আমি এইরূপ শুনিয়াছি।

১. একসময় ভগবান শাক্যরাজ্যে অবস্থান করিতেছিলেন, কপিলবাস্তু-সমীপে ন্যগ্রোধারামে। মহানাম শাক্য ভগবানের নিকট উপস্থিত হইলেন, উপস্থিত হইয়া ভগবানকে অভিবাদন করিয়া সসম্ভ্রমে একান্তে উপবেশন করিলেন। একান্তে উপবিষ্ট হইয়া তিনি ভগবানকে কহিলেন, ‘প্রভো, আমি দীর্ঘকাল হইতে জানি, ভগবান এইরূপে ধর্মোপদেশ প্রদান করিয়াছেন : লোভ চিত্তের উপক্লেশ, দ্বেষ চিত্তের উপক্লেশ, মোহ চিত্তের উপক্লেশ। প্রভো, আমি ইহা জানি সত্য, ভগবান এইরূপে ধর্মোপদেশ প্রদান করিয়াছেন : লোভ চিত্তের উপক্লেশ, দ্বেষ চিত্তের উপক্লেশ, মোহ চিত্তের উপক্লেশ। অথচ একসময় লোভধর্ম (লোভপ্রবৃত্তি) আমার চিত্ত অধিকার করিয়া থাকে, একসময় দ্বেষধর্ম (হিংসাপ্রবৃত্তি) আমার চিত্ত অধিকার করিয়া থাকে, একসময় মোহধর্ম (মোহপ্রবৃত্তি) আমার চিত্ত অধিকার করিয়া থাকে। প্রভো, এই অবস্থায় আমার নিকট এই চিন্তা উদিত হয় : কোনো পাপধর্ম আমার মধ্যে প্রহীন না হওয়ায় একসময় বা লোভধর্ম, একসময় বা দ্বেষধর্ম, একসময় বা মোহধর্ম আমার চিত্ত অধিকার করিয়া থাকে?’

২. মহানাম, যে কারণে একসময় বা লোভধর্ম, একসময় বা দ্বেষধর্ম, একসময় বা মোহধর্ম তোমার চিত্ত অধিকার করিয়া থাকে, সেই পাপধর্ম তোমার মধ্যে সত্যই প্রহীন হয় নাই। যদি তাহা প্রহীন হইত, তাহা হইলে তুমি আর গৃহে বাস করিতে না, কাম্যবস্তু উপভোগ করিতে না। যেহেতু, মহানাম, তোমার মধ্যে সেই পাপধর্ম প্রহীন হয় নাই, তুমি গৃহে বাস করিতেছ, কাম্যবস্তু উপভোগ করিতেছ।

৩. মহানাম, (মার্গস্তরে) ‘অল্পাস্বাদ-কাম বহু দুঃখজনক, বহুনিরাশার কারণ, কামে আদীনবই (উপদ্রবই) অত্যধিক’ ইহা আর্যশ্রাবকের প্রজ্ঞায় যথার্থভাবে সম্পূর্ণরূপে সুদৃষ্ট হইলেও, তিনি কামাতিক্রান্ত, অকুশল ধর্মাতিক্রান্ত প্রীতিসুখ লাভ করেন না, তদতিরিক্ত অপর কোনো শান্ততর অবস্থাও লাভ করেন না। তখন পর্যন্ত তাঁহার কামে অনাভোগ হয় না। মহানাম, যখন (ফলস্তরে) ‘অল্পাস্বাদ-কাম বহু দুঃখজনক, বহুনিরাশার কারণ, কামে আদীনবই অত্যধিক’ ইহা তাঁহার প্রজ্ঞায় যথার্থভাবে সম্পূর্ণরূপে সুদৃষ্ট হয়, তখন হইতে তিনি কামাতিক্রান্ত, অকুশল ধর্মাতিক্রান্ত প্রীতিসুখ লাভ করেন, তদতিরিক্ত শান্ততর অবস্থাও লাভ করেন। অনন্তর কামে তাঁহার আর উপভোগ্য কিছুই থাকে না। মহানাম, সম্যক সম্বোধি লাভের পূর্বে, বোধিসত্ত্ব অবস্থায় ‘অল্পাস্বাদ-কাম বহু দুঃখজনক, বহুনিরাশার কারণ, কামে আদীনবই অত্যধিক’ ইহা আমার প্রজ্ঞায় যথার্থভাবে সম্পূর্ণরূপে সুদৃষ্ট হইলেও তখন আমিও কামাতিক্রান্ত, অকুশল ধর্মাতিক্রান্ত প্রীতিসুখ লাভ করি নাই, তদতিরিক্ত অপর কোনো শান্ততর অবস্থাও লাভ করি নাই। তদবস্থায় কামে আমার অনাভোগ হইয়াছে বলিয়া স্বয়ং জানিতে পারি নাই। যখন (বুদ্ধস্তরে) ‘অল্পাস্বাদ-কাম বহু দুঃখজনক, বহুনিরাশার কারণ, কামে আদীনবই অত্যধিক’ ইহা আমার প্রজ্ঞায় যথার্থভাবে সম্পূর্ণরূপে সুদৃষ্ট হয়, তখন হইতে আমি কামাতিক্রান্ত, অকুশল ধর্মাতিক্রান্ত প্রীতিসুখ অনুভব করি, তদতিরিক্ত শান্ততর অবস্থাও লাভ করি। অনন্তর আমি স্বয়ং জানিতে পারি-কামে আমার উপভোগ্য কিছুই নাই।

৪. মহানাম, কামের আস্বাদ কী? মহানাম, এই পঞ্চকামগুণ। কী কী? চক্ষু-বিজ্ঞেয় রূপ-ইষ্ট, কান্ত ও মনোজ্ঞ প্রিয়রূপ, যাহা কামোপসংহিত (কামযুক্ত) ও মনোরঞ্জক; শ্রোত্র-বিজ্ঞেয় শব্দ, ঘ্রাণ-বিজ্ঞেয় গন্ধ, জিহ্বা-বিজ্ঞেয় রস এবং কায়-বিজ্ঞেয় স্পর্শ-ইষ্ট, কান্ত ও মনোজ্ঞ প্রিয়রূপ, যাহা কামোপসংহিত ও মনোরঞ্জক। মহানাম, এই পঞ্চকামগুণ-হেতু যেই সুখ ও সৌমনস্য উৎপন্ন হয়, তাহাই কামের আস্বাদ।

৫. মহানাম, কামের আদীনব (উপদ্রব) কী? মহানাম, ইহজগতে কুলপুত্র শীতোষ্ণের সম্মুখীন, দংশ, মশক, বাতাতপ ও সরীসৃপ সংস্পর্শে কম্পমান এবং ক্ষুৎপিপাসায় ম্রিয়মাণ হইয়া কি মুদ্রা, কি গণনা, কি সংখ্যা, কি কৃষি, কি বাণিজ্য, কি গোরক্ষা, কি শস্ত্রজীবিকা, কি রাজপুরুষপদ (রাজসেবা), কি অন্য কোনো শিল্প, যেকোনো এক শিল্পস্থান (জীবনোপায়) অবলম্বনে জীবিকানির্বাহ করেন। মহানাম, ইহাও কামের আদীনব, কামহেতু, কামনিমিত্ত, কামাধিকরণে, কামকারণেই ইহা দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষজীবনে) দুঃখস্কন্ধ (দুঃখের রাশি)।

মহানাম, যদি এইরূপে উত্থানশীল, উদ্যোগী এবং পরিশ্রমী হইবার ফলেও সেই কুলপুত্রের বাঞ্ছিত ভোগৈশ্বর্য অভিনিষ্পন্ন (সিদ্ধ) না হয়, তাহা হইলে তিনি অনুশোচনা করেন, ক্লান্তি (অবসাদ) বোধ করেন, বিলাপ করেন, ঊরু চাপড়াইয়া ক্রন্দন করেন, সম্মোহপ্রাপ্ত হন : ‘অহো, আমার সকল উদ্যম ব্যর্থ, সর্ব-পরিশ্রম বিফল হইল!’ ইহাও কামের আদীনব, কামহেতু, কামনিমিত্ত, কামাধিকরণে, কামকারণেই ইহা দৃষ্টধর্মে দুঃখস্কন্ধ।

মহানাম, যদি এইরূপে উত্থানশীল, উদ্যোগী এবং পরিশ্রমী হইবার ফলে সেই কুলপুত্রের বাঞ্ছিত ভোগৈশ্বর্য সুসিদ্ধও হয়, তিনি উহার রক্ষণাবেক্ষণহেতু দুঃখ-দৌর্মনস্য বোধ করিতে থাকেন : ‘কি জানি, যদি রাজা ইহা স্বাধিকারে লইয়া যান, চোর অপহরণ করে, অগ্নিদগ্ধ করে, জলে ভাসাইয়া নেয়, অপ্রিয় দায়াদই বা অপসারিত করে।’ যদি তাঁহার এইরূপে রক্ষিত ও গুপ্ত ভোগৈশ্বর্য রাজা স্বাধিকারে লইয়া যান, চোর অপহরণ করে, অগ্নিদগ্ধ করে, জলে ভাসাইয়া নেয়, অথবা অপ্রিয় দায়াদ অপসারিত করে, তাহাতে তিনি অনুশোচনা করেন, ক্লান্তি বোধ করেন, ঊরু চাপড়াইয়া ক্রন্দন করেন, সম্মোহপ্রাপ্ত হন : ‘অহো, যাহা আমার ছিল তাহাও এখন আমার নাই!’ মহানাম, ইহাও কামের আদীনব, কামহেতু, কামনিমিত্ত, কামাধিকরণে, কামকারণেই ইহা দৃষ্টধর্মে দুঃখস্কন্ধ।

৬. পুনশ্চ, মহানাম, কামহেতু, কামনিমিত্ত, কামাধিকরণে, কামকারণেই রাজা রাজার সহিত, ক্ষত্রিয় ক্ষত্রিয়ের সহিত, ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণের সহিত, গৃহপতি গৃহপতির সহিত, মাতা পুত্রের সহিত, পুত্র মাতার সহিত, পিতা পুত্রের সহিত, পুত্র পিতার সহিত, ভ্রাতা ভ্রাতার সহিত, ভ্রাতা ভগিনীর সহিত, ভগিনী ভ্রাতার সহিত, সহায় সহায়ের সহিত বিবাদ করে। তাহারা পরস্পর কলহ-বিগ্রহরত, বিবাদাপন্ন হইয়া পরস্পরকে পাণির দ্বারা, লোষ্ট্রের দ্বারা, দণ্ডের দ্বারা, এমনকি শস্ত্রের দ্বারাও প্রহার করিতে উদ্যত হয়, তাহাতে তাহারা মৃত্যুকবলে গমন করে বা মরণতুল্য দুঃখ পায়। মহানাম, ইহাও কামের আদীনব, কামহেতু, কামনিমিত্ত, কামাধিকরণে, কামকারণেই ইহা দৃষ্টধর্মে দুঃখস্কন্ধ।

৭. পুনশ্চ, মহানাম, কামহেতু, কামনিমিত্ত, কামাধিকরণে, কামকারণেই তাঁহারা অসিচর্ম গ্রহণ করিয়া, ধনুহস্তে শরকলাপ সংযোজিত করিয়া, উভয় পক্ষ ব্যূহ রচনা করিয়া (সদলবলে) সংগ্রামে অগ্রসর হয়। শর নিক্ষিপ্ত হইলে, শক্তি নিক্ষিপ্ত হইলে, প্রদীপ্ত অসি আবর্তিত হইলে, তাহারা শরেও বিদ্ধ হয়, শক্তিতেও বিদ্ধ হয়, অসিতে তাহাদের মস্তকও ছিন্ন হয়, তাহাতে তাহারা মৃত্যুমুখে পতিত হয় অথবা মরণতুল্য দুঃখ পাইয়া থাকে। মহানাম, ইহাও কামের আদীনব, কামহেতু, কামনিমিত্ত, কামাধিকরণে, কামকারণেই ইহা দৃষ্টধর্মে দুঃখস্কন্ধ।

৮. পুনশ্চ, মহানাম, কামহেতু, কামনিমিত্ত, কামাধিকরণে, কামকারণেই তাঁহারা অসিচর্ম গ্রহণ করিয়া, ধনুহস্তে শরকলাপ সংযোজিত করিয়া আর্দ্রসুধাবলেপনে মসৃণ নগর-প্রাচীর উল্লঙ্ঘন করিতে যায়। শর নিক্ষিপ্ত হইলে, শক্তি নিক্ষিপ্ত হইলে, প্রদীপ্ত অসি আবর্তিত হইলে, তাহারা শরেও বিদ্ধ হয়, শক্তিতেও বিদ্ধ হয়, নিক্ষিপ্ত উষ্ণ ভস্মে আচ্ছাদিত হয়, নগরদ্বারপাল্লার চাপে অবমর্দিত (নিষ্পেষিত) হয়, অসি দ্বারাও তাহাদের মস্তক ছিন্ন হয়, তাহাতে তাহারা মৃত্যুমুখে পতিত হয় অথবা মরণতুল্য দুঃখ পাইয়া থাকে। মহানাম, ইহাও কামের আদীনব, কামহেতু, কামনিমিত্ত, কামাধিকরণে, কামকারণেই ইহা দৃষ্টধর্মে দুঃখস্কন্ধ।

৯. পুনশ্চ, মহানাম, কামহেতু, কামনিমিত্ত, কামাধিকরণে, কামকারণেই তাহারা সন্ধিচ্ছেদ করে, বিলোপসাধন করে, একাকার করে, পরিপন্থে অবস্থান করে, পরদারও গমন [পরদারগমন-ও] করে। রাজা তাহাদিগকে ধৃত করিয়া তাহাদিগের প্রতি বিবিধ কর্মকরণ (শাস্তি) বিধান করেন : কশাঘাত করা হয়, বেত্রাঘাত করা হয়, অর্ধদণ্ডে (মুদ্গরাদির দ্বারা) প্রহার করা হয়, হস্ত ছিন্ন করা হয়, পদ ছিন্ন করা হয়, হস্তপদ ছিন্ন করা হয়, কর্ণচ্ছেদ করা হয়, নাসাচ্ছেদ করা হয়, কর্ণ-নাসাচ্ছেদ করা হয়, বিলগ্নস্থালী করা হয়, শঙ্খমুণ্ড করা হয়, রাহুমুখ করা হয়, জ্যোতিমাল করা হয়, হস্ত প্রদ্যোতিত করা হয়, ছাগচর্মিক করা হয়, চীর্ণচীবরবাস করা হয়, পেরেক বিদ্ধ করা হয়, বড়শির দ্বারা মাংস বিদ্ধ করা হয়, কার্ষাপণ-পরিমিত করা হয়, ক্ষার প্রয়োগ করা হয়, পলিঘ-বিদ্ধ করা হয়, পলাল-পীঠ করা হয়, তপ্ত তৈলে অভিষিক্ত করা হয়, ক্ষিপ্ত কুক্কুর দ্বারা খাওয়ান হয়, জীবন্ত শূলে দেওয়া হয়, অসির দ্বারা শিরশ্ছেদ করা হয়, তাহাতে তাহারা মৃত্যুমুখে পতিত হয় অথবা মরণতুল্য দুঃখ পাইয়া থাকে। মহানাম, ইহাও কামের আদীনব, কামহেতু, কামনিমিত্ত, কামাধিকরণে, কামকারণেই দৃষ্টধর্মে দুঃখস্কন্ধ।

১০. পুনশ্চ, মহানাম, কামহেতু, কামনিমিত্ত, কামাধিকরণে, কামকারণেই কায়ে, বাক্যে ও মনে দুরাচরণ করে। তাহারা কায়ে, বাক্যে ও মনে দুরাচরণ করিয়া দেহাবসানে মৃত্যুর পর অপায়-দুর্গতি, বিনিপাত নরকে উৎপন্ন হয়। মহানাম, ইহাও কামের আদীনব, কামহেতু, কামনিমিত্ত, কামাধিকরণে, কামকারণেই সাম্পরায়িক (পারত্রিক) দুঃখস্কন্ধ।

১১. মহানাম, আমি একদা রাজগৃহ-সমীপে অবস্থান করিতেছিলাম, গৃধ্রকূট পর্বতে। সেই সময়ে বহুসংখ্যক নির্গ্রন্থ (জৈন শ্রমণ) ঋষিগিরি-পার্শ্বে কালশিলায় আসন (উপবেশন) পরিত্যাগ করিয়া উদ্‌ভ্রষ্ট হইয়া কৃচ্ছ্রসাধনজনিত তীব্র দুঃখ, প্রখর কঠোর বেদনা অনুভব করিতেছিলেন। আমি সায়াহ্নে সমাধি হইতে উঠিয়া ঋষিগিরি-পার্শ্বে কালশিলায় যেখানে ওই নির্গ্রন্থগণ ছিলেন সেখানে গিয়া উপস্থিত হইলাম, উপস্থিত হইয়া তাঁহাদিগকে কহিলাম, ‘বন্ধুগণ, তোমরা কেন আসন ছাড়িয়া উদ্‌ভ্রষ্ট হইয়া আছ, কেন-ই বা কৃচ্ছ্রসাধনজনিত তীব্র দুঃখ, প্রখর কঠোর বেদনা অনুভব করিতেছ?’ এইরূপে জিজ্ঞাসিত হইলে তাঁহারা আমাকে কহিলেন, “বন্ধুপ্রবর, (আমাদের শাস্তা) সর্বজ্ঞ ও সর্বদর্শী নির্গ্রন্থ জ্ঞাতৃপুত্র (মহাবীর) অশেষ জ্ঞানদর্শন (অনবধি, অপরিসীম বা কেবল জ্ঞান) দাবি করেন : ‘চলনে, স্থিতিতে, সুপ্তিতে, জাগরণে, সদাসর্বদা আমার নিকট জ্ঞানদর্শন প্রত্যুপস্থিত থাকে।’ তিনিই স্বয়ং আমাদিগকে বলেন, ‘হে নির্গ্রন্থগণ, তোমাদের পূর্বকৃত (প্রাক্তন) পাপকর্ম আছে, তাহা তোমরা এই প্রকার দুঃখ ও দুষ্করচর্যা দ্বারা নির্জীর্ণ করিতেছ। এখন যে তোমরা কায়ে সংবৃত (সংযত), বাক্যে সংবৃত ও মনে সংবৃত হইয়া চলিতেছ, তাহা অনাগতে পাপকর্ম না করিবার জন্য। এইভাবে পুরাতন কর্ম তপশ্চরণ দ্বারা বিনষ্ট করিয়া ও নূতন কোনো পাপকর্ম না করিয়া অনাগতে অনাস্রব হইতে পারা যায়, অনাগতে অনাস্রব হইলে কর্মক্ষয় হয়, কর্মক্ষয়ে দুঃখক্ষয়, দুঃখক্ষয়ে বেদনাক্ষয় এবং বেদনাক্ষয়ে সর্বদুঃখ নির্জীর্ণ হয়।’”* (তাঁহারা কহিলেন :) ‘ইহা আমাদের নিকট রুচিকর, যুক্তিসহ, সে জন্য ইহাতে আমাদের মন এতই প্রসন্ন।’

১২. মহানাম, এ কথা বলিলে আমি নির্গ্রন্থদিগকে কহিলাম, ‘বন্ধুগণ, তোমরা কি ঠিক জান যে তোমরা পূর্বে জন্মাইয়াছিলে কিংবা জন্মাইয়াছিলে না?’ (উত্তর হইল) ‘বন্ধুপ্রবর, না, আমরা ঠিক তাহা জানি না।’ ‘তোমরা কি ঠিক জান যে তোমরা পূর্বে পাপকর্ম করিয়াছিলে কিংবা করো নাই?’ ‘না, আমরা ঠিক তাহা জানি না।’ ‘তবে কি তোমরা ঠিক জান যে তোমরা পূর্বে এইরূপ কোনো পাপকর্ম করিয়াছিলে কিংবা করো নাই?’ ‘না, আমরা ঠিক তাহা জানি না।’ ‘তবে কি তোমরা ঠিক জান যে এতটা দুঃখ নির্জীর্ণ হইয়াছে, এতটা দুঃখ নির্জীর্ণ করিতে হইবে, অথবা এতটা দুঃখ নির্জীর্ণ হইলে সর্বদুঃখ নির্জীর্ণ হইবে?’ ‘না, আমরা তাহাও ঠিক জানি না।’ ‘তবে কি তোমরা এ কথা জান যে দৃষ্টধর্মে (এই প্রত্যক্ষজীবনে) অকুশল ধর্ম প্রহীন এবং কুশল ধর্ম সম্পাদিত হয়?’ ‘না, আমরা তাহাও ঠিক জানি না।’ ‘তাহা হইলে, নির্গ্রন্থ বন্ধুগণ, তোমরা পূর্বে জন্মাইয়াছিলে কিংবা জন্মাইয়াছিলে না জান না, তোমরা পূর্বে পাপকর্ম করিয়াছিলে কিংবা করো নাই জান না, তোমরা পূর্বে এইরূপ কোনো পাপকর্ম করিয়াছিলে কিংবা করো নাই জান না, তোমরা এতটা দুঃখ নির্জীর্ণ হইয়াছে, এতটা দুঃখ নির্জীর্ণ করিতে হইবে কিংবা এতটা দুঃখ নির্জীর্ণ হইলে সর্বদুঃখ নির্জীর্ণ হইবে জান না, দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষজীবনেই) অকুশল ধর্ম প্রহীন এবং কুশল ধর্ম সম্পাদিত হয় তাহাও জান না। বন্ধুগণ, যদি তাহাই হয়, তবে কি জগতে যাহারা লুব্ধক, লোহিতপাণি, ক্রুরকর্মা ও মানুষের মধ্যে নীচ জাতি তাহারাই নির্গ্রন্থগণের মধ্যে প্রব্রজিত হয়?’ ‘বন্ধুপ্রবর গৌতম, (পার্থিব) সুখচর্যার দ্বারা (অপার্থিব, পরম) সুখ (নির্বাণ) মিলে না, (দৈহিক) দুঃখচর্যা দ্বারাই (পরম) সুখ লাভ হয়। যদি (পার্থিব) সুখে (অপার্থিব) সুখ মিলিত, তাহা হইলে যে মগধরাজ শ্রেণিক বিম্বিসার পরম সুখ লাভ করিতেন, তিনি আয়ুষ্মান গৌতমের চেয়েও অধিক সুখবিহারী হইতেন।’ ‘আয়ুষ্মান নির্গ্রন্থগণ যে সহসা না বুঝিয়া হটকারিতাবশত অবোধের কথা বলিয়া বসিলেন : বন্ধুবর, গৌতম, (পার্থিব) সুখে (অপার্থিব) সুখ মিলে না, (দৈহিক) দুঃখচর্যার দ্বারাই (পরম) সুখ লাভ হয়; (যদি পার্থিব) সুখে (পরম) সুখ মিলিত, তাহা হইলে যে মগধেশ্বর শ্রেণিক বিম্বিসার পরম সুখ লাভ করিতেন, তিনি আয়ুষ্মান গৌতমের চেয়েও অধিক সুখবিহারী হইতেন। আমাকেই প্রশ্ন করা উচিত ছিল : গৌতম, মগধরাজ শ্রেণিক বিম্বিসার ও আপনার মধ্যে কে অধিকতর সুখবিহারী?’ ‘সত্যই, গৌতম, আমরা সহসা না বুঝিয়া হটকারিতাবশত অবোধের কথা বলিয়া ফেলিয়াছি। সে-কথা থাক। এখন আমরা আপনাকেই জিজ্ঞাসা করিতেছি : মগধরাজ শ্রেণিক বিম্বিসার ও আপনার মধ্যে অধিকতর সুখবিহারী কে?’ ‘তাহা হইলে, বন্ধুগণ, আমি তোমাদিগকে প্রশ্ন করিতেছি, তোমরা যথাশক্তি আমাকে ইহার উত্তর প্রদান করো। তোমরা কি মনে করো যে মগধরাজ শ্রেণিক বিম্বিসার অবিচলিত দেহে নির্বাক হইয়া সপ্ত রাত্রিদিন একান্ত সুখ অনুভব করিয়া অবস্থান করিতে সমর্থ?’ ‘না, আমরা তাহা মনে করি না?’ ‘তবে কি তোমরা মনে করো যে তিনি ছয় রাত্রিদিন, পাঁচ রাত্রিদিন, চার রাত্রিদিন, তিন রাত্রিদিন, দুই রাত্রিদিন, মাত্র এক রাত্রিদিনও একান্ত সুখ অনুভব করিয়া অবস্থান করিতে সমর্থ?’ ‘না আমরা তাহা মনে করি না।’ ‘বন্ধুগণ, আমি কিন্তু অবিচলিতভাবে নির্বাক হইয়া এক রাত্রিদিন, দুই রাত্রিদিন, তিন রাত্রিদিন, চার রাত্রিদিন, পাঁচ রাত্রিদিন, ছয় রাত্রিদিন, এমনকি সাত রাত্রিদিন একান্ত সুখ অনুভব করিয়া অবস্থান করিতে সমর্থ। যদি তাহাই হয়, বন্ধুগণ, অধিকতর সুখবিহারী কে—মগধরাজ শ্রেণিক বিম্বিসার অথবা আমি?’ ‘যদি তাহাই হয়, তাহা হইলে আয়ুষ্মান গৌতমই মগধরাজ শ্রেণিক বিম্বিসার হইতে অধিকতর সুখবিহারী?’

ভগবান ইহা বিবৃত করিলেন। মহানাম শাক্য তাহা প্রসন্নমনে শ্রবণ করিয়া আনন্দ প্রকাশ করিলেন।

ক্ষুদ্রদুঃখস্কন্ধ-সূত্র সমাপ্ত।

The Middle Discourses

|_A. The First Fifty

|__II. The Chapter on the Lion’s Roar

MN14. ক্ষুদ্রদুঃখস্কন্ধ-সূত্র

Translations [30]

English

繁體字

日本語

Français

Deutsch

Italiano

Español

Português

Русский

Norsk

Magyar

Srpski

Čeština

Slovenščina

हिंदी

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference