আমি এইরূপ শুনিয়াছি।

১. একসময় ভগবান শ্রাবস্তী-সমীপে অবস্থান করিতেছিলেন, জেতবনে, অনাথপিণ্ডিকের আরামে। সেই সময় আয়ুষ্মান কুমারকাশ্যপ অন্ধবনে অবস্থান করিতেছিলেন। অনন্তর জনৈক অত্যুজ্জ্বল-কান্তি দেবতা নিশীথে সমগ্র অন্ধবন উদ্ভাসিত করিয়া আয়ুষ্মান কুমারকাশ্যপের নিকট উপস্থিত হইলেন; উপস্থিত হইয়া সসম্ভ্রমে একান্তে দাঁড়াইলেন। একান্তে দাঁড়াইয়া ওই দেবতা আয়ুষ্মান কুমারকাশ্যপকে কহিলেন, “ভিক্ষু, এই বল্মীক রাত্রে ধূমায়িত এবং দিনে প্রজ্বলিত হয়। ব্রাহ্মণ কহিলেন, সুমেধ, শস্ত্র (খনন-যন্ত্র) লইয়া ইহা খনন করো। সুমেধ তাহা খনন করিয়া দেখিতে পাইল ‘লঙ্গি’ (পলিঘ); ‘লঙ্গি’ দেখিয়া কহিল, ভদন্ত, এই যে একটি ‘লঙ্গি’! ব্রাহ্মণ কহিলেন, সুমেধ ‘লঙ্গি’ উপরে নিক্ষেপ করিয়া শস্ত্র লইয়া আরও খনন করো। আরও খনন করিয়া সুমেধ দেখিতে পাইল মণ্ডূক; মণ্ডূক দেখিয়া কহিল, ভদন্ত, এই যে একটি মণ্ডূক! ব্রাহ্মণ কহিলেন, সুমেধ মণ্ডূক উপরে নিক্ষেপ করিয়া শস্ত্র লইয়া আরও খনন করো। আরও খনন করিয়া সুমেধ দেখিতে পাইল দ্বিধাপথ; দ্বিধাপথ দেখিয়া কহিল, ভদন্ত, এই যে একটি দ্বিধাপথ! ব্রাহ্মণ কহিলেন, সুমেধ, দ্বিধাপথ উপরে নিক্ষেপ করিয়া শস্ত্র লইয়া আরও খনন করো। আরও খনন করিয়া সুমেধ দেখিতে পাইল ‘পঙ্কবার’ (ক্ষার-পরিস্রাবক); ‘পঙ্কবার’ দেখিয়া কহিল, ভদন্ত, এই যে একটি ‘পঙ্কবার’! ব্রাহ্মণ কহিলেন, সুমেধ, তাহা উপরে নিক্ষেপ করিয়া শস্ত্র লইয়া আরও খনন করো। আরও খনন করিয়া সুমেধ দেখিতে পাইল ‘কূর্ম; কূর্ম দেখিয়া কহিল, ভদন্ত, এই যে একটি কূর্ম! ব্রাহ্মণ কহিলেন, সুমেধ, তাহা উপরে নিক্ষেপ করিয়া শস্ত্র লইয়া আরও খনন করো। আরও খনন করিয়া সুমেধ দেখিতে পাইল অসিধারা; অসিধারা দেখিয়া কহিল, ভদন্ত, এই যে এক অসিধারা! ব্রাহ্মণ কহিলেন, সুমেধ, তাহা উপরে নিক্ষেপ করিয়া শস্ত্র লইয়া আরও খনন করো। আরও খনন করিয়া সুমেধ দেখিতে পাইল মাংসপেশি; মাংসপেশি দেখিয়া কহিল, ভদন্ত, এই যে এক মাংসপেশি! ব্রাহ্মণ কহিলেন, সুমেধ, তাহা উপরে নিক্ষেপ করিয়া শস্ত্র লইয়া আরও খনন করো। আরও খনন করিয়া সুমেধ দেখিতে পাইল নাগ (গজবর); নাগ দেখিয়া কহিল, ভদন্ত, এই যে একটি নাগ! ব্রাহ্মণ কহিলেন, সুমেধ, নাগকে যথাস্থানে থাকিতে দাও, নাড়িও না, নাগকে (যথাবিধি) নমস্কার করো। ভিক্ষু, তুমি ভগবানের নিকট যাইয়া তাঁহাকে এই পঞ্চদশ বিষয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করো। ভগবান যেভাবে প্রশ্নের রহস্য বিবৃত করেন তুমি তাহা সেভাবেই অবধারণ করো। ভিক্ষু, কী দেবলোকে, কী মারলোকে, কী ব্রহ্মলোকে, কী শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণের মধ্যে, কী দেবমনুষ্য-সমাজে তথাগত, তথাগতশ্রাবক, অথবা যিনি ইহাদের কাহারও হইতে উত্তর শুনিয়াছেন তিনি ব্যতীত অপর কাহাকেও দেখি না যিনি এই সকল প্রশ্নের রহস্য বিবৃত করিয়া সন্তোষ বিধান করিতে পারেন।” সেই দেবতা ইহা বিবৃত করিলেন, ইহা বিবৃত করিয়া তিনি তথা হইতে অন্তর্হিত হইলেন।

২. অনন্তর আয়ুষ্মান কুমারকাশ্যপ রাত্রি অবসানে ভগবানের নিকট উপস্থিত হইলেন, উপস্থিত হইয়া ভগবানকে অভিবাদন করিয়া সসম্ভ্রমে একান্তে উপবেশন করিলেন। একান্তে উপবিষ্ট হইয়া ভগবানের নিকট দেবতার সকল কথা যথাযথভাবে নিবেদন করিয়া কহিলেন, ‘প্রভো, এ স্থলে বল্মীক কী, রাত্রে ধূম-উদ্‌গিরণ কী, দিনে প্রজ্বলন কী, ব্রাহ্মণ কে, সুমেধ কে, শস্ত্র কী, খনন কী, লঙ্গি কী, মণ্ডূক কী, দ্বিধাপথ কী, পঙ্কবার কী, কূর্ম কী, অসিধারা কী, মাংসপেশি কী, নাগই বা কী?’

৩. ভগবান কহিলেন, ভিক্ষু, এ স্থলে বল্মীক চারি মহাভূত-নির্মিত, মাতৃপিতৃসম্ভূত, অন্নব্যঞ্জনপুষ্ট, অনিত্য, উৎসাদন-পরিমর্দন-ভেদন-বিধ্বংসনধর্মী এই দেহেরই অধিবচন বা নামান্তর। দিনের কার্য সম্বন্ধে রাত্রে লোকে বিতর্ক-বিচার করে, ইহাই রাত্রে ধূম-উদ্‌গিরণ। রাত্রে বিতর্ক-বিচার করিয়া লোকে দিনে কায়বাক্যে কার্যে প্রযুক্ত হয়, ইহাই দিনে প্রজ্বলন। এ স্থলে তথাগত সম্যকসম্বুদ্ধই ব্রাহ্মণ। সুমেধ ভিক্ষুরই নাম। শস্ত্র আর্যজনোচিত প্রজ্ঞার অধিবচন। বীর্যারম্ভই খনন। অবিদ্যাই লঙ্গি। সুমেধ, শস্ত্র দ্বারা খনন করিয়া ‘লঙ্গি’ উত্তোলন করো, অবিদ্যা পরিত্যাগ করো; ইহাই দেবতার উক্তির অর্থ। ভিক্ষু, এ স্থলে মণ্ডূক ক্রোধ এবং নিরাশারই নামান্তর। সুমেধ, শস্ত্র দ্বারা খনন করিয়া মণ্ডূক উত্তোলন করো, ক্রোধ ও নিরাশা পরিত্যাগ করো; ইহাই দেবতার উক্তির অর্থ। এ স্থলে দ্বিধাপথ বিচিকিৎসারই নামান্তর। সুমেধ, শস্ত্র দ্বারা খনন করিয়া দ্বিধাপথ উত্তোলন করো, বিচিকিৎসা পরিত্যাগ করো; ইহাই দেবতার উক্তির অর্থ। পঙ্কবার কামচ্ছন্দ, ব্যপাদ, স্ত্যানমিদ্ধ, ঔদ্ধত্য-কৌকৃত্য এবং বিচিকিৎসা; এই পঞ্চনীবরণেরই নামান্তর। সুমেধ, শস্ত্রধারা খনন করিয়া পঙ্কবার উত্তোলন করো, পঞ্চনীবরণ পরিত্যাগ করো; ইহাই দেবতার উক্তির অর্থ। এ স্থলে কূর্ম পঞ্চ-উপাদানস্কন্ধেরই নামান্তর। রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার এবং বিজ্ঞান লইয়াই পঞ্চ-উপাদানস্কন্ধ। সুমেধ, শস্ত্র দ্বারা খনন করিয়া কূর্ম উত্তোলন করো, পঞ্চোপাদান-স্কন্ধ পরিত্যাগ করো; ইহাই দেবতার উক্তির অর্থ। অসিধারা পঞ্চকামগুণেরই নামান্তর। পঞ্চকামগুণ; যথা : ইষ্ট, কান্ত, মনোজ্ঞ, প্রিয়, কামোপসংহিত ও মনোরঞ্জক চক্ষু-বিজ্ঞেয় রূপ, শ্রোত্র-বিজ্ঞেয় শব্দ, ঘ্রাণ-বিজ্ঞেয় গন্ধ, জিহ্বা-বিজ্ঞেয় রস, কায়-বিজ্ঞেয় স্পর্শ। সুমেধ, শস্ত্র দ্বারা খনন করিয়া অসিধারা উত্তোলন করো, পঞ্চকামগুণ পরিত্যাগ করো; ইহাই দেবতার উক্তির অর্থ। এখানে মাংসপেশি নন্দিরাগেরই নামান্তর। সুমেধ, মাংসপেশি উত্তোলন করো, নন্দিরাগ পরিত্যাগ করো; ইহাই দেবতার উক্তির অর্থ। ভিক্ষু, এ স্থলে নাগ ক্ষীণাসব ভিক্ষুরই নামান্তর, এহেন নাগকে থাকিতে দাও, নাড়িও না, ক্ষীণাসব ভিক্ষুকে নমস্কার করো; ইহাই দেবতার উক্তির অর্থ।

ভগবান ইহা বিবৃত করিলেন। আয়ুষ্মান কুমারকাশ্যপ তাহা প্রসন্নমনে শ্রবণ করিয়া আনন্দ প্রকাশ করিলেন।

বল্মীক-সূত্র সমাপ্ত।

The Middle Discourses

|_A. The First Fifty

|__III. The Chapter of Similes

MN23. বল্মীক-সূত্র

Translations [27]

English

繁體字

日本語

Français

Deutsch

Italiano

Español

Português

Русский

Norsk

Svenska

Srpski

Čeština

Slovenščina

हिंदी

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference