আমি এইরূপ শুনিয়াছি।

১. একসময় ভগবান শ্রাবস্তী-সমীপে অবস্থান করিতেছিলেন, জেতবনে, অনাথপিণ্ডিকের আরামে। তথায় আয়ুষ্মান সারিপুত্র সমবেত ভিক্ষুদিগকে আহ্বান করিলেন, ‘বন্ধুগণ’।‘হাঁ বন্ধু’ বলিয়া প্রত্যুত্তরে ভিক্ষুগণ তাঁহাদের সম্মতি জানাইলেন। আয়ুষ্মান সারিপুত্র কহিলেন :

২. ‘বন্ধুগণ, যেমন জঙ্গম (গমনশীল) জীবের যত প্রকার পদচিহ্ন আছে সমস্তই হস্তিপদে অন্তর্লীন হয়, হস্তিপদই তন্মধ্যে প্রধান বলিয়া আখ্যাত হয়, যেহেতু ইহাই সর্বাপেক্ষা বৃহৎ, তেমনভাবেই বন্ধুগণ, যাহা কিছু কুশল ধর্ম সমস্তই চারি আর্যসত্যে সংগৃহীত হয়। কোন কোন চারি আর্যসত্যে? ‘দুঃখ’ আর্যসত্যে, ‘দুঃখসমুদয়’ আর্যসত্যে, ‘দুঃখনিরোধ’ আর্যসত্যে এবং ‘দুঃখনিরোধগামী প্রতিপদ’ আর্যসত্যে। ‘দুঃখ’ আর্যসত্য কী? জন্ম দুঃখ, জরা দুঃখ, মরণ দুঃখ, শোক-পরিদেবন দুঃখ, দুঃখ-দৌর্মনস্য ও নৈরাশ্য দুঃখ, যাহা পাইতে ইচ্ছা করে তাহা লাভ করে না দুঃখ, সংক্ষেপে পঞ্চ-উপাদানস্কন্ধই দুঃখ। পঞ্চোপাদান-স্কন্ধ কী কী? যথা : রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার ও বিজ্ঞান। বন্ধুগণ, রূপ-উপাদানস্কন্ধ কী? চারি মহাভূত এবং চারি মহাভূত হইতে উৎপন্ন রূপ। বন্ধুগণ, চারি মহাভূত কী কী? পৃথিবীধাতু, অপধাতু, তেজোধাতু ও বায়ুধাতু।

বন্ধুগণ, পৃথিবীধাতু কী? ইহা অধ্যাত্মও হইতে পারে, বাহ্যও হইতে পারে। অধ্যাত্ম পৃথিবীধাতু কী? যাহা অধ্যাত্ম, ব্যক্তিগত, কক্খট (স্তব্ধ), খর (তীক্ষ্মস্পর্শ, কর্কশ) ও ‘উপাদত্ত’ (দেহান্তর্গত); যথা : কেশ, লোম, নখ, দন্ত, ত্বক, মাংস, স্নায়ু, অস্থি, অস্থিমজ্জা, বৃক্ক, হৃদয়, যকৃৎ, ক্লোম, প্লীহা, ফুসফুস, অন্ত্র, অন্ত্রগুণ, উদর, করীষ, অথবা এইরূপ যাহা কিছু অধ্যাত্ম, ব্যক্তিগত, কঠিন, কর্কশ ও দেহান্তর্গত। বন্ধুগণ, ইহাকেই বলে অধ্যাত্ম পৃথিবীধাতু। যাহা অধ্যাত্ম পৃথিবীধাতু এবং যাহা বাহ্য পৃথিবীধাতু সমস্তই পৃথিবীধাতু বটে। ‘তাহা আমার নয়’, ‘আমি তাহা নহি’, ‘তাহা আমার আত্মা নহে’ এইরূপে বিষয়টি যথার্থভাবে সম্যক প্রজ্ঞার দ্বারা দর্শন করা কর্তব্য। এইরূপে যথার্থভাবে সম্যক প্রজ্ঞার দ্বারা তাহা দর্শন করিয়া পৃথিবীধাতু বিষয়ে চিত্ত নির্বেদপ্রাপ্ত হয়, পৃথিবীধাতু বিষয়ে চিত্ত বীতরাগ হয়। বন্ধুগণ, এমনও কোনো সময় আসে যখন বাহিরের অপধাতু প্রকুপিত হয়, (যে কারণে) তখন বাহিরের পৃথিবীধাতু অন্তর্হিত হয়। বন্ধুগণ, বাহিরের সেই বার্ধক্যগ্রস্ত পৃথিবীধাতুর অনিত্যতা প্রতীয়মান হয়, ক্ষয়-ধর্মতা (ক্ষয়শীলতা) প্রতীয়মান হয়, ব্যয়-ধর্মতা (ব্যয়স্বভাব) প্রতীয়মান হয়, বিপরিণাম-ধর্মতা (বিপরিণামিতা, পরিবর্তনশীলতা) প্রতীয়মান হয়, ক্ষণস্থায়ী ও তৃষ্ণাগৃহীত দেহীর ‘আমিই বা কী?’, ‘আমরাই বা কী?’, ‘আছিই বা কী?’ এইভাবে বিষয়টি দর্শন করিবার পর তদ্‌বিষয়ে তাঁহার (ভিক্ষুর) উক্ত (আমি, আমার, আছি) ধারণা নিশ্চয় হয় না। বন্ধুগণ, ওই ভিক্ষুর প্রতি অপরে আক্রোশ করিলে, তাঁহাকে শাসাইলে, তাঁহার প্রতি রোষ প্রকাশ করিলে তিনি এইরূপে বিষয়টি প্রকৃষ্টরূপে জানেন : ‘আমার এই শ্রোত্র-সংস্পর্শজ দুঃখবেদনা উৎপন্ন হইয়াছে। তাহা কারণবশে উৎপন্ন হইয়াছে, অকারণ নহে।’ কিসের কারণ? স্পর্শের কারণ। তিনি (জ্ঞাননেত্রে) দর্শন করেন : সেই স্পর্শও অনিত্য, বেদনা অনিত্য, সংজ্ঞা অনিত্য, সংস্কার অনিত্য, বিজ্ঞান অনিত্য। সেই (পৃথিবীধাতু) আলম্বনে চিত্ত অবতরণ করে, প্রবিষ্ট ও সংস্থিত হইয়া (পরে তাহা হইতে) বিমুক্ত হয়। বন্ধুগণ, অপরে হস্ত-সংস্পর্শে, লোষ্ট্র-সংস্পর্শে, দণ্ড-সংস্পর্শে অথবা শস্ত্র-সংস্পর্শে (শস্ত্রাঘাতে) ওই ভিক্ষুর প্রতি অশিষ্ট, অপ্রিয় ও অমনোজ্ঞ ব্যবহার করিলে তিনি প্রকৃষ্টরূপে জানেন : “এই দেহ এমন যে উহাতে হস্ত-সংস্পর্শও লাগে, দণ্ড-সংস্পর্শও লাগে, শস্ত্র-সংস্পর্শও (শস্ত্রাঘাতও) লাগে। ককচোপম-সূত্রে ভগবান বলিয়াছেন, ‘হে ভিক্ষুগণ, যদি চোর অথবা নীচকর্মা তস্কর উভয়দিকে বাঁটযুক্ত ককচ দ্বারা তোমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কর্তনও করে, তোমাদের মধ্যে যে স্বমনকে প্রদূষিত (কুপিত) করিবে সে আমার শাসনকর, আজ্ঞাবহ শিষ্য নহে।” আমার বীর্য আরব্ধ হইয়াছে তাহা শিথিল হইবার নহে; স্মৃতি উপস্থাপিত হইয়াছে, তাহা সংমূঢ় হইবার নহে, দেহ-মন প্রশান্ত হইয়াছে, তাহা নিপীড়িত হইবার নহে; সমাহিত চিত্ত একাগ্র হইয়াছে, (তাহা বিক্ষিপ্ত হইবার নহে); পাণি-সংস্পর্শ লাগুক, লোষ্ট্র-সংস্পর্শ লাগুক, দণ্ড-সংস্পর্শ লাগুক, শস্ত্র-সংস্পর্শ লাগুক, বুদ্ধের অনুশাসন পূর্ণ করিতেই হইবে।”

৩. বন্ধুগণ, যদি বুদ্ধকে অনুস্মরণ করিলেও, ধর্মকে অনুস্মরণ করিলেও, সংঘকে অনুস্মরণ করিলেও তাঁহার মধ্যে কুশল-নিঃসৃত উপেক্ষা সংস্থিত না হয়, তাহাতে তিনি সংবিঘ্ন হন, সংবেগ প্রাপ্ত হন : ‘আমার যে (সবই) অলাভ, লাভ যে আমার কিছুই নাই; (সবই) আমার দুর্লব্ধ, সুলব্ধ যে আমার কিছুই নাই, যেহেতু বুদ্ধকে অনুস্মরণ করিয়াও, ধর্মকে অনুস্মরণ করিয়াও, সংঘকে অনুস্মরণ করিয়াও আমার মধ্যে কুশল-নিঃসৃত উপেক্ষা সংস্থিত হয় নাই!’ বন্ধুগণ, যেমন পুত্রবধূ শ্বশুরকে দেখিয়া সংবিগ্ন হন, সংবেগ প্রাপ্ত হন, তেমনভাবেই ভিক্ষু বুদ্ধকে অনুস্মরণ করিয়াও, ধর্মকে অনুস্মরণ করিয়াও, সংঘকে অনুস্মরণ করিয়াও তাঁহার মধ্যে কুশল-নিঃসৃত উপেক্ষা সংস্থিত না হইলে, সংবিগ্ন হন, সংবেগ প্রাপ্ত হন : ‘আমার যে (সবই) অলাভ, লাভ যে আমার কিছুই নাই; সবই আমার দুর্লব্ধ, সুলব্ধ যে আমার কিছুই নাই, যেহেতু বুদ্ধকে অনুস্মরণ করিয়াও, ধর্মকে অনুস্মরণ করিয়াও, সংঘকে অনুস্মরণ করিয়াও আমার মধ্যে কুশল-নিঃসৃত উপেক্ষা সংস্থিত হয় নাই!’ বন্ধুগণ, যদি বুদ্ধকে অনুস্মরণ, ধর্মকে অনুস্মরণ এবং সংঘকে অনুস্মরণ করিবার ফলে তাঁহার মধ্যে কুশল-নিঃসৃত উপেক্ষা সংস্থিত হয়, তাহাতে তিনি আনন্দিত হন। ইহাতেও বন্ধুগণ, ওই ভিক্ষুর বহু কাজ (উপকার) হয়।

৪. বন্ধুগণ, অপধাতু কী? অপধাতু অধ্যাত্ম হইতে পারে, বাহ্যও হইতে পারে। বন্ধুগণ, অধ্যাত্ম অপধাতু কী? যাহা অধ্যাত্ম, ব্যক্তিগত, অপনামীয়, অপ-অন্তর্গত ও দেহভুক্ত; যথা : পিত্ত, শ্লেষ্মা, পুঁজ, লোহিত, স্বেদ, মেদ, অশ্র্ব, বসা, থুথু, শিকনি, লসিকা (লসীকা?), মূত্র অথবা এইরূপ যাহা কিছু অধ্যাত্ম, ব্যক্তিগত, অপ-নামীয়, অপ-অন্তর্গত ও দেহভুক্ত। বন্ধুগণ, ইহাকেই বলে অধ্যাত্ম অপধাতু। যাহা অধ্যাত্ম অপধাতু এবং যাহা বাহ্য অপধাতু সমস্তই অপধাতু বটে! ‘তাহা আমার নয়,’ ‘আমি তাহা নহি,’ ‘তাহা আমার আত্মা নহে’ এইরূপে বিষয়টি যথার্থভাবে সম্যক প্রজ্ঞার দ্বারা দর্শন করা কর্তব্য। এইরূপে ইহা যথার্থভাবে সম্যক প্রজ্ঞার দ্বারা দর্শন করিলে অপধাতু বিষয়ে চিত্ত নির্বেদপ্রাপ্ত হয়, অপধাতু বিষয়ে চিত্ত বীতরাগ হয়। বন্ধুগণ, এমন সময়ও হয় যখন বাহিরের অপধাতু প্রকুপিত হয়, তাহা গ্রাম ভাসাইয়া নেয়, নিগম ভাসাইয়া নেয়, নগর ভাসাইয়া নেয়, জনপদ ভাসাইয়া নেয়, জনপদের অংশবিশেষ ভাসাইয়া নেয়। বন্ধুগণ, এমন সময়ও হয় যখন মহাসমুদ্রে এক শ যোজন, দুই শ যোজন, তিন শ যোজন, চার শ যোজন, পাঁচ শ যোজন, ছয় শ যোজন, এমনকি সাত শ যোজন জল স্ফীত হয়। বন্ধুগণ, এমন সময়ও হয় যখন মহাসমুদ্রে সাত তাল, ছয় তাল, পাঁচ তাল, চৌতাল, তিন তাল, দুই তাল, অন্তত এক তাল উচ্চে জল সংস্থিত হয়। বন্ধুগণ, এমন সময়ও হয় যখন মহাসমুদ্রে সাত পুরুষ-প্রমাণ ছয় পুরুষ-প্রমাণ, পাঁচ পুরুষ-প্রমাণ, চার পুরুষ-প্রমাণ জল সংস্থিত হয়। বন্ধুগণ, এমন সময়ও হয় যখন মহাসমুদ্রে অর্ধপুরুষ-প্রমাণ কটি-প্রমাণ, জানু-প্রমাণ, অন্তত গুল্‌ফ-প্রমাণ জল সংস্থিত হয়। বন্ধুগণ, এমন সময়ও হয় যখন মহাসমুদ্রে অঙ্গুলি-পর্ব-প্রমাণ জলও থাকে না। তখনোই, বন্ধুগণ, সেই বার্ধক্যগ্রস্ত বাহ্য অপধাতুর অনিত্যতা প্রতীয়মান হয়, ক্ষয়শীলতা প্রতীয়মান হয়, ব্যয়শীলতা প্রতীয়মান হয়, বিপরিণামিতা প্রতীয়মান হয়। ক্ষণস্থায়ী ও তৃষ্ণাগৃহীত দেহীর ‘আমিই বা কী?’ ‘আমারই বা কী?’ ‘আছিই বা কী?’-[ইত্যাদি পূর্ববৎ (পৃথিবীধাতু দ্র.)]।

৫. বন্ধুগণ, তেজোধাতু কী? তেজোধাতু অধ্যাত্ম হইতে পারে, বাহ্যও হইতে পারে। বন্ধুগণ, অধ্যাত্ম তেজোধাতু কী? যাহা অধ্যাত্ম, ব্যক্তিগত, তেজ-নামীয়, তেজ-অন্তর্গত ও দেহভুক্ত; যথা : যাহা সন্তপ্ত করে, জীর্ণ করে, পরিদাহন করে, যাহার দ্বারা চর্ব্য, চুষ্য, লেহ্য, পেয় সমস্তই সম্পূর্ণ পরিপক্ব হয়, অথবা তদ্‌বৎ যাহা কিছু অধ্যাত্ম, ব্যক্তিগত, তেজ-নামীয়, তেজ-অন্তর্গত ও দেহভুক্ত। বন্ধুগণ, ইহাকেই বলে অধ্যাত্ম তেজোধাতু। যাহা অধ্যাত্ম তেজোধাতু এবং যাহা বাহ্য সমস্তই তেজোধাতু বটে! ‘তাহা আমার নয়,’ ‘আমি তাহা নহি,’ ‘তাহা আমার আত্মা নহে’ এইরূপে বিষয়টি যথার্থভাবে সম্যক প্রজ্ঞার দ্বারা দর্শন করা কর্তব্য। এইরূপে ইহা যথার্থভাবে সম্যক প্রজ্ঞার দ্বারা দর্শন করিলে তেজোধাতু বিষয়ে চিত্ত নির্বেদপ্রাপ্ত হয়, তেজোধাতু বিষয়ে চিত্ত বীতরাগ হয়। বন্ধুগণ, এমন সময়ও হয় যখন বাহ্য তেজোধাতু প্রকুপিত হয়; তাহা গ্রাম দগ্ধ করে, নিগম দগ্ধ করে, নগর দগ্ধ করে, জনপদ দগ্ধ করে, জনপদের অংশবিশেষ দগ্ধ করে। বন্ধুগণ, এমন সময়ও হয় যখন সেই (অগ্নিরূপী) তেজোধাতু হরিৎক্ষেত্রসীমা, প্রান্তরসীমা (পথসীমা?), শৈলান্ত, উদকান্ত অথবা রমণীয় ভূমি পর্যন্ত আসিয়া ইন্ধন-অভাবে নিবিয়া যায়। বন্ধুগণ, (আবার) এমন সময়ও হয় যখন (সামান্য) কুক্কুটপালক অথবা স্নায়ুখণ্ডের সাহায্যে অগ্নিঅন্বেষণ করিতে হয়। বন্ধুগণ, তখনোই সেই বার্ধক্যগ্রস্থ বাহ্য তেজোধাতুর অনিত্যতা প্রতীয়মান হয়, ক্ষয়শীলতা প্রতীয়মান হয়, ব্যয়শীলতা প্রতীয়মান হয়, বিপরিণামিতা প্রতীয়মান হয়। ক্ষণস্থায়ী ও তৃষ্ণাগৃহীত দেহীর ‘আমিই বা কী?’ ‘আমারই বা কী?’ ‘আছিই বা কী?’-[ইত্যাদি পূর্ববৎ (পৃথিবীধাতু দ্র.)]।

৬. বন্ধুগণ, বায়ুধাতু কী? বায়ুধাতু অধ্যাত্ম হইতে পারে, বাহ্যও হইতে পারে। বন্ধুগণ, অধ্যাত্ম বায়ুধাতু কী? যাহা অধ্যাত্ম, ব্যক্তিগত, বায়ু-নামীয়, বায়ু-অন্তর্গত ও দেহাধিকৃত; যথা : ঊর্ধ্বগামী বায়ু (উদান), অধোগামী বায়ু (অপান), কুক্ষি-আশ্রিত ও কোষ্ঠাশ্রিত বায়ু (সমান), অঙ্গপ্রত্যঙ্গ-বাহী বায়ু (ব্যান), কিংবা শ্বাসপ্রশ্বাস (প্রাণ), অথবা তদ্‌বৎ যাহা কিছু অধ্যাত্ম, ব্যক্তিগত, বায়ু-নামীয়, বায়ু-অন্তর্গত ও দেহাধিকৃত। বন্ধুগণ, ইহাকেই বলে অধ্যাত্ম বায়ুধাতু। যাহা অধ্যাত্ম বায়ু এবং যাহা বাহ্য, সমস্তই বায়ুধাতু বটে। ‘তাহা আমার নয়’, ‘তাহা আমি নহি’, ‘তাহা আমার আত্মা নহে’ এইরূপে বিষয়টি যথার্থভাবে সম্যক প্রজ্ঞা দ্বারা দর্শন করা কর্তব্য। ইহা যথার্থভাবে সম্যক প্রজ্ঞা দ্বারা দর্শন করিলে বায়ুধাতু বিষয়ে চিত্ত নির্বেদপ্রাপ্ত হয়, বায়ুধাতু বিষয়ে চিত্ত বীতরাগ হয়। বন্ধুগণ, এমন সময়ও হয় যখন বাহ্য বায়ুধাতু প্রকুপিত হয়, তাহা গ্রাম উড়াইয়া নেয়, নিগম উড়াইয়া নেয়, নগর উড়াইয়া নেয়, জনপদ উড়াইয়া নেয়, জনপদের অংশবিশেষ উড়াইয়া নেয়। বন্ধুগণ, (আবার) এমন সময়ও হয় যখন গ্রীষ্মের শেষ মাসে তালপত্র অথবা হাতপাখা দ্বারা বায়ু অন্বেষণ করিতে হয়, চালের খড়গাছিও নড়ে না। বন্ধুগণ, তখনোই সেই বার্ধক্যগ্রস্ত বাহ্য বায়ুধাতুর অনিত্যতা প্রতীয়মান হয়, ক্ষয়শীলতা প্রতীয়মান হয়, ব্যয়শীলতা প্রতীয়মান হয়, বিপরিণামিতা প্রতীয়মান হয়। ক্ষণস্থায়ী ও তৃষ্ণাগৃহীত দেহীর ‘আমিই বা কী?’ ‘আমারই বা কী?’ ‘আছিই বা কী?’-[ইত্যাদি পূর্ববৎ (পৃথিবীধাতু দ্র.)]।

৭. বন্ধুগণ, যেমন কাষ্ঠকে সম্বল (উপাদান কারণ) করিয়া, বল্লীকে সম্বল করিয়া, তৃণকে সম্বল করিয়া, মৃত্তিকাকে সম্বল করিয়া পরিবৃত আকাশ গৃহ আখ্যা প্রাপ্ত হয়, তেমনভাবেই অস্থিকে সম্বল করিয়া, স্নায়ুকে সম্বল করিয়া, মাংসকে সম্বল করিয়া, চর্মকে সম্বল করিয়া পরিবৃত আকাশ রূপ (দেহ, দেহাবয়ব) আখ্যা প্রাপ্ত হয়। বন্ধুগণ, যদি চক্ষু (আয়তন) অবিকল থাকে, অথচ বাহিরের রূপ (দৃশ্যবস্তু) উহার গোচরে না আসে এবং তদনুযায়ী চিত্ত-সংযোগ না হয়, তাহা হইলে সে পর্যন্ত তদুপযোগী চক্ষুবিজ্ঞান প্রাদুর্ভূত হয় না। যদি চক্ষু অবিকল থাকে, বাহিরের রূপও উহার গোচরে আসে, অথচ তদনুযায়ী চিত্ত-সংযোগ হয় না, তাহা হইলে সে পর্যন্ত তদুপযোগী চক্ষুবিজ্ঞান প্রাদুর্ভূত হয় না। যেহেতু, বন্ধুগণ, চক্ষু অবিকল থাকে, বাহিরের রূপও গোচরে আসে, তদনুযায়ী চিত্ত-সংযোগও হয়, তখন তদুপযোগী চক্ষুবিজ্ঞান প্রাদুর্ভূত (উৎপন্ন) হয়। ওই চক্ষুবিজ্ঞানের সাহচর্যে যে রূপ (দৈহিক অভিব্যক্তি) উৎপন্ন হয় তাহা রূপ-উপাদানস্কন্ধের অন্তর্গত হয়, যে বেদনা উৎপন্ন হয় তাহা বেদনা-উপাদানস্কন্ধের, যে সংজ্ঞা উৎপন্ন হয় তাহা সংজ্ঞা-উপাদানস্কন্ধের, যে সংস্কার উৎপন্ন হয় তাহা সংস্কার-উপাদানস্কন্ধের, এবং যে বিজ্ঞান উৎপন্ন হয় তাহা বিজ্ঞান-উপাদানস্কন্ধের অন্তর্গত হয়। তিনি (ভিক্ষু) এইরূপে বিষয়টি প্রকৃষ্টরূপে জানেন : ‘এইভাবেই এই পঞ্চ-উপাদানস্কন্ধের মিলন, সম্মিলন ও সমবায় হয়।’ ভগবান বলিয়াছেন, ‘যিনি প্রতীত্যসমুৎপাদ দর্শন করেন তিনি ধর্ম (ধর্মের স্বরূপ) দর্শন করেন, যিনি ধর্ম দর্শন করেন তিনি প্রতীত্যসমুৎপাদ দর্শন করেন।’ এই পঞ্চোপাদান-স্কন্ধ প্রতীত্যসমুৎপন্ন, কারণবশে উৎপন্ন। এই পঞ্চ-উপাদানস্কন্ধে জীবের যে ছন্দ (তৃষ্ণার গতি), আলয় (আসক্তি), অনুনয় (আকুলতা) এবং নিমগ্নভাব তাহাই দুঃখসমুদয়, দুঃখোৎপত্তির কারণ। এই পঞ্চোপাদান-স্কন্ধ সম্পর্কে যাহা ছন্দরাগ-বিনয় (তৃষ্ণার গতি ও অনুরাগ দমন), যাহা ছন্দরাগ-পরিহার তাহাই দুঃখনিরোধ। বন্ধুগণ, ইহাতেও ভিক্ষুর বহু কাজ হয়। শ্রোত্র, শব্দ এবং শ্রোত্রবিজ্ঞান; ঘ্রাণ, গন্ধ এবং ঘ্রাণবিজ্ঞান; জিহ্বা, রস এবং জিহ্বাবিজ্ঞান; মন ধর্ম এবং মনোবিজ্ঞান সম্বন্ধেও এইরূপ।

আয়ুষ্মান সারিপুত্র ইহা বলিলেন। (অপর) ভিক্ষুগণ তাঁহার উক্তিতে আনন্দ প্রকাশ করিলেন।

মহাহস্তিপদোপম-সূত্র সমাপ্ত।

The Middle Discourses

|_A. The First Fifty

|__III. The Chapter of Similes

MN28. ড. বেণীমাধব বড়ুয়া

Translations [29]

English

繁體字

日本語

Français

Deutsch

Italiano

Español

Català

Português

Русский

Norsk

Magyar

Srpski

Čeština

Slovenščina

हिंदी

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference