৩৮১. আমি এইরূপ শ্রবণ করিয়াছি। এক সময় ভগবান উজুঞ্ঞার কণ্ণকত্থল মৃগবনে অবস্থান করিতেছিলেন। ওই সময় নগ্ন সন্ন্যাসী কাশ্যপ ভগবানের সমীপে উপস্থিত হইয়া ভগবানের সহিত প্রীত্যালাপান্তে একান্তে দণ্ডায়মান হইলেন। পরে তিনি ভগবানকে বলিলেন :

“হে গৌতম, আমি শুনিয়াছি “শ্রমণ গৌতম সর্ব তপশ্চরণের নিন্দা করিয়া থাকেন, কঠোর ব্রতাচারী তপস্বীমাত্রেই তাঁহার তিরস্কার ও অপবাদের পাত্র।” হে গৌতম, যাহারা ওইরূপ বলিয়া থাকে তাহারা কি গৌতমের বাক্যই পুনরাবৃত্তি করে, গৌতমের বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা করে না? তাহারা কি ধর্মনিহিত সত্যই প্রকাশ করে? তাহাদের ওইরূপ করণে ধর্মানুমত কোনো বাক্য আপত্তিজনক হয় না? কারণ আমরা ভগবান গৌতমের নিন্দা কামনা করি না।”

৩৮২. “হে কাশ্যপ, যাহারা ওইরূপ বলিয়া থাকে তাহারা আমার বাক্যের আবৃত্তিকারী নহে, তাহারা মিথ্যা প্রচার করিয়া আমার নিন্দা ঘোষণা করে। কাশ্যপ, আমি দিব্য, বিশুদ্ধ, অলৌকিক চক্ষু দ্বারা দেখি কোনো কোনো কঠোর ব্রতাচারী তপস্বী মরণান্তে দেহের ধ্বংসে অপায়-দুর্গতি-বিনিপাত নরকে উৎপন্ন হইয়াছেন; তাঁহাদের মধ্যে কেহ কেহ বা সুগতিপ্রাপ্ত ও স্বর্গলোকে উৎপন্ন হইয়াছেন; অপেক্ষাকৃত ন্যূনতর কঠোরতা অবলম্বী কোনো কোনো তপস্বী অপায়-দুর্গতি-বিনিপাত নরকে উৎপন্ন হইয়াছেন; তাঁহাদের মধ্যে কেহ কেহ বা সুগতিপ্রাপ্ত ও স্বর্গলোকে উৎপন্ন হইয়াছেন। কাশ্যপ, এই সকল তপস্বীদিগের এইরূপ আগতি, গতি, চ্যুতি ও উৎপত্তি যথাযথরূপে অবগত হইয়া আমি কী প্রকারে সর্ব তপশ্চরণের নিন্দা করিব, কী প্রকারে কঠোর ব্রতচারী তপস্বীমাত্রই আমার তিরস্কার ও নিন্দাভাজন হইবে?

৩৮৩-৩৮৪. “কাশ্যপ, কোনো কোনো শ্রমণ-ব্রাহ্মণ আছেন যাঁহারা পণ্ডিত, নিপুণ, বিতণ্ডাকুশল, কেশাগ্রবিদ্ধকারী; তাঁহারা যেন পরমতকে প্রজ্ঞা দ্বারা খণ্ডিত বিখণ্ডিতকরণে সক্ষম। তাঁহারাও কোনো কোনো স্থলে আমার সহিত একমত হন, কোনো কোনো স্থলে হন না। ওই সকল বিষয়ে কোনো স্থলে তাঁহারা “সাধু” কহিলে আমরাও “সাধু” বলিয়া থাকি; কোনো স্থল তাঁহাদের অননুমোদিত হইলে আমরাও উহার অননুমোদন করি। তাঁহাদের অনুমোদিত কোনো কোনো বিষয় আমরা অননুমোদন করি; তাঁহাদের অননুমোদিত কোনো কোনো বিষয় আমরা অনুমোদন করি। কোনো কোনো বিষয় আমরা অনুমোদন করিলে তাঁহারাও ওইরূপ করেন। কোনো কোনো বিষয় আমরা অনুমোদন করিলে তাঁহারা উহার অননুমোদন করেন। কোনো কোনো বিষয় আমরা অননুমোদন করিলে তাঁহারা উহার অনুমোদন করেন।

নগ্ন সন্ন্যাসী

৩৮৫. “আমি তাঁহাদের নিকট গমন করিয়া কহি, “যে-সকল বিষয়ে আমরা একমত নহি, ওই সকল স্থগিত রাখুন। যে যে স্থানে আমরা একমত, ওই সকল বিষয়ে যাঁহারা বিজ্ঞ তাঁহারা আচার্য আচার্যকে, সংঘ সংঘকে প্রশ্ন করুন, তাঁহারা ওই সকল বিষয় গভীররূপে আলোচনা ও বিচার করুন, তাঁহারা বলিবেন, “যাহা অকুশল ধর্ম অথবা আপনাদের মধ্যে যাহা ওইরূপে আখ্যাত হয়, যাহা নিন্দনীয় অথবা আপনাদের মধ্যে যাহা ওইরূপে আখ্যাত হয়, যাহা অসেবনীয় অথবা আপনাদের মধ্যে যাহা ওইরূপে আখ্যাত হয়, যাহা অর্হত্ত্বপ্রাপ্তির পক্ষে পর্যাপ্ত নহে, অথবা আপনাদের মধ্যে যাহা ওইরূপে আখ্যাত হয়, যাহা দুষ্ট অথবা আপনাদের মধ্যে যাহা ওইরূপে আখ্যাত হয়-ওই সকল ধর্মকে নিঃশেষে বর্জন করিয়াছেন, শ্রমণ গৌতম অথবা অপর মাননীয় গণাচার্যগণ?”

৩৮৬. “কাশ্যপ, এরূপ হইতে পারে যে, বিজ্ঞগণ পরস্পরকে প্রশ্ন করিবারকালে, পরস্পরের সহিত আলোচনা ও বিচারকালে, এইরূপ বলিবেন, “শ্রমণ গৌতম ওই সকল ধর্ম নিঃশেষে বর্জন করিয়াছেন, কিন্তু অপর আচার্যগণ আংশিকরূপে ওই সকলের বর্জন করিয়াছেন।” কাশ্যপ, এইরূপে বিজ্ঞগণ পরস্পরকে প্রশ্ন করিবারকালে, পরস্পরের সহিত আলোচনা ও বিচারকালে ওই সকল বিষয়ে আমাদিগেরই ভূয়সী প্রশংসা করিবেন।”

৩৮৭. “পুনশ্চ, কাশ্যপ, বিজ্ঞগণ আচার্য আচার্যকে, সংঘ সংঘকে প্রশ্ন করুন, তাঁহারা গভীররূপে আলোচনা ও বিচার করুন, তাঁহারা বলিবেন, “যাহা কুশল ধর্ম অথবা আপনাদের মধ্যে যাহা ওইরূপে আখ্যাত হয়, যাহা অনিন্দ্য অথবা আপনাদের মধ্যে যাহা ওইরূপে আখ্যাত হয়, যাহা সেবনীয় অথবা আপনাদের মধ্যে যাহা ওইরূপে আখ্যাত হয়, যাহা অর্হত্ত্বপ্রাপ্তির পক্ষে পর্যাপ্ত অথবা আপনাদের মধ্যে যাহা ওইরূপে আখ্যাত হয়, যাহা নির্মল অথবা আপনাদের মধ্যে যাহা ওইরূপে আখ্যাত হয়-এই সকল ধর্মকে পূর্ণরূপে পালন করেন, শ্রমণ গৌতম অথবা অপর মাননীয় গণাচার্যগণ?”

৩৮৮. “কাশ্যপ, এরূপ হইতে পারে যে, বিজ্ঞগণ পরস্পরকে প্রশ্ন করিবার কালে, পরস্পরের সহিত আলোচনা ও বিচারকালে এইরূপ বলিবেন, “শ্রমণ গৌতম এ সকল ধর্ম পূর্ণরূপে পালন করেন, অপর গণাচার্যগণ আংশিকরূপে ওই সকল পালন করেন।” এইরূপে কাশ্যপ, বিজ্ঞগণ পরস্পরকে প্রশ্ন করিবার কালে, পরস্পরের সহিত আলোচনা ও বিচারকালে, ওই সকল বিষয়ে আমাদিগেরই ভূয়সী প্রশংসা করিবেন।”

৩৮৯. “পুনশ্চ, কাশ্যপ, বিজ্ঞগণ আচার্য আচার্যকে, সংঘ সংঘকে প্রশ্ন করুন, তাঁহারা গভীররূপে আলোচনা ও বিচার করুন, তাঁহারা বলিবেন, “যাহা অকুশল ধর্ম অথবা আপনাদের মধ্যে যাহা ওইরূপে আখ্যাত হয়, যাহা নিন্দনীয় অথবা আপনাদের মধ্যে যাহা ওইরূপে আখ্যাত হয়, যাহা অসেবনীয় অথবা যাহা আপনাদের মধ্যে যাহা ওইরূপে আখ্যাত হয়, যাহা অর্হত্ত্বপ্রাপ্তির পক্ষে পর্যাপ্ত নহে অথবা যাহা আপনাদের মধ্যে ওইরূপে আখ্যাত হয়, যাহা দৃষ্ট অথবা আপনাদের মধ্যে যাহা ওইরূপে আখ্যাত হয়-এই সকল ধর্মকে নিঃশেষে বর্জন করিয়াছেন, গৌতমের শ্রাবকসংঘ অথবা অপর গণাচার্যদিগের শ্রাবকসংঘ?”

৩৯০. “কাশ্যপ, এরূপ হইতে পারে যে, বিজ্ঞগণ পরস্পরকে প্রশ্ন করিবারকালে, পরস্পরের সহিত আলোচনা ও বিচারকালে এইরূপ বলিবেন, “গৌতমের শ্রাবকসংঘ ওই সকল ধর্ম নিঃশেষে বর্জন করিয়াছেন, অপর গণাচার্যদিগের শ্রাবকসংঘ ওই সকলের আংশিক বর্জন করিয়াছেন।” এইরূপে কাশ্যপ, বিজ্ঞগণ পরস্পরকে প্রশ্ন করিবারকালে, পরস্পরের সহিত আলোচনা ও বিচারকালে, ওই সকল বিষয়ে আমাদিগেরই ভূয়সী প্রশংসা করিবেন।

৩৯১. “পুনশ্চ, কাশ্যপ, বিজ্ঞগণ আচার্য আচার্যকে, সংঘ সংঘকে প্রশ্ন করুন, তাঁহারা গভীর রূপে আলোচনা ও বিচার করুন, তাঁহারা বলিবেন, “যাহা কুশল ধর্ম অথবা আপনাদের মধ্যে যাহা ওইরূপে আখ্যাত হয়, যাহা অনিন্দ্য অথবা আপনাদের মধ্যে যাহা ওইরূপে আখ্যাত হয়, যাহা সেবনীয় অথবা আপনাদের মধ্যে যাহা ওইরূপে আখ্যাত হয়, যাহা অর্হত্ত্বপ্রাপ্তির পক্ষে পর্যাপ্ত অথবা আপনাদের মধ্যে যাহা ওইরূপে আখ্যাত হয়, যাহা নির্মল অথবা আপনাদের মধ্যে যাহা ওইরূপে আখ্যাত হয়-এই সকল ধর্মকে পূর্ণরূপে পালন করেন, গৌতমের শ্রাবকসংঘ অথবা গণাচার্যদিগের শ্রাবকসংঘ?”

৩৯২. “কাশ্যপ, এরূপ হইতে পারে যে, বিজ্ঞাগণ পরস্পরকে প্রশ্ন করিবারকালে, পরস্পরের সহিত আলোচনা ও বিচারকালে এইরূপ বলিবেন, “গৌতমের শ্রাবকসংঘ ওই সকল ধর্ম পূর্ণরূপে পালন করেন, অপর গণাচার্যদিগের শ্রাবকসংঘ আংশিকরূপে ওই সকল পালন করেন।” এইরূপে কাশ্যপ, বিজ্ঞগণ পরস্পরকে প্রশ্ন করিবারকালে, পরস্পরের সহিত আলোচনা ও বিচারকালে, ওই সকল বিষয়ে আমাদিগেরই ভূয়সী প্রশংসা করিবেন।”

৩৯৩. “কাশ্যপ, এমন মার্গ, এমন প্রতিপদ আছে যাহার অনুসরণে স্বয়ং জানিতে ও দেখিতে পারিবে যে “শ্রমণ গৌতম কালবাদী, ভূতবাদী, অর্থবাদী, ধর্মবাদী ও বিনয়বাদী।” কাশ্যপ, ওই মার্গ কী? উহা আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ; যথা : সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক জীবিকা, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি। কাশ্যপ, ইহাই সেই মার্গ, সেই প্রতিপদ যাহার অনুসরণে স্বয়ং জানিতে ও দেখিতে পারিবে যে “শ্রমণ গৌতম কালবাদী, ভূতবাদী, অর্থবাদী, ধর্মবাদী, বিনয়বাদী।””

৩৯৪. এইরূপ কথিত হইলে নগ্ন সন্ন্যাসী কাশ্যপ ভগবানকে বলিলেন, “আবুসো গৌতম, এই সকল তপশ্চর্যা কোনো কোনো শ্রমণ ও ব্রাহ্মণের মতে শ্রামণ্য ও ব্রাহ্মণ্য কথিত হয়-নগ্ন অবস্থিতি, মুক্তাচারত্ব (ভোজন এবং শৌচক্রিয়াদি দণ্ডায়মান অবস্থায় সম্পন্ন করা), হস্তাবলেহন (আহারান্তে হস্ত ধৌত না করিয়া উহার অবলেহন), ভিক্ষা গ্রহণার্থ আহ্বানের কিম্বা অনুরোধের প্রত্যাখ্যান, আপনার জন্য আনীত অথবা আপনার জন্য প্রস্তুতকৃত খাদ্য এবং নিমন্ত্রণের অস্বীকার, কুম্ভী অথবা কলোপি মুখ হইতে প্রদত্ত ভিক্ষার ত্যাগ, প্রবেশদ্বারে অথবা ইন্ধন এবং মুসলাভ্যন্তরে স্থাপিত ভিক্ষার ত্যাগ, ভোজননিরত দুইজনের কিম্বা গর্ভিণীর কিম্বা স্তন্যদানরতা স্ত্রীর কিম্বা পুরুষ-সহবাসরতা স্ত্রীর ভিক্ষার ত্যাগ, অভিক্ষালব্ধ সংগৃহীত ভোজ্য অস্বীকার, কুক্কুরের উপস্থিতির স্থান হইতে কিম্বা দলবদ্ধ মক্ষিকাসংকুল স্থান হইতে ভিক্ষা গ্রহণে বিরতি, মৎস্য, মাংস, সুরা, মেরয়, তুষোদকের গ্রহণ অস্বীকার, মাত্র এক গৃহ হইতে একগ্রাস খাদ্য গ্রহণ, দুই গৃহ হইতে দুই গ্রাস-সাত গৃহ হইতে সাত গ্রাস খাদ্যের গ্রহণ, মাত্র এক অথবা দুই অথবা শত ভিক্ষান্তে জীবনযাপন, দিনান্তে একবার ভোজন, অথবা দুই দিবসে একবার অথবা সাত দিবসে একবার ভোজন, এইরূপে নিয়মবদ্ধ হইয়া ক্রমে অর্ধমাসান্তে একবার ভোজন।

৩৯৫. “আবুসো গৌতম, এই সকল তপশ্চর্যা কোনো কোনো শ্রমণ ও ব্রাহ্মণের মতে শ্রামণ্য ও ব্রাহ্মণ্য কথিত হয়- মাত্র শাক অথবা শ্যামাক, অপক্ব তণ্ডল, চর্মখণ্ড, শৈবাল, কর্ণ, আচাম, পিণ্যাক, তৃণ, গোময়, বনমূল-ফল, অথবা বৃক্ষ হইতে স্বয়ং পতিত ফল ভোজন।

৩৯৬. “আবুসো গৌতম, কোনো কোনো শ্রমণ ও ব্রাহ্মণের মতে এই সকল তপশ্চর্যাও শ্রামণ্য ও ব্রাহ্মণ্য কথিত হয়, শান বস্ত্রের পরিধান, মশান বস্ত্রের ধারণ, শবদেহের পরিত্যক্ত আবরণ বস্ত্রের পরিধান, পাংশুকূল ধারণ, তিরিতক (বৃক্ষবিশেষ) বল্কলের ধারণ, মৃগচর্মধারণ, মৃগচর্ম-নির্মিত পরিচ্ছেদের ধারণ, কুশ-চীর ধারণ, বল্কল-চীর ধারণ, ফলক-চীর ধারণ, কেশ-কম্বল ধারণ, বাল-কম্বল ধারণ, উলুক-পক্ষ-নির্মিত বস্ত্রের ধারণ, কেশ ও শ্মশ্রুর উৎপাটন এবং উহাদের উৎপাটনে আসক্তি, আসন পরিত্যাগ করিয়া দণ্ডায়মানভাবে অবস্থান, উৎকুটিক অবস্থান এবং ওই অবস্থায় বীর্যারম্ভের অনুশীলন, কণ্টকের ব্যবহার এবং উহা দ্বারা শয্যারচনা, ফলক-শয্যা, ভূমিশয্যা, সর্বদা এক পার্শ্বে শায়িত হইয়া নিদ্রা, ধূলিধূসরিত দেহ, উন্মুক্ত স্থানে শয়ন, সকল প্রকার আসনই নির্বিচারে গ্রহণ, বিকট আহার ভোজন এবং ওই প্রকার আহারে আসক্তি, শীতল জল পানের বর্জন, প্রাতঃকাল হইতে সন্ধ্যা এই সময়ের মধ্যে তিনবার জলে অবতরণ (পাপ ধৌত করিবার জন্য)।”

৩৯৭. “কাশ্যপ, যে নগ্ন হইয়া অবস্থান করে, যে মুক্তাচার, হস্তাবলেহক, তোমা কর্তৃক কথিত সমস্ত আচারই যে পালন করে, এমনকি নিয়মবদ্ধ হইয়া মাসার্ধে একবারমাত্র ভোজন করে, সে যদি শীল-সম্পদা, চিত্ত-সম্পদা, প্রজ্ঞা-সম্পদার অনুশীলন না করে এবং ওই সকলে সাফল্য লাভ না করে, তাহা হইলে সে শ্রামণ্য হইতে দূরে, ব্রাহ্মণ্য হইতে দূরে। কাশ্যপ, ভিক্ষু যখন বৈরহীন, দ্বেষহীন মৈত্রী-ভাবনায় নিযুক্ত হইয়া আসবের ক্ষয়-হেতু এই জীবনেই অনাসব চেত-বিমুক্তি ও প্রজ্ঞা-বিমুক্তি স্বয়ং জানিয়া ও সাক্ষাৎ করিয়া এবং প্রাপ্ত হইয়া বিহার করেন, হে কাশ্যপ, তখনোই ভিক্ষু শ্রমণ অথবা ব্রাহ্মণ কথিত হন।

“কাশ্যপ, যে শাকভোজী, শ্যামাক-ভোজী, নীবার-ভোজী,… বনমূল-ফল অথবা বৃক্ষ হইতে স্বয়ং পতিত ফলভোজী-সে যদি শীল-সম্পদা, চিত্ত-সম্পদা, প্রজ্ঞা-সম্পদার অনুশীলন না করে এবং ওই সকলে সাফল্য লাভ না করে, তাহা হইলে সে শ্রামণ্য হইতে দূরে, ব্রাহ্মণ্য হইতে দূরে। কাশ্যপ, ভিক্ষু যখন বৈরহীন, দ্বেষহীন মৈত্রী-ভাবনায় নিযুক্ত হইয়া আসবের ক্ষয়-হেতু এই জীবনেই অনাসব চেত-বিমুক্তি ও প্রজ্ঞাবিমুক্তি স্বয়ং জানিয়া ও সাক্ষাৎ করিয়া এবং প্রাপ্ত হইয়া বিহার করেন, হে কাশ্যপ, তখনোই ভিক্ষু শ্রমণ অথবা ব্রাহ্মণ কথিত হন।

“কাশ্যপ, যে শানবস্ত্র ধারণ করে, যে মশান-বস্ত্র ধারণ করে… প্রাতঃকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তিনবার জলে অবতরণ করে, সে যদি শীল-সম্পদা, চিত্ত-সম্পদা, প্রজ্ঞা-সম্পদার অনুশীলন না করে এবং ওই সকলে সাফল্য লাভ না করে, তাহা হইলে সে শ্রামণ্য হইতে দূরে, ব্রাহ্মণ্য হইতে দূরে। কাশ্যপ, ভিক্ষু যখন বৈরহীন, দ্বেষহীন মৈত্রী-ভাবনায় নিযুক্ত হইয়া আসবের ক্ষয়-হেতু এই জীবনেই অনাসব চেতবিমুক্তি ও প্রজ্ঞাবিমুক্তি স্বয়ং জানিয়া ও সাক্ষাৎ করিয়া এবং প্রাপ্ত হইয়া বিহার করেন, হে কাশ্যপ, তখনোই ভিক্ষু শ্রমণ অথবা ব্রাহ্মণ কথিত হন।

৩৯৮. এইরূপ উক্ত হইলে অচেলক (নগ্ন সন্ন্যাসী) কাশ্যপ ভগবানকে বলিলেন, “হে গৌতম, শ্রামণ্য দুষ্কর, ব্রাহ্মণ্য দুষ্কর।”

“কাশ্যপ, পৃথিবীতে “শ্রামণ্য দুষ্কর, ব্রাহ্মণ্য দুষ্কর” ইহা সাধারণ্যে কথিত হয়। কাশ্যপ, কেহ অচেলক হইলে, মুক্তাচার হইলে, হস্তাবলেহক হইলে, তোমা কর্তৃক কথিত সমস্ত আচারই পালন করিলে, এমনকি নিয়মবদ্ধ হইয়া মাসার্ধে একবার মাত্র ভোজন করিলে, মাত্র ওই তপশ্চর্যার জন্য যদি শ্রামণ্য ও ব্রাহ্মণ্য দুষ্কর সুদুষ্কর হয়, তাহা হইলে “শ্রামণ্য দুষ্কর, ব্রাহ্মণ্য দুষ্কর” এরূপ বাক্য অযুক্ত। যেকোনো গৃহপতি, গৃহপতিপুত্র এমনকি কুম্ভবাহিকা-দাসী পর্যন্ত বলিতে পারে, “আমি অচেলক হইব, মুক্তাচার হইব, হস্তাবলেহক হইব… নিয়মবদ্ধ হইয়া মাসার্ধে একবার মাত্র ভোজন করিব।” কিন্তু, কাশ্যপ, যেহেতু এই সকল আচার, এই তপশ্চর্যা হইতে ভিন্ন অন্য কারণে “শ্রামণ্য দুষ্কর, ব্রাহ্মণ্য দুষ্কর”, সেইহেতু ইহা বলা সঙ্গত যে “শ্রামণ্য দুষ্কর, ব্রাহ্মণ্য দুষ্কর।” কাশ্যপ, ভিক্ষু যখন বৈরহীন, দ্বেষহীন মৈত্রী-ভাবনায় নিযুক্ত হইয়া আসবের ক্ষয়-হেতু এই জীবনেই অনাসব চেতবিমুক্তি ও প্রজ্ঞাবিমুক্তি স্বয়ং জানিয়া ও সাক্ষাৎ করিয়া এবং প্রাপ্ত হইয়া বিহার করেন, হে কাশ্যপ, তখনোই ভিক্ষু শ্রমণ অথবা ব্রাহ্মণ কথিত হন।

“কাশ্যপ, কেহ শাকভোজী হইলে, শ্যামাক-ভোজী হইলে… বৃক্ষ হইতে স্বয়ং পতিত ফল অথবা বনমূল-ফলাহারী হইলে, মাত্র ওই তপশ্চর্যার জন্য যদি শ্রামণ্য ও ব্রাহ্মণ্য দুষ্কর সুদুষ্কর হয়, তাহা হইলে “শ্রামণ্য দুষ্কর, ব্রাহ্মণ্য দুষ্কর” এরূপ বাক্য অযুক্ত। যে কোনো গৃহপতি, গৃহপতিপুত্র, এমনকি কুম্ভবাহিকা দাসী পর্যন্ত বলিতে পারে, “আমি শাক-ভোজী, শ্যামাক-ভোজী হইব… বনমূল-ফল এবং বৃক্ষ হইতে স্বয়ং পতিত ফলাহারী হইব।” কিন্তু, কাশ্যপ, যেহেতু এই সকল আচার, এই তপশ্চর্যা হইতে ভিন্ন অন্য কারণে “শ্রামণ্য দুষ্কর, ব্রাহ্মণ্য দুষ্কর”, সেই হেতু ইহা বলা সঙ্গত যে “শ্রামণ্য দুষ্কর, ব্রাহ্মণ্য দুষ্কর।” কাশ্যপ, ভিক্ষু যখন বৈরহীন, দ্বেষহীন… ব্রাহ্মণ কথিত হন।”

কাশ্যপ, কেহ শাণবস্ত্র ও মশাণবস্ত্র ধারণ করিলে… প্রাতঃকাল হইতে সন্ধ্যা এই সময়ের মধ্যে তিন বার জলে অবতরন করিলে, মাত্র ওই তপশ্চর্যার জন্য যদি শ্রামণ্য ও ব্রাহ্মণ্য দুষ্কর সুদুষ্কর হয়, তাহা হইলে “শ্রামণ্য দুষ্কর, ব্রাহ্মণ্য দুষ্কর” এরূপ বাক্য অযুক্ত। যেকোনো গৃহপতি, গৃহপতিপুত্র, এমনকি কুম্ভবাহিকা দাসী পর্যন্ত বলিতে পারে, “আমি শাণবস্ত্র ও মশাণবস্ত্র ধারণ করিব… প্রাতঃকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তিনবার জলে অবতরণ করিব।” কিন্তু কাশ্যপ, যেহেতু এ সকল আচার, এই তপশ্চর্যা হইতে ভিন্ন অন্য কারণে “শ্রামণ্য দুষ্কর, ব্রাহ্মণ্য দুষ্কর,” সেইহেতু ইহা বলা সঙ্গত যে, “শ্রামণ্য দুষ্কর, ব্রাহ্মণ্য দুষ্কর।” কাশ্যপ ভিক্ষু যখন বৈরহীন, দ্বেষহীন… ব্রাহ্মণ কথিত হন।”

৩৯৯. এইরূপ উক্ত হইলে অচেলক কাশ্যপ ভগবানকে বলিলেন :

“হে গৌতম, শ্রমণ কে তাহা জানিতে পারা কঠিন, ব্রাহ্মণ কে তাহা জানিতে পারা কঠিন।”

“কাশ্যপ, পৃথিবীতে “শ্রমণ চিনিতে পারা কঠিন, ব্রাহ্মণ চিনিতে পারা কঠিন” ইহা সাধারণ্যে কথিত হয়। কাশ্যপ, কেহ অচেলক হইলে, মুক্তাচার হইলে, হস্তাবলেহক হইলে… নিয়মবদ্ধ হইয়া মাসার্ধে একবার মাত্র ভোজন করিলে, মাত্র ওই তপশ্চর্যার জন্য যদি শ্রমণ ও ব্রাহ্মণ চিনিতে পারা কঠিন” এরূপ বাক্য অযুক্ত। যে কোনো গৃহপতি অথবা গৃহপতিপুত্র, এমনকি কুম্ভবাহিকা দাসী পর্যন্ত জানিতে পারে, “এই ব্যক্তি অচেলক, মুক্তাচার, হস্তাবলেহক… নিময়বদ্ধ হইয়া মাসার্ধে একবার মাত্র ভোজনকারী।” কিন্তু কাশ্যপ, যেহেতু এই সকল আচার, এই তপশ্চর্যা হইতে ভিন্ন অন্য কারণে শ্রমণ ও ব্রাহ্মণ চিনিতে পারা কঠিন, সুকঠিন, সেই হেতু ইহা বলা সঙ্গত যে “শ্রমণ চিনিতে পারা কঠিন, ব্রাহ্মণ চিনিতে পারা কঠিন।” কাশ্যপ, ভিক্ষু যখন বৈরহীন, দ্বেষহীন মৈত্রী-ভাবনায় নিযুক্ত হইয়া আসবের ক্ষয়-হেতু এই জীবনেই অনাসব চেতবিমুক্তি ও প্রজ্ঞাবিমুক্তি স্বয়ং জানিয়া ও সাক্ষাৎ করিয়া এবং প্রাপ্ত হইয়া বিহার করেন, হে কাশ্যপ, তখনোই ভিক্ষু শ্রমণ অথবা ব্রাহ্মণ কথিত হন।

“কাশ্যপ, কেহ শাকভোজী হইলে, শ্যামাক-ভোজী হইলে… বনমূল-ফল অথবা বৃক্ষ হইতে স্বয়ং পতিত ফলাহারী হইলে, মাত্র এই তপশ্চর্যার জন্য যদি শ্রমণ ও ব্রাহ্মণ চিনিতে পারা কঠিন হয়, তাহা হইলে শ্রমণ চিনিতে পারা কঠিন, ব্রাহ্মণ চিনিতে পারা কঠিন, এরূপ বাক্য অযুক্ত। যেকোনো গৃহপতি অথবা গৃহপতিপুত্র, এমনকি কুম্ভবাহিকা দাসী পর্যন্ত জানিতে পারে, “এই ব্যক্তি শাকভোজী, শ্যামাক ভোজ… বনমূল-ফল অথবা বৃক্ষ হইতে স্বয়ং পতিত ফলভোজী।” কাশ্যপ, যেহেতু এই সকল আচার এই তপশ্চর্যা হইতে ভিন্ন অন্য কারণে শ্রমণ ও ব্রাহ্মণ চিনিতে পারা কঠিন, সুকঠিন; সেই হেতু ইহা বলা সঙ্গত যে “শ্রমণ চিনিতে পারা কঠিন, ব্রাহ্মণ চিনিতে পারা কঠিন।” কাশ্যপ, ভিক্ষু যখন বৈরহীন, দ্বেষহীন… শ্রমণ অথবা ব্রাহ্মণ কথিত হন।

“কাশ্যপ, কেহ শানবস্ত্র ও মশান-বস্ত্র ধারণ করিলে… প্রাতঃকাল হইতে সন্ধ্যা এই সময়ের মধ্যে তিনবার জলে অবতরণ করিলে, মাত্র ওই তপশ্চর্যার জন্য যদি শ্রমণ ও ব্রাহ্মণ চিনিতে পারা কঠিন হয়, তাহা হইলে “শ্রমণ চিনিতে পারা কঠিন, ব্রাহ্মণ চিনিতে পারা কঠিন” এরূপ বাক্য অযুক্ত। যেকোনো গৃহপতি অথবা গৃহপতিপুত্র, এমনকি কুম্ভবাহিকা দাসী পর্যন্ত জানিতে পারে, “এই ব্যক্তি শান অথবা মশান-বস্ত্রধারী… সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তিনবার জলে অবতরণকারী। কিন্তু কাশ্যপ, যেহেতু এই সকল আচার, এই তপশ্চর্যা হইতে ভিন্ন অন্য কারণে শ্রমণ ও ব্রাহ্মণ চিনিতে পারা কঠিন, সুকঠিন; সেই হেতু ইহা বলা সঙ্গত যে “শ্রমণ চিনিতে পারা কঠিন, ব্রাহ্মণ চিনিতে পারা কঠিন।” কাশ্যপ, ভিক্ষু যখন বৈরহীন, দ্বেষহীন… শ্রমণ অথবা ব্রাহ্মণ কথিত হন।”

৪০০. এইরূপ উক্ত হইলে অচেলক কাশ্যপ ভগবানকে বলিলেন :

“হে গৌতম, সেই শীল-সম্পদা কী? সেই চিত্ত-সম্পদা কী? সেই প্রজ্ঞা-সম্পদা কী?”

৪০১. “কাশ্যপ,… [এই স্থলে শ্রামণ্যফল সূত্রের মতো পাঠ করিতে হইবে ওই পদচ্ছেদের সর্বশেষ পংক্তির স্থানে “ইহা শীল-সম্পদা” এইরূপ পাঠ করিতে হইবে। তৎপরে শ্রামণ্যফল সূত্রের ৬৩ নং পদচ্ছেদ আবৃত্ত হইয়াছে। ওই পদচ্ছেদের সর্বশেষ পংক্তির পরে “ইহা সেই শীল-সম্পদা” এইরূপ পাঠ করিতে হইবে।]

“[এই স্থানে শ্রামণ্যফল সূত্রের মতো পাঠ করিতে হইবে। “তাঁহার দেহের কোনো অংশই বিবেকজ প্রীতিসুখ দ্বারা অব্যাপ্ত থাকে না” এই বাক্যের পরে “ইহা চিত্ত-সম্পদা” এইরূপ পাঠ করিতে হইবে।]

“পুনশ্চ, কাশ্যপ,… [এই স্থানে শ্রামণ্যফল সূত্রের মতো পাঠ করিতে হইবে] কাশ্যপ, ইহা সেই চিত্ত-সম্পদা।

“[এই স্থানে শ্রামণ্যফল সূত্রের মতো পাঠ করিতে হইবে।] ইহা প্রজ্ঞা-সম্পদা।

“কাশ্যপ, এই শীল-সম্পদা, চিত্ত-সম্পদা ও প্রজ্ঞা-সম্পদা হইতে ভিন্ন অন্য উৎকৃষ্টতর মধুরতর শীল-সম্পদা, চিত্ত-সম্পদা, প্রজ্ঞা-সম্পদা নাই।

৪০২. “কাশ্যপ, কোনো কোনো শ্রমণ ও ব্রাহ্মণ আছেন যাঁহারা শীলবাদী। তাঁহারা অনেক প্রকারে শীলের প্রশংসা করিয়া থাকেন। কাশ্যপ, আর্য পরম শীল সম্বন্ধে আমি আমার সমকক্ষ কাহাকেও দেখি না, আমা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠের কথাই নাই। অতএব এই শীল সম্বন্ধে আমিই সর্বশ্রেষ্ঠ।

“কাশ্যপ, কোনো কোনো শ্রমণ ও ব্রাহ্মণ আছেন যাঁহারা তপ-জুগুপ্সাবাদী। তাঁহারা অনেক প্রকারে তপ-জুগুপ্সার প্রশংসা করিয়া থাকেন। কাশ্যপ, যাহা আর্য, পরম তপ-জুগুপ্সা তাহাতে আমি আমার সমকক্ষ কাহাকেও দেখি না, আমা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠের তো কথাই নাই। এই বিষয়ে আমিই সর্বশ্রেষ্ঠ।

“কাশ্যপ, কোনো কোনো শ্রমণ ও ব্রাহ্মণ আছেন যাঁহারা প্রজ্ঞাবাদী। তাঁহারা অনেক প্রকারে প্রজ্ঞার প্রশংসা করিয়া থাকেন। কাশ্যপ, যাহা আর্য পরম প্রজ্ঞা তাহাতে আমি আমার সমকক্ষ কাহাকেও দেখি না, আমা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠের তো কথাই নাই। অতএব এই বিষয়ে আমিই সর্বশ্রেষ্ঠ।

“কাশ্যপ, কোনো কোনো শ্রমণ ও ব্রাহ্মণ আছেন যাঁহারা বিমুক্তিবাদী, তাঁহারা অনেক প্রকারে বিমুক্তির প্রশংসা করিয়া থাকেন। কাশ্যপ, যাহা আর্য পরম বিমুক্তি উহাতে আমি আমার সমকক্ষ কাহাকেও দেখি না, আমা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠের তো কথাই নাই। অতএব এই বিষয়ে আমিই সর্বশ্রেষ্ঠ।

৪০৩. “কাশ্যপ, এরূপ হইতে পারে যে ভিন্ন মতাবলম্বী পরিব্রাজকগণ বলিবেন, “শ্রমণ গৌতম সিংহনাদ করেন, কিন্তু শূন্যাগারে, পরিষদে নহে।” তাহাদিগকে এইরূপ উত্তর দিতে হইবে, “ইহা সত্য নহে, শ্রমণ গৌতম সিংহনাদ করেন এবং পরিষদেই করেন।” কাশ্যপ, এরূপ হইতে পারে যে ভিন্ন মতাবলম্বী পরিব্রাজকগণ বলিবেন :

“শ্রমণ গৌতম সিংহনাদ করেন, পরিষদেই করেন, কিন্তু নির্ভীক চিত্তে করেন না।” তাঁহাদিগকে বলিতে হইবে, “শ্রমণ গৌতম নির্ভীক চিত্তেই সিংহনাদ করেন।”… “কিন্তু তাঁহাকে কেহ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে না”… “তাঁহাকে প্রশ্নও করা হয়।”… “কিন্তু তিনি জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর দানে অক্ষম।”… “তিনি জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর দানে সক্ষম।”… “কিন্তু তাঁহার প্রদত্ত উত্তর হৃদয়গ্রাহী হয় না।”… “তাঁহার উত্তর হৃদয়গ্রাহী।”… “কিন্তু তাঁহার বাক্য শ্রবণযোগ্য বিবেচিত হয় না।”… তাঁহার বাক্য শ্রবণযোগ্য বিবেচিত হয়।”… “কিন্তু তাঁহার বাক্য শ্রবণ করিয়া কেহ শ্রদ্ধা অনুভব করে না।”… তাঁহার বাক্য শ্রবণান্তে শ্রদ্ধা অনুভূত হয়।”… “কিন্তু অনুভূত হইলেও ওই শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ নাই।”… “উহার বহিঃপ্রকাশ আছে।”… “কিন্তু উহা দ্বারা মনুষ্য সত্যে উপনীত হইলেও ওই সত্য পালনে অক্ষম হয়।” উহাদিগকে বলিতে হইবে, এরূপ নহে; শ্রমণ গৌতম সিংহনাদ করেন এবং উহা পরিষদেই করেন, নির্ভীক হইয়া করেন; তাঁহাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর দানে সক্ষম, তাঁহার উত্তর হৃদয়গ্রাহী হয়, তাঁহার বাক্য শ্রবণযোগ্য বিবেচিত হয়, উহার শ্রবণে শ্রদ্ধা অনুভূত হয়, ওই শ্রদ্ধার বাহ্যিক বিকাশ হয়, উহা সত্য প্রদর্শনকারী এবং মনুষ্য ওই সত্য পালনে সক্ষম।” কাশ্যপ, এইরূপ উত্তর দিতে হইবে।

৪০৪. “কাশ্যপ, একসময়ে আমি রাজগৃহে গৃধ্রকূট পর্বতে অবস্থান করিতেছিলাম। ওই স্থানে নিগ্রোধ নামক তপ-ব্রহ্মচারী আমাকে তপ-জুগুপ্সা সম্বন্ধীয় প্রশ্ন করিয়াছিলেন। আমি জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর দিয়াছিলাম। আমার উত্তরে তিনি অতিমাত্রায় সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন।”

“ভন্তে, ভগবানের ধর্ম শ্রবণ করিয়া কে অতিমাত্রায় সন্তুষ্ট না হইবে? আমিও ভগবানের ধর্ম শ্রবণ করিয়া অতিমাত্রায় সন্তুষ্ট হইয়াছি। ভন্তে, অতি উত্তম, অতি উত্তম! যেরূপ উৎপাতিতের পুনঃ প্রতিষ্ঠা হয়, লুক্কায়িত প্রকাশিত হয়, মূঢ় পথ-প্রদর্শিত হয়, চক্ষুষ্মানের দেখিবার নিমিত্ত অন্ধকারে তৈলদীপ ধৃত হয়, সেইরূপ ভগবান অনেক প্রকারে ধর্ম প্রকাশিত করিয়াছেন। ভন্তে, আমি ভগবানের শরণ লইতেছি, ধর্মের শরণ লইতেছি, ভিক্ষুসংঘের শরণ লইতেছি। আমি ভগবানের নিকট প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা লইতে বাসনা করি।”

৪০৫. কাশ্যপ, পূর্বে অন্য ধর্মাবলম্বী যে ব্যক্তি এই ধর্ম গ্রহণ করিয়া উহাতে প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা লইবার ইচ্ছা করেন, শিক্ষার্থীরূপে তাঁহাকে চারি মাস যাপন করিতে হইবে; চারি মাস অতিবাহিত হইবার পর একাগ্রচিত্ত ভিক্ষুগণ তাঁহাকে ভিক্ষুজীবন যাপনার্থ প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা দান করিবেন। তথাপি এই বিষয়ে মনুষ্যগণের মধ্যে পার্থক্য আমি বিদিত আছি।”

“ভন্তে, পূর্বে অন্য ধর্মাবলম্বী কোনো ব্যক্তি এই ধর্ম গ্রহণ করিয়া উহাতে প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা লইবার ইচ্ছা করিলে, যদি তাঁহাকে শিক্ষার্থীরূপে চারি মাস যাপন করিতে হয়, যদি চারি মাস যাপন করিবার পর একাগ্রচিত্ত ভিক্ষুগণ তাঁহাকে ভিক্ষুজীবন যাপনার্থ প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা দান করেন, আমি চারি বৎসর শিক্ষার্থীরূপে যাপন করিব, চারি বৎসর অতিবাহিত হইবার পর একাগ্রচিত্ত ভিক্ষুগণ আমাকে প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা দান করুন।

অচেলক কাশ্যপ ভগবানের নিকট প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা গ্রহণ করিলেন। অতঃপর নবদীক্ষিত আয়ুষ্মান কাশ্যপ নির্জনবাসী, অপ্রমত্ত, উৎসাহপূর্ণ, দৃঢ়সংকল্প হইয়া অনতিবিলম্বে যথার্থ পথাবলম্বী কুলপুত্রগণ যে সম্পদ লাভের জন্য গৃহ পরিত্যাগ করিয়া গৃহহীন প্রব্রজ্যার আশ্রয় করেন, সেই অনুত্তর ব্রহ্মচর্য্য স্বয়ং জাত হইয়া ও উপলব্ধি করিয়া এই জীবনেই উহার পূর্ণতা সাধন করিলেন, “জন্মের ধ্বংস হইয়াছে, ব্রহ্মচর্য্য সম্পাদিত হইয়াছে, কর্তব্য সম্পন্ন হইয়াছে, এই জীবনে করণীয় আর কিছুই নাই,” ইহা জ্ঞাত হইয়া আয়ুষ্মান কাশ্যপ অর্হৎদিগের অন্যতম হইলেন।

কস্সপ-সীহনাদ সূত্র সমাপ্ত।

The Long Discourses

|_I. The Chapter on the Entire Spectrum of Ethics

DN8. কস্সপ সীহনাদ সূত্র

Translations [20]

English

繁體字

日本語

Deutsch

Italiano

Português

Norsk

Srpski

עִבְרִית

हिंदी

ಕನ್ನಡ

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference