আমি এইরূপ শুনিয়াছি।

১. একসময় ভগবান রাজগৃহ-সমীপে অবস্থান করিতেছিলেন, বেণুবনে, কলন্দক-নিবাপে। অনন্তর জাতিভূমিক বহুসংখ্যক ভিক্ষু বুদ্ধের জন্মভূমিতে বর্ষাবাস সমাপ্ত করিয়া ভগবানের নিকট উপস্থিত হইলেন, উপস্থিত হইয়া ভগবানকে অভিবাদন করিয়া সসম্ভ্রমে একান্তে উপবেশন করিলেন। একান্তে উপবিষ্ট ভিক্ষুদিগকে ভগবান কহিলেন, হে ভিক্ষুগণ, আমার জন্মভূমিতে আমার জন্মভূমি-নিবাসী সতীর্থ ভিক্ষুদিগের মধ্যে কে এইরূপে প্রশংসিত-সে নিজেও অল্পেচ্ছু এবং ভিক্ষুদিগের মধ্যে অল্পেচ্ছা-কথার কর্তাও বটে; নিজেও সন্তুষ্ট এবং ভিক্ষুদিগের মধ্যে সন্তুষ্টি-কথার কর্তাও বটে; নিজেও প্রবিবিক্ত (বিবেক-বৈরাগ্যসম্পন্ন) এবং ভিক্ষুদিগের মধ্যে প্রবিবেক-কথার কর্তাও বটে; নিজেও অসংশ্লিষ্ট এবং ভিক্ষুদিগের মধ্যে অসংসর্গ-কথার কর্তাও বটে; নিজেও আরব্ধবীর্য (কর্মতৎপর) এবং ভিক্ষুদিগের মধ্যে বীর্যারম্ভ-কথার কর্তাও বটে; নিজেও শীলসম্পন্ন এবং ভিক্ষুদিগের মধ্যে শীলসম্পদ-কথার কর্তাও বটে; নিজেও সমাধিসম্পন্ন এবং ভিক্ষুদিগের মধ্যে সমাধিসম্পদ-কথার কর্তাও বটে; নিজেও প্রজ্ঞাসম্পন্ন এবং ভিক্ষুদিগের মধ্যে প্রজ্ঞাসম্পদ-কথার কর্তাও বটে; নিজেও বিমুক্তিসম্পন্ন এবং ভিক্ষুদিগের মধ্যে বিমুক্তি-সম্পদ-কথার কর্তাও বটে; নিজেও বিমুক্তি-জ্ঞান-দর্শনসম্পন্ন এবং বিমুক্তি-জ্ঞান-দর্শনসম্পদ-কথার কর্তা, সতীর্থগণের মধ্যে উপদেষ্টা, বিজ্ঞাপক, সন্দর্শক, সমুদ্দীপক, সমুত্তেজক এবং সম্প্রহর্ষকও বটে! ‘প্রভো, আয়ুষ্মান পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্রই ভগবানের জন্মভূমিতে ওই জন্মভূমি-নিবাসী ভিক্ষুদিগের মধ্যে এইভাবে প্রশংসিত : তিনি নিজে অল্পেচ্ছু এবং অল্পেচ্ছা-কথার কর্তা; নিজে সন্তুষ্ট এবং সন্তুষ্টি-কথার কর্তা; নিজে প্রবিবিক্ত এবং প্রবিবেক-কথার কর্তা; নিজে অসংশ্লিষ্ট এবং অসংসর্গ-কথার কর্তা; নিজে আরব্ধবীর্য এবং বীর্যারম্ভ-কথার কর্তা; নিজে শীলসম্পন্ন এবং শীলসম্পদ-কথার কর্তা; নিজে প্রজ্ঞাসম্পন্ন এবং প্রজ্ঞাসম্পদ-কথার কর্তা; নিজে বিমুক্তিসম্পন্ন এবং বিমুক্তিসম্পদ-কথার কর্তা; নিজে বিমুক্তি-জ্ঞান-দর্শনসম্পন্ন এবং বিমুক্তি-জ্ঞান-দর্শনসম্পদ-কথার কর্তা; সতীর্থগণের মধ্যে উপদেষ্টা, বিজ্ঞাপক, সন্দর্শক, সমুদ্দীপক, সমুত্তেজক ও সম্প্রহর্ষক।’

২. সেই সময় আয়ুষ্মান সারিপুত্র ভগবানের অনতিদূরে উপবিষ্ট ছিলেন। তখন আয়ুষ্মান সারিপুত্রের মনে এই চিন্তা উদিত হইল : ‘আয়ুষ্মান পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্রের মহালাভ ও সুলব্ধ সৌভাগ্য যে, তাঁহার বিজ্ঞ সতীর্থগণ শাস্তার সম্মুখে, শাস্তার প্রত্যেক প্রশ্ন সম্পর্কে, তাঁহার সুখ্যাতি করিলেন এবং শাস্তাও তাহা অনুমোদন করিলেন। আয়ুষ্মান পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্রের সহিত আমি অল্প কয়েকবার মাত্র কদাচিৎ একত্র হইয়াছি এবং আলাপ-সালাপ করিয়াছি।’

৩. অনন্তর ভগবান রাজগৃহে যথা-অভিরতি অবস্থান করিয়া শ্রাবস্তী-অভিমুখে যাত্রা করিলেন এবং ক্রমাগত পথ পর্যটন করিয়া শ্রাবস্তীতে উপস্থিত হইলেন। তথায় ভগবান শ্রাবস্তী-সমীপে জেতবনে অনাথপিণ্ডিকের আরামে অবস্থান করিতে লাগিলেন। আয়ুষ্মান পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্র শুনিতে পাইলেন যে, ভগবান শ্রাবস্তীতে উপনীত হইয়া শ্রাবস্তী-সমীপে জেতবনে অনাথপিণ্ডিকের আরামে অবস্থান করিতেছেন। অনন্তর আয়ুষ্মান পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্র শয্যাসন গুটাইয়া পাত্রচীবরহস্তে শ্রাবস্তী-অভিমুখে অগ্রসর হইলেন। ক্রমাগত পথ পর্যটন করিয়া শ্রাবস্তী-সমীপে জেতবনে অনাথপিণ্ডিকের আরামে ভগবানের নিকট উপস্থিত হইলেন, উপস্থিত হইয়া ভগবানকে অভিবাদন করিয়া সসম্ভ্রমে একান্তে উপবেশন করিলেন। একান্তে উপবিষ্ট আয়ুষ্মান পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্রকে ভগবান ধর্মকথায় সত্য-সন্দর্শন করাইলেন, সমুদ্দীপ্ত করিলেন, ধর্মের প্রতি সমুত্তেজনা ও সম্প্রহর্ষভাব উৎপাদন করিলেন। আয়ুষ্মান পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্র ভগবদ্দেশিত ধর্মকথা দ্বারা সত্য-সন্দর্শিত, সমুদ্দীপ্ত, সমুত্তেজিত ও সম্প্রহৃষ্ট হইয়া, সানন্দে ভগবদুক্তি অনুমোদন করিয়া, আসন হইতে উঠিয়া, ভগবানকে অভিবাদন করিয়া ও দক্ষিণভাগে (সম্মুখে) রাখিয়া দিবাবিহারের জন্য অন্ধবনে গমন করিলেন।

৪. অনন্তর জনৈক ভিক্ষু আয়ুষ্মান সারিপুত্রের নিকট উপস্থিত হইলেন, উপস্থিত হইয়া আয়ষ্মান সারিপুত্রকে কহিলেন, ‘সারিপুত্র, তুমি পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্র নামক যে ভিক্ষুর অবিরাম গুণকীর্তন করিলে, তিনি ভগবদ্দেশিত ধর্মকথা দ্বারা সত্য-সন্দর্শিত, সমুদ্দীপ্ত, সমুত্তেজিত ও সম্প্রহৃষ্ট হইয়া, সানন্দে ভগবদুক্তি অনুমোদন করিয়া, ভগবানকে অভিবাদন করিয়া ও দক্ষিণভাগে রাখিয়া দিবাবিহারের জন্য অন্ধবনে প্রবেশ করিয়াছেন।’ অতঃপর আয়ুষ্মান সারিপুত্র দ্রুত আসনহস্তে আয়ুষ্মান পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্রের শির অবলোকন করিতে করিতে পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবিত হইলেন। আয়ুষ্মান পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্র অন্ধবনে প্রবেশ করিয়া এক বৃক্ষমূলে দিবাবিহারের জন্য আসীন হইলেন। আয়ুষ্মান সারিপুত্রও অন্ধবনে প্রবেশ করিয়া অপর এক বৃক্ষমূলে দিবাবিহারের জন্য আসীন হইলেন।

৫. অনন্তর আয়ুষ্মান সারিপুত্র সায়াহ্নে সমাধি হইতে উঠিয়া আয়ুষ্মান পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্রের নিকট উপস্থিত হইলেন, উপস্থিত হইয়া তাঁহার সহিত প্রীত্যালাপচ্ছলে কুশলপ্রশ্নাদি বিনিময় করিয়া একান্তে উপবেশন করিলেন। একান্তে উপবিষ্ট হইয়া আয়ুষ্মান সারিপুত্র পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্রকে কহিলেন, ‘বন্ধু, তুমি কি ভগবৎ-শাসনেই ব্রহ্মচর্যব্রত উদ্‌যাপন করিতেছ?’ ‘বন্ধু, তাহাই বটে।’ ‘বন্ধু, তুমি কি শীল-বিশুদ্ধির জন্যই ভগবৎ-শাসনে ব্রহ্মচর্যব্রত উদ্‌যাপন করিতেছ?’ ‘না, তাহা নহে।’ (‘তবে কি চিত্ত-বিশুদ্ধির জন্য তাহা করিতেছ?’ ‘না, তাহাও নহে।’) ‘তবে তুমি কি দৃষ্টি-বিশুদ্ধির জন্য তাহা করিতেছ?’ ‘না, তাহাও নহে।’ ‘তবে কি শঙ্কা-উত্তরণ-বিশুদ্ধির জন্য তাহা করিতেছ?’ ‘না, তাহাও নহে।’ ‘তবে কি তুমি মার্গামার্গ-জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধির জন্য তাহা করিতেছ?’ ‘না, তাহাও নহে।’ ‘তবে কি তুমি প্রতিপদ-জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধির জন্য তাহা করিতেছ?’ ‘না তাহাও নহে।’ ‘তবে কি তুমি জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধির জন্য তাহা করিতেছ?’ ‘না, তাহাও নহে।’ “এ কেমন কথা যে, যখন তোমাকে প্রশ্ন করা হইল, তুমি কি শীল-বিশুদ্ধির জন্যই ভগবৎ-শাসনে ব্রহ্মচর্যব্রত উদ্‌যাপন করিতেছ, তুমি বলিলে, ‘না’। তারপর যখন প্রশ্ন করা হইল, তবে কি তুমি চিত্ত-বিশুদ্ধির জন্য তাহা করিতেছ, তখনও তুমি বলিলে, ‘না’। এইরূপে দৃষ্টি-বিশুদ্ধি, শঙ্কা-উত্তরণ-বিশুদ্ধি, মার্গামার্গ-জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধি, প্রতিপদ-জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধি এবং জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধি বিষয়ে তোমাকে প্রশ্ন করা হইলে, তুমি একইরূপ উত্তর করিলে, ‘না, তাহা নহে’। তাহা হইলে তুমি কীজন্য ভগবৎ-শাসনে ব্রহ্মচর্যব্রত উদ্‌যাপন করিতেছ?” ‘অনুৎপাদ পরিনির্বাণের জন্যই ভগবৎ-শাসনে ব্রহ্মচর্যব্রত উদ্‌যাপন করিতেছি।’ ‘বন্ধু, শীল-বিশুদ্ধিই কি তোমার মতে অনুৎপাদ পরিনির্বাণ?’ ‘না, তাহা নহে।’ ‘তবে কি চিত্ত-বিশুদ্ধিই অনুৎপাদ পরিনির্বাণ?’ ‘না, তাহাও নহে।’ ‘তবে কি দৃষ্টি-বিশুদ্ধিই তাদৃশ পরিনির্বাণ?’ ‘না, তাহাও নহে।’ ‘তবে কি শঙ্কা-উত্তরণ-বিশুদ্ধিই সেই পরিনির্বাণ?’ ‘না, তাহাও নহে।’ ‘তবে কি মার্গামার্গ-জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধিই লক্ষিত পরিনির্বাণ?’ ‘না, তাহাও নহে।’ ‘তবে কি প্রতিপদ-জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধিই এই পরিনির্বাণ?’ ‘না, তাহাও নহে।’ ‘তবে কি বলিতে চাও, জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধিই অনুৎপাদ পরিনির্বাণ?’ ‘না, তাহাও নহে।’ ‘তবে কি বন্ধু, এই সপ্তবিশুদ্ধি-ধর্ম ব্যতীত তোমার অনুৎপাদ পরিনির্বাণ?’ ‘না, আমি সে কথাও বলি না।’ “বন্ধু, যখন তোমায় জিজ্ঞাসা করা হইল, শীল-বিশুদ্ধিই কি অনুৎপাদ পরিনির্বাণ? তুমি উত্তর করিলে, ‘না’। চিত্ত-বিশুদ্ধি, দৃষ্টি-বিশুদ্ধি, শঙ্কা-উত্তরণ-বিশুদ্ধি, মার্গামার্গ-জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধি, প্রতিপদ-জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধি এবং জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধি সম্বন্ধেও এইরূপে প্রশ্ন জিজ্ঞাসিত হইয়া তুমি একইরূপ উত্তর করিলে, ‘না’। তবে কি, বন্ধু, যথাকথিতভাবেই কথিত বিষয়ের অর্থ বুঝিতে হইবে?”

৬. “বন্ধু, যদি ভগবান শীল-বিশুদ্ধিকেই অনুৎপাদ পরিনির্বাণরূপে নির্দেশ করেন তাহা হইলে যে, স-উপাদান ধর্মই অনুৎপাদ পরিনির্বাণরূপে নির্দিষ্ট হয়। চিত্ত-বিশুদ্ধি, দৃষ্টি-বিশুদ্ধি, শঙ্কা-উত্তরণ-বিশুদ্ধি, মার্গামার্গ-জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধি, প্রতিপদ-জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধি এবং জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধি সম্বন্ধেও এইরূপ। [পুনশ্চ,] যদি এই সপ্তবিশুদ্ধি-ধর্ম ব্যতীত অনুৎপাদ পরিনির্বাণ সম্ভব হয়, তাহা হইলে যে পৃথগ্‌জনও পরিনির্বাণ লাভ করিতে পারে, কেননা পৃথগ্‌জন এই সপ্তবিশুদ্ধি-ধর্মের বাহিরে। অতএব, বন্ধু, আমি তোমার নিকট উপমার অবতারণা করিতেছি, কেননা উপমা দ্বারাও কোনো কোনো বিজ্ঞ ব্যক্তি কথিত বিষয়ে অর্থ জানিতে পারেন।

৭. বন্ধু, মনে করো, শ্রাবস্তীতে অবস্থানকালে কোশলরাজ প্রসেনজিতের কোনো এক অবশ্যকরণীয় কার্য উপস্থিত হইল। তিনি শ্রাবস্তী ও সাকেতের মধ্যে সপ্তরথবিনীতের ব্যবস্থা করাইলেন। অতঃপর কোশলরাজ প্রসেনজিৎ শ্রাবস্তী হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া অন্তঃপুরদ্বারে প্রথম রথবিনীতে অধিরোহণ করিলেন, প্রথম রথবিনীতের দ্বারা দ্বিতীয় রথবিনীতের স্থানে পঁহুছিয়া প্রথম রথবিনীত বিসর্জন করিলেন, এবং দ্বিতীয় রথবিনীতে অধিরোহণ করিলেন। এইরূপে দ্বিতীয় হইতে তৃতীয়ে, তৃতীয় হইতে চতুর্থে, চতুর্থ হইতে পঞ্চমে, পঞ্চম হইতে ষষ্ঠে এবং ষষ্ঠ হইতে সপ্তম রথবিনীতে অধিরোহণ করিয়া সাকেতে অন্তঃপুরদ্বারে উপনীত হইলেন। এইভাবে সাকেতের অন্তঃপুরদ্বারে উপনীত হইলে, মিত্র, অমাত্য এবং জ্ঞাতিকুটুম্বগণ তাঁহাকে প্রশ্ন করিলেন, ‘মহারাজ, আপনি কি এই (একমাত্র) রথবিনীতের দ্বারাই শ্রাবস্তী হইতে সাকেতে এই অন্তঃপুরদ্বারে উপনীত হইয়াছেন?’ কীভাবে এই প্রশ্নের উত্তর প্রদান করিলে কোশলরাজ প্রসেনজিৎ প্রশ্নের সদুত্তর প্রদান করিবেন?” ‘যদি এই প্রশ্নের উত্তর প্রদান করিতে গিয়া কোশলরাজ প্রসেনজিৎ এ কথা বলেন যে, যখন শ্রাবস্তীতে তিনি অবস্থান করিতেছিলেন তখন সাকেতে তাঁহার কোনো এক অবশ্যকরণীয় কার্য উপস্থিত হয়, এবং তিনি শ্রাবস্তী ও সাকেতের মধ্যে সপ্তরথবিনীত ব্যবস্থা করেন। অতঃপর শ্রাবস্তী হইতে যাত্রা করিয়া অন্তঃপুরদ্বারে তিনি প্রথম রথবিনীতে অধিরোহণ করেন, প্রথম রথবিনীতের দ্বারা দ্বিতীয় রথবিনীতে পঁহুছিয়া তিনি প্রথম রথবিনীত বিসর্জন করিয়া দ্বিতীয় রথবিনীতে অধিরোহণ করেন। এইরূপে দ্বিতীয় হইতে তৃতীয়ে, তৃতীয় হইতে চতুর্থে, চতুর্থ হইতে পঞ্চমে, পঞ্চম হইতে ষষ্ঠে এবং ষষ্ঠ হইতে সপ্তম রথবিনীতে অধিরোহণ করিয়া তিনি সাকেতে অন্তঃপুরদ্বারে উপনীত হইয়াছেন, তাহা হইলেই তিনি এই প্রশ্নের সদুত্তর প্রদান করিবেন।’ ‘তেমনভাবেই, বন্ধু, শীল-বিশুদ্ধির গতি চিত্ত-বিশুদ্ধিতে পঁহুছিবার জন্য, চিত্ত-বিশুদ্ধির গতি দৃষ্টি-বিশুদ্ধিতে, দৃষ্টি-বিশুদ্ধির গতি শঙ্কা-উত্তরণ-বিশুদ্ধিতে, শঙ্কা-উত্তরণ-বিশুদ্ধির গতি মার্গামার্গ-জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধিতে, মার্গামার্গ-জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধির গতি প্রতিপদ-জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধিতে, প্রতিপদ-জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধির গতি জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধিতে, এবং জ্ঞান-দর্শন-বিশুদ্ধির গতি অনুৎপাদ পরিনির্বাণে পঁহুছিবার জন্য। বন্ধু, এই অনুৎপাদ পরিনির্বাণের জন্যই ভগবৎ-শাসনে ব্রহ্মচর্যব্রত উদ্‌যাপিত হইতেছে।’

৮. ইহা বিবৃত হইলে আয়ুষ্মান সারিপুত্র পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্রকে কহিলেন, ‘আয়ুষ্মানের নাম কী? কী নামেই বা সতীর্থগণ আয়ুষ্মানকে জানেন?’ ‘আমার নাম পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্র, পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্র বলিয়াই আমাকে সতীর্থগণ জানেন।’ ‘পূর্ণ, ইহা বড়ই আশ্চর্য, বড়ই বিস্ময়কর যে, সম্যকভাবে শাস্তার শাসন বিদিত শ্রুতবান শ্রাবক যেভাবে উত্তর প্রদান করিবেন ঠিক সেভাবেই আয়ুষ্মান পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্র, তাঁহাকে যতগুলি গভীর প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হইয়াছে, প্রত্যেকটির যথাযথ উত্তর প্রদান করিয়াছেন। সতীর্থগণের মহালাভ, সুলব্ধ সৌভাগ্য, যদি তাঁহারা পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্রের দর্শন লাভ করেন, যদি তাঁহারা তাঁহার পর্যুপাসনা করিতে পারেন। যদি সতীর্থগণ বস্ত্রাসনে শিরোপরি আয়ুষ্মান পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্রকে বহন করিয়াও তাঁহার দর্শন লাভ করেন, অথবা তাঁহার পর্যুপাসনা করিতে পারেন, তাহা তাঁহাদের পক্ষে মহালাভ, সুলব্ধ সৌভাগ্য। আমার পক্ষেও মহালাভ, সুলব্ধ সৌভাগ্য যে আমি (আজ) আয়ুষ্মান পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্রের দর্শন লাভ করিয়াছি, তাঁহার পর্যুপাসনা করিতে পারিয়াছি।’

ইহা উক্ত হইলে আয়ুষ্মান পূর্ণ মৈত্রায়নীপুত্র আয়ুষ্মান সারিপুত্রকে কহিলেন, ‘আয়ুষ্মানের নাম কী, কী নামেই বা সতীর্থগণ আয়ুষ্মানকে জানেন?’ ‘পূর্ণ, আমার নাম উপতিষ্য। সতীর্থগণ আমাকে সারিপুত্র বলিয়াই জানেন।’ ‘অহো, শাস্তাকল্প শ্রাবকের সহিত ধর্মালোচনা করিয়াও জানিতে পারি নাই যে তিনি স্বয়ং আয়ুষ্মান সারিপুত্র! যদি আমি জানিতে পারিতাম যে তিনি স্বয়ং আয়ুষ্মান সারিপুত্র, তাহা হইলে আমি একটি কথাও বলিতাম না। ইহা বড়ই আশ্চর্য, বড়ই বিস্ময়কর যে, শাস্তার শাসন সম্যকভাবে বিদিত শ্রুতবান শ্রাবক যেভাবে প্রশ্ন করেন ঠিক সেভাবেই আয়ুষ্মান সারিপুত্র গভীর গভীর প্রশ্ন একটির পর একটি জিজ্ঞাসা করিয়াছেন। সতীর্থগণের মহালাভ, সুলব্ধ সৌভাগ্য, যদি তাঁহারা আয়ুষ্মান সারিপুত্রের দর্শন লাভ করেন, যদি তাঁহারা তাঁহার পর্যুপাসনা করিতে পারেন। যদি সতীর্থগণ বস্ত্রাসনে শিরোপরি সারিপুত্রকে বহন করিয়াও তাঁহার দর্শন লাভ করেন, তাঁহার পর্যুপাসনা করিতে পারেন, তাহা তাঁহাদের পক্ষে মহালাভ, সুলব্ধ সৌভাগ্য। আমার পক্ষেও মহালাভ, সুলব্ধ সৌভাগ্য যে (আজ) আমি আয়ুষ্মান সারিপুত্রের দর্শন লাভ করিয়াছি, তাঁহার পর্যুপাসনা করিতে পারিয়াছি।’

এইরূপেই দুই মহানাগ, মহাশক্তিসম্পন্ন বুদ্ধশ্রাবক পরস্পরের সুভাষিত বিষয় সমনুমোদন করিয়াছিলেন।

রথবিনীত-সূত্র সমাপ্ত।

The Middle Discourses

|_A. The First Fifty

|__III. The Chapter of Similes

MN24. রথবিনীত-সূত্র

Translations [28]

English

繁體字

日本語

Français

Deutsch

Italiano

Español

Català

Português

Русский

Norsk

Srpski

Čeština

Slovenščina

हिंदी

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference