আমি এইরূপ শুনিয়াছি।

১. একসময় ভগবান শ্রাবস্তী-সমীপে অবস্থান করিতেছিলেন, জেতবনে, অনাথপিণ্ডিকের আরামে। ভগবান সমবেত ভিক্ষুগণকে আহ্বান করিলেন, ‘হে ভিক্ষুগণ’। ভিক্ষুগণ ‘হাঁ ভদন্ত’ বলিয়া প্রত্যুত্তরে তাঁহাদের সম্মতি জানাইলেন। ভগবান কহিলেন :

২. হে ভিক্ষুগণ, সম্বোধি লাভের পূর্বে, অনভিসম্বুদ্ধ বোধিসত্ত্বের অবস্থায় আমার মনে এই চিন্তা উদিত হইয়াছিল-আমার পক্ষে বিতর্কসমূহকে দ্বিধা দ্বিধা, দুই দুই ভাগে বিভক্ত করিয়া তৎ তৎ সম্পর্কে অবস্থান করা কর্তব্য। যাহা কাম-বিতর্ক, যাহা ব্যাপাদ-বিতর্ক এবং যাহা বিহিংসা-বিতর্ক তৎসমস্ত লইয়া এক ভাগ করি। যাহা নিষ্কাম-বিতর্ক, যাহা অব্যাপাদ-বিতর্ক ও যাহা অবিহিংসা-বিতর্ক তৎসমস্ত লইয়া দ্বিতীয় ভাগ করি। এইরূপে অপ্রমত্ত, বীর্যবান এবং প্রহিতভাব অবলম্বনে যখন অবস্থান করি তখন কাম-বিতর্ক উৎপন্ন হইলে আমি প্রকৃষ্টরূপে জানিতে পারি, এই যে আমার কাম-বিতর্ক উৎপন্ন হইয়াছে, তাহা আত্মব্যাধি (আত্মদুঃখ), পরব্যাধি, আত্মপর উভয় ব্যাধি ঘটাইবার দিকে সংবর্তন করে, তাহা প্রজ্ঞানিরোধকারী, বিঘাতপক্ষ (দুঃখদায়ক) এবং নির্বাণ-প্রতিপক্ষ। ইহা আত্মব্যাধি ঘটাইবার দিকে সংবর্তন করে, পরব্যাধি ঘটাইবার দিকে সংবর্তন করে, আত্মপর উভয় ব্যাধি ঘটাইবার দিকে সংবর্তন করে, ইহা প্রজ্ঞানিরোধকারী, বিঘাত-পক্ষ ও নির্বাণ-প্রতিপক্ষ। এইভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করিলে আমার কাম-বিতর্ক সম্পূর্ণরূপে অস্তমিত হয়। হে ভিক্ষুগণ, যখনই আমার কাম-বিতর্ক উৎপন্ন হইয়াছে, তখনোই আমি তাহা পরিত্যাগ করিয়াছি, অপনোদন করিয়াছি, ব্যন্ত (শেষ) করিয়াছি। ব্যাপাদ-বিতর্ক এবং বিহিংসা-বিতর্ক সম্বন্ধেও এইরূপ। হে ভিক্ষুগণ, যে যে বিষয়ে ভিক্ষু বহুল পরিমাণে স্বমনে তর্কবিতর্ক ও বিচার করে, সে সে বিষয়ে তাহার চিত্তের নতি হয়; যে কামবিতর্ক বিষয়ে স্বমনে অনুক্ষণ তর্কবিতর্ক ও বিচার করে, তাহাতে সে নিষ্কাম-বিতর্ক ছাড়িয়া কাম-বিতর্কই বহুল পরিমাণে পোষণ করে; কাম-বিতর্কের প্রতিই তাহার চিত্ত নমিত হয়।

যে ব্যাপাদ-বিতর্ক বিষয়ে স্বমনে বহুল পরিমাণে অনুক্ষণ তর্কবিতর্ক ও বিচার করে, তাহাতে সে অব্যাপাদ-বিতর্ক ছাড়িয়া ব্যাপাদ-বিতর্কই বহুল পরিমাণে পোষণ করে, ব্যাপাদ-বিতর্কের প্রতিই তাহার চিত্ত নমিত হয়। যে বিহিংসা-বিতর্ক বিষয়ে স্বমনে বহুল পরিমাণে অনুক্ষণ তর্কবিতর্ক ও বিচার করে, তাহাতে সে অবিহিংসা-বিতর্ক ছাড়িয়া বিহিংসা-বিতর্কই বহুল পরিমাণে পোষণ করে, বিহিংসা-বিতর্কের প্রতিই তাহার চিত্ত নমিত হয়।

হে ভিক্ষুগণ, বর্ষার শেষ মাসে, শারদ সময়ে [শরৎকালে] শস্যহানির ভয়ে গোপাল গো-সমূহকে আবদ্ধ করিয়া রাখে, সেই গো-সমূহকে সময়ে সময়ে দণ্ড দ্বারা পৃষ্ঠে আঘাত করে, পার্শ্বে আঘাত করে, ‘ঘেরাও’ করে, এবং ইহাদের অবাধগতি নিবারণ করে। ইহার কারণ কী? যেহেতু গোপাল দেখিতে পায় যে, গো-সমূহ অরক্ষিত থাকিলে তৎকারণ সে বধ, বন্ধন, প্রাণহানি অথবা নিন্দা-দুঃখ পাইবে। তেমনভাবেই, হে ভিক্ষুগণ, আমি অকুশল ধর্মে আদীনব, অবকার (আবর্জনা) ও সংক্লেশ, এবং নিষ্কাম (নৈষ্ক্রম্য) কুশল ধর্মে ‘অনৃশংসা’ (আনুকূল্য) এবং ব্যবদান-পক্ষতা (বিশুদ্ধিভাব) দেখিতে পাই। এইরূপে অপ্রমত্ত ও বীর্যবান হইয়া প্রহিতভাবে অবস্থান করিবার সময় আমার নিষ্কাম-বিতর্ক উৎপন্ন হয়। তখন আমি প্রকৃষ্টরূপে জানিতে পারি, আমার মধ্যে এই যে নিষ্কাম-বিতর্ক উৎপন্ন হইয়াছে, তাহা আত্মব্যাধি, পরব্যাধি, আত্মপর উভয় ব্যাধির দিকে সংবর্তন করে না; ইহা প্রজ্ঞাবর্ধনকারী, অবিঘাত-পক্ষ ও নির্বাণগামী।

হে ভিক্ষুগণ, যদি রাত্রে, দিনে এবং এমনকি দিবারাত্র সে-বিষয়ে ভিক্ষু স্বমনে অনুক্ষণ তর্কবিতর্ক ও বিচার করেন, তাহাতে তৎকারণ কোনো ভয় দেখিতে পাই না। দীর্ঘকাল অতিরিক্ত মাত্রায় তাহা লইয়া স্বমনে অনুবিতর্ক ও অনুবিচার করিতে গেলে দেহ ক্লান্ত হয়, দেহ ক্লান্ত হইলে চিত্ত উৎক্ষিপ্ত হয়, চিত্ত উৎক্ষিপ্ত হইলে তাহা সমাধি হইতে দূরে অবস্থান করে। সে কারণে, হে ভিক্ষুগণ, আমি স্বচিত্তকে অধ্যাত্মমুখে প্রতিষ্ঠিত করি, সন্নিবিষ্ট করি, একাগ্র করি, সুবিন্যস্ত করি। ইহার উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য-যাহাতে চিত্ত উৎক্ষিপ্ত না হয়। অব্যাপাদ-বিতর্ক এবং অবিহিংসা-বিতর্ক সম্বন্ধেও এইরূপ।

হে ভিক্ষুগণ, যে যে বিষয়ে ভিক্ষু স্বমনে বহুল পরিমাণে অনুবিতর্ক ও অনুবিচার করেন, সে সে বিষয়ের প্রতি তাঁহার চিত্তের নতি হয়। যদি তিনি নিষ্কাম-বিতর্ক স্বমনে বহুল পরিমাণে অনুবিতর্ক ও অনুবিচার করেন তাহাতে তিনি কামবিতর্ক ছাড়িয়া নিষ্কাম-বিতর্ক বহুল পরিমাণে পোষণ করেন, নিষ্কাম-বিতর্কের প্রতিই তাঁহার চিত্ত নমিত হয়। যদি তিনি অব্যাপাদ-বিতর্ক বিষয়ে স্বমনে বহুল পরিমাণে অনুবিতর্ক ও অনুবিচার করেন, তাহাতে তিনি ব্যাপাদ-বিতর্ক ছাড়িয়া অব্যাপাদ-বিতর্ক বহুল পরিমাণে পোষণ করেন; অব্যাপাদ-বিতর্কের প্রতি তাঁহার চিত্ত নমিত হয়। যদি তিনি অবিহিংসা-বিতর্ক বিষয়ে স্বমনে বহুল পরিমাণে অনুবিতর্ক ও অনুবিচার করেন, তাহাতে তিনি বিহিংসা-বিতর্ক ছাড়িয়া অবিহিংসা-বিতর্ক পোষণ করেন, অবিহিংসা-বিতর্কের প্রতিই তাঁহার চিত্ত নমিত হয়। যেমন গ্রীষ্মের শেষ মাসে গোপাল গো-সমূহ রক্ষণাবেক্ষণ করে, তাহারা কি বৃক্ষমূলগত হইল, কি উন্মুক্ত-আকাশতলগত হইল, এ বিষয়ে স্মৃতিশীল হয়, তেমনভাবেই, হে ভিক্ষুগণ, এ-সকল ধর্ম কী অবস্থায় আছে, তদ্‌বিষয়ে আমাকে স্মৃতিশীল (মনোযোগী) হইতে হইয়াছিল।

৩. হে ভিক্ষুগণ, আমার বীর্য (কর্মতৎপরতা) আরব্ধ হইয়াছে, তাহা শিথিল হইবার নহে, স্মৃতি উপস্থাপিত হইয়াছে, তাহা সংমূঢ় হইবার নহে; দেহমন প্রশান্ত হইয়াছে, তাহা নিপীড়িত হইবার নহে; সমাহিত চিত্ত একাগ্র হইয়াছে (তাহা বিক্ষিপ্ত হইবার নহে)। হে ভিক্ষুগণ, সেই অবস্থায় আমি কাম-সম্পর্ক হইতে বিবিক্ত হইয়া, সর্ব অকুশল ধর্ম পরিহার করিয়া, সবিতর্ক, সবিচার এবং বিবেকজ প্রীতিসুখমণ্ডিত প্রথম ধ্যান লাভ করিয়া তাহাতে বিচরণ করি। বিতর্ক-বিচার উপশমে অধ্যাত্মসম্প্রসাদী, চিত্তের একীভাব আনয়নকারী, বিতর্কাতীত, বিচারাতীত, সমাধিজ প্রীতিসুখমণ্ডিত দ্বিতীয় ধ্যান লাভ করিয়া তাহাতে বিচরণ করি। প্রীতিতেও বিরাগী হইয়া উপেক্ষার ভাবে অবস্থান করি, স্মৃতিমান ও সম্প্রজ্ঞাত হইয়া স্বচিত্তে (প্রীতিনিরপেক্ষ) সুখ অনুভব করি, আর্যগণ যে ধ্যানস্তরে আরোহণ করিলে ‘ধ্যায়ী উপেক্ষাসম্পন্ন ও স্মৃতিমান হইয়া (প্রীতিনিরপেক্ষ) সুখে বিচরণ করেন’ বলিয়া বর্ণনা করেন, সেই তৃতীয় ধ্যানস্তরে উন্নীত হইয়া তাহাতে বিচরণ করি। সর্বদৈহিক সুখ-দুঃখ পরিত্যাগ করিয়া, পূর্বেই সৌমনস্য-দৌর্মনস্য (মনের হর্ষ-বিষাদ) অস্তমিত করিয়া, না-দুঃখ-না-সুখ, উপেক্ষা ও স্মৃতি দ্বারা পরিশুদ্ধ চিত্তে চতুর্থ ধ্যান লাভ করিয়া তাহাতে বিচরণ করি।

এইরূপে সমাহিত চিত্তের সেই পরিশুদ্ধ, পর্যবদাত, (পরিষ্কৃত), অনঞ্জন (নিরঞ্জন), উপক্লেশ-বিগত, মৃদুভূত, কমনীয়, স্থিত (স্থির) ও অনেজ (নিষ্কম্প) অবস্থায় জাতিস্মর-জ্ঞানাভিমুখে চিত্ত নমিত করি। সেই অবস্থায় আমি নানাপ্রকারে বহু পূর্বজন্ম অনুস্মরণ করি : এক জন্ম, দুই জন্ম, তিন জন্ম, চারি জন্ম পাঁচ জন্ম, দশ জন্ম, বিশ জন্ম, ত্রিশ জন্ম, চল্লিশ জন্ম, পঞ্চাশ জন্ম, শত জন্ম, সহস্র জন্ম, এমনকি শতসহস্র জন্ম, বহু সংবর্তকল্পে, বহু বিবর্তকল্পে, এমনকি বহু সংবর্ত-বিবর্তকল্পে ওই স্থানে আমি ছিলাম, এই ছিল আমার নাম, এই আমার গোত্র, এই আমার জাতিবর্ণ, এই আমার আহার, এইরূপ আমার সুখ-দুঃখ অনুভব, এই আমার পরমায়ু, তথা হইতে চ্যুত হইয়া এস্থানে (এই যোনিতে) আমি উৎপন্ন হই, তথায় ছিল আমার এই নাম, এই গোত্র, এই জাতিবর্ণ, এই আহার, এইরূপ সুখ-দুঃখ অনুভব, এই পরমায়ু, তথা হইতে চ্যুত হইয়া আমি অত্র (এই যোনিতে) উৎপন্ন হইয়াছি। ইতি আকার ও উদ্দেশ, স্বরূপ ও গতিসহ নানাপ্রকারে বহু পূর্বজন্ম অনুস্মরণ করি। হে ভিক্ষুগণ, অপ্রমত্ত, আতাপী (বীর্যবান) ও সাধনাতৎপর হইলে যেমন যেমন হয়, রাত্রির প্রথম যামে তেমনভাবেই আমার এই প্রথম বিদ্যা (জাতিস্মর-জ্ঞান) অধিগত (আয়ত্ত) হয়, অবিদ্যা বিহত (বিনষ্ট), বিদ্যা উৎপন্ন হয়, তম (অন্ধকার) বিহত, আলোক উৎপন্ন হয়।

এইরূপে সমাহিত চিত্তের সেই পরিশুদ্ধ, পর্যবদাত, অনঞ্জন, উপক্লেশ-বিগত, মৃদুভূত, কমনীয়, স্থিত ও অনেজ অবস্থায় সত্ত্বগণের (অপরাপর জীবের) চ্যুতি-উৎপত্তি (গতিপরম্পরা) জ্ঞানাভিমুখে চিত্ত নমিত করি। সেই অবস্থায় দিব্যচক্ষে, বিশুদ্ধ লোকাতীত অতীন্দ্রিয় দৃষ্টিতে দেখিতে পান : জীবগণ এক যোনি হইতে চ্যুত হইয়া অপর যোনিতে উৎপন্ন হইতেছে, প্রকৃষ্টরূপে জানিতে পারি-হীনোৎকৃষ্ট-জাতীয়, উত্তম-অধমবর্ণের জীবগণ স্ব স্ব কর্মানুসারে সুগতি-দুর্গতি প্রাপ্ত হইতেছে : এ-সকল মহানুভব জীব কায়দুশ্চরিত্র-সমন্বিত, বাগ্‌দুশ্চরিত্র-সমন্বিত, মনোদুশ্চরিত্র-সমন্বিত, আর্যগণের নিন্দুক, মিথ্যাদৃষ্টিসম্পন্ন, এবং মিথ্যাদৃষ্টি-প্রণোদিত কর্মপরিগ্রাহী হইবার ফলে দেহাবসানে মৃত্যুর পর অপায়-দুর্গতি, বিনিপাত নিরয়ে (নরকে) উৎপন্ন হইতেছে; অথবা এ-সকল মহানুভব জীব কায়সুচরিত্র-সমন্বিত, বাক্‌সুচরিত্র-সমন্বিত, মনঃসুচরিত্র-সমন্বিত, আর্যগণের অনিন্দুক, সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন, এবং সম্যক দৃষ্টি-প্রণোদিত কর্মপরিগ্রাহী হইবার ফলে, দেহাবসানে মৃত্যুর পর সুগতি স্বর্গলোকে উৎপন্ন হইয়াছে। ইত্যাদিভাবে দিব্যনেত্রে, বিশুদ্ধ লোকাতীত দৃষ্টিতে দেখিতে পাই : সত্ত্বগণ (অপরাপর জীবগণ) এক যোনি হইতে চ্যুত হইয়া অপর যোনিতে উৎপন্ন হইতেছে, প্রকৃষ্টরূপে জানিতে পারি-হীনোৎকৃষ্ট-জাতীয়, উত্তম-অধমবর্ণের জীবগণ আপন আপন কর্মানুসারে সুগতি-দুর্গতি প্রাপ্ত হইতেছে। হে ভিক্ষুগণ, অপ্রমত্ত, আতাপী ও সাধনাতৎপর হইলে যেমন যেমন হয়, ঠিক তেমনভাবেই রাত্রির মধ্যম যামে আমার দ্বিতীয় বিদ্যা (জীবের গতিপরম্পরা জ্ঞান) অধিগত হয়; অবিদ্যা বিহত, বিদ্যা উৎপন্ন হয়, তম বিহত, আলোক উৎপন্ন হয়।

এইরূপে সমাহিত চিত্তের সেই পরিশুদ্ধ, পর্যবদাত, অনঞ্জন, উপক্লেশ-বিগত, মৃদুভূত, কমনীয়, স্থিত ও অনেজ অবস্থায় আসবক্ষয়-জ্ঞানাভিমুখে আমার চিত্ত নমিত করি। তদবস্থায় উন্নত জ্ঞানে যথার্থ জানিতে পারি-ইহা ‘দুঃখ’ আর্যসত্য, ইহা ‘দুঃখসমুদয়’ (দুঃখের উৎপত্তি) আর্যসত্য, ইহা ‘দুঃখনিরোধ’ আর্যসত্য, ইহা ‘দুঃখনিরোধগামী প্রতিপদ’ আর্যসত্য, এ-সকল আসব, ইহা আসব-সমুদয়, ইহা আসব-নিরোধ, ইহা আসব-নিরোধগামী প্রতিপদ। তদবস্থায় এইভাবে আর্যসত্য জানিবার এবং দেখিবার ফলে কামাসব হইতে আমার চিত্ত বিমুক্ত হইল, অবিদ্যাসব হইতেও আমার চিত্ত বিমুক্ত হইল, বিমুক্ত চিত্তে ‘বিমুক্ত হইয়াছি’ এই জ্ঞান উদিত হইল, উন্নত জ্ঞানে জানিতে পারিলাম, চিরতরে জন্মক্ষয় হইয়াছে, ব্রহ্মচর্যব্রত উদ্‌যাপিত হইয়াছে, যাহা কিছু করিবার ছিল করা হইয়াছে, অতঃপর অত্র আর আসিতে হইবে না।

হে ভিক্ষুগণ, অপ্রমত্ত, আতাপী ও সাধনাতৎপর হইলে যেমন যেমন হয়, তেমনভাবেই রাত্রির অন্তিম যামে আমার তৃতীয় বিদ্যা অধিগত হয়; অবিদ্যা বিহত, বিদ্যা উৎপন্ন, তম বিহত, আলোক উৎপন্ন হয়।

৪. হে ভিক্ষুগণ, মনে করো কোনো এক অরণ্যোপবনে (বনখণ্ডে) এক বৃহৎ জলাশয় আছে, উহারই নিকটে এক বৃহৎ মৃগসংঘ (মৃগযূথ) বাস করে। তথায় মৃগদিগের অনর্থকামী, অহিতকামী, অযোগক্ষেমকামী (অনিরাপদকামী) এক ব্যক্তি (লুব্ধক) আবির্ভূত হইল। মনে করো, সে মৃগদিগের পক্ষে যে পথ নিরাপদ, স্বস্তিকর ও প্রীতিগমন তাহা রুদ্ধ করিয়া যাহা কুমার্গ তাহা উন্মুক্ত করিয়া তথায় এক ওকচর মৃগ স্থাপন করিয়া উহার সম্মুখে দীর্ঘরজ্জুবদ্ধ এক ওকচারিকা মৃগী স্থাপন করিল, এবং তাহাতে পরে সেই বৃহৎ মৃগসংঘ অনয়-ব্যসন ও সংখ্যাল্পতা প্রাপ্ত হইল। মনে করো, সেই বৃহৎ মৃগসংঘের পক্ষে অর্থকামী, হিতকামী ও যোগক্ষেমকামী (নিরাপদকামী) কোনো ব্যক্তি আসিয়া আবির্ভূত হইলেন। মনে করো, তিনি মৃগদিগের পক্ষে যে পথ নিরাপদ, স্বস্তিকর ও প্রীতিগমন, তাহা উন্মুক্ত করিয়া ও কুমার্গ রুদ্ধ করিয়া ওকচর মৃগ ও ওকচারিকা মৃগীকে বিনষ্ট করিলেন, তাহাতে সেই বৃহৎ মৃগসংঘ পরে বৃদ্ধি, সমৃদ্ধি ও বিপুলতা প্রাপ্ত হইল। হে ভিক্ষুগণ, লক্ষিত অর্থ বিজ্ঞাপনের জন্য এই উপমা প্রদান করা হইল। উপমার অর্থ এই : এ স্থলে বৃহৎ জলাশয় কামের অধিবচন বা নামান্তর; মহামৃগসংঘ জীবগণের নামান্তর; অনর্থকামী, অহিতকামী ও অযোগক্ষেমকামী লুব্ধক পাপাত্মা মারের নামান্তর এবং কুমার্গ অষ্টাঙ্গযুক্ত মিথ্যা মার্গেরই নামান্তর। অষ্টাঙ্গ এই : মিথ্যাদৃষ্টি, মিথ্যা সংকল্প, মিথ্যা বাক্য, মিথ্যা কর্মান্ত, মিথ্যা আজীব, মিথ্যা ব্যায়াম, মিথ্যা স্মৃতি ও মিথ্যা সমাধি। এ স্থলে ওকচর মৃগ নন্দিরাগেরই নামান্তর এবং ওকচারিকা মৃগী অবিদ্যারই নামান্তর; অর্থকামী, হিতকামী ও যোগক্ষেমকামী পুরুষ তথাগত সম্যকসম্বুদ্ধের নামান্তর; নিরাপদ, স্বস্তিকর ও প্রীতিগমনীয় মার্গ আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গেরই নামান্তর। অষ্টাঙ্গ এই : সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্মান্ত, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি ও সম্যক সমাধি।

৫. হে ভিক্ষুগণ, এইভাবে যে মার্গ নিরাপদ, স্বস্তিকর ও প্রীতিগমন, তাহা আমা কর্তৃক উন্মুক্ত হইল, কুমার্গ রুদ্ধ হইল, ওকচর মৃগ ও ওকচারিকা মৃগী বিনষ্ট হইল। হে ভিক্ষুগণ, শ্রাবকগণের হিতৈষী ও অনুকম্পাকারী শাস্তার পক্ষে অনুকম্পাপূর্বক যাহা করণীয়, তাহা আমি তোমাদের প্রতি সম্পাদন করিয়াছি। হে ভিক্ষুগণ, এই যত বৃক্ষমূল, এই যত শূন্যাগার, তথায় তোমরা ধ্যান-নিরত হও, প্রমাদের বশবর্তী হইয়া পরে অনুশোচনা করিও না। তোমাদের প্রতি আমার এই অনুশাসন।

ভগবান ইহা বিবৃত করিলেন। ভিক্ষুগণ প্রসন্নমনে তাহা শ্রবণ করিয়া আনন্দ প্রকাশ করিলেন।

দ্বিধাবিতর্ক-সূত্র সমাপ্ত।

The Middle Discourses

|_A. The First Fifty

|__II. The Chapter on the Lion’s Roar

MN19. দ্বিধাবিতর্ক-সূত্র

Translations [37]

English

繁體字

日本語

한국어

Français

Deutsch

Italiano

Español

Português

Русский

Nederlands

Norsk

Magyar

Srpski

Čeština

Română

Slovenščina

Suomi

Türkçe

Lietuvių Kalba

हिंदी

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference