৪০৬. আমি এইরূপ শ্রবণ করিয়াছি। একসময় ভগবান শ্রাবস্তী নগরে অনাথপিণ্ডিকের জেতবন উদ্যানে অবস্থিতি করিতেছিলেন। ওই সময় পরিব্রাজক পোট্ঠপাদ তিনশত পরিব্রাজক-সমন্বিত বৃহৎ পরিব্রাজক পরিষদের সহিত মল্লিকার উদ্যানে তিণ্ডুক বৃক্ষ পরিবেষ্টিত বিচারশালায় বাস করিতেছিলেন।

৪০৭. অনন্তর ভগবান পূর্বাহ্ন সময়ে বস্ত্র পরিহিত হইয়া পাত্র ও চীবর সহিত পিণ্ডার্থ নগরে প্রবেশ করিলেন। তৎপরে তিনি চিন্তা করিলেন, “পিণ্ডার্থ শ্রাবস্তী প্রবেশের পক্ষে এখনো অতি প্রত্যুষ, আমি মল্লিকার উদ্যানে তিণ্ডুক বৃক্ষ পরিবেষ্টিত বিচারশালায়, যেখানে পরিব্রাজক পোট্ঠপাদ অবস্থান করিতেছেন সেই স্থানে গমন করিব।” অতঃপর তিনি ওই স্থানে গমন করিলেন।

৪০৮. ওই সময়ে পরিব্রাজক পোট্ঠপাদ বৃহৎ পরিব্রাজক পরিষদের সহিত উপবিষ্ট ছিলেন। তাঁহারা সকলে উন্নাদ, উচ্চ শব্দ, মহাশব্দের সহিত অনেক প্রকার অসার বিষয়ের আলোচনায় নিযুক্ত ছিলেন; যথা : রাজকথা, চোরকথা, মহামাত্য-কথা, সেনা-কথা, ভয়-কথা, যুদ্ধ-কথা, অন্ন-কথা, পান-কথা, বস্ত্র-কথা, শয়ন-কথা, মালা-কথা, গন্ধকথা, জ্ঞাতি-কথা, যান-কথা, গ্রাম-নিগমণ্ডনগর-জনপদ-কথা, নারী-কথা, শুর-কথা, বিশিখা-কথা, কুম্ভস্থান-কথা, প্রেত-কথা, নিরর্থক-কথা, পৃথিবী ও সমুদ্রের উৎপত্তি সম্বন্ধীয় জনপ্রবাদ এবং অস্তিত্ব ও নাস্তিত্ব সম্বন্ধীয় কথা।

৪০৯. পোট্ঠপাদ দূরে ভগবানকে আসিতে দেখিয়া স্বকীয় পরিষদকে সাবধান করিলেন :

“মাননীয়গণ, আপনারা নীরব হউন, শব্দ করিবেন না। শ্রমণ গৌতম আসিতেছেন, সেই আয়ুষ্মান নীরবতাপ্রিয়, নীরবতার প্রশংসাবাদী। পরিষদকে শব্দহীন জ্ঞাত হইয়া তিনি যেন এই স্থানকে আগমনের যোগ্য মনে করেন।”

এইরূপ উক্ত হইলে পরিব্রাজকগণ নীরব হইলেন।

৪১০. তদনন্তর ভগবান পোট্ঠপাদ সমীপে উপস্থিত হইলেন। পোট্ঠপাদ ভগবানকে বলিলেন :

“ভগবান! আসুন, স্বাগত! বহুদিন পরে আপনি এই স্থানে আগমন করিয়াছেন, উপবেশন করুন, এই আসন প্রস্তুত।”

ভগবান নির্দিষ্ট আসনে উপবেশন করিলেন। পোট্ঠপাদ অপেক্ষাকৃত নিম্ন আসন গ্রহণপূর্বক এক প্রান্তে উপবিষ্ট হইলেন। ভগবান তাঁহাকে বলিলেন :

“এই স্থানে উপবিষ্ট হইয়া তোমরা এক্ষণে কি কথায় নিযুক্ত, তোমাদের কী আলোচনা বাধাপ্রাপ্ত হইল?”

আত্মবাদ

৪১১. ভগবান এইরূপ কহিলে পোট্ঠপাদ বলিলেন :

“আমরা এই স্থানে উপবিষ্ট হইয়া এক্ষণে যে কথায় নিযুক্ত ছিলাম, সে কথা থাক; অন্য সময়ে ভগবান সে কথা অনায়াসে শুনিতে পাইবেন। ভন্তে, বহু দিবস হইল নানা তীর্থিয় শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণ কুতুহল-শালায় সম্মিলিত ও উপবিষ্ট হইলে তাঁহাদের মধ্যে অনেকবার অভিসংজ্ঞা-নিরোধ সম্বন্ধে কথা উঠিয়াছিল, “অভিসংজ্ঞা-নিরোধ কীরূপে হয়?”

তদুত্তরে কেহ কেহ বলিয়াছিলেন, “পুরুষের সংজ্ঞার উৎপত্তি ও নিরোধের হেতুও নাই, প্রত্যয়ও নাই। উহার উৎপত্তিকালে পুরুষ সংজ্ঞাসম্পন্ন হয়, নিরোধকালে সংজ্ঞাহীন হয়।” এইরূপে তাঁহারা অভিসংজ্ঞা-নিরোধ ব্যাখ্যা করিয়াছিলেন।

অপর একজন ওই বিষয়ে বলিয়াছিলেন, “তাহা নহে। সংজ্ঞা পুরুষের আত্মা, উহা (আত্মা) আসে, যায়। যখন আসে পুরুষ তখন সংজ্ঞাসম্পন্ন হয়, যখন যায় তখন পুরুষ সংজ্ঞাহীন হয়।” এইরূপে কেহ কেহ অভিসংজ্ঞা-নিরোধ ব্যাখ্যা করেন।

অপর একজন ওই বিষয়ে বলিয়াছিলেন, “তাহা নহে। কোনো কোনো শ্রমণ ও ব্রাহ্মণ আছেন যাঁহারা মহাঋদ্ধিসম্পন্ন, মহা অনুভাবসম্পন্ন। তাঁহারাই মনুষ্যদেহে সংজ্ঞার সঞ্চারও করেন এবং দেহ হইতে সংজ্ঞা অপসারণও করেন। যখন সঞ্চার করেন, তখন মনুষ্য সংজ্ঞাবান হয়, যখন অপসারণ করেন, তখন মনুষ্য সংজ্ঞাহীন হন।” এইরূপে কেহ কেহ অভিসংজ্ঞা-নিরোধ ব্যাখ্যা করেন।

অপর একজন ওই বিষয়ে বলিয়াছিলেন, “তাহা নহে। মহাঋদ্ধি ও অনুভাবসম্পন্ন দেবতারা আছেন। তাঁহারাই মনুষ্যদেহে সংজ্ঞার সঞ্চারও করেন, দেহ হইতে সংজ্ঞার অপসারণও করেন, যখন সঞ্চার করেন মনুষ্য তখন সংজ্ঞাবান হয়, যখন অপসারণও করেন, তখন মনুষ্য সংজ্ঞাহীন হয়।” এইরূপে কেহ কেহ অভিসংজ্ঞা-নিরোধ ব্যাখ্যা করেন। ভন্তে, আমার ভগবানের কথাই মনে হইল, নিঃসন্দেহ ভগবান সুগত উক্ত ধর্মসমূহে সুকুশল।” ভগবান অভিসংজ্ঞা-নিরোধের প্রকৃতিজ্ঞ। ভন্তে, অভিসংজ্ঞা-নিরোধ কীরূপে হয়?

৪১২. “পোট্ঠপাদ, এ বিষয়ে যে-সকল শ্রমণ ও ব্রাহ্মণ বলিয়াছিলেন, “পুরুষের সংজ্ঞার উৎপত্তি ও নিরোধের হেতুও নাই, প্রত্যয়ও নাই, তাঁহারা প্রারম্ভেই ভ্রান্ত। কী হেতু? পোট্ঠপাদ পুরুষের সংজ্ঞার উৎপত্তি ও নিরোধের হেতু ও প্রত্যয় আছে। শিক্ষার দ্বারা কোনো কোনো সংজ্ঞার উৎপত্তি হয়, শিক্ষার দ্বারা কোনো কোনো সংজ্ঞার নিরোধ হয়।

৪১৩. “ওই শিক্ষা কী?” ভগবান বলিলেন :

“পোট্ঠপাদ, মনে করো জগতে তথাগতের আবির্ভাব হইয়াছে, যিনি অর্হৎ, সম্যকসম্বুদ্ধ… ইত্যাদি… (শ্রামণ্যফল সূত্রের মতো পাঠ করিতে হইবে) কায় ও বাক্য দ্বারা কুশলকর্ম-সমন্বিত হইয়া, শুদ্ধ জীবিকাসম্পন্ন হইয়া, শীলসম্পন্ন হইয়া, রক্ষিতেন্দ্রিয় হইয়া, স্মৃতি সম্প্রজ্ঞান-সমন্বিত ও সন্তুষ্ট হইয়া অবস্থান করিতে লাগিল। পোট্ঠপাদ ভিক্ষু কীরূপে শীলসম্পন্ন হইয়া থাকেন? ভিক্ষু প্রাণাতিপাত পরিহারপূর্বক উহা হইতে বিরত হন… ওষুধের প্রতিমোক্ষ। ভিক্ষু এইরূপ হীনবিদ্যা ও মিথ্যা জীবনোপায়ে বিরত। ইহাও শীলের অন্তর্গত (শ্রামণ্যফল সূত্রের মতো পাঠ করিতে হইবে)।

পোট্ঠপাদ, তিনি এইরূপ শীলসম্পন্ন হইয়া এই শীলসংবরের কারণ কুত্রাপি ভয়দর্শন করেন না। যেরূপ, পোট্ঠপাদ, মূর্ধাভিষিক্ত ক্ষত্রিয়… অনবদ্য সুখ অনুভব করেন। (শ্রামণ্যফল সূত্রের মতো পাঠ করিতে হইবে) পোট্ঠপাদ, ভিক্ষু এইরূপেই শীলসম্পন্ন হইয়া থাকেন।

পোট্ঠপাদ, ভিক্ষু কী প্রকারে রক্ষিতেন্দ্রিয় হইয়া থাকেন? পোট্ঠপাদ, ভিক্ষু চক্ষু দ্বারা রূপদর্শন করিয়া… অবিমিশ্র সুখ অনুভব করেন (শ্রামণ্যফল সূত্রের মতো পাঠ করিতে হইবে) পোট্ঠপাদ… ভিক্ষু এই প্রকারে রক্ষিতেন্দ্রিয় হইয়া থাকেন।

(এই স্থলে শ্রামণ্যফল সূত্রের মতো করে “প্রথম ধ্যান লাভ করিয়া বিহার করেন” পর্যন্ত পাঠ করিতে হইবে)। তাহার পূর্বের কামসংজ্ঞা নিরুদ্ধ হয়। ওই সময় বিবেকজ প্রীতিসুখ-মণ্ডিত সূক্ষ্ম-সত্য-সংজ্ঞার উৎপত্তি হয় এবং তিনি বিবেকজ প্রীতিসুখ-মণ্ডিত সূক্ষ্ম-সত্য-সংজ্ঞী হইয়া থাকেন। এইরূপে শিক্ষার দ্বারা কোনো কোনো সংজ্ঞার উৎপত্তি হয়, শিক্ষার দ্বারা কোনো কোনো সংজ্ঞার নিরোধ হয়। ইহাই শিক্ষা।” ভগবান এইরূপ বলিলেন।

“পুনশ্চ, পোট্ঠপাদ, ভিক্ষু বিতর্ক-বিচারের উপশমে অধ্যাত্মসম্প্রসাদী… অবিতর্ক অবিচার… দ্বিতীয় ধ্যান লাভ করিয়া বিহার করেন (শ্রামণ্যফল সূত্রের মতো পাঠ করিতে হইবে)? তাহার পূর্বের বিবেকজ প্রীতিসুখ-মণ্ডিত সূক্ষ্ম-সত্য-সংজ্ঞা নিরুদ্ধ হয়। ওই সময় সমাধিজ প্রীতিসুখ-মণ্ডিত সূক্ষ্ম-সত্য-সংজ্ঞার উৎপত্তি হয় এবং তিনি সমাধিজ প্রীতিসুখ-মণ্ডিত সূক্ষ্ম-সত্য-সংজ্ঞী হইয়া থাকেন। এইরূপে শিক্ষার দ্বারা কোনো কোনো সংজ্ঞার উৎপত্তি হয়, শিক্ষার দ্বারা কোনো কোনো সংজ্ঞার নিরোধ হয়। ইহাই শিক্ষা।” ভগবান এইরূপ বলিলেন।

“পুনশ্চ, পোট্ঠপাদ, ভিক্ষু প্রীতিতেও বৈরাগ্য উৎপাদন করিয়া… এইরূপে তৃতীয় ধ্যান লাভ করিয়া বিরাজ করেন। (শ্রামণ্যফল সূত্রের মতো পাঠ করিতে হইবে) তাঁহার পূর্বের সমাধিজ প্রীতিসুখ-মণ্ডিত সূক্ষ্ম-সত্য-সংজ্ঞা নিরুদ্ধ হয়; ওই সময় উপেক্ষা-সুখমণ্ডিত সূক্ষ্ম-সত্য-সংজ্ঞার উৎপত্তি হয় এবং তিনি উপেক্ষা সুখমণ্ডিত সূক্ষ্ম-সত্য-সংজ্ঞী হইয়া থাকেন। এইরূপে শিক্ষার দ্বারা কোনো কোনো সংজ্ঞার উৎপত্তি হয়, শিক্ষার দ্বারা কোনো কোনো সংজ্ঞার নিরোধ হয়। ইহাই শিক্ষা।” ভগবান এইরূপ বলিলেন।

“পুনশ্চ, পোট্ঠপাদ, ভিক্ষু সুখ ও দুঃখ উভয়ই বর্জন করিয়া… চতুর্থ ধ্যান লাভ করিয়া বিরাজ করেন। (শ্রামণ্যফল সূত্রের ৮১ নং পদচ্ছেদ দ্রষ্টব্য) তাঁহার পূর্বের উপেক্ষা সুখমণ্ডিত সূক্ষ্ম-সত্য-সংজ্ঞা নিরুদ্ধ হয়। ওই সময় না-দুঃখ না-সুখ রূপ সূক্ষ্ম-সত্য-সংজ্ঞার উৎপত্তি হয় এবং তিনি না-দুঃখ না-সুখ রূপ সূক্ষ্ম-সত্য-সংজ্ঞী হইয়া থাকেন। এইরূপে শিক্ষা দ্বারা কোনো কোনো সংজ্ঞার উৎপত্তি হয়, শিক্ষার দ্বারা কোনো কোনো সংজ্ঞার নিরোধ হয়। ইহাই শিক্ষা।” ভগবান এইরূপ বলিলেন।

পুনশ্চ, পোট্ঠপাদ, ভিক্ষু সর্বতোভাবে রূপসংজ্ঞা অতিক্রম করিয়া, প্রতিঘ সংজ্ঞার অন্ত গমনান্তে নানাত্ব সংজ্ঞার চিন্তা পরিহার করিয়া, “আকাশ অনন্ত” এইরূপ চিন্তা করিয়া আকাশ-অনন্ত-আয়তন প্রাপ্ত হইয়া বিহার করেন। তাঁহার পূর্বের রূপসংজ্ঞা নিরুদ্ধ হয়। ওই সময় আকাশ-অনন্ত-আয়তন রূপ সুখময় সূক্ষ্ম-সত্য-সংজ্ঞার উৎপত্তি হয় এবং তিনি আকাশ-অনন্ত-আয়তন রূপ সূক্ষ্ম-সত্য-সংজ্ঞী হইয়া থাকেন। এইরূপে শিক্ষার দ্বারা কোনো কোনো সংজ্ঞার উৎপত্তি হয়, শিক্ষার দ্বারা কোনো কোনো সংজ্ঞার নিরোধ হয়। ইহাই শিক্ষা।” ভগবান এইরূপ বলিলেন।

“পুনশ্চ, পোট্ঠপাদ, ভিক্ষু সর্বতোভাবে আকাশ-অনন্ত-আয়তন অতিক্রম করিয়া, “বিজ্ঞান অনন্ত” এইরূপ চিন্তা করিয়া বিজ্ঞান-অনন্ত-আয়তন প্রাপ্ত হইয়া বিহার করেন। তাঁহার পূর্বের আকাশ-অনন্ত-আয়তনরূপ সূক্ষ্ম-সত্য-সংজ্ঞা নিরুদ্ধ হয়। ওই সময় বিজ্ঞান-অনন্ত-আয়তনরূপ সূক্ষ্ম-সত্য-সংজ্ঞার উৎপত্তি হয় এবং তিনি বিজ্ঞান-অনন্ত-আয়তনরূপ সূক্ষ্ম-সত্য-সংজ্ঞী হইয়া থাকেন। এইরূপে শিক্ষার দ্বারা কোনো কোনো সংজ্ঞার উৎপত্তি হয়, শিক্ষার দ্বারা কোনো কোনো সংজ্ঞার নিরোধ হয়। ইহাই শিক্ষা।” ভগবান এইরূপ বলিলেন।

“পুনশ্চ, পোট্ঠপাদ, ভিক্ষু বিজ্ঞান-অনন্ত-আয়তন সর্বাংশে অতিক্রম করিয়া “কিছুই নাই” এইরূপ অকিঞ্চন-আয়তন প্রাপ্ত হইয়া বিহার করেন। তাঁহার পূর্বের বিজ্ঞান-অনন্ত-আয়তনরূপ সূক্ষ্ম-সত্য-সংজ্ঞা নিরুদ্ধ হয়। ওই সময়ে আকিঞ্চনায়তনরূপ সূক্ষ্ম-সত্য-সংজ্ঞার উৎপত্তি হয় এবং তিনি আকিঞ্চনায়তনরূপ সূক্ষ্ম-সত্য-সংজ্ঞী হইয়া থাকেন। এইরূপে শিক্ষার দ্বারা কোনো কোনো সংজ্ঞার উৎপত্তি হয়, শিক্ষার দ্বারা কোনো কোনো সংজ্ঞার নিরোধ হয়। ইহাই শিক্ষা।” ভগবান এইরূপ বলিলেন।

৪১৪. পোট্ঠপাদ, ভিক্ষু যে সময় হইতে স্বক-সংজ্ঞী হন, সেই সময় হইতে ক্রমান্বয়ে তিনি সংজ্ঞা হইতে সংজ্ঞান্তর প্রাপ্ত হইয়া পরিশেষে শ্রেষ্ঠতম সংজ্ঞায় উপনীত হন। সর্বোচ্চ সংজ্ঞায় উপনীত হইয়া তাঁহার মনে এইরূপ হয়, “চিন্তা করা হীনতার অবস্থা। চিন্তা না করাই শ্রেষ্ঠতর। আমি যদি চিন্তা করি, অভিসন্ধান করি, তাহা হইলে আমার এই সকল সংজ্ঞা নিরুদ্ধ হইয়া স্থূলতার সংজ্ঞার উৎপত্তি হইতে পারে। অতএব আমি চিন্তা করিব না, অভিসন্ধান করিব না।” তিনি চিন্তাও করেন না, অভিসন্ধানও করেন না। চিন্তা ও অভিসন্ধানের পরিহারে তাঁহার ওই সকল সংজ্ঞা নিরুদ্ধ হয় এবং অন্য স্থূলতর সংজ্ঞার উৎপত্তি হয় না। তিনি নিরোধে উপনীত হন। এইরূপে, পোট্ঠপাদ, ক্রমানুসারে অভিসংজ্ঞা-নিরোধ সম্প্রজ্ঞান সমাপত্তি হইয়া থাকে।

“পোট্ঠপাদ, তুমি কীরূপ মনে করো? তুমি কি ইতিপূর্বে অভিসংজ্ঞা-নিরোধের ক্রমিক সম্প্রজ্ঞান-সমাপত্তি শুনিয়াছ?”

“না, ভন্তে। ভগবান যাহা বলিলেন আমি তাহা এইরূপ বুঝিলাম : (এই স্থানে উপরে ৪১৪ অনুচ্ছেদের উক্তি আবৃত্ত হইয়াছে।)

“পোট্ঠপাদ, তুমি যথার্থই বলিয়াছ।”

৪১৫. “ভন্তে, ভগবান কি শ্রেষ্ঠ সংজ্ঞা এক এইরূপ শিক্ষা দিয়া থাকেন, অথবা বহু?”

“পোট্ঠপাদ, শ্রেষ্ঠ সংজ্ঞা এক আমি ইহাও কহি, উহা একাধিক তাহাও কহি।”

“শ্রেষ্ঠ সংজ্ঞা এক এবং একাধিক, ভগবান কীরূপে ইহা বলিতে পারেন?”

“পোট্ঠপাদ নিরোধ হইতে নিরোধান্তরে অগ্রসর হইবার কালে এই শ্রেষ্ঠ সংজ্ঞা হইতে অপর শ্রেষ্ঠ সংজ্ঞা প্রাপ্তি হয়। এই কারণেই, পোট্ঠপাদ, আমি শ্রেষ্ঠ সংজ্ঞা এক ইহাও কহি, উহা একাধিক তাহাও কহি।”

৪১৬. “ভন্তে, সংজ্ঞা প্রথমে উৎপন্ন হয়, তৎপশ্চাতে জ্ঞান; অথবা প্রথমে জ্ঞান উৎপন্ন হয়, তৎপশ্চাতে সংজ্ঞা; অথবা সংজ্ঞা এবং জ্ঞান কোনোটিই পূর্বাপর নহে, উভয়ে একই সময়ে উৎপন্ন হয়?”

“পোট্ঠপাদ, সংজ্ঞা প্রথমে উৎপন্ন হয়, পরে জ্ঞান; সংজ্ঞার উৎপত্তি হইতে জ্ঞানের উৎপত্তি। উহা এইরূপে দৃষ্ট হয় :

“এই হেতু হইতে আমার জ্ঞান উৎপন্ন হইয়াছে।” পোট্ঠপাদ, এই পর্যায় হইতে ইহা জ্ঞাতব্য যে সংজ্ঞা প্রথমে উৎপন্ন হয়, পরে জ্ঞান; সংজ্ঞার উৎপত্তি হইতে জ্ঞানের উৎপত্তি।”

৪১৭. “ভন্তে, সংজ্ঞাই কি পুরুষের আত্মা, অথবা সংজ্ঞা ও আত্মা পরস্পর ভিন্ন?”

“পোট্ঠপাদ, তুমি কি সত্যই আত্মায় আশ্রয় লইতেছ?”

“ভন্তে, আমি ধরিয়া লইতেছি যে, স্থূল এক আত্মার অস্তিত্ব আছে যাহা রূপী, চাতুর্মহাভূতিক এবং কবঙ্কিকার আহারভোজী।”

“পোট্ঠপাদ, যদি এরূপ আত্মার অস্তিত্ব থাকে, তাহা হইলে তোমার সংজ্ঞা এক পদার্থ এবং আত্মা অন্য পদার্থ। ইহা নিম্নোক্ত পর্যায় হইতেও জ্ঞাতব্য। পোট্ঠপাদ, স্থূল, রূপী, চাতুর্মহাভূতিক, কবঙ্কিকার আহারভোজী আত্মা স্বীকার করিয়া লইলেও পুরুষের কোনো কোনো সংজ্ঞার উৎপত্তি হয়, কোনো কোনো সংজ্ঞা নিরুদ্ধ হয়। পোট্ঠপাদ, ইহার দ্বারাও জানিতে হইবে সংজ্ঞা এক পদার্থ এবং আত্মা অন্য পদার্থ।”

৪১৮. “ভন্তে, আমি আত্মাকে সর্বাঙ্গণ্ডসর্বেন্দ্রিয় সম্পন্ন মনোময়রূপে গ্রহণ করি।”

“পোট্ঠপাদ, তোমার আত্মা সর্বাঙ্গপ্রত্যঙ্গণ্ডসর্বেন্দ্রিয়সম্পন্ন মনোময় হইলেও তোমার সংজ্ঞা এক পদার্থ এবং আত্মা অন্য পদার্থ। ইহা নিম্নোক্ত পর্যায় হইতেও জ্ঞাতব্য। পোট্ঠপাদ সর্বাঙ্গপ্রত্যঙ্গণ্ডসর্বেন্দ্রিয়সম্পন্ন মনোময় আত্মা স্বীকার করিয়া লইলেও পুরুষের কোনো কোনো সংজ্ঞার উৎপত্তি হয়, কোনো কোনো সংজ্ঞা নিরুদ্ধ হয়। পোট্ঠপাদ, ইহা দ্বারাও জানিতে হইবে সংজ্ঞা এক পদার্থ এবং আত্মা অন্য পদার্থ।

৪১৯. “ভন্তে, তাহা হইলে আমি আত্মাকে অরূপী, সংজ্ঞাময়রূপে গ্রহণ করিতেছি।”

“পোট্ঠপাদ, তোমার আত্মা অরূপী, সংজ্ঞাময় হইলেও তোমার সংজ্ঞা এক পদার্থ এবং আত্মা অন্য পদার্থ। ইহা নিম্নোক্ত পর্যায় হইতেও জ্ঞাতব্য। পোট্ঠপাদ, আত্মাকে অরূপী, সংজ্ঞাময়রূপে গ্রহণ করিলেও পুরুষের কোনো কোনো সংজ্ঞার উৎপত্তি হয়, কোনো কোনো সংজ্ঞার নিরুদ্ধ হয়। পোট্ঠপাদ, ইহা দ্বারাও জানিতে হইবে সংজ্ঞা এক পদার্থ এবং আত্মা অন্য পদার্থ।

৪২০. “ভন্তে, সংজ্ঞা পুরুষের আত্মা অথবা সংজ্ঞা এবং আত্মা পরস্পর বিভিন্ন ইহা কি আমি জানিতে পারি?”

“পোট্ঠপাদ, তুমি ভিন্ন দৃষ্টিসম্পন্ন, ভিন্ন মতাবলম্বী, ভিন্ন রুচিসম্পন্ন, ভিন্ন আযোগানুসারী, ভিন্ন আচার্যের শিক্ষাগ্রহণকারী; এইজন্য এই বিষয় জানিতে পারা তোমার পক্ষে কঠিন।”

“ভন্তে, যদি আমার পক্ষে তাহা জানিতে পারা কঠিন হয়, তাহা হইলে, ভন্তে, জগৎ কি শাশ্বত? ইহাই কি একমাত্র সত্য, অন্য প্রকার দৃষ্টি নিরর্থক?”

“পোট্ঠপাদ, “জগৎ শাশ্বত, ইহাই একমাত্র সত্য, অন্য প্রকার দৃষ্টি নিরর্থক”, এই বিষয়ে আমি কোনো মত প্রকাশ করি নাই।”

“ভন্তে, তবে কি জগৎ অশাশ্বত? ইহাই একমাত্র সত্য, অন্য প্রকার দৃষ্টি নিরর্থক?”

“পোট্ঠপাদ, এ বিষয়েও আমি কোনো মত প্রকাশ করি নাই।”

“ভন্তে, তবে কি জগৎ অসীম? ইহাই একমাত্র সত্য, অন্য প্রকার দৃষ্টি নিরর্থক?”

“পোট্ঠপাদ, এই বিষয়েও আমি কোনো মত প্রকাশ করি নাই।”

“ভন্তে, তবে কি জগৎ অসীম? ইহাই একমাত্র সত্য, অন্য প্রকার দৃষ্টি নিরর্থক?”

“পোট্ঠপাদ, এই বিষয়েও আমি কোনো মত প্রকাশ করি নাই।”

ভন্তে, জীব এবং শরীর কি একই? ইহাই একমাত্র সত্য, অন্য প্রকার দৃষ্টি নিরর্থক?”

“পোট্ঠপাদ, এই বিষয়েও আমি কোনো মত প্রকাশ করি নাই।”

“ভন্তে, তবে কি জীব হইতে শরীর ভিন্ন? ইহাই একমাত্র সত্য, অন্য প্রকার দৃষ্টি নিরর্থক?”

“পোট্ঠপাদ, এই বিষয়েও আমি কোনো মত প্রকাশ করি নাই।”

“ভন্তে, মরণের পর তথাগতের পুনর্জন্ম হয় কি? ইহাই একমাত্র সত্য, অন্য প্রকার দৃষ্টি নিরর্থক?”

“পোট্ঠপাদ, এই বিষয়ে আমি কোনো মত প্রকাশ করি নাই।”

“ভন্তে, তবে মরণের পর কি তথাগতের পুনরাবির্ভাব হয় না? ইহাই একমাত্র সত্য, অন্য প্রকার দৃষ্টি নিরর্থক?”

“পোট্ঠপাদ, এ বিষয়ে আমি কোনো মত প্রকাশ করি নাই।”

“ভন্তে, তবে মরণের পর তথাগতের পুনর্জন্ম একাধারে হয় এবং হয় না? ইহাই একমাত্র সত্য; অন্য প্রকার দৃষ্টি নিরর্থক?”

“পোট্ঠপাদ, এ বিষয়ে আমি মত প্রকাশ করি নাই।”

“ভন্তে, তবে কি মরণের পর তথাগতের পুনর্জন্ম হয় না, এবং উহা যে হয় না তাহাও নহে? ইহাই একমাত্র সত্য, অন্য প্রকার দৃষ্টি নিরর্থক?”

“পোট্ঠপাদ, এই বিষয়েও আমি কোনো মত প্রকাশ করি নাই।”

“কেন ভগবান ওই বিষয়ে কোনো মত প্রকাশ করেন নাই?”

“পোট্ঠপাদ, এই প্রশ্ন অর্থ-সংহতি নহে, ধর্ম-সংহতি নহে, সর্বোচ্চ ব্রহ্মচর্যের অনুকূল নহে; নির্বেদ, বিরাগ, বিরোধ, উপশম, অভিজ্ঞা, সম্বোধি, নির্বাণের অনুকূল নহে। এই কারণে আমি ওই বিষয়ে কোনো মত প্রকাশ করি নাই।”

“ভন্তে, ভগবান কোন প্রশ্নের সমাধান করিয়াছেন?”

“পোট্ঠপাদ, দুঃখ কী তাহা আমি প্রকাশ করিয়াছি, দুঃখের উৎপত্তি আমি প্রকাশ করিয়াছি, দুঃখের নিরোধ আমি প্রকাশ করিয়াছি, দুঃখ-নিরোধগামিনী প্রতিপদ (মার্গ) আমি প্রকাশ করিয়াছি।”

“কী হেতু ভগবান ওই সকল প্রকাশ করিয়াছেন?”

“পোট্ঠপাদ, যেহেতু ইহা অর্থ-সংহিত, ধর্ম-সংহিত; সর্বোচ্চ ব্রহ্মচর্যের অনুকূল; নির্বেদ, বিরাগ, নিরোধ, উপশম, অভিজ্ঞা, সম্বোধি, নির্বাণের অনুকূল। এই হেতু আমি উহা ব্যক্ত করিয়াছি।”

“হে ভগবান, সত্য। হে সুগত, সত্য। এক্ষণে ভগবান যথেচ্ছা করিতে পারেন।”

অনন্তর ভগবান আসন হইতে উত্থান করিয়া প্রস্থান করিলেন।

৪২১. তদনন্তর, ভগবান প্রস্থান করিবা মাত্র উপস্থিত পরিব্রাজকগণ চতুর্দিক হইতে বিদ্রূপবাক্য দ্বারা পোট্ঠপাদকে জর্জরিত করিলেন, “এই প্রকারে পোট্ঠপাদ শ্রমণ গৌতম যাহা বলিতেছেন তাহারই অনুমোদন করিতেছেন এবং বলিতেছেন, “হে ভগবান, সত্য। হে সুগত, সত্য।” আমরা কিন্তু উপরি উক্ত দশবিধ প্রশ্ন সম্বন্ধে শ্রমণ গৌতমের কোনো স্পষ্ট ধর্মদেশনা অবগত নহি।”

এইরূপ উক্ত হইলে পরিব্রাজক পোট্ঠপাদ ওই সকল পরিব্রাজককে বলিলেন, “আমিও ওই সকল বিষয়ে শ্রমণ গৌতম কর্তৃক ভাষিত কোনো সুস্পষ্ট দেশনা অবগত নহি। কিন্তু শ্রমণ গৌতম যে মার্গ ভূত, তথ্য, সত্য, ধর্মস্থিত, ধর্মনিয়ামক, সেই মার্গের ঘোষণা করেন। শ্রমণ গৌতম ঘোষিত মার্গ ভূত, তথ্য, সত্য, ধর্মস্থিত, ধর্মনিয়ামক জানিয়াও সেই সুভাষিত বাক্যের অভিনন্দন করিব না?”

৪২২. দুই তিন দিন অতিবাহিত হইলে হস্তী-আচার্যপুত্র চিত্ত এবং পরিব্রাজক পোট্ঠপাদ ভগবানের নিকট গমন করিলেন। তথায় চিত্ত ভগবানকে অভিবাদনপূর্বক এক প্রান্তে উপবেশন করিলেন, পোট্ঠপাদ ভগবানের সহিত প্রীত্যালাপসূচক বাক্যের বিনিময়ান্তে একান্তে আসন গ্রহণ করিলেন। তৎপরে পোট্ঠপাদ, পরিব্রাজকগণ তাঁহাকে কীরূপ বিদ্রুপবাণে জর্জরিত করিয়াছেন এবং তিনি কীরূপ উত্তর দিয়াছেন তৎসমুদয় ভগবানের নিকট বিবৃত করিলেন।

৪২৩. “পোট্ঠপাদ, ওই সকল পরিব্রাজক অন্ধ, চক্ষুহীন, উহাদের মধ্যে একমাত্র তুমিই চক্ষুষ্মান। পোট্ঠপাদ, কোনো কোনো বিষয় নিশ্চিত আমি এইরূপ বিজ্ঞাপিত করিয়াছি, কোনো কোনো বিষয় অনিশ্চিত ঘোষণা করিয়াছি। আমি যাহা অনিশ্চিত ঘোষণা করিয়াছি তাহা কী? “জগৎ শাশ্বত,” “জগৎ অশাশ্বত” “জগৎ সান্ত”, “জগৎ অনন্ত”, “যে জীব সে-ই শরীর”, “জীব এক, শরীর অন্য”, “মরণের পর তথাগতের পুনর্জন্ম হয়”, “মরণের পর তথাগতের পুনর্জন্ম হয় না”, “মরণের পর তথাগতের পুনর্জন্ম একাধারে হয় এবং হয় না, মরণের পর তথাগতের পুনর্জন্ম হয় না, এবং উহা যে হয় না তাহাও নহে,” পোট্ঠপাদ, আমি যাহা অনিশ্চিত ঘোষণা করিয়াছি তাহা এই সকল।

“পোট্ঠপাদ, কী কারণে আমি ওই সকল অনিশ্চিত ঘোষণা করিয়াছি? পোট্ঠপাদ, যেহেতু উহা অর্থ-সংহিত নহে, ধর্ম-সংহিত নহে, সর্বোচ্চ ব্রহ্মচর্যের অনুকূলে নহে; নির্বেদ, বিরাগ, নিরোধ, উপশম, অভিজ্ঞা, সম্বোধি, নির্বাণের অনুকূলে নহে। এই কারণে আমি উহা অনিশ্চিত ঘোষণা করিয়াছি।

৪২৪. “পোট্ঠপাদ, যে-সকল বিষয় নিশ্চিত, আমি এইরূপ বিজ্ঞাপিত করিয়াছি, ওই সকল কী? “ইহা দুঃখ”, “ইহা দুঃখের উৎপত্তি”, “ইহা দুঃখের নিরোধ”, “ইহা দুঃখনিরোধগামিনী মার্গ”; পোট্ঠপাদ, এই সকল বিষয় নিশ্চিত, আমি এইরূপ বিজ্ঞাপিত করিয়াছি।

“পোট্ঠপাদ, কী কারণে আমি ওই সকল নিশ্চিত এইরূপ বিজ্ঞাপিত করিয়াছি? যেহেতু উহা অর্থ-সংহিত, ধর্ম-সংহিত, সর্বোচ্চ ব্রহ্মচর্যের অনুকূল, নির্বেদ, বিরাগ, নিরোধ, উপশম, অভিজ্ঞা, সম্বোধি, নির্বাণের অনুকূল। এই কারণে উহা নিশ্চিত আমি এইরূপ বিজ্ঞাপিত করিয়াছি।

৪২৫. “পোট্ঠপাদ, কোনো কোনো শ্রমণ-ব্রাহ্মণ আছেন যাঁহারা এইরূপ মতাবলম্বী, এইরূপ দৃষ্টিসম্পন্ন : “মরণের পর আত্মা একান্ত সুখী এবং অরোগ হইয়া থাকে।” আমি তাঁহাদের নিকট গিয়া কহি, “আয়ুষ্মানগণ, আপনারা কি সত্যই এইরূপ মতাবলম্বী, এইরূপ দৃষ্টিসম্পন্ন : “মরণের পর আত্মা একান্ত সুখী এবং অরোগ হইয়া থাকে?” উত্তরে তাঁহারা সম্মতি জ্ঞাপন করেন। আমি তাঁহাদিগকে এইরূপ কহি, “আয়ুষ্মানগণ, আপনারা কি একান্ত সুখসম্পন্ন লোক জানিয়া ও দেখিয়া বিহার করেন?” এইরূপ জিজ্ঞাসিত হইয়া তাঁহারা “না” এইরূপ উত্তর দিয়া থাকেন। আমি তাঁহাদিগকে কহি, “আয়ুষ্মানগণ, আপনারা কি এক রাত্রি অথবা এক দিবস, কিম্বা অর্ধ রাত্রি অথবা অর্ধ দিবসের জন্য আপনাদিগকে একান্ত সুখী অনুভব করিয়াছেন?” এইরূপে জিজ্ঞাসিত হইয়া তাঁহারা “না” বলিয়া থাকেন। আমি তাঁহাদিগকে কহি, “আয়ুষ্মানগণ, আপনারা কি এমন কোনো মার্গ, কোনো প্রতিপদ জানেন যাহা দ্বারা একান্ত সুখময় জগতের সাক্ষাৎকার হয়?” তাঁহারা “না” এইরূপ উত্তর দিয়া থাকেন। আমি তাঁহাদিগকে কহি, “আয়ুষ্মানগণ, আপনারা কি একান্ত সুখময় জগতে পুনর্বৎপন্ন দেবতাদিগকে বলিতে শুনিয়াছেন : “মারিষ, একান্ত সুখময় লোক প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে সুপ্রতিপন্ন হউন আমরা ওইরূপেই একান্ত সুখময় লোক প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে সুপ্রতিপন্ন হউন। আমরা ওই রূপেই একান্ত সুখময় লোক প্রাপ্ত হইয়াছি।” এইরূপ জিজ্ঞাসিত হইয়া তাঁহারা “না” বলিয়া থাকেন। পোট্ঠপাদ, তুমি কীরূপ মনে করো? এরূপ হইলে ওই সকল শ্রমণ-ব্রাহ্মণের বাক্য কি ভিত্তিহীন নহে?”

৪২৬. যেরূপ কোনো পুরুষ বলিল, “আমি এই জনপদের জনপদকল্যাণীকে অভিলাষ করি, কামনা করি।” জনগণ তাহাকে বলিল, হে পুরুষ, যে জনপদকল্যাণীকে তুমি অভিলাষ করো, কামনা করো, সেই জনপদকল্যাণী ক্ষত্রিয়া, কিম্বা ব্রাহ্মণী, কিম্বা বৈশ্যা, কিম্বা শূদ্রাণী, তাহা কি তুমি জান?” এইরূপ জিজ্ঞাসিত হইয়া পুরুষটি বলিল, “না”।

“জনগণ তাহাকে বলিল, “হে পুরুষ, যে জনপদকল্যাণীকে তুমি অভিলাষ করো, কামনা করো, সেই জনপদকল্যাণী এই নাম অথবা এই গোত্রবিশিষ্ট, দীর্ঘ, হ্রস্ব অথবা মধ্যমাকৃতি, কৃষ্ণবর্ণা, শ্যামবর্ণা অথবা মদগুর বর্ণা, অমুক গ্রাম নিগম অথবা নগরবাসিনী, তাহা কি তুমি জান?

“এইরূপে জিজ্ঞাসিত হইয়া পুরুষটি বলিল, “না”।

“জনগণ তাহাকে বলিল, “হে পুরুষ, যাহাকে তুমি জান না এবং দেখ নাই তাহাকে তুমি অভিলাষ করো, কামনা করো?”

“পুরুষটি বলিল, “হাঁ”।

“পোট্ঠপাদ, তুমি কীরূপ মনে করো? এরূপ হইলে সেই পুরুষের বাক্য কি ভিত্তিহীন নহে?”

অবশ্যই ভন্তে, এরূপ হইলে সেই পুরুষের বাক্য ভিত্তিহীন।

পোট্ঠপাদ, এইরূপই যে-সকল শ্রমণ-ব্রাহ্মণ বলিয়া থাকেন, “মরণের পর আত্মা একান্ত সুখী এবং অরোগ হইয়া থাকে,” আমি তাঁহাদের নিকট গমন করিয়া কহি, “আয়ুষ্মানগণ, আপনারা কি সত্যই ওইরূপ মত পোষণ করেন?” উত্তরে তাঁহারা সম্মতি জ্ঞাপন করেন। আমি তাহাদিগকে কহি, “আয়ুষ্মানগণ, আপনারা কি একান্ত সুখের লোক জানিয়া ও দেখিয়া বিহার করেন?” উত্তরে তাঁহারা “না” বলিয়া থাকেন। আমি তাঁহাদিগকে কহি… নহে? [অনুচ্ছেদ সংখ্যা ৪২৫ দ্রষ্টব্য]

“অবশ্যই ভন্তে, এরূপ হইলে ওই সকল শ্রমণ-ব্রাহ্মণের বাক্য ভিত্তিহীন।”

৪২৭. “পোট্ঠপাদ, কোনো পুরুষ প্রাসাদে আরোহণার্থ চতুর্মহাপথে সোপানশ্রেণি নির্মাণ করিল। জনগণ তাহাকে বলিল, “হে পুরুষ, যে প্রাসাদে আরোহণার্থ তুমি সোপান নির্মাণ করিতেছ, উহা পশ্চিমদিকে কিম্বা পূর্বদিকে কিম্বা উত্তর দিকে কিম্বা দক্ষিণ দিকে, উহা উচ্চ, নিচ কিংবা মধ্যমাকৃতি বিশিষ্ট, তাহা তুমি জান কি?” এইরূপে জিজ্ঞাসিত হইয়া সে বলিল, “না”। জনগণ তাহাকে বলিল, “হে পুরুষ, যাহা তুমি জান না এবং দেখ নাই, সেই প্রাসাদে আরোহণার্থ তুমি সোপান নির্মাণ করিতেছ? এইরূপে জিজ্ঞাসিত হইয়া সে বলিল, “না”। পোট্ঠপাদ তুমি কীরূপ মনে করো?” এরূপ হইলে সেই পুরুষের বাক্য কি ভিত্তিহীন নহে?”

“অবশ্যই ভন্তে, এরূপ হইলে সেই পুরুষের বাক্য ভিত্তিহীন।”

“এইরূপই পোট্ঠপাদ, যে-সকল শ্রমণ-ব্রাহ্মণ বলিয়া থাকেন “মরণান্তে আত্মা একান্ত সুখময় অবস্থা প্রাপ্ত হয়” আমি তাঁহাদের নিকট গমন করিয়া কহি, “আয়ুষ্মানগণ, আপনারা কি সত্যই ওইরূপ বলিয়া থাকেন?” তাঁহারা উত্তরে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। আমি উহাদিগকে কহি, “আয়ুষ্মানগণ, আপনারা কি একান্ত সুখময় লোক জানিয়া ও দেখিয়া বিহার করেন?” এইরূপে জিজ্ঞাসিত হইয়া তাঁহারা বলিলেন “না”। আমি তাহাদিগকে কহি, … ভিত্তিহীন নহে? (অনুচ্ছেদ সংখ্যা ৪২৫ দ্রষ্টব্য)।

“অবশ্যই ভন্তে, এরূপ হইলে ওই সকল শ্রমণ-ব্রাহ্মণের বাক্য ভিত্তিহীন।”

৪২৮. “পোট্ঠপাদ, শরীর গ্রহণ ত্রিবিধ : স্থূল-শরীর গ্রহণ, মনোময় শরীর গ্রহণ এবং অরূপ-শরীর গ্রহণ। পোট্ঠপাদ স্থূল-শরীর কী? উহা রূপী, চাতুর্মহাভূতিক, কবলিঙ্কার আহার-ভোজী। মনোময় শরীর কী? উহা রূপী, মনোময়, সর্বাঙ্গ প্রত্যক্ষ সর্বেন্দ্রিয়সম্পন্ন। অরূপ-শরীর কী? উহা অরূপ, সংজ্ঞাময়।

৪২৯. “পোট্ঠপাদ, স্থূল-শরীর পরিগ্রহণের নিবারণার্থ আমি উপদেশ দান করিতেছি, যাহাতে প্রতিষ্ঠিত হইলে তোমাদিগের সংক্লেশিক ধর্মসমূহ দূরীভূত হইবে, শোধক ধর্মসমূহ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইবে, এই জন্মেই তোমরা প্রজ্ঞার পরিপূর্ণতা ও বিপুলতা স্বয়ং জানিয়া ও সাক্ষাৎ করিয়া বিহার করিবে। পোট্ঠপাদ, হয়তো তোমার মনে হইবে, “সংক্লেশিক ধর্ম দূরীভূত হইবে, শোধক ধর্ম পরিবর্ধিত হইবে, এই জন্মেই প্রজ্ঞার পরিপূর্ণতা ও বিপুলতা স্বয়ং জানিয়া ও সাক্ষাৎ করিয়া বিহার সম্ভব হইবে; কিন্তু ওই প্রকার অবস্থান দুঃখ।” পোট্ঠপাদ, সেরূপ মনে করিও না। ওই অবস্থায় উপনীত হইলে প্রমোদ্য, প্রীতি, শান্তি, স্মৃতিসম্প্রজ্ঞান এবং সুখবিহার লাভ হইবে।

৪৩০. পোট্ঠপাদ, মনোময় শরীর পরিগ্রহণের নিবারণার্থও আমি উপদেশ দান করিতেছি, যাহাতে প্রতিষ্ঠিত হইলে তোমাদিগের… সুখবিহার লাভ হইবে। [৪০ নং পদচ্ছেদ দ্রষ্টব্য]

৪৩১. “পোট্ঠপাদ অরূপ-শরীর গ্রহণের নিবারণার্থও আমি উপদেশ দান করিতেছি, যাহাতে প্রতিষ্ঠিত হইলে তোমাদিগের… সুখবিহার লাভ হইবে।

৪৩২. “পোট্ঠপাদ অপরে আমাকে জিজ্ঞাসা করিতে পারে, “যে স্থূল-শরীর পরিগ্রহের নিবারণার্থ আপনি ধর্মোপদেশ দান করেন। যাহাতে প্রতিষ্ঠিত হইলে সংক্লেশিক ধর্মসমূহ দূরীভূত হয়, শোধক ধর্মসমূহ পরিবর্ধিত হয়, এই জন্মেই প্রজ্ঞার পূর্ণতা ও বিপুলতা স্বয়ং জানিয়া ও সাক্ষাৎ করিয়া বিহার সম্ভব হয়, হে আবুসো! ওই স্থূল-শরীর কী?” এইরূপ জিজ্ঞাসিত হইলে আমি বলিব, “এই শরীরই সেই স্থূল-শরীর যাহার পরিগ্রহের নিবারণার্থ আমি উপদেশ দান করি, যাহাতে প্রতিষ্ঠিত হইলে সংক্লেশিক ধর্মসমূহ দূরীভূত হয়… সম্ভয় হয়।”

৪৩৩. “পোট্ঠপাদ অপরে আমাকে জিজ্ঞাসা করিতে পারে : “যে মনোময় শরীরের নিবারণার্থ আপনি উপদেশ দান করেন, যাহাতে প্রতিষ্ঠিত হইলে… সম্ভব হয়, হে আবুসো, ওই মনোময় শরীর কী?” এইরূপে জিজ্ঞাসিত হইলে আমি বলিব, “ইহাই সেই মনোময় শরীর যাহার নিবারণার্থ আমি উপদেশ দান করি, যাহাতে প্রতিষ্ঠিত হইলে… সম্ভব হয়।”

৪৩৪. “পোট্ঠপাদ অপরে আমাকে জিজ্ঞাসা করিতে পারে :

“যে অরূপ-শরীরের নিবারণার্থ আপনি উপদেশ দান করেন, যাহাতে প্রতিষ্ঠিত হইলে… সম্ভব হয়, হে আবুসো, ওই অরূপ-শরীর কী?” এইরূপে জিজ্ঞাসিত হইলে আমি বলিব, “ইহাই সেই অরূপ-শরীর যাহার নিবারণার্থ আমি উপদেশ দান করি, যাহাতে প্রতিষ্ঠিত হইলে… সম্ভব হয়।”

“পোট্ঠপাদ, তুমি কীরূপ মনে করো? এরূপ হইলে কথিত বাক্য কি সুপ্রতিষ্ঠিত নহে?”

“অবশ্যই ভন্তে, ইহা সুপ্রতিষ্ঠিত।

৪৩৫. “পোট্ঠপাদ, কোনো পুরুষ প্রাসাদে আরোহণার্থ উহার নিম্নদেশে সোপান নির্মাণ করিল। জনগণ তাহাকে বলিল, “হে পুরুষ, যে প্রাসাদে আরোহণার্থ তুমি সোপান নির্মাণ করিতেছ, ওই প্রাসাদ পূর্বে অথবা দক্ষিণে অথবা পশ্চিমে অথবা উত্তরে, উহা উচ্চ বা নীচ বা মধ্যমাকৃতিবিশিষ্ট, তাহা তুমি জান কি?” সে উত্তর করিল, “ইহাই সেই প্রাসাদ যাহাতে আরোহণার্থ উহার নিম্নে আমি সোপান নির্মাণ করিতেছি।” পোট্ঠপাদ, তুমি কীরূপ মনে করো? এরূপ হইলে সেই পুরুষের বাক্য কি সুপ্রতিষ্ঠিত নহে?

“অবশ্যই ভন্তে, এরূপ হইলে সেই পুরুষের বাক্য সুপ্রতিষ্ঠিত।”

৪৩৬. “এইরূপেই, পোট্ঠপাদ, অপরে আমাকে জিজ্ঞাসা করিতে পারে :

“যে স্থূল… সম্ভব হয়।” (৪৩২-৪৩৪ অনুচ্ছেদ পুনরাবৃত্ত হইয়াছে)

“পোট্ঠপাদ, তুমি কীরূপ মনে করো? এরূপ হইলে কথিত বাক্য কি সুপ্রতিষ্ঠিত নহে?”

“অবশ্যই ভন্তে, ইহা সুপ্রতিষ্ঠিত।”

৪৩৭. এইরূপ কথিত হইলে হস্তী-আচার্য পুত্র চিত্ত ভগবানকে বলিলেন :

“ভন্তে, যখন স্থূল-শরীর পরিগ্রহ হয়, তখন মনোময় শরীর পরিগ্রহ এবং অরূপ-শরীর পরিগ্রহ মিথ্যা হয়। তখন স্থূল-শরীর পরিগ্রহই পুরুষের পক্ষে সত্য হয়। যখন মনোময় শরীর পরিগ্রহ হয়, তখন স্থূল-শরীর পরিগ্রহ মিথ্যা হয়, অরূপ-শরীর পরিগ্রহ মিথ্যা হয়। মনোময় শরীর পরিগ্রহই তখন পুরুষের পক্ষে সত্য হয়। যখন অরূপ-শরীর পরিগ্রহ হয়, তখন স্থূল-শরীর পরিগ্রহ মিথ্যা হয়, মনোময় শরীর পরিগ্রহ মিথ্যা হয়; তখন অরূপ-শরীর পরিগ্রহই পুরুষের পক্ষে সত্য হয়।”

৪৩৮. “চিত্ত, যে সময় স্থূল-শরীর পরিগ্রহ হয়, এই সময় উহা মনোময় শরীর পরিগ্রহের স্তরভুক্ত হয় না, অরূপ-শরীর পরিগ্রহের স্তরভুক্ত হয় না। উহা তখন স্থূল-শরীর পরিগ্রহরূপেই জ্ঞাত হয়। সে সময় মনোময় শরীর পরিগ্রহ হয়, ওই সময় উহা স্থূল-শরীর পরিগ্রহের স্তরভুক্ত হয় না, অরূপ-শরীর পরিগ্রহের স্তরভুক্ত হয় না। উহা তখন মনোময় শরীর পরিগ্রহরূপেই জ্ঞাত হয়। যে সময় অরূপ-শরীর পরিগ্রহ হয়, ওই সময় উহা স্থূল-শরীর পরিগ্রহের স্তরভুক্ত হয় না, মনোময় শরীরের স্তরভুক্ত হয় না। উহা তখন অরূপ-শরীর পরিগ্রহরূপেই জ্ঞাত হয়। চিত্ত, যদি তোমাকে কেহ জিজ্ঞাসা করে, “তুমি অতীতে ছিলে কি না? ভবিষ্যতে তুমি হইবে কি না? তুমি এখন আছ কি না?” চিত্ত, এইরূপে জিজ্ঞাসিত হইলে তুমি কী উত্তর দিবে?”

ভন্তে, এইরূপ জিজ্ঞাসিত হইলে আমি এইরূপ বলিব, “আমি অতীতে ছিলাম, আমি যে ছিলাম না তাহা নহে, আমি ভবিষ্যতে হইব, আমি যে হইব না তাহা নহে; এক্ষণে আমি আছি, আমি যে নাই তাহা নহে।”

৪৩৯. “চিত্ত, যদি তোমাকে কেহ জিজ্ঞাসা করে, “তোমার যে অতীতের শরীর গ্রহণ, তাহাই কি সত্য? ভবিষ্যৎ এবং বর্তমান শরীর গ্রহণ মিথ্যা? তোমার যে ভবিষ্যৎ শরীর পরিগ্রহ, তাহা কি সত্য? অতীত এবং বর্তমান শরীর গ্রহণ মিথ্যা? তোমার যে এই ক্ষণকার বর্তমান শরীর পরিগ্রহ, তাহাই কি সত্য? অতীত এবং ভবিষ্যৎ শরীর পরিগ্রহ মিথ্যা?” চিত্ত, এইরূপে জিজ্ঞাসিত হইলে তুমি কী উত্তর দিবে?”

“ভন্তে, এইরূপ জিজ্ঞাসিত হইলে আমি বলিব, “আমার যে অতীতের শরীর পরিগ্রহ, তাহা যে সময় আমি ছিলাম, ওই সময় সত্য ছিল, ভবিষ্যৎ এবং বর্তমান শরীর পরিগ্রহ মিথ্যা ছিল। আমার যে ভবিষ্যৎ শরীর পরিগ্রহ, তাহা যে সময় আমি হইব, ওই সময় সত্য হইবে, অতীত এবং বর্তমান শরীর পরিগ্রহ মিথ্যা হইবে। আমার যে এই ক্ষণকার বর্তমান শরীর পরিগ্রহ উহাই এক্ষণে সত্য। অতীত ও ভবিষ্যৎ শরীর পরিগ্রহ মিথ্যা।” আমি এইরূপেই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর দিব।”

“এইরূপেই, চিত্ত, যখন উক্ত ত্রিবিধ শরীর পরিগ্রহের কোনো একটি চলিতেছে, তখন উহা অপর দুইটির কোনোটিরই স্তরভুক্ত হয় না।

৪৪০. “চিত্ত, যেরূপ গাভী হইতে দুধ, দুধ হইতে দধি, দধি হইতে নবনীত, নবনীত হইতে ঘৃত, ঘৃত হইতে ঘৃতমণ্ড; যে সময় দুগ্ধ থাকে, ওই সময় উহা দধিও নহে, নবনীতও নহে, ঘৃতও নহে, ঘৃতমণ্ডও নহে, ওই সময় দুগ্ধই উহার সংজ্ঞা। যে সময় দধি হয়… নবনীত হয়… ঘৃত হয়… ঘৃতমণ্ড হয় তখন উহা দুগ্ধ পদবাচ্য নহে, দধি পদবাচ্য নহে, নবনীত পদবাচ্য নহে, ঘৃত পদবাচ্য নহে, তখন ঘৃতমণ্ডই উহার সংজ্ঞা।

এইরূপেই, চিত্ত, যখন উক্ত ত্রিবিধ শরীর পরিগ্রহের কোনো একটি চলিতেছে, তখন উহা অপর দুইটির কোনোটিরই সংজ্ঞাভুক্ত হয় না। চিত্ত, এই সকল লৌকিক সংজ্ঞা, লৌকিক নিরুক্তি, লৌকিক ব্যবহার, লৌকিক প্রজ্ঞপ্তি। তথাগত নির্লিপ্ত হইয়া উহাদের ব্যবহার করেন।”

৪৪১. এইরূপ উক্ত হইলে পোট্ঠপাদ পরিব্রাজক ভগবানকে বলিলেন, “ভন্তে, অতি উত্তম, অতি উত্তম। যেরূপ উৎপাতিতের পুনঃ প্রতিষ্ঠা হয়, লুক্কায়িত প্রকাশিত হয়, মূঢ় পথ প্রদর্শিত হয়, চক্ষুষ্মানের দেখিবার নিমিত্ত অন্ধকারে তৈলদীপ ধৃত হয়, সেইরূপই ভগবান অনেক প্রকারে ধর্ম প্রকাশিত করিয়াছেন। ভন্তে, আমি ভগবানের শরণ লইতেছি। ধর্মের ও ভিক্ষুসংঘের শরণ লইতেছি। অদ্য হইতে জীবনের অন্তকাল পর্যন্ত ভগবান আমাকে শরণাগত উপাসকরূপে গ্রহণ করুন।”

৪৪২. কিন্তু হস্তী আচার্যপুত্র চিত্ত ভগবানকে বলিলেন, “ভন্তে, অতি উত্তম… শরণ লইতেছি। আমি ভগবানের নিকট প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা লইবার বাসনা করি।”

৪৪৩. হস্তী আচার্যপুত্র চিত্ত ভগবানের নিকট প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা লাভ করিলেন। অতঃপর নবদীক্ষিত আয়ুষ্মান হস্তী আচার্যপুত্র চিত্ত নির্জনবাসী, অপ্রমত্ত, উৎসাহপূর্ণ, দৃঢ়সংকল্প হইয়া অনতিবিলম্বে যথার্থ পথাবলম্বী কুলপুত্রগণ যে সম্পদ লাভের জন্য গৃহ পরিত্যাগ করিয়া গৃহহীন প্রব্রজ্যার আশ্রয় করেন, সেই অনুত্তর ব্রহ্মচর্য্য স্বয়ং জ্ঞাত হইয়া ও উপলব্ধি করিয়া এই জীবনেই উহার পূর্ণতা সাধন করিলেন, “জন্মের ধ্বংস হইয়াছে, ব্রহ্মচর্য্য সম্পাদিত হইয়াছে, কর্তব্য সম্পন্ন হইয়াছে, এই জীবনে করণীয় আর কিছুই নাই,” ইহা জ্ঞাত হইয়া আয়ুষ্মান চিত্ত অর্হৎদিগের অন্যতম হইলেন।

পোট্ঠপাদ সূত্র সমাপ্ত।

The Long Discourses

|_I. The Chapter on the Entire Spectrum of Ethics

DN9. পোট্ঠপাদ সূত্র

Translations [22]

English

繁體字

日本語

Deutsch

Italiano

Español

Português

Norsk

Magyar

Srpski

עִבְרִית

हिंदी

ಕನ್ನಡ

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference

Translations [22]

English

繁體字

日本語

Deutsch

Italiano

Español

Português

Norsk

Magyar

Srpski

עִבְרִית

हिंदी

ಕನ್ನಡ

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference

Commentaries [0]