আমি এইরূপ শুনিয়াছি।

১. একসময় ভগবান শ্রাবস্তী-সমীপে অবস্থান করিতেছিলেন, জেতবনে, অনাথপিণ্ডিকের আরামে। ভগবান সমবেত ভিক্ষুদিগকে আহ্বান করিলেন, ‘হে ভিক্ষুগণ’। ‘হাঁ ভদন্ত’ বলিয়া ভিক্ষুগণ প্রত্যুত্তরে তাঁহাদের সম্মতি জানাইলেন। ভগবান কহিলেন :

২. হে ভিক্ষুগণ, নিবাপক (তৃণ-বপক মৃগলুব্ধক) নিবাপ (মৃগ-বিচরণভূমি) নির্মাণ করিয়া উহাতে এই উদ্দেশ্যে তৃণ-বীজ৪ বপন করে না যে, মৃগগণ বপিত তৃণ ভোজন করিয়া দীর্ঘজীবী ও বর্ণোজ্জ্বল হইয়া চিরদিন, দীর্ঘকাল সুখে জীবনযাপন করিবে। হে ভিক্ষুগণ, এইরূপ বিপরীত উদ্দেশ্যেই নিবাপক নিবাপ নির্মাণ করিয়া উহাতে তৃণ-বীজ বপন করে যাহাতে মৃগগণ উহাতে অনুপ্রবিষ্ট হইয়া খাদ্যমোহে মূর্ছিত (মোহিত) হইয়া ভোজ্য ভোজন করিবে। ভোজ্য ভোজন করিয়া মদগ্রস্ত হইবে, মত্ত হইয়া প্রমাদগ্রস্ত হইবে। প্রমত্ত হইয়া এই নিবাপে তাহারই ইচ্ছানুযায়ী কার্য করিতে থাকিবে।

৩. হে ভিক্ষুগণ, প্রথম মৃগসংঘ নিবাপক-নির্মিত নিবাপে অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত হইয়া ভোজ্য ভোজন করিল। ভোজ্য ভোজন করিয়া মদগ্রস্ত হইল। মত্ত হইলে প্রমাদগ্রস্ত হইল। প্রমত্ত হইলে ওই নিবাপে নিবাপকেরই ইচ্ছানুযায়ী কার্য করিতে লাগিল। হে ভিক্ষুগণ, এইরূপ করিতে গিয়া প্রথম মৃগসংঘ নিবাপকের ঋদ্ধিপ্রভাব (কৌশল) হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিল না।

৪. হে ভিক্ষুগণ, দ্বিতীয় মৃগসংঘ এইরূপে বিষয়টি সম্যকভাবে চিন্তা করিল : ‘প্রথম মৃগসংঘ নিবাপক-নির্মিত ওই নিবাপে প্রবেশ করিয়া ভোজ্য ভোজন করিল, তথায় অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত হইয়া ভোজ্য ভোজন করিতে গিয়া মদগ্রস্ত হইল। মত্ত হইলে প্রমাদগ্রস্ত হইল। প্রমত্ত হইলে ওই নিবাপে নিবাপকেরই ইচ্ছানুযায়ী কার্য করিতে লাগিল। এইরূপ করিতে গিয়া এই প্রথম মৃগসংঘ নিবাপকের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিল না। অতএব আমরা সর্বাংশে নিবাপক-রোপিত তৃণভোজন হইতে প্রতিবিরত হইব, ভয়ভোগ (ভীতিজনক ভোজন) হইতে প্রতিবিরত হইয়া অরণ্যায়তনে অনুপ্রবিষ্ট হইয়া বিচরণ করিব।’ ইহা চিন্তা করিয়া দ্বিতীয় মৃগসংঘ সর্বাংশে নিবাপ-ভোজন হইতে প্রতিবিরত হইল, ভয়ভোগ হইতে প্রতিবিরত হইয়া অরণ্যায়তনে অনুপ্রবিষ্ট হইয়া বিচরণ করিতে লাগিল। গ্রীষ্মের শেষ মাসে তৃণোদক শুকাইয়া গেলে এই মৃগসংঘ অতিশয় কৃশতনু হইয়া পড়িল। অতিশয় কৃশতনু হওয়ায় মৃগসংঘের বলবীর্য পরিহীন হইল, বলবীর্য পরিহীন হইলে ওই মৃগগণ নিবাপক-নির্মিত নিবাপে প্রত্যাগমন করিল। তথায় অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত হইয়া ভোজ্য ভোজন করিল। ভোজ্য ভোজন করিয়া মদগ্রস্ত হইল। মত্ত হইলে প্রমাদগ্রস্ত হইল। প্রমত্ত হইলে ওই নিবাপে নিবাপকেরই ইচ্ছানুরূপ কার্য করিতে লাগিল। হে ভিক্ষুগণ, এইরূপ করিতে গিয়া দ্বিতীয় মৃগসংঘও নিবাপকের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিল না।

৫. হে ভিক্ষুগণ, তৃতীয় মৃগসংঘ এইরূপে বিষয়টি সম্যকভাবে চিন্তা করিল : “প্রথম মৃগসংঘ নিবাপক-নির্মিত ওই নিবাপে অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত হইয়া ভোজ্য ভোজন করিল, ভোজ্য ভোজন করিয়া মদগ্রস্ত হইল। মত্ত হইলে প্রমাদগ্রস্ত হইল। প্রমত্ত হইলে ওই নিবাপে নিবাপকেরই ইচ্ছানুযায়ী কার্য করিতে লাগিল। এইরূপ করিতে গিয়া প্রথম মৃগসংঘ নিবাপকের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিল না। দ্বিতীয় মৃগসংঘও এইরূপে বিষয়টি চিন্তা করিয়াছিল : ‘প্রথম মৃগসংঘ নিবাপক-নির্মিত ওই নিবাপে অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত হইয়া ভোজ্য ভোজন করিতে গিয়া মদগ্রস্ত হইল। মত্ত হইলে প্রমাদগ্রস্ত হইল। প্রমত্ত হইলে ওই নিবাপে নিবাপকেরই ইচ্ছানুযায়ী কার্য করিতে লাগিল। এইরূপ করিতে গিয়া এই প্রথম মৃগসংঘ নিবাপকের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিল না। অতএব আমরা সর্বাংশে নিবাপক-রোপিত তৃণভোজন হইতে প্রতিবিরত হইব, ভয়ভোগ হইতে প্রতিবিরত হইয়া অরণ্যায়তনে অনুপ্রবিষ্ট হইয়া বিচরণ করিব।’ ইহা চিন্তা করিয়া দ্বিতীয় মৃগসংঘ নিবাপ-ভোজন হইতে প্রতিবিরত হইল, ভয়ভোগ হইতে প্রতিবিরত হইয়া অরণ্যায়তনে অনুপ্রবিষ্ট হইয়া বিচরণ করিতে থাকিল। গ্রীষ্মের শেষ মাসে তৃণোদক শুকাইয়া গেলে এই মৃগসংঘ অতিশয় কৃশতনু হইয়া পড়িল। অতিশয় কৃশতনু হওয়ায় মৃগসংঘের বলবীর্য পরিহীন হইল, বলবীর্য পরিহীন হইলে ওই মৃগসংঘ নিবাপক-নির্মিত নিবাপে প্রত্যাগমন করিল। তথায় অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত হইয়া ভোজ্য ভোজন করিয়া মদগ্রস্ত হইল। মত্ত হইলে প্রমাদগ্রস্ত হইল। প্রমত্ত হইলে ওই নিবাপে নিবাপকেরই ইচ্ছানুযায়ী কার্য করিতে থাকিল। এইরূপ করিতে গিয়া দ্বিতীয় মৃগসংঘও নিবাপকের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিল না। অতএব আমরা নিবাপক-নির্মিত ওই নিবাপের উপাশ্রয়ে (সন্নিকটে) আশ্রয় গ্রহণ করিব। তথায় আশ্রয় গ্রহণ করিয়া ওই নিবাপক-নির্মিত নিবাপে অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত না হইয়া ভোজ্য ভোজন করিলে আমরা মদগ্রস্ত হইব না। অমত্ত থাকিলে প্রমাদগ্রস্ত হইব না। অপ্রমত্ত থাকিলে আমরা ওই নিবাপে নিবাপকের ইচ্ছানুরূপ কার্য করিতে থাকিব না।” ইহা ভাবিয়া তৃতীয় মৃগসংঘ নিবাপক-নির্মিত নিবাপের উপাশ্রয়ে আশ্রয় গ্রহণ করিয়া ওই নিবাপে অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত না হইয়া ভোজ্য ভোজন করিল। তথায় অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত না হইয়া ভোজ্য ভোজন করায় মৃগগণ মদগ্রস্ত হইল না। অমত্ত থাকায় প্রমাদগ্রস্ত হইল না। অপ্রমত্ত থাকায় ওই নিবাপে নিবাপকের ইচ্ছানুরূপ কার্য করিল না। তখন, হে ভিক্ষুগণ, নিবাপক এবং নিবাপক-পার্ষদের মনে এই চিন্তা উদিত হইল : “এই তৃতীয় মৃগসংঘ যেন কৈটভীর ন্যায় শঠ, ‘পরজনের’ (যক্ষের) ন্যায় ঋদ্ধিমান। এই নির্মিত নিবাপ পরিভোগ করে অথচ আমরা তাহাদের গতিবিধি জানি না। অতএব আমরা বৃহৎ দণ্ডবাগুরা দ্বারা চারিধারে বিস্তৃত স্থানসহ এই নিবাপ পরিবেষ্টিত করিব, ইহাতে অত্যল্পকালের মধ্যেই তৃতীয় মৃগসংঘের আশ্রয়স্থল দেখিতে পাইব, যেখানে মৃগগণকে ধরিতে পারিব।” ইহা ভাবিয়া নিবাপক ও নিবাপক-পার্ষদ বৃহৎ দণ্ডবাগুরা দ্বারা চারিধারে বিস্তৃত স্থানসহ ওই নিবাপ পরিবেষ্টিত করিল। হে ভিক্ষুগণ, ইহাতে নিবাপক ও নিবাপক-পার্ষদ তৃতীয় মৃগসংঘের আশ্রয়স্থল দেখিতে পাইল, যেখানে তাহারা ধরা পড়িল। এইরূপে, হে ভিক্ষুগণ, তৃতীয় মৃগসংঘও নিবাপকের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিল না।

৬. হে ভিক্ষুগণ, চতুর্থ মৃগসংঘ এইরূপে বিষয়টি সম্যকভাবে চিন্তা করিল : “‘প্রথম মৃগসংঘ নিবাপক-নির্মিত নিবাপে অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত হইয়া ভোজ্য ভোজন করিয়া মদগ্রস্ত হইল। মত্ত হইয়া প্রমাদগ্রস্ত হইল। প্রমত্ত হইয়া ওই নিবাপে নিবাপকের ইচ্ছানুযায়ী কার্য করিতে লাগিল। এইরূপ করিতে গিয়া প্রথম মৃগসংঘ নিবাপকের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিল না। দ্বিতীয় মৃগসংঘও এইরূপে বিষয়টি চিন্তা করিয়াছিল : ‘প্রথম মৃগসংঘ নিবাপক-নির্মিত নিবাপে অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত হইয়া ভোজ্য ভোজন করিতে গিয়া মদগ্রস্ত হইল। মত্ত হইলে প্রমাদগ্রস্ত হইল। প্রমত্ত হইলে ওই নিবাপে নিবাপকেরই ইচ্ছানুযায়ী কার্য করিতে লাগিল। এইরূপ করিতে গিয়া এই প্রথম মৃগসংঘ নিবাপকের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিল না। অতএব আমরা সর্বাংশে নিবাপক-রোপিত তৃণভোজন হইতে প্রতিবিরত হইব, ভয়ভোগ হইতে প্রতিবিরত হইয়া অরণ্যায়তনে অনুপ্রবিষ্ট হইয়া বিচরণ করিব।’ ইহা চিন্তা করিয়া দ্বিতীয় মৃগসংঘ নিবাপ-ভোজন হইতে প্রতিবিরত হইল, ভয়ভোগ হইতে প্রতিবিরত হইয়া অরণ্যায়তনে অনুপ্রবিষ্ট হইয়া বিচরণ করিতে লাগিল। গ্রীষ্মের শেষ মাসে তৃণোদক শুকাইয়া গেলে এই মৃগসংঘ অতিশয় কৃশতনু হইয়া পড়িল। অতিশয় কৃশতনু হওয়ায় মৃগসংঘের বলবীর্য পরিহীন হইল, বলবীর্য পরিহীন হইলে ওই মৃগসংঘ নিবাপক-নির্মিত নিবাপে প্রত্যাগমন করিল। তথায় অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত হইয়া ভোজ্য ভোজন করিতে গিয়া মদগ্রস্ত হইল। মত্ত হইয়া প্রমাদগ্রস্ত হইল। প্রমত্ত হইয়া ওই নিবাপে নিবাপকেরই ইচ্ছানুযায়ী কার্য করিতে লাগিল। এইরূপ করিতে গিয়া দ্বিতীয় মৃগসংঘও নিবাপকের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিল না। তৃতীয় মৃগসংঘও বিষয়টি এইরূপে সম্যকভাবে চিন্তা করিয়াছিল : “প্রথম মৃগসংঘ নিবাপক-নির্মিত নিবাপে অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত হইয়া ভোজ্য ভোজন করিতে গিয়া মদগ্রস্ত হইল। মত্ত হইয়া প্রমাদগ্রস্ত হইল। প্রমত্ত হইয়া ওই নিবাপে নিবাপকেরই ইচ্ছানুযায়ী কার্য করিতে লাগিল। এইরূপ করিতে গিয়া প্রথম মৃগসংঘ নিবাপকের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিল না। দ্বিতীয় মৃগসংঘও এইরূপে বিষয়টি সম্যকভাবে চিন্তা করিয়াছিল : ‘প্রথম মৃগসংঘ নিবাপক-নির্মিত নিবাপে অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত হইয়া ভোজ্য ভোজন করিল। খাদ্যমোহে মূর্ছিত হইয়া ভোজ্য ভোজন করিতে গিয়া মদগ্রস্ত হইল। মত্ত হইয়া প্রমাদগ্রস্ত হইল। প্রমত্ত হইয়া ওই নিবাপে নিবাপকেরই ইচ্ছানুযায়ী কার্য করিতে লাগিল। এইরূপ করিতে গিয়া প্রথম মৃগসংঘ নিবাপকের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিল না। অতএব আমরা সর্বাংশে নিবাপক-রোপিত তৃণভোজন হইতে প্রতিবিরত হইব, ভয়ভোগ হইতে প্রতিবিরত হইয়া অরণ্যায়তনে অনুপ্রবিষ্ট হইয়া বিচরণ করিব।’ ইহা চিন্তা করিয়া দ্বিতীয় মৃগসংঘ নিবাপ-ভোজন হইতে প্রতিবিরত হইল, ভয়ভোগ হইতে প্রতিবিরত হইয়া অরণ্যায়তনে অনুপ্রবিষ্ট হইয়া বিচরণ করিতে লাগিল। গ্রীষ্মের শেষ মাসে তৃণোদক শুকাইয়া গেলে এই মৃগসংঘ অতিশয় কৃশতনু হইল। অতিশয় কৃশতনু হওয়ায় বলবীর্য পরিহীন হইল। বলবীর্য পরিহীন হইলে ওই মৃগসংঘ নিবাপক-নির্মিত নিবাপে প্রত্যাগমন করিল। তথায় অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত হইয়া ভোজ্য ভোজন করিয়া মদগ্রস্ত হইল। মত্ত হইয়া প্রমাদগ্রস্ত হইল। প্রমত্ত হইয়া ওই নিবাপে নিবাপকেরই ইচ্ছানুযায়ী কার্য করিতে লাগিল। এইরূপ করিতে গিয়া দ্বিতীয় মৃগসংঘও নিবাপকের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিল না। অতএব আমরা নিবাপক-নির্মিত ওই নিবাপের উপাশ্রয়ে আশ্রয় গ্রহণ করিব। তথায় আশ্রয় গ্রহণ করিয়া ওই নিবাপক-নির্মিত নিবাপে অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত না হইয়া ভোজ্য ভোজন করিব। অনুপ্রবিষ্ট এবং মূর্ছিত না হইয়া ভোজ্য ভোজন করিলে আমরা মদগ্রস্ত হইব না। অমত্ত থাকিলে প্রমাদগ্রস্ত হইব না। অপ্রমত্ত থাকিলে আমরা ওই নিবাপে নিবাপকের ইচ্ছানুরূপ কার্য করিতে থাকিব না।’’ ইহা ভাবিয়া তৃতীয় মৃগসংঘ নিবাপক-নির্মিত নিবাপের উপাশ্রয়ে আশ্রয় গ্রহণ করিয়া ওই নিবাপে অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত না হইয়া ভোজ্য ভোজন করিল। তথায় অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত না হইয়া ভোজ্য ভোজন করায় মৃগগণ মদগ্রস্ত হইল না। অমত্ত থাকায় প্রমাদগ্রস্ত হইল না। অপ্রমত্ত থাকায় নিবাপকের ইচ্ছানুরূপ কার্য করিল না। তখন, নিবাপক এবং নিবাপক-পার্ষদের মনে এই চিন্তা উদিত হইল : “এই তৃতীয় মৃগসংঘ যেন কৈটভীর ন্যায় শঠ, ‘পরজনের’ ন্যায় ঋদ্ধিমান। তাহারা এই নির্মিত নিবাপ পরিভোগ করে, অথচ আমরা তাহাদের গতিবিধি জানি না। অতএব আমরা বৃহৎ দণ্ডবাগুরা দ্বারা চারিধারে বিস্তৃত স্থানসহ এই বপিত নিবাপ পরিবেষ্টিত করিব, ইহাতে অত্যল্পকালের মধ্যেই তৃতীয় মৃগসংঘের আশ্রয়স্থল দেখিতে পাইব, যেখানে মৃগগণকে ধরিতে পারিব।” ইহা ভাবিয়া নিবাপক ও নিবাপক-পার্ষদ বৃহৎ দণ্ডবাগুরা দ্বারা চারিধারে বিস্তৃত স্থানসহ ওই নিবাপ পরিবেষ্টিত করিল। ইহাতে নিবাপক ও নিবাপক-পার্ষদ তৃতীয় মৃগসংঘের আশ্রয়স্থল দেখিতে পাইল, যেখানে তাহারা ধরা পড়িল। এইরূপে, তৃতীয় মৃগসংঘও নিবাপকের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিল না।

অতএব আমরা যেখানে নিবাপক এবং নিবাপক-পার্ষদের যাতায়াত নাই সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করিব। তথায় আশ্রয় গ্রহণ করিয়া ওই নিবাপক-নির্মিত নিবাপে অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত না হইয়া ভোজ্য ভোজন করিব। অনুপ্রবিষ্ট এবং মূর্ছিত না হইয়া ভোজ্য ভোজন করিলে মদগ্রস্ত হইব না। অমত্ত থাকিলে প্রমাদগ্রস্ত হইব না। অপ্রমত্ত থাকিলে আমরা ওই নিবাপে নিবাপকের ইচ্ছানুরূপ কার্য করিতে থাকিব না।’” ইহা ভাবিয়া যেখানে নিবাপক এবং নিবাপক-পার্ষদের যাতায়াত ছিল না সেখানেই চতুর্থ মৃগসংঘ আশ্রয় গ্রহণ করিল। তথায় আশ্রয় গ্রহণ করিয়া ওই নিবাপক-নির্মিত নিবাপে অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত না হইয়া ভোজ্য ভোজন করিল। অনুপ্রবিষ্ট এবং মূর্ছিত না হইয়া ভোজ্য ভোজন করায় তাহারা মদগ্রস্ত হইল না। অমত্ত থাকায় প্রমাদগ্রস্ত হইল না। অপ্রমত্ত থাকায় ওই নিবাপে নিবাপকের ইচ্ছানুরূপ কার্য করিল না। তখন, হে ভিক্ষুগণ, নিবাপক ও নিবাপক-পার্ষদের মনে এই চিন্তা উদিত হইল : “এই চতুর্থ মৃগসংঘ যেন কৈটভীর ন্যায় শঠ, ‘পরজনের’ ন্যায় ঋদ্ধিমান। এই মৃগসংঘ বপিত নিবাপ পরিভোগ করে অথচ আমরা মৃগগণের গতিবিধি জানি না। অতএব আমরা বৃহৎ দণ্ডবাগুরা দ্বারা চারিধারে বিস্তৃত স্থানসহ এই বপিত নিবাপ পরিবেষ্টিত করিব, ইহাতে অত্যল্পকালের মধ্যে এই চতুর্থ মৃগসংঘের আশ্রয়স্থল দেখিতে পাইব, যেখানে তাহাদিগকে ধরিতে পারিব।” ইহা ভাবিয়া তাহারা বৃহৎ দণ্ডবাগুরা দ্বারা চারিধারে বিস্তৃত স্থানসহ ওই নিবাপ পরিবেষ্টিত করিল। কিন্তু, হে ভিক্ষুগণ, ইহাতে নিবাপক ও নিবাপক-পার্ষদ চতুর্থ মৃগসংঘের আশ্রয়স্থল দেখিতে পাইল না, যেখানে তাহারা মৃগগণকে ধরিতে পারিত। তখন, হে ভিক্ষুগণ, নিবাপক ও নিবাপক-পার্ষদের মনে এই চিন্তা উদিত হইল : “যদি আমরা এই চতুর্থ মৃগসংঘকে ঘাঁটাই, এই ঘাঁটাতে মৃগগণ অপর মৃগগণকে ঘাঁটাইবে, তাহাদের ঘাঁটাইলে তাহারাও অপর মৃগগণকে ঘাঁটাইবে, এইরূপে সর্বাংশেই মৃগগণ এই বপিত নিবাপ পরিহার করিবে। অতএব আমরা এই চতুর্থ মৃগসংঘকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করিব।” হে ভিক্ষুগণ, ইহা ভাবিয়া নিবাপক ও নিবাপক-পার্ষদ চতুর্থ মৃগসংঘকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করিল। এইরূপেই, হে ভিক্ষুগণ, চতুর্থ মৃগসংঘ নিবাপকের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইল।

৭. হে ভিক্ষুগণ, লক্ষিত অর্থ-বিজ্ঞাপনের জন্যই এই উপমা উপস্থিত করা হইয়াছে। উপমার অর্থ এই : হে ভিক্ষুগণ, এ স্থলে নিবাপ পঞ্চকামগুণের অধিবচন বা নামান্তর; নিবাপক মারেরই নামান্তর; নিবাপক-পার্ষদ মার-পার্ষদেরই নামান্তর; মৃগগণ শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণেরই নামান্তর।

৮. হে ভিক্ষুগণ, প্রথম শ্রেণির শ্রমণ-ব্রাহ্মণ মার-নির্মিত ওই নিবাপে, অর্থাৎ পঞ্চকামগুণরূপ লোকামিষে অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে (ইন্দ্রিয়লালসায়) মূর্ছিত হইয়া উপভোগ্য বস্তু উপভোগ করিলেন। তথায় তাঁহারা অনুপ্রবিষ্ট ও খাদ্যমোহে মূর্ছিত হইয়া উপভোগ্য বস্তু উপভোগ করিয়া মদগ্রস্ত হইলেন। মত্ত হইয়া প্রমাদগ্রস্ত হইলেন। প্রমত্ত হইয়া ওই নিবাপে, অর্থাৎ ওই লোকামিষে মারের ইচ্ছানুযায়ী কার্য করিতে লাগিলেন। এইরূপেই, হে ভিক্ষুগণ, এই প্রথম শ্রেণির শ্রমণ-ব্রাহ্মণ মারের ঋদ্ধিপ্রভাব (বশীকরণ বিদ্যা) হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিলেন না। হে ভিক্ষুগণ, যেমন প্রথম মৃগসংঘ, ঠিক উহারই উপমায় আমি এই প্রথম শ্রেণির শ্রমণ-ব্রাহ্মণকে বর্ণনা করি।

৯. হে ভিক্ষুগণ, দ্বিতীয় শ্রেণির শ্রমণ-ব্রাহ্মণের মনে এই চিন্তা উদিত হইল : ‘প্রথম শ্রেণির শ্রমণ-ব্রাহ্মণ ওই মার-নির্মিত নিবাপে, ওই লোকামিষে অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত হইয়া উপভোগ্য বস্তু উপভোগ করিলেন। তথায় অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত হইয়া উপভোগ্য বস্তু উপভোগ করায় তাঁহারা মদগ্রস্ত হইলেন। মত্ত থাকায় প্রমাদগ্রস্ত হইলেন। প্রমত্ত থাকায় ওই নিবাপে, ওই লোকামিষে মারের ইচ্ছানুরূপ কার্য করিতে লাগিলেন। এইরূপেই প্রথম শ্রেণির শ্রমণ-ব্রাহ্মণ মারের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিলেন না। অতএব আমরা সর্বাংশে নিবাপ-ভোজন হইতে, লোকামিষ হইতে প্রতিবিরত হইব। ভয়ভোগ হইতে প্রতিবিরত হইয়া অরণ্যায়তনে অনুপ্রবিষ্ট হইয়া বিচরণ করিব।’ ইহা ভাবিয়া তাঁহারা সর্বাংশে নিবাপ-ভোজন হইতে, লোকামিষ হইতে প্রতিবিরত হইলেন। ভয়ভোগ হইতে প্রতিবিরত হইয়া তাঁহারা অরণ্যায়তনে অনুপ্রবিষ্ট হইয়া বিচরণ করিতে লাগিলেন। তথায় তাঁহারা শাকভোজী হইলেন, শ্যামাকভোজী হইলেন, নীবারভোজী হইলেন, দর্দরভোজী হইলেন, শৈবালভোজী হইলেন, কণভোজী হইলেন, আচামভোজী হইলেন, পিণ্যাকভোজী হইলেন, তৃণভোজী হইলেন, গোময়ভোজী হইলেন, ফলমূলাহারী কিংবা ভূপতিত পক্বফলভোজী হইলেন। গ্রীষ্মের শেষ মাসে তৃণোদক ক্ষীণ হইলে তাঁহারা অতিশয় কৃশতনু হইলেন। অতিশয় কৃশতনু এই শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণের বলবীর্য পরিহীন হইল। বলবীর্য পরিহীন হইলে চেতোবিমুক্তি (অরণ্যবাসের অভিপ্রায়) পরিহীন হইল। চেতোবিমুক্তি পরিহীন হওয়ায় তাঁহারা ওই মার-নির্মিত নিবাপে, ওই লোকামিষেই প্রত্যাগমন করিলেন। তথায় তাঁহারা অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত হইয়া উপভোগ্য বস্তু উপভোগ করিলেন। তথায় অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত হইয়া উপভোগ্য বস্তু উপভোগ করায় তাঁহারা মদগ্রস্ত হইলেন। মত্ত থাকায় প্রমাদগ্রস্ত হইলেন। প্রমত্ত থাকায় তাঁহারা ওই নিবাপে, ওই লোকামিষে মারের ইচ্ছানুরূপ কার্য করিতে লাগিলেন। এইরূপেই, হে ভিক্ষুগণ, দ্বিতীয় শ্রেণির শ্রমণ-ব্রাহ্মণ মারের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিলেন না। যেমন, হে ভিক্ষুগণ, দ্বিতীয় মৃগসংঘ, ঠিক উহারই উপমায় আমি এই দ্বিতীয় শ্রেণির শ্রমণ-ব্রাহ্মণকে বর্ণনা করি।

১০. হে ভিক্ষুগণ, তৃতীয় শ্রেণির শ্রমণ-ব্রাহ্মণ চিন্তা করিলেন : ‘প্রথম শ্রেণির শ্রমণ-ব্রাহ্মণ ওই মার-নির্মিত নিবাপে, ওই লোকামিষে ঐরূপ করিতে গিয়া মারের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারেন নাই। দ্বিতীয় শ্রেণির শ্রমণ-ব্রাহ্মণও ওই মার-নির্মিত নিবাপে, ওই লোকামিষে ঐরূপ করিতে গিয়া মারের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারেন নাই। অতএব আমরা ওই মার-নির্মিত নিবাপের, ওই লোকামিষের উপাশ্রয়ে আশ্রয় গ্রহণ করিব। তথায় আশ্রয় গ্রহণ করিয়া ওই মার-নির্মিত নিবাপে, ওই লোকামিষে অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত না হইয়া উপভোগ্য বস্তু উপভোগ করিব। অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত না হইয়া উপভোগ্য বস্তু উপভোগ করিলে আমরা মদগ্রস্ত হইব না। অমত্ত থাকিলে প্রমাদগ্রস্ত হইব না। অপ্রমত্ত থাকিলে আমরা ওই নিবাপে, ওই লোকামিষে মারের ইচ্ছানুরূপ কার্য করিতে বাধ্য হইব না।’ ইহা ভাবিয়া তাঁহারা ওই মার-নির্মিত নিবাপের, ওই লোকামিষের উপাশ্রয়ে আশ্রয় গ্রহণ করিলেন। তথায় আশ্রয় গ্রহণ করিয়া ওই মার-নির্মিত নিবাপে, ওই লোকামিষে অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত না হইয়া উপভোগ্য বস্তু উপভোগ করিলেন। তথায় অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত না হইয়া উপভোগ্য বস্তু উপভোগ করায় তাঁহারা মদগ্রস্ত হইলেন না। অমত্ত থাকায় প্রমাদগ্রস্ত হইলেন না। অপ্রমত্ত থাকায় তাঁহারা ওই নিবাপে, ওই লোকামিষে মারের ইচ্ছানুরূপ কার্য করিতে বাধ্য হইলেন না, কিন্তু তাঁহাদের এইরূপ মিথ্যাদৃষ্টি (একাঙ্গদর্শন) উৎপন্ন হইল : ‘জগৎ শাশ্বত’, ‘জগৎ অশাশ্বত’, ‘জগৎ সান্ত’, ‘জগৎ অনন্ত’, ‘জীবাত্মা ও শরীর অভিন্ন’, ‘জীবাত্মা ও শরীর ভিন্ন ভিন্ন’, ‘মৃত্যুর পরও তথাগত থাকেন’, ‘মৃত্যুর পর তথাগত থাকেন না’, ‘মৃত্যুর পর তথাগত থাকেনও বটে, থাকেন না-ও বটে’, ‘মৃত্যুর পর তথাগত থাকেন তাহাও নহে, না থাকেন তাহাও নহে।’ এইরূপেই, হে ভিক্ষুগণ, তৃতীয় শ্রেণির শ্রমণ-ব্রাহ্মণ মারের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিলেন না। যেমন, হে ভিক্ষুগণ, তৃতীয় মৃগসংঘ, ঠিক উহারই উপমায় আমি তৃতীয় শ্রেণির শ্রমণ-ব্রাহ্মণকে বর্ণনা করি।

১১. হে ভিক্ষুগণ, চতুর্থ শ্রেণির শ্রমণ-ব্রাহ্মণ সম্যকরূপে চিন্তা করিলেন : ‘প্রথম শ্রেণির শ্রমণ-ব্রাহ্মণ ওই মার-নির্মিত নিবাপে, ওই লোকামিষে ঐরূপ করিতে গিয়া মারের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারেন নাই। দ্বিতীয় শ্রেণির শ্রমণ-ব্রাহ্মণও ওই মার-নির্মিত নিবাপে, ওই লোকামিষে ঐরূপ করিতে গিয়া মারের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিলেন না। তৃতীয় শ্রেণির শ্রমণ-ব্রাহ্মণও ঐ-মার-নির্মিত নিবাপে, ওই লোকামিষে ঐরূপ করিতে গিয়া মারের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারেন নাই। অতএব আমরা যেখানে মার এবং মার-পার্ষদের যাতায়াত নাই তথায় আশ্রয় গ্রহণ করিব। তথায় আশ্রয় গ্রহণ করিয়া ওই মার-নির্মিত নিবাপে, ওই লোকামিষে অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত না হইয়া উপভোগ্য বস্তু উপভোগ করিব। তথায় অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত না হইয়া উপভোগ্য বস্তু উপভোগ করিলে আমরা মদগ্রস্ত হইব না। অমত্ত থাকিলে প্রমাদগ্রস্ত হইব না। অপ্রমত্ত থাকিলে আমরা ওই নিবাপে, ওই লোকামিষে মারের ইচ্ছানুরূপ কার্য করিতে বাধ্য হইব না।’ ইহা ভাবিয়া তাঁহারা যেখানে মার এবং মার-পার্ষদের যাতায়াত নাই তথায় আশ্রয় গ্রহণ করিলেন। তথায় আশ্রয় গ্রহণ করিয়া ওই মার-নির্মিত নিবাপে, ওই লোকামিষে অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত না হইয়া উপভোগ্য বস্তু উপভোগ করিলেন। তথায় অনুপ্রবিষ্ট এবং খাদ্যমোহে মূর্ছিত না হইয়া উপভোগ্য বস্তু উপভোগ করায় তাঁহারা মদগ্রস্ত হইলেন না। অমত্ত থাকায় প্রমাদগ্রস্ত হইলেন না। অপ্রমত্ত থাকায় তাঁহারা ওই নিবাপে, ওই লোকামিষে মারের ইচ্ছানুরূপ কার্য করিতে বাধ্য হইলেন না। এইরূপেই, হে ভিক্ষুগণ, চতুর্থ শ্রেণির শ্রমণ-ব্রাহ্মণ মারের ঋদ্ধিপ্রভাব হইতে পরিমুক্ত হইতে পারিলেন। যেমন, হে ভিক্ষুগণ, চতুর্থ মৃগসংঘ, ঠিক উহারই উপমায় আমি চতুর্থ শ্রেণির শ্রমণ-ব্রাহ্মণকে বর্ণনা করি।

১২. হে ভিক্ষুগণ, কিরূপে মার ও মার-পার্ষদের গোচর-সীমার বাহিরে যাওয়া যায়? ভিক্ষু কাম-সম্পর্ক হইতে বিবিক্ত হইয়া, সর্ব অকুশল পরিহার করিয়া, সবিতর্ক, সবিচার, বিবেকজ প্রীতিসুখমণ্ডিত প্রথম ধ্যান লাভ করিয়া তাহাতে বিচরণ করেন। তাহা করিলেই বলা হয় :

মারেরে করেছে অন্ধ সত্যই সে জন
বধি চক্ষু, যাহে পথ না পায় দর্শন।
পাপাত্মা সে মার, যার এই ত্রিভুবন,
মার-চক্ষু অদর্শনে গত যোগী-জন।

পুনশ্চ, ভিক্ষু বিতর্ক-বিচার-উপশমে অধ্যাত্ম-সম্প্রসাদী, চিত্তের একীভাব-আনয়নকারী, বিতর্কাতীত, বিচারাতীত, সমাধিজ প্রীতিসুখমণ্ডিত দ্বিতীয় ধ্যান লাভ করিয়া তাহাতে বিচরণ করেন। তিনি প্রীতিতেও বিরাগী হইয়া উপেক্ষার ভাবে অবস্থান করেন, স্মৃতিমান ও সম্প্রজ্ঞাত হইয়া স্বচিত্তে প্রীতি-নিরপেক্ষ সুখ অনুভব করেন, যে ধ্যানস্তরে আরোহণ করিলে ‘ধ্যায়ী উপেক্ষাসম্পন্ন ও স্মৃতিমান হইয়া প্রীতি-নিরপেক্ষ-সুখে বিচরণ করেন’ বলিয়া আর্যগণ বর্ণনা করেন সেই তৃতীয় ধ্যানস্তরে উন্নীত হইয়া তাহাতে বিচরণ করেন। সর্বদৈহিক সুখ-দুঃখ পরিত্যাগ করিয়া, পূর্বেই সৌমনস্য-দৌর্মনস্য অস্তমিত করিয়া, না-দুঃখ-না-সুখ, উপেক্ষা ও স্মৃতি দ্বারা পরিশুদ্ধ চিত্তে চতুর্থ ধ্যান লাভ করিয়া তাহাতে বিচরণ করেন। তাহা করিলেই বলা হয় :

মারেরে করেছে অন্ধ সত্যই সে জন
বধি চক্ষু, যাহে পথ না পায় দর্শন।
পাপাত্মা সে মার, যার এই ত্রিভুবন,
মার-চক্ষু অদর্শনে গত যোগী-জন।

পুনশ্চ, ভিক্ষু সর্ব রূপ-সংজ্ঞা সমতিক্রম ও প্রতিঘ-সংজ্ঞা অস্তমিত করিয়া নানাত্ম-সংজ্ঞার প্রতি মনস্কার না করিয়া ‘অনন্ত-আকাশ’ এই অনুভূতিতে অনন্ত-আকাশ-আয়তন নামক প্রথম অরূপধ্যান লাভ করিয়া তাহাতে বিচরণ করেন। অতঃপর তিনি সর্বতোভাবে অনন্ত-আকাশ-আয়তন স্তর সমতিক্রম করিয়া ‘অনন্ত-বিজ্ঞান’ এই অনুভূতিতে অনন্ত-বিজ্ঞান-আয়তন নামক দ্বিতীয় অরূপধ্যান লাভ করিয়া তাহাতে বিচরণ করেন। অতঃপর তিনি সর্বতোভাবে অনন্ত-বিজ্ঞান-আয়তন স্তর সমতিক্রম করিয়া ‘বিজ্ঞান ভিন্ন অপর কিছু নাই’ এই অনুভূতিতে আকিঞ্চন-আয়তন নামক তৃতীয় অরূপধ্যান করিয়া তাহাতে বিচরণ লাভ করেন। তদনন্তর তিনি সর্বাংশে আকিঞ্চন-আয়তন অতিক্রম করিয়া নৈবসংজ্ঞা-না-অসংজ্ঞা-আয়তন নামক চতুর্থ অরূপধ্যান লাভ করিয়া তাহাতে বিচরণ করেন। এইরূপে এক একটি অরূপধ্যানস্তর লাভ করিলে বলা হয়:

মারেরে করেছে অন্ধ সত্যই সে জন
বধি চক্ষু, যাহে পথ না পায় দর্শন।
পাপাত্মা সে মার, যার এই ত্রিভুবন,
মার-চক্ষু অদর্শনে গত যোগী-জন।

পরিশেষে তিনি নৈবসংজ্ঞা-না-অসংজ্ঞা-আয়তন অতিক্রম করিয়া সংজ্ঞা-বেদয়িত-নিরোধ নামক লোকোত্তর ধ্যানস্তর লাভ করিয়া তাহাতে বিচরণ করেন। প্রজ্ঞানেত্রে সর্ববিষয় দেখিবার ফলে আসব পরিক্ষীণ হয়। এইরূপে লোকোত্তর ধ্যানস্তর লাভ করিলে বলা হয় :

মারেরে করেছে অন্ধ সত্যই সে জন
বধি চক্ষু, যাহে পথ না পায় দর্শন।
পাপাত্মা সে মার, যার এই ত্রিভুবন,
মার-চক্ষু অদর্শনে গত যোগীজন ॥
লোকোত্তীর্ণ লোকাতীত বুদ্ধ শুদ্ধ জন
বিষাত্মিকা তৃষ্ণা যত করিয়া ছেদন ॥

ভগবান ইহা বিবৃত করিলেন। ভিক্ষুগণ তাহা প্রসন্নমনে শ্রবণ করিয়া আনন্দ প্রকাশ করিলেন।

নিবাপ-সূত্র সমাপ্ত।

The Middle Discourses

|_A. The First Fifty

|__III. The Chapter of Similes

MN25. নিবাপ-সূত্র

Translations [27]

English

繁體字

日本語

Français

Deutsch

Italiano

Español

Português

Русский

Norsk

Magyar

Srpski

Čeština

Slovenščina

हिंदी

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference

Translations [27]

English

繁體字

日本語

Français

Deutsch

Italiano

Español

Português

Русский

Norsk

Magyar

Srpski

Čeština

Slovenščina

हिंदी

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference

Commentaries [0]