মান্তরে গমন করে, চ্যুত হয় এবং পুনর্বার উৎপন্ন হয়, তথাপি অস্তিত্ব শাশ্বত। ইহা তৃতীয় শাশ্বত-বাদ। ভন্তে, শাশ্বত-বাদ বিষয়ে ইহা অতুলনীয়।

১৫৭. “পুনশ্চ, ভন্তে, ভগবান পূর্বনিবাসানুস্মৃতি-জ্ঞান সম্বন্ধে যে উপদেশ দান করেন, তাহা অতুলনীয়-কোনো শ্রমণ বা ব্রাহ্মণ উৎসাহ, উদ্যোগ, অনুযোগ, অপ্রমাদ, সম্যক চিন্তার দ্বারা এইরূপ চিত্ত-সমাধি প্রাপ্ত হন যে, ওইরূপ সমাধির অবস্থায় তিনি অনেক পূর্বজন্ম স্মরণ করেন; যথা : এক জন্ম, দুই জন্ম, তিন, চারি, পাঁচ, দশ, বিশ, ত্রিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ, একশত, এক সহস্র, এক লক্ষ জন্ম, অনেক সংবর্ত-কল্প, অনেক বিবর্ত-কল্প, অনেক সংবর্ত-বিবর্ত কল্প। “অমুক স্থানে আমার এই নাম, এই গোত্র, এই বর্ণ, এইরূপ আহার ছিল, আমি এই প্রকার সুখদুঃখ অনুভব করিয়াছিলাম, এত বৎসর আমার আয়ু ছিল। সেখান হইতে চ্যুত হইয়া আমি অমুক স্থানে জন্মিয়াছিলাম। তথায় আমার এই নাম, এই গোত্র, এই বর্ণ, এইরূপ আহার ছিল, আমি এই প্রকার সুখদুঃখ অনুভব করিয়াছিলাম, এত বৎসর আমার আয়ু ছিল। সেই স্থান হইতে চ্যুত হইয়া এইস্থানে উৎপন্ন হইয়াছি। এইরূপে বহু পূর্বজন্ম এবং ওই সকলের পূর্ণ বিবরণ স্মরণ করেন। ভন্তে, দেবতাগণ আছেন যাঁহাদের আয়ু গণনার দ্বারা অথবা অনুমান দ্বারা নির্ণয় করা যায় না, তথাপি পূর্বে তাঁহাদের যেইরূপ জন্মই হইয়া থাকুক, রূপী, অরূপী, সংজ্ঞী, অসংজ্ঞী অথবা নৈবসংজ্ঞী-না-অসংজ্ঞী-তাঁহারা ওই সকল পূর্ব জন্মের পূর্ণ বিবরণ স্মরণ করেন।”

১৫৮. “পুনশ্চ, ভন্তে, প্রাণীগণের চ্যুতি ও উৎপত্তি বিষয়ে জ্ঞান সম্বন্ধে ভগবানের উপদেশ অতুলনীয়। কোনো শ্রমণ বা ব্রাহ্মণ উৎসাহ, উদ্যোগ, অনুযোগ, অপ্রমাদ, সম্যক চিন্তার দ্বারা এইরূপ চিত্ত-সমাধি প্রাপ্ত হন যে, ওইরূপ সমাধির অবস্থায় তিনি বিশুদ্ধ, লোকাতীত, দিব্যচক্ষু দ্বারা সত্ত্বগণের চ্যুতি ও উৎপত্তি দর্শন করেন; কর্মানুযায়ী গতিপ্রাপ্ত সত্ত্বগণের মধ্যে হীন ও উত্তমকে, সুবর্ণ দুর্বর্ণবিশিষ্টকে, সুগত ও দুর্গতকে জানিতে পারেন, “ভদ্রগণ, এই এই সত্ত্ব কায়িক, বাচনিক ও মানসিক দুরাচারসম্পন্ন, আর্যগণের অপবাদক, মিথ্যাদৃষ্টি সমন্বিত, মিথ্যাদৃষ্টি হইতে উদ্ভূত কর্মপ্রাপ্ত; মরণান্তে দেহের বিনাশে উহারা অপায়-দুর্গতি-বিনিপাত নিরয়ে উৎপন্ন হইয়াছে। কিন্তু এই এই সত্ত্ব কায়িক, বাচনিক ও মানসিক সদাচরণসম্পন্ন, তাঁহারা আর্যগণের অপবাদ হইতে বিরত, সম্যক দৃষ্টিসমন্বিত, সম্যক দৃষ্টি হইতে উদ্ভূত কর্মপ্রাপ্ত, মরণান্তে দেহের বিনাশে উহারা সুগতিপ্রাপ্ত হইয়া স্বর্গলোকে উৎপন্ন হইয়াছেন।” এইরূপে তিনি বিশুদ্ধ লোকাতীত দিব্যচক্ষু দ্বারা সত্ত্বগণের চ্যুতি উৎপত্তি দর্শন করেন; কর্মানুযায়ী গতিপ্রাপ্ত সত্ত্বগণের মধ্যে হীন ও উত্তমকে, সুবর্ণ দুর্বর্ণবিশিষ্টকে, সুগত ও দুর্গতকে জানিতে পারেন। ভন্তে, সত্ত্বগণের চ্যুতি-উৎপত্তি জ্ঞান সম্বন্ধে ইহা অতুলনীয়।

১৫৯. “পুনশ্চ, ভন্তে নানাবিধ ঋদ্ধিবিষয়ে ভগবানের উপদেশ অতুলনীয়। ঋদ্ধি দুই প্রকার। এক প্রকার যাহা আসব-যুক্ত, উপাধি-যুক্ত, যাহা “অনার্য” উক্ত হয়। আর এক প্রকার যাহা আসবহীন, উপাধিহীন, যাহা “আর্য” উক্ত হয়। প্রথমোক্ত ঋদ্ধি কী প্রকার? কোনো শ্রমণ বা ব্রাহ্মণ উৎসাহ, উদ্যোগ, অনুযোগ, অপ্রমাদ, সম্যক চিন্তার দ্বারা এইরূপ চিত্ত-সমাধি প্রাপ্ত হন যে, ওইরূপ সমাধির অবস্থায় তিনি বহুবিধ ঋদ্ধি প্রাপ্ত হন, এক হইয়াও বহু হইতে সক্ষম হন, বহু হইয়াও পুনরায় এক হইতে সক্ষম হন, তাঁহার আবির্ভাব ও তিরোভাব হয়, আকাশে গমনের ন্যায় তিনি ভিত্তি, প্রাকার ও পর্বতের গাত্র ভেদ করিয়া অপর পারে অবাধে গমন করেন, জলে উন্মুজ্জন নিমজ্জনের ন্যায় ভূমিতেও উন্মুজ্জন নিমজ্জন করেন, তিনি ভূমিতে গমনের ন্যায় জলতল ভেদ না করিয়া জলের উপর গমন করেন, তিনি পর্যঙ্কাবদ্ধ হইয়া পক্ষীর ন্যায় আকাশে গমন করেন, মহাপরাক্রমশালী মহাবল চন্দ্র-সূর্যকে তিনি হস্ত দ্বারা স্পর্শ করেন, পরিমর্দন করেন, সশরীরে ব্রহ্মলোক পর্যন্ত গমন করেন। ইহাই আসব-যুক্ত, উপাধি-যুক্ত ঋদ্ধি যাহা “অনার্য” কথিত হয়। আসবহীন, উপাধিহীন ঋদ্ধি যাহা “আর্য” উক্ত হয় উহা কী প্রকার? ভিক্ষু যদি ইচ্ছা করেন “প্রতিকূলে অপ্রতিকূল-সংজ্ঞী হইয়া বিহার করিব,” তাহা হইলে তিনি ওইরূপ স্থানে অপ্রতিকূল-সংজ্ঞী হইয়া বিহার করেন। যদি তিনি ইচ্ছা করেন “অপ্রতিকূলে প্রতিকূল-সংজ্ঞী হইয়া বিহার করিব,” তাহা হইলে তিনি ওইরূপ স্থানে প্রতিকূল-সংজ্ঞী হইয়া বিহার করেন। যদি তিনি ইচ্ছা করেন “প্রতিকূলে এবং অপ্রতিকূলে অপ্রতিকূল-সংজ্ঞী হইয়া বিহার করিব”, তাহা হইলে তিনি ওইরূপ স্থানে অপ্রতিকূল-সংজ্ঞী হইয়া বিহার করেন। যদি তিনি ইচ্ছা করেন, “অপ্রতিকূল এবং প্রতিকূলে প্রতিকূল-সংজ্ঞী হইয়া বিহার করিব,” তাহা হইলে তিনি ওইরূপ স্থানে প্রতিকূল-সংজ্ঞী হইয়া বিহার করেন। যদি তিনি ইচ্ছা করেন, “প্রতিকূল এবং অপ্রতিকূল উভয়ই বর্জনপূর্বক উপেক্ষাসম্পন্ন হইয়া বিহার করিব,” তাহা হইলে তিনি ওইরূপ স্থানে উপেক্ষা, স্মৃতি ও সম্প্রজ্ঞানসম্পন্ন হইয়া বিহার করেন। ভন্তে, ইহাই আসবহীন, উপাধিহীন ঋদ্ধি যাহা “আর্য” উক্ত হয়।

১৬০. “ঋদ্ধি বিষয়ে ইহা অতুলনীয়। ইহা সম্পূর্ণরূপে ভগবানের জ্ঞাত। ভগবান যাহা অশেষে জ্ঞাত আছেন তাহার অধিক জানিবার এমন কিছুই নাই যাহা জানিয়া অন্য শ্রমণ অথবা ব্রাহ্মণ ঋদ্ধি সম্বন্ধে ভগবান অপেক্ষা অধিকতর জ্ঞানসম্পন্ন হইবেন।”

“ভন্তে, শ্রদ্ধা ও বীর্যসম্পন্ন, স্থিরপ্রতিজ্ঞ, কুলপুত্রগণ পুরুষোচিত বল, বীর্য, পরাক্রম এবং ধৈর্য দ্বারা যাহা লাভ করেন, তাহা ভগবানের লদ্ধ। ভন্তে, যে কামসুখ ভোগহীন, ইতরসেবিত, সাধারণজনীয়, অনার্য, নিষ্ফল, ভগবান তাহার অনুসরণ করেন না; যাহা আত্মক্লমথরূপ দুঃখ, যাহা অনার্য এবং নিষ্ফল তাহারও অনুসরণ করেন না; ভগবান এই জগতেই সুখপ্রদায়ী চতুর্বিধ উচ্চতর ধ্যান ইচ্ছানুসারে, বিনা-কৃচ্ছ্রে এবং বিনা আয়াসে লাভ করেন।

১৬১. ভন্তে, যদি আমাকে কেহ জিজ্ঞাসা করে, “আবুস সারিপুত্র, অতীতকালে সম্বোধি সম্বন্ধে ভগবানের অপেক্ষা অধিকতর জ্ঞানসম্পন্ন কোনো শ্রমণ অথবা ব্রাহ্মণ ছিলেন কি?” তাহা হইলে আমি বলিব “ছিলেন না।” “ভবিষ্যতে সম্বোধি সম্বন্ধে ভগবান অপেক্ষা অধিকতর জ্ঞানসম্পন্ন কোনো শ্রমণ বা ব্রাহ্মণ হইবেন কি?” এইরূপ জিজ্ঞাসিত হইলে আমি বলিব “হইবেন না।” “বর্তমানে এমন কোনো শ্রমণ অথবা ব্রাহ্মণ আছেন কি যিনি সম্বোধি সম্বন্ধে ভগবান “অপেক্ষা অধিকতর জ্ঞানসম্পন্ন?” এইরূপ জিজ্ঞাসিত হইলে আমি বলিব “নাই।” ভন্তে, যদি কেহ আমাকে জিজ্ঞাসা করে, “আবুস সারিপুত্র, অতীতকালে সম্বোধি বিষয়ে ভগবানের সদৃশ কোনো শ্রমণ অথবা ব্রাহ্মণ ছিলেন কি?,” তাহা হইলে আমি বলিব “ছিলেন”। “ভবিষ্যতে ওই বিষয়ে ভগবানের সদৃশ কোনো শ্রমণ অথবা ব্রাহ্মণ হইবেন কি?” এইরূপ জিজ্ঞাসিত হইলে আমি বলিব, “হইবেন”। “বর্তমানে কোনো শ্রমণ বা ব্রাহ্মণ আছেন কি যিনি ওই বিষয়ে ভগবানের সদৃশ?” এইরূপ জিজ্ঞাসিত হইলে আমি বলিব “নাই”। ভন্তে, যদি কেহ আমাকে জিজ্ঞাসা করে, “আয়ুষ্মান সারিপুত্র কী হেতু একজনের অনুমোদন করেন, একজনের করেন না?” তাহা হইলে আমি বলিব, “আমি ভগবানের উপস্থিতিতে তাঁহাকে বলিতে শুনিয়াছি এবং তাঁহার নিকট হইতে গ্রহণ করিয়াছি, “অতীতে সম্বোধি বিষয়ে আমার সদৃশ অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধগণ হইয়াছিলেন।” ওইরূপেই আমি ভগবানের নিকট হইতে শ্রবণ ও গ্রহণ করিয়াছি, “ভবিষ্যতে সম্বোধি বিষয়ে আমার সদৃশ অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধগণ হইবেন।” ওইরূপেই আমি ভগবানের নিকট হইতে শ্রবণ ও গ্রহণ করিয়াছি, “একই জগতে একই সময়ে যে দুইজন অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ উৎপন্ন হইবেন ইহা অসম্ভব, এইরূপ ঘটনার অবকাশ নাই।” ভন্তে, উক্ত প্রকারে জিজ্ঞাসিত হইয়া এবং উক্ত প্রকার উত্তর দিয়া কি আমি ভগবদ্বাক্যের যথারূপ প্রকাশক হইব এবং অসত্য দ্বারা উহাকে বিকৃত করিব না? ধর্মের প্রকৃত মর্ম প্রকাশ করিব এবং কোনো বাদশীল সহধর্মী নিন্দা করিবার অবসর পাইবে না?”

“সারিপুত্র, ওইরূপ উত্তর দিয়া তুমি যথার্থই আমার বাক্যের সত্যানুরূপ প্রকাশক হইবে এবং অসত্যাবৃত করিয়া উহাকে বিকৃত করিবে না, কোনো বাদশীল সহধর্মীও নিন্দা করিবার অবসর পাইবে না।”

১৬২. এইরূপ উক্ত হইলে আয়ুষ্মান উদায়ি ভগবানকে বলিলেন, “আশ্চর্য, অদ্ভূত, ভন্তে, তথাগতের অল্পেচ্ছা, সন্তুষ্টি ও কৃচ্ছ্র, যেহেতু তিনি এইরূপ মহাবল এবং মহানুভাব হইয়াও আপনাকে প্রকাশ করেন না। এই সকলের মধ্যে মাত্র একটি ধর্মও যদি অন্য-তীর্থিয় পরিব্রাজকগণ আপনার মধ্যে দেখিতে পায়, তাহা হইলে তাহারা তৎক্ষণাৎ পতাকা উত্তোলন করিবে। আশ্চর্য, অদ্ভূত ভন্তে, তথাগতের অল্পেচ্ছা, সন্তুষ্টি ও কৃচ্ছ্র, যেহেতু তিনি এইরূপ মহাবল এবং মহানুভাব হইয়াও আপনাকে প্রকাশ করেন না।”

“উদায়ি, দেখো, “ভগবানের অল্পেচ্ছা, সন্তুষ্টি ও কৃচ্ছ্র, যেহেতু তিনি এইরূপ মহাবল এবং মহানুভাব হইয়াও আপনাকে প্রকাশ করেন না।” উদায়ি, এই সকলের মধ্যে মাত্র একটি ধর্মও যদি অন্য-তীর্থিয় পরিব্রাজকগণ আপনার মধ্যে দেখিতে পায়, তাহা হইলে তাহারা তৎক্ষণাৎ পতাকা উত্তোলন করিবে। উদায়ি, দেখো, “তথাগতের অল্পেচ্ছা সন্তুষ্টি ও কৃচ্ছ্র, যেহেতু তিনি এইরূপ মহাবল এবং মহানুভাব হইয়াও আপনাকে প্রকাশ করেন না।”

১৬৩. অতঃপর ভগবান আয়ুষ্মান সারিপুত্রকে সম্বোধন করিলেন, “অতএব, সারিপুত্র, তুমি এই ধর্মপর্যায় ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদিগের নিকট, উপাসক ও উপাসিকাগণের নিকট অনুক্ষণ প্রকাশ করিবে। যে-সকল নির্বোধ পুরুষের তথাগতের সম্বন্ধে সংশয় অথবা দ্বিধা হইবে, এই ধর্মপর্যায় শ্রবণ করিয়া তাহাদের সংশয় অথবা দ্বিধা দূর হইবে।”

এইরূপে আয়ুষ্মান সারিপুত্র ভগবানের সম্মুখে আপনার শ্রদ্ধা নিবেদন করিলেন। তন্নিমিত্ত এই ধর্মব্যাখ্যানের নাম “সম্পসাদনীয়” হইয়াছে।

সম্পসাদনীয় সূত্রান্ত সমাপ্ত।

The Long Discourses

|_III. The Chapter with Pāṭikaputta

DN28. সম্পসাদনীয় সূত্রান্ত

Translations [19]

English

繁體字

日本語

Deutsch

Italiano

Português

Norsk

Srpski

עִבְרִית

हिंदी

ಕನ್ನಡ

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference

Translations [19]

English

繁體字

日本語

Deutsch

Italiano

Português

Norsk

Srpski

עִבְרִית

हिंदी

ಕನ್ನಡ

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference

Commentaries [0]