আমি এইরূপ শুনিয়াছি।

১. একসময় ভগবান শ্রাবস্তী-সমীপে অবস্থান করিতেছিলেন, জেতবনে, অনাথপিণ্ডিকের আরামে। সেই সময় ব্রাহ্মণ জানুশ্রোণি সর্বশ্বেত-বাড়ব-রথে দিবা দ্বিপ্রহরে শ্রাবস্তী হইতে বাহিরে যান। তিনি দূর হইতে দেখিতে পাইলেন যে, জনৈক ‘পিলোতিক’ পরিব্রাজক আসিতেছেন। তাঁহাকে দেখিয়া ব্রাহ্মণ কহিলেন, ‘মহানুভব বাৎস্যায়ন কোথা হইতে এদিকে আগমন করিতেছেন?’ ‘আমি এইদিক হইতে শ্রমণ গৌতমের নিকট হইতেই আসিতেছি।’ ‘তবে কি আপনি শ্রমণ গৌতমের জ্ঞানশক্তি জানিয়া তাঁহাকে বিজ্ঞ মনে করেন?’ ‘আমি কি ছার! শ্রমণ গৌতমের জ্ঞান-প্রখরতা জানিতে পারিব! তাদৃশ এমন কোনো ব্যক্তি নাই যিনি তাঁহার জ্ঞানশক্তি জানিতে পারেন।’ ‘মহানুভব বাৎস্যায়ন যে অতি উদারভাবে শ্রমণ গৌতমের প্রশংসা করিতেছেন-আমি কোন ছার যে তাঁহার প্রশংসা করিতে পারিব? তিনি প্রশংসিত হইতেও প্রশংসিত, শ্রমণ গৌতম দেবমনুষ্যসকল হইতেই শ্রেষ্ঠ। কী গুণ দেখিতে পাইয়া মহানুভব বাৎস্যায়ন এইরূপে শ্রমণ গৌতমের প্রতি অভিপ্রসন্ন হইয়াছেন?’

“আমি কোন ছার যে শ্রমণ গৌতমে তেমনভাবে অভিপ্রসন্ন হইতে পারিব! যেমন কোনো দক্ষ নাগবনচর নাগবনে প্রবেশ করিয়া ওই নাগবনে দৈর্ঘ্যে আয়ত, এবং প্রস্থে বিস্তৃত বৃহৎ হস্তিপদ দেখিয়া স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ইহা মহানাগ বটে, তেমনভাবেই আমি শ্রমণ গৌতমের মধ্যে এই চারি পদ (চারিটি গুণ) দেখিতে পাই যদ্বারা আমি স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হই : তিনি সম্যকসমু্বদ্ধ, ভগবান কর্তৃক ধর্ম সুব্যাখ্যাত, তাঁহার শ্রাবকসংঘ সুপ্রতিপন্ন।

২. চারি পদ কী কী? প্রথম, এখানে আমি দেখিতে পাই কতিপয় নিপুণ, পরমত-বিশারদ, ‘চুলচেরা’ তার্কিক ও বিচারক ক্ষত্রিয়-পণ্ডিত আছেন যাঁহারা মনে হয় প্রজ্ঞা দ্বারা মিথ্যাদৃষ্টিসমূহ ভেদ করিয়া বিচরণ করেন। তাঁহারাও যখন শুনিতে পান যে শ্রমণ গৌতম অমুক গ্রামে অথবা নিগমে আগমন করিবেন তখন এই ভাবিয়া তাঁহারা প্রশ্ন সুপ্রস্তুত করিয়া রাখেন : ‘আমরা শ্রমণ গৌতমের নিকট উপস্থিত হইয়া এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিব। এইভাবে আমাদের দ্বারা প্রশ্ন জিজ্ঞাসিত হইয়া এইভাবে তিনি ইহা ব্যাখ্যা করিবেন। তাহা হইলে আমরা এই বাদযুক্তির অবতারণা করিব। আমাদের দ্বারা পুনঃ এইরূপে প্রশ্ন জিজ্ঞাসিত হইলে তিনি এইরূপে ইহা ব্যাখ্যা করিবেন। তাহা হইলে আমরা পুনঃ এই বাদযুক্তির অবতারণা করিব।’ শ্রমণ গৌতম অমুক গ্রামে বা নিগমে আসিবেন শুনিয়া তাঁহারা তাঁহার নিকট উপস্থিত হইলেন। শ্রমণ গৌতম তাঁহাদিগকে ধর্মকথায় সত্য সন্দর্শন করান, সংদৃপ্ত করেন, সমুত্তেজিত করেন, তাঁহাদিগের মধ্যে সম্প্রহর্ষ উৎপাদন করেন। তাঁহারা শ্রমণ গৌতমের ধর্মকথায় সত্য-সন্দর্শিত, সংদৃপ্ত, সমুত্তেজিত এবং সম্প্রহর্ষজাত হইয়া শ্রমণ গৌতমকে কোনো প্রশ্নই জিজ্ঞাসা করিতে পারেন না, বাদযুক্তির অবতারণা তো দূরের কথা। তাঁহারা একান্তভাবে শ্রমণ গৌতমের শিষ্যরূপে শরণাগত হন। যখনই আমি শ্রমণ গৌতমের মধ্যে এই প্রথম পদ দেখিতে পাই, তখন স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হই : ইনি সম্যকসম্বুদ্ধ ভগবান, তৎকর্তৃক ধর্ম সুব্যাখ্যাত, তাঁহার শিষ্যসংঘ সুপ্রতিপন্ন। ব্রাহ্মণ-পণ্ডিত, গৃহপতি-পণ্ডিত এবং শ্রমণ-পণ্ডিত সম্বন্ধেও এইরূপ। তাঁহারা একান্তভাবে প্রব্রজ্যা (দীক্ষা)-লাভের জন্য শ্রমণ গৌতমের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেন। শ্রমণ গৌতম তাঁহাদিগকে প্রব্রজিত করেন। তাঁহারা শাসনে প্রব্রজিত হইয়া উপক্লপ্ত, অপ্রমত্ত, আতাপী ও সাধনা-তৎপর হইয়া অবস্থান করেন, যাহাতে তাঁহারা অচিরে যে-জন্য কুলপুত্রগণ সম্যকভাবে আগার হইতে অনাগারিকরূপে প্রব্রজিত হন সেই অনুত্তর ব্রহ্মচর্য-পরিসমাপ্তি এই দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষজীবনে) স্বয়ং অভিজ্ঞা দ্বারা সাক্ষাৎকার করিয়া উহাতে অবস্থান করেন। তখন তাঁহারা এ কথা ব্যক্ত করেন : যদি আমরা তাঁহার নিকট না আসিতাম, তাহা হইলে নষ্ট হইতাম, নিশ্চয় নষ্ট হইতাম, পূর্বে আমরা যথার্থ শ্রমণ না হইয়াও নিজেকে শ্রমণ বলিয়া জানিয়াছি, যথার্থ ব্রাহ্মণ না হইয়াও নিজেকে ব্রাহ্মণ, যথার্থ অর্হৎ না হইয়াও নিজেকে অর্হৎ বলিয়া জানিয়াছি। এখন আমরা শ্রমণ বটে, ব্রাহ্মণ বটে, অর্হৎ বটে। যখন আমি শ্রমণ গৌতমের মধ্যে এই চতুর্থ পদ দেখিতে পাই তখন স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হই : ইনি সম্যকসম্বুদ্ধ ভগবান, তৎকর্তৃক ধর্ম সুব্যাখ্যাত, তাঁহার শিষ্যসংঘ সুপ্রতিপন্ন। যেহেতু আমি শ্রমণ গৌতমের মধ্যে এই চারি পদ (চারিটি গুণ) দেখিয়াছি, আমি স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছি : ইনি সম্যকসম্বুদ্ধ ভগবান, তৎকর্তৃক ধর্ম সুব্যাখ্যাত, তাঁহার শিষ্যসংঘ সুপ্রতিপন্ন।”

৩. ইহা বিবৃত হইলে ব্রাহ্মণ জানুশ্রোণি সর্বশ্বেত-বাড়ব-রথ হইতে অবরোহণ করিয়া উত্তরীয়ে একাংস আবৃত করিয়া ভগবানের উদ্দেশে কৃতাঞ্জলি হইয়া তিনবার উদাত্তস্বরে এই আবেগপূর্ণ উদান উচ্চারণ করিলেন : নমো তস্‌স ভগবতো অরহতো সম্মাসম্বুদ্ধস্‌স। ‘সেই ভগবান অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধকে আমি নমস্কার করি।’ মাত্র অল্প কয়েকবার, ক্বচিৎ কদাচিৎ আমরা মহানুভব গৌতমের সান্নিধ্যে আগমন করিয়াছি, মাত্র অল্প কয়েকবার কোনো কোনো বিষয়ে বাক্যালাপ হইয়াছে। অনন্তর ব্রাহ্মণ জানুশ্রোণি ভগবানের নিকট উপস্থিত হইলেন, উপস্থিত হইয়া প্রীত্যালাপচ্ছলে কুশলপ্রশ্নাদি বিনিময় করিয়া সসম্ভ্রমে একান্তে উপবেশন করিলেন। একান্তে উপবিষ্ট হইয়া জানুশ্রোণি ব্রাহ্মণ ‘পিলোতিক’ পরিব্রাজকের সহিত তাঁহার যে-সকল আলাপ হইয়াছিল তৎসমস্ত ভগবানের নিকট যথাযথ বিবৃত করিলেন। ভগবান কহিলেন, ব্রাহ্মণ, ইহাতে হস্তিপদোপমা বিশদভাবে পরিপূর্ণ হয় নাই, যাহাতে এই উপমা বিস্তারিতভাবে পরিপূর্ণ হয়, তাহা শ্রবণ করো, সুন্দরভাবে মনোনিবেশ করো, আমি তাহা বিবৃত করিতেছি। ‘তথাস্তু বলিয়া জানুশ্রোণি ব্রাহ্মণ তাঁহার সম্মতিজ্ঞাপন করিলেন।

৪. ব্রাহ্মণ, মনে করো, কোনো এক নাগবনচারী নাগবনে প্রবেশ করিয়া দেখিতে পান, ওই নাগবনে দৈর্ঘ্যে আয়ত ও প্রস্থে বিস্তৃত এক হস্তিপদ রহিয়াছে। যদি তিনি দক্ষ নাগবনচারী হন, তাহা হইলে তিনি তখন এই স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হন না যে, ইহা সত্যই মহানাগ, ইহার কারণ কী? যেহেতু নাগবনে কতকগুলি বামনজাতীয়া হস্তিনী আছে যাহাদের পদগুলি বৃহৎ; দৃষ্ট হস্তিপদ, দৃষ্ট বৃহৎ হস্তিপদ ওই বামনজাতীয়া হস্তিনীর পদও তো হইতে পারে। তিনি লক্ষিত হস্তীর অনুগমন করেন, উহার অনুগমন করিয়া দেখিতে পান নাগবনে দৈর্ঘ্যে আয়ত ও প্রস্থে বিস্তৃত বৃহৎ হস্তিপদ যেমন আছে তেমন নাগদেহস্পৃষ্ট উচ্চ বৃক্ষশাখাও আছে। যিনি দক্ষ নাগবনচারী, তিনি তাহাতেও তখন তখন স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হন না যে, ইহা মহানাগ বটে। ইহার কারণ কী? ব্রাহ্মণ, নাগবনে উচ্চ-করালদন্তা নামে কতকগুলি হস্তিনী আছে যাহাদের পদগুলি বৃহৎ; দৃষ্ট হস্তিপদ তাহাদের পদও তো হইতে পারে। তিনি লক্ষিত হস্তীর অনুগমন করেন, উহার অনুগমন করিয়া দেখিতে পান নাগবনে দৈর্ঘ্যে আয়ত, প্রস্থে বিস্তৃত বৃহৎ হস্তিপদ যেমন আছে তেমন নাগদেহস্পৃষ্ট উচ্চ বৃক্ষশাখা এবং নাগদন্তচ্ছিন্ন উচ্চ বৃক্ষকা-ও আছে। যিনি দক্ষ নাগবনচারী তিনি তাহাতেও তখনোই স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হন না যে, ইহা মহানাগ বটে। ইহার কারণ কী? ব্রাহ্মণ, ‘উচ্চ-কণের্বকা’ (উচ্চ-মুকুলদন্তা) নামে কতকগুলি হস্তিনী আছে যাহাদের পদগুলি বৃহৎ; দৃষ্ট হস্তিপদ তাহাদের পদও তো হইতে পারে। তিনি লক্ষিত হস্তীর অনুগমন করেন, উহার অনুগমন করিয়া দেখিতে পান নাগবনে দৈর্ঘ্যে আয়ত, প্রস্থে বিস্তৃত বৃহৎ হস্তিপদ যেমন আছে তেমন নাগদেহস্পৃষ্ট উচ্চ বৃক্ষশাখা, নাগদন্তচ্ছিন্ন উচ্চ বৃক্ষকা- এবং নাগভগ্ন উচ্চ বৃক্ষশাখাও আছে। তিনি সেই নাগকেও দেখিতে পান : উহা বৃক্ষমূলে কিংবা উন্মুক্ত আকাশতলে গমন করিতেছে, দাঁড়াইয়া আছে, উপবিষ্ট অথবা শায়িত অবস্থায় আছে। তখনোই তিনি এই স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ইহাই সেই মহানাগ বটে।

ব্রাহ্মণ, এইরূপেই তথাগত ইহজগতে আবির্ভূত হন, যিনি অর্হৎ, সম্যকসম্বুদ্ধ, বিদ্যাচরণসম্পন্ন, সুগত, লোকবিদ, অনুত্তর দম্যপুরুষসারথি, দেবমনুষ্যগণের শাস্তা, বুদ্ধ ভগবান। তিনি দেবলোক, মারলোক, ব্রহ্মলোক, শ্রমণ-ব্রাহ্মণমণ্ডল, জীবলোক, দেবাখ্য ও অপরাপর মনুষ্যগণসহ এই (সমগ্র) জগৎ স্বয়ং অভিজ্ঞা দ্বারা প্রত্যক্ষ করিয়া উহার স্বরূপ প্রকাশ করেন। তিনি ধর্মোপদেশ প্রদান করেন, যাহার আদিতে কল্যাণ, মধ্যে কল্যাণ এবং অন্তে কল্যাণ, যাহা অর্থযুক্ত ও ব্যঞ্জনযুক্ত, তিনি সর্বাঙ্গ-পরিপূর্ণ ও পরিশুদ্ধ ব্রহ্মচর্যই প্রকাশ করেন। সেই ধর্ম কোনো এক গৃহপতি কিংবা গৃহপতিপুত্র অথবা অপর কোনো কুলে জাত ব্যক্তি শ্রবণ করেন। তিনি সেই ধর্ম শ্রবণ করিয়া তথাগতের প্রতি শ্রদ্ধাবান হন। তিনি ওই শ্রদ্ধাসম্পদে সমন্বিত হইয়া এইরূপে প্রত্যবেক্ষণ করেন : “গৃহবাস সবাধ, রাগরজাকীর্ণ পথ; প্রব্রজ্যা উন্মুক্ত-আকাশতুল্য, গৃহে বাস করিয়া একান্ত-পরিপূর্ণ, একান্ত-পরিশুদ্ধ, ‘শঙ্খ-লিখিত’ ব্রহ্মচর্য আচরণ সুকর নহে, অতএব আমার পক্ষে কেশ-শ্মশ্রু অপসারিত করিয়া, কাষায় বস্ত্রে দেহ আচ্ছাদিত করিয়া আগার হইতে অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করা কর্তব্য।” তিনি পরবর্তীকালে অল্প অথবা মহাভোগৈশ্বর্য, অল্প অথবা মহা জ্ঞাতি-পরিজন পরিত্যাগ করিয়া, কেশ-শ্মশ্রু অপসারিত করিয়া, কাষায় বস্ত্রে দেহাচ্ছাদিত করিয়া আগার হইতে অনাগারিকরূপে প্রব্রজিত হন।

৫. তিনি এইরূপে প্রব্রজিত হইয়া ভিক্ষুগণের অনুযায়ী শিক্ষা ও বৃত্তি সমাপন্ন হইয়া প্রাণিহত্যা পরিত্যাগপূর্বক প্রাণিহত্যা হইতে প্রতিবিরত হন; দণ্ড-বিরহিত ও শস্ত্র-বিরহিত হইয়া তিনি প্রাণিহত্যা বিষয়ে লজ্জিত, জীবের প্রতি দয়াশীল এবং সর্ব প্রাণীর হিতাকাঙ্ক্ষী হইয়া বিচরণ করেন। অদত্ত-আদান (চৌর্য) পরিত্যাগ করিয়া তিনি অদত্ত-আদান হইতে প্রতিবিরত হন; (শুধু) দত্তগ্রাহী ও দত্ত-প্রত্যাকাঙ্ক্ষী হইয়া তিনি সদ্ভাবে ও শুদ্ধান্তঃকরণে বিচরণ করেন। অব্রহ্মচর্য পরিত্যাগ করিয়া তিনি ব্রহ্মচারী হন, পাপ হইতে দূরে অবস্থান করেন, লোক-আচরিত মৈথুন হইতে বিরত হন। মৃষাবাদ (সত্যের অপলাপ) পরিত্যাগ করিয়া তিনি মৃষাবাদ হইতে প্রতিবিরত হন; সত্যবাদী ও সত্যসন্ধ হইয়া তিনি সত্যে স্থিত, লোকের বিশ্বাসভাজন ও জনগণের পক্ষে অবিসংবাদী হন। পিশুন বাক্য পরিত্যাগ করিয়া তিনি পিশুন বাক্য হইতে প্রতিবিরত হন; এস্থান হইতে শুনিয়া তিনি অন্যত্র তাহাদের মধ্যে ভেদ ঘটাইবার জন্য কিছু বলেন না; অন্যত্র শুনিয়া তিনি এস্থানে ইহাদের মধ্যে ভেদ ঘটাইবার জন্য কিছু বলেন না। এইরূপে তিনি বিচ্ছিন্নের মধ্যে মিলনকর্তা, মিলিতের মধ্যে উৎসাহদাতা, ঐক্যাগ্রহী, ঐক্যরত ও ঐক্যানন্দি হইয়া ঐক্যকর বাক্য বলেন। পরুষ বাক্য পরিত্যাগ করিয়া তিনি পরুষ বাক্য হইতে প্রতিবিরত হন; যে বাক্য নির্দোষ, কর্ণসুখকর, প্রীতিকর, হৃদয়গ্রাহী পুরজনোচিত, বহুজন-কান্ত, বহুজন-মনোজ্ঞ তিনি সেইরূপ বাক্যই বলেন। সম্প্রলাপ (বৃথা বাক্য) পরিত্যাগ করিয়া তিনি সম্প্রলাপ হইতে প্রতিবিরত হন; তিনি ‘কালবাদী’, ‘ভূতবাদী’, ‘অর্থবাদী’, ‘ধর্মবাদী’, ‘বিনয়বাদী’, তিনি যথাকালে উপমার সহিত নিধানযোগ্য বাক্য বলেন যাহা সমাপ্ত এবং অর্থযুক্ত।

তিনি বীজগ্রাম ও ভূতগ্রাম ছেদনাদি কার্য হইতে প্রতিবিরত হন, একাহারী হইয়া রাত্রিভোজন ও বিকালভোজন হইতে বিরত হন। তিনি নৃত্য, গীত ও বাদিত্রাদি কৌতূহলোদ্দীপক দর্শন হইতে প্রতিবিরত হন; ধারণ-মণ্ডন-বিভূষণ-উপকরণমালা, গন্ধ ও বিলেপন হইতে প্রতিবিরত হন; উচ্চ শয্যা ও মহাশয্যা ব্যবহার হইতে প্রতিবিরত হন; জাতরূপ ও রজত প্রতিগ্রহণ হইতে প্রতিবিরত হন; অপক্ব ধান্য, অপক্ব মাংস, স্ত্রী, কুমারী, দাস, দাসী, অজ, মেষ, কুক্কুট, শূকর, হস্তী, গো, অশ্ব, বাড়ব, ক্ষেত্র ও বাস্তু প্রতিগ্রহণ হইতে প্রতিবিরত হন; নীচ দৌত্যকার্য হইতে প্রতিবিরত হন; ক্রয়বিক্রয় কার্য হইতে প্রতিবিরত হন; তুলাকূট, কাংস্যকূট ও মানকূট হইতে প্রতিবিরত হন; উৎকোচ-গ্রহণ, প্রতারণা এবং মায়া ও কুহক-বশে বঞ্চনাদি কার্য হইতে প্রতিবিরত হন; ছেদন, বধ, বন্ধন, আতঙ্ক-উৎপাদন, বিলোপ-সাধন ও সাহসিক কার্য হইতে প্রতিবিরত হন। তিনি মাত্র দেহাচ্ছাদনের পক্ষে পর্যাপ্ত চীবর এবং ক্ষুন্নিবৃত্তির পক্ষে পর্যাপ্ত ভিক্ষান্ন লইয়া সন্তুষ্ট হন, তিনি (স্বেচ্ছায়) যেখানে সেখানে গমন করেন, (ত্রিচীবর, ভিক্ষাপাত্র প্রভৃতি ভিক্ষুর ব্যবহার্য অষ্টবস্তু) মাত্র সঙ্গে লইয়া যান। যেমন পক্ষী-সকুণ (স্বেচ্ছায়) যেখানে সেখানে উড়িয়া যায়, মাত্র আপন পক্ষ-তুণ্ডাদি সম্বল করিয়া উড়িয়া যায়, তেমনভাবেই ভিক্ষু মাত্র দেহাচ্ছাদনের পক্ষে পর্যাপ্ত চীবর এবং ক্ষুন্নিবৃত্তির পক্ষে পর্যাপ্ত ভিক্ষান্ন লইয়া সন্তুষ্ট হন, যখন যেখানে (স্বেচ্ছায়) গমন করেন, (তাঁহার ব্যবহার্য অষ্টবস্তু) মাত্র সঙ্গে লইয়া যান। তিনি এইরূপ আর্য, নির্দোষ, শ্রেষ্ঠশীলসমষ্টিতে সমন্বিত হইয়া অধ্যাত্মে অনবদ্য সুখ অনুভব করেন।

৬. তিনি চক্ষু দ্বারা রূপ (দৃশ্যবস্তু) দর্শন করিয়া (স্ত্রী-পুরুষাদি ভেদে শুভ) নিমিত্তগ্রাহী এবং (হস্ত-পদ-শীর্ষ-হাস্য-লাস্য-বাক্য-দৃষ্টি ইত্যাদি ভেদে) কামব্যঞ্জক আচারগ্রাহী হন না। যে কারণে চক্ষু-ইন্দ্রিয় সম্পর্কে অসংযত হইয়া বিচরণ করিলে অভিধ্যা (লোভ) ও দৌর্মনস্যাদি পাপ অকুশল ধর্ম অনুস্রবিত হয় তিনি উহার সংযমের জন্য অগ্রসর হন, চক্ষু-ইন্দ্রিয় রক্ষা করেন, চক্ষু-ইন্দ্রিয় বিষয়ে সংযম প্রাপ্ত হন। শ্রোত্র এবং শব্দ, ঘ্রাণ এবং গন্ধ, জিহ্বা এবং রস, কায় (ত্বক) এবং স্পর্শ, মন এবং ধর্ম সম্বন্ধেও এইরূপ। তিনি এইরূপে আর্য ইন্দ্রিয়সংবর (ইন্দ্রিয়সংযম) দ্বারা সমন্বিত হইয়া অধ্যাত্মে অক্লেশব্যাপ্ত (অপাপসিক্ত, ক্লেশবিরহিত) সুখ অনুভব করেন।

৭. তিনি অভিগমনে প্রত্যাগমনে, অবলোকনে, বিলোকনে, সংকোচনে, প্রসারণে, সঙ্ঘাটি-পাত্র-চীবর-ধারণে, ভোজনে, পানে, খাদনে, আস্বাদনে, মলমূত্র-ত্যাগে, গতিতে, স্থিতিতে, উপবেশনে, সুপ্তিতে, জাগরণে, ভাষণে, তূষ্ণীম্ভাবে, স্মৃতিসম্প্রজ্ঞান অনুশীলন করেন। তিনি এইরূপ আর্যশীলসমষ্টির দ্বারা, এইরূপ আর্য ইন্দ্রিয়সংযম দ্বারা এবং এইরূপ আর্য স্মৃতিসম্প্রজ্ঞান দ্বারা সমন্বিত হইয়া অরণ্য, বৃক্ষমূল (তরুতল), পর্বত, কন্দর, গিরিগুহা, শ্মশান, বনপ্রস্থ, উন্মুক্ত আকাশতল ও পলালপুঞ্জের (তৃণকুটিরের) ন্যায় নির্জন শয্যাসন ভজনা (অভ্যাস) করেন। তিনি ভিক্ষান্নসংগ্রহ করিয়া ভোজনশেষে (বিহারে) ফিরিবার সময় পর্যঙ্কবন্ধ হইয়া (পদ্মাসন করিয়া), দেহাগ্রভাগ ঋজুভাবে রাখিয়া, পরিমুখে (লক্ষ্যাভিমুখে) স্মৃতি উপস্থাপিত করিয়া উপবেশন করেন। তিনি জগতে অভিধ্যা (লোভ, অনুরাগ, কামচ্ছন্দ) পরিত্যাগ করিয়া অভিধ্যা-বিগত চিত্তে বিচরণ করেন, অভিধ্যা হইতে চিত্ত পরিশুদ্ধ করেন। ব্যাপাদ (ক্রোধ) এবং দ্বেষপ্রকোপ পরিত্যাগ করিয়া তিনি অব্যাপন্ন চিত্তে সর্বজীবের হিতাকাঙ্ক্ষী হইয়া বিচরণ করেন, ব্যাপাদ এবং দ্বেষপ্রকোপ হইতে চিত্ত পরিশুদ্ধ করেন। স্ত্যানমিদ্ধ (তন্দ্রালস্য, দেহ ও মনের জড়তা) পরিত্যাগ করিয়া তিনি স্ত্যানমিদ্ধ-বিগত, আলোক-সংজ্ঞায় উদ্‌বুদ্ধ এবং স্মৃতি-সম্প্রজ্ঞান-সমন্বিত হইয়া বিচরণ করেন, স্ত্যানমিদ্ধ হইতে চিত্ত পরিশুদ্ধ করেন। ঔদ্ধত্য-কৌকৃত্য পরিত্যাগ করিয়া তিনি অনুদ্ধত এবং অধ্যাত্মে উপশান্ত-চিত্ত হইয়া বিচরণ করেন, ঔদ্ধত্য-কৌকৃত্য হইতে চিত্ত পরিশুদ্ধ করেন। বিচিকিৎসা (সংশয়) পরিত্যাগ করিয়া তিনি বিচিকিৎসা-উত্তীর্ণ এবং কুশল ধর্মবিষয়ে ‘অকথংকথী’ (অসন্দিগ্ধ) হইয়া বিচরণ করেন, বিচিকিৎসা হইতে চিত্ত পরিশুদ্ধ করেন।

৮. তিনি চিত্তের উপক্লেশ এবং প্রজ্ঞার দৌর্বল্যের কারণ এই পঞ্চ-নীবরণ (আবরণ) পরিত্যাগ করেন, যাবতীয় কাম অকুশল ধর্ম হইতে বিচ্যুত হইয়া সবিতর্ক, সবিচার, বিবেকজ প্রীতিসুখমণ্ডিত প্রথম ধ্যানস্তরে উপনীত হইয়া বিচরণ করেন। ব্রাহ্মণ, ইহাকেই বলে তথাগত-পদ, তথাগত-নিষেবিত, তথাগত-রাজিত জ্ঞানপদ। কিন্তু ইহাতেও আর্যশ্রাবক এই স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হন না যে, ভগবান সম্যকসম্বুদ্ধ, তাঁহার দ্বারা ধর্ম সুব্যাখ্যাত এবং তাঁহার শ্রাবকসংঘ সুপ্রতিপন্ন। পুনশ্চ, ব্রাহ্মণ, ভিক্ষু বিতর্ক-বিচার-উপশমে অধ্যাত্ম-সম্প্রসাদী, চিত্তের একীভাব-আনয়নকারী, বিতর্কাতীত, বিচারাতীত, সমাধিজ প্রীতিসুখমণ্ডিত দ্বিতীয় ধ্যানস্তরে উপনীত হইয়া বিচরণ করেন। ব্রাহ্মণ, ইহাকেই বলে তথাগত-পদ, তথাগত-নিষেবিত, তথাগত-রাজিত জ্ঞানপদ। কিন্তু ইহাতেও আর্যশ্রাবক এই স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হন না যে, ভগবান সম্যকসম্বুদ্ধ তাঁহার দ্বারা ধর্ম সুব্যাখ্যাত এবং তাঁহার শ্রাবকসংঘ সুপ্রতিপন্ন। তৃতীয় এবং চতুর্থ ধ্যানস্তর সম্বন্ধেও এইরূপ।

৯. তিনি এইরূপে সমাহিত চিত্তের পরিশুদ্ধ, পরিষ্কৃত, অনঞ্জন, উপক্লেশ-বিগত, মৃদুভূত, কমনীয়, স্থিত ও অনেজ অবস্থায় জাতিস্মরজ্ঞানাভিমুখে চিত্ত নমিত করেন। তিনি নানাপ্রকারে বহুপূর্ব জন্ম অনুস্মরণ করেন; এক জন্ম, দুই জন্ম, তিন জন্ম, চারি জন্ম, পাঁচ জন্ম, দশ জন্ম, বিশ জন্ম, ত্রিশ জন্ম, চল্লিশ জন্ম, পঞ্চাশ জন্ম, শত জন্ম, সহস্র জন্ম, এমনকি শতসহস্র জন্ম; বহু সংবর্ত-কল্পে, বহু বিবর্ত-কল্পে, এমনকি বহু সংবর্ত-বিবর্ত-কল্পে ওই স্থানে আমি ছিলাম, এই ছিল আমার নাম, এই আমার গোত্র, এই আমার জাতিবর্ণ, এই আমার আহার, এইরূপ আমার সুখ-দুঃখ-অনুভব, এই আমার পরমায়ু, তথা হইতে চ্যুত হইয়া তত্র (ওই যোনিতে) আমি উৎপন্ন হই; তথায় ছিল আমার এই নাম, এই গোত্র, এই জাতিবর্ণ, তথা হইতে চ্যুত হইয়া আমি অত্র (এই যোনিতে) উৎপন্ন হইয়াছি। এইভাবে আকার ও উদ্দেশ, স্বরূপ ও গতিসহ নানাপ্রকারে বহু পূর্বজন্ম অনুস্মরণ করেন। ব্রাহ্মণ, ইহাকেই বলে তথাগত-পদ, তথাগত-নিষেবিত, তথাগত-রাজিত জ্ঞানপদ। কিন্তু ইহাতেও আর্যশ্রাবক এই স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হন না যে, ভগবান সম্যকসম্বুদ্ধ, তাঁহার দ্বারা ধর্ম সুব্যাখ্যাত এবং তাঁহার শ্রাবকসংঘ সুপ্রতিপন্ন।

১০. তিনি এইরূপে সমাহিত চিত্তের পরিশুদ্ধ, পর্যবদাত, নিরঞ্জন, উপক্লেশ-বিগত, মৃদুভূত, কমনীয়, স্থিত ও অনেজ অবস্থায় সত্ত্বগণের চ্যুতি-উৎপত্তি (গতিপরম্পরা) জ্ঞানাভিমুখে চিত্ত নমিত করেন। তিনি দিব্যচক্ষে, বিশুদ্ধ লোকাতীত অতীন্দ্রিয় দৃষ্টিতে দেখিতে পান : জীবগণ একযোনি হইতে চ্যুত হইয়া অপর যোনিতে উৎপন্ন হইতেছে, প্রকৃষ্টরূপে জানিতে পারেন : হীনোৎকৃষ্ট-জাতীয় উত্তম-অধম বর্ণের জীবগণ স্ব স্ব কর্মানুসারে সুগতি-দুর্গতি প্রাপ্ত হইতেছে। এ-সকল মহানুভব জীব কায়দুশ্চরিত্র-সমন্বিত, বাগ্‌দুশ্চরিত্র-সমন্বিত, মনোদুশ্চরিত্র-সমন্বিত, আর্যগণের নিন্দুক, মিথ্যাদৃষ্টিসম্পন্ন এবং মিথ্যাদৃষ্টি-প্রণোদিত কর্ম-পরিগ্রাহী হইবার ফলে দেহাবসানে মৃত্যুর পর, অপায়-দুর্গতিতে, বিনিপাত-নিরয়ে (নরকে) উৎপন্ন হইতেছে; অথবা এ-সকল মহানুভব জীব কায়সুচরিত্র-সমন্বিত, বাক্‌সুচরিত্র-সমন্বিত, মনঃসুচরিত্র-সমন্বিত, আর্যগণের অনিন্দুক, সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন এবং সম্যক দৃষ্টি-প্রণোদিত কর্ম-পরিগ্রাহী হইবার ফলে দেহাবসানে মৃত্যুর পর, সুগতি স্বর্গলোকে উৎপন্ন হইতেছে, প্রকৃষ্টরূপে জানিতে পারেন : হীনোৎকৃষ্টজাতীয়, উত্তম-অধমবর্ণের জীবগণ আপনাপন কর্মানুসারে সুগতি-দুর্গতি প্রাপ্ত হইতেছে। ব্রাহ্মণ, ইহাকেই বলে তথাগত-পদ, তথাগত-নিষেবিত, তথাগত-রাজিত জ্ঞানপদ। কিন্তু ইহাতেও আর্যশ্রাবক এই স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হন না যে, ভগবান সম্যকসম্বুদ্ধ, তাঁহার ধর্ম সুব্যাখ্যাত এবং তাঁহার শ্রাবকসংঘ সুপ্রতিপন্ন।

১১. তিনি এইরূপে সমাহিত চিত্তের পরিশুদ্ধ, পর্যবদাত, নিরঞ্জন, উপক্লেশ-বিগত, মৃদুভূত, কমনীয়, স্থিত ও অনেজ অবস্থায় আসব-ক্ষয়-জ্ঞানাভিমুখে চিত্ত নমিত করেন। তিনি উন্নত জ্ঞানে যথার্থ জানিতে পারেন : ইহা ‘দুঃখ’ আর্যসত্য, ইহা ‘দুঃখসমুদয়’ আর্যসত্য, ইহা ‘দুঃখনিরোধ’ আর্যসত্য, ইহা ‘দুঃখনিরোধগামী-প্রতিপদ’ আর্যসত্য; এ-সকল আসব, ইহা আসব-সমুদয়, ইহা আসব-নিরোধ, ইহা আসব-নিরোধগামী প্রতিপদ। ব্রাহ্মণ, ইহাকেই বলে তথাগত-পদ, তথাগত-নিষেবিত, তথাগত-রাজিত জ্ঞানপদ। কিন্তু ইহাতেও আর্যশ্রাবক এই স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হন না যে, ভগবান সম্যকসম্বুদ্ধ, তাঁহার দ্বারা ধর্ম সুব্যাখ্যাত এবং তাঁহার শ্রাবকসংঘ সুপ্রতিপন্ন।

১২. এইরূপে আর্যসত্য জানিবার এবং দেখিবার ফলে কামাসব হইতে তাঁহার চিত্ত বিমুক্ত হয়, ভবাসব হইতে তাঁহার চিত্ত বিমুক্ত হয়, অবিদ্যাসব হইতেও তাঁহার চিত্ত বিমুক্ত হয়, বিমুক্ত চিত্তে ‘বিমুক্ত হইয়াছি’ এই জ্ঞান উদিত হয়; তিনি উন্নত জ্ঞানে জানিতে পারেন : ‘জন্মবীজ ক্ষীণ হইয়াছে, ব্রহ্মচর্যব্রত উদ্‌যাপিত হইয়াছে, যাহা কিছু করিবার ছিল করা হইয়াছে, ইহার পর এখানে আর আসিতে হইবে না’। ব্রাহ্মণ, ইহাকেই বলে তথাগত-পদ, তথাগত-নিষেবিত, তথাগত-রাজিত জ্ঞানপদ। ইহাতেই, ব্রাহ্মণ, আর্যশ্রাবক এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ভগবান সম্যকসম্বুদ্ধ, তাঁহার দ্বারা ধর্ম সুব্যাখ্যাত এবং তাঁহার শ্রাবকসংঘ সুপ্রতিপন্ন। ইহাতেই, ব্রাহ্মণ, হস্তিপদোপমার তাৎপর্য বিশদভাবে পরিপূর্ণ হয়।

১৩. ইহা কথিত হইলে পর ব্রাহ্মণ জানুশ্রোণি ভগবানকে কহিলেন, অতি সুন্দর, হে গৌতম, অতি মনোহর, হে গৌতম, যেমন কেহ উল্টানকে সোজা, আবৃতকে অনাবৃত, বিমূঢ়কে পথনির্দেশ, অথবা অন্ধকারে তৈলপ্রদীপ ধারণ করে যাহাতে চক্ষুষ্মান ব্যক্তি রূপ (দৃশ্যবস্তু) দেখিতে পায়, এইরূপে মহানুভব গৌতম কর্তৃক বহু পর্যায়ে, বিবিধ যুক্তিতে, ধর্ম (জ্ঞেয় বিষয়) প্রকাশিত হইয়াছে। আমি মহানুভব গৌতমের, তৎপ্রবর্তিত ধর্মের এবং তৎপ্রতিষ্ঠিত ভিক্ষুসংঘের শরণাগত হইতেছি, আজ হইতে আমরণ শরণাগত আমাকে মহানুভব গৌতম উপাসকরূপে অবধারণ করুন।

ক্ষুদ্র-হস্তিপদোপম-সূত্র সমাপ্ত।

The Middle Discourses

|_A. The First Fifty

|__III. The Chapter of Similes

MN27. ক্ষুদ্রহস্তিপদোপম-সূত্র

Translations [29]

English

繁體字

日本語

한국어

Français

Deutsch

Italiano

Español

Català

Português

Русский

Norsk

Srpski

Čeština

Slovenščina

Türkçe

हिंदी

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference