আমি এইরূপ শুনিয়াছি।

১. একসময় ভগবান রাজগৃহে অবস্থান করিতেছিলেন, গৃধ্রকূটপর্বতে। বুদ্ধশাসন পরিত্যাগ করিবার অল্পদিন পরে দেবদত্ত সম্বন্ধে ভগবান ভিক্ষুদিগকে আহ্বান করিয়া বলিলেন :

২. হে ভিক্ষুগণ, কোনো কোনো কুলপুত্র এই ভাবিয়া শ্রদ্ধায় আগার হইতে অনাগারিকরূপে প্রব্রজিত হন : ‘আমি জন্ম, জরা, মরণ, শোক, পরিদেবন, দুঃখ, দৌর্মনস্য ও নৈরাশ্যে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখগ্রস্ত হইয়াছি, এই সমগ্র দুঃখসমষ্টির সমাপ্তি অল্পই দৃষ্ট হয়।’ এইরূপে প্রব্রজিত হইয়া তিনি লাভ, সৎকার ও খ্যাতি উৎপাদন করেন। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা আনন্দিত হন এবং মনে করেন যে, ইহাতে তাঁহার সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির বলে আত্মপ্রশংসা করেন এবং অপরকে অবজ্ঞা করেন : ‘আমি লাভ, সৎকার ও খ্যাতির অধিকারী; এই অপর ভিক্ষুগণ অখ্যাতনামা এবং অল্পশক্তিসম্পন্ন।’ ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা তিনি মত্ত হন, প্রমত্ত হন, প্রমাদগ্রস্ত হন, প্রমত্ত হইয়া দুঃখে অবস্থান করেন। যেমন, হে ভিক্ষুগণ, কোনো সারার্থী, সারান্বেষী পুরুষ সারান্বেষণে বিচরণ করিতে করিতে পুরোস্থিত বৃহৎ সারবান বৃক্ষের সার পরিহার করিয়া, আঁশ পরিহার করিয়া, ত্বক পরিহার করিয়া, ত্বকোদ্ভেদ পরিহার করিয়া, মাত্র শাখাপল্লব ছিঁড়িয়া লইয়া, উহাকে সার মনে করিয়া প্রস্থান করিলে তাহাকে দেখিয়া চক্ষুষ্মান পুরুষ এ কথা বলিবেন : ‘এই ব্যক্তি সত্যই সার জানিতে পারেন নাই, আঁশ জানিতে পারেন নাই, ত্বক জানিতে পারেন নাই, ত্বকোদ্ভেদ জানিতে পারেন নাই, শাখাপল্লব জানিতে পারেন নাই। সে জন্য তিনি সারার্থী, সারান্বেষী হইয়া সারান্বেষণে বিচরণ করিতে করিতে পুরোস্থিত বৃহৎ সারবান বৃক্ষের সার পরিহার করিয়া, আঁশ পরিহার করিয়া, ত্বক পরিহার করিয়া, ত্বকোদ্ভেদ পরিহার করিয়া, মাত্র শাখাপল্লব ছিঁড়িয়া লইয়া উহাকে সার মনে করিয়া চলিয়াছেন। সারের দ্বারা যাহা সারকৃত্য উহার মর্ম তিনি অনুভব করেন নাই।’ তেমনভাবেই, হে ভিক্ষুগণ, কোনো কোনো কুলপুত্র এই ভাবিয়া [শ্রদ্ধায়] আগার হইতে অনাগারিকরূপে প্রব্রজিত হন : ‘আমি জন্ম, জরা, মরণ, শোক, পরিদেবন, দুঃখ, দৌর্মনস্য ও নৈরাশ্যে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখগ্রস্ত হইয়াছি, এই সমগ্র দুঃখসমষ্টির সমাপ্তি অল্পই দৃষ্ট হয়।’ এইরূপে প্রব্রজিত হইয়া তিনি লাভ, সৎকার ও খ্যাতি উৎপাদন করেন। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা আনন্দিত হন এবং উহাতে তাঁহার সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির বলে আত্মপ্রশংসা করেন এবং অপরকে অবজ্ঞা করেন : ‘আমি লাভ, সৎকার ও খ্যাতির অধিকারী; এই অপর ভিক্ষুগণ অখ্যাতনামা এবং অল্পশক্তিসম্পন্ন।’ ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা তিনি মত্ত হন, প্রমত্ত হন, প্রমাদগ্রস্ত হন, প্রমত্ত হইয়া দুঃখে অবস্থান করেন। হে ভিক্ষুগণ, ইহাকেই বলে—ভিক্ষু ব্রহ্মচর্যের মাত্র শাখাপল্লব গ্রহণ করিয়াছেন এবং তাহাতেই তিনি ইহার পরিসমাপ্তি লাভ করিয়াছেন।

৩. হে ভিক্ষুগণ, কোনো কোনো কুলপুত্র এই ভাবিয়া শ্রদ্ধায় আগার হইতে অনাগারিকরূপে প্রব্রজিত হন : ‘আমি জন্ম, জরা, মরণ, শোক, পরিদেবন, দুঃখ, দৌর্মনস্য ও নৈরাশ্যে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখগ্রস্ত হইয়াছি, এই সমগ্র দুঃখসমষ্টির সমাপ্তি অল্পই দৃষ্ট হয়।’ এইরূপে প্রব্রজিত হইয়া তিনি লাভ, সৎকার ও খ্যাতি উৎপাদন করেন। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির কারণে আনন্দিত হন না এবং উহাতে সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না; অপ্রমত্ত হইয়া তিনি শীলসম্পদ লাভ করেন। ওই শীলসম্পদ দ্বারা তিনি আনন্দিত হন, সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন, অপরকে অবজ্ঞা করেন : ‘আমি শীলবান ও কল্যাণধর্মী; এই অপর ভিক্ষুগণ দুঃশীল ও পাপধর্মী।’ তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা মত্ত হন, প্রমত্ত হন, প্রমাদগ্রস্ত হন, প্রমত্ত হইয়া দুঃখে অবস্থান করেন।

যেমন, হে ভিক্ষুগণ, সারার্থী, সারান্বেষী পুরুষ সারান্বেষণে বিচরণ করিতে করিতে পুরোস্থিত সারবান বৃক্ষের সার পরিহার করিয়া, আঁশ পরিহার করিয়া, ত্বক পরিহার করিয়া, মাত্র ত্বকোদ্ভেদ ছিঁড়িয়া লইয়া উহাকেই সার মনে করিয়া প্রস্থান করিলে তাঁহাকে দেখিয়া চক্ষুষ্মান পুরুষ এ কথা বলিবেন : ‘এই ব্যক্তি সত্যই সার জানিতে পারেন নাই, আঁশ জানিতে পারেন নাই, ত্বক জানিতে পারেন নাই, ত্বকোদ্ভেদ জানিতে পারেন নাই, শাখাপল্লব জানিতে পারেন নাই। সে জন্য তিনি সারার্থী, সারান্বেষী হইয়া সারান্বেষণে বিচরণ করিতে করিতে পুরোস্থিত বৃহৎ সারবান বৃক্ষের সার পরিহার করিয়া, আঁশ পরিহার করিয়া, ত্বক পরিহার করিয়া, মাত্র ত্বকোদ্ভেদ ছিঁড়িয়া লইয়া উহাকে সার মনে করিয়া চলিয়াছেন। সারের দ্বারা যাহা সারকৃত্য উহার মর্ম তিনি অনুভব করেন নাই।’

তেমনভাবেই, হে ভিক্ষুগণ, কোনো কোনো কুলপুত্র এই ভাবিয়া শ্রদ্ধায় আগার হইতে অনাগারিকরূপে প্রব্রজিত হন : ‘আমি জন্ম, জরা, মরণ, শোক, পরিদেবন, দুঃখ, দৌর্মনস্য ও নৈরাশ্যে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখগ্রস্ত হইয়াছি, এই সমগ্র দুঃখসমষ্টির সমাপ্তি অল্পই দৃষ্ট হয়।’ এইরূপে প্রব্রজিত হইয়া তিনি লাভ, সৎকার ও খ্যাতি উৎপাদন করেন। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা আনন্দিত হন না, উহাতে তাঁহার সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না এবং অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না; অপ্রমত্ত হইয়া তিনি শীলসম্পদ লাভ করেন। ওই শীলসম্পদ দ্বারা তিনি আনন্দিত হন, সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন এবং অপরকে অবজ্ঞা করেন : ‘আমি শীলবান, কল্যাণধর্মী; এই অপর ভিক্ষুগণ দুঃশীল ও পাপধর্মী। তিনি ওই শীলসম্পদে মত্ত হন, প্রমত্ত হন, প্রমাদগ্রস্ত হন, প্রমত্ত হইয়া দুঃখে অবস্থান করেন। হে ভিক্ষুগণ, ইহাকেই বল্লে-ভিক্ষু ব্রহ্মচর্যের মাত্র ত্বকোদ্ভেদ গ্রহণ করিয়াছেন এবং তাহাতেই তিনি ইহার পরিসমাপ্তি লাভ করিয়াছেন।

৪. হে ভিক্ষুগণ, কোনো কোনো কুলপুত্র এই ভাবিয়া শ্রদ্ধায় আগার হইতে অনাগারিকরূপে প্রব্রজিত হন : ‘আমি জন্ম, জরা, মরণ, শোক, পরিদেবন, দুঃখ, দৌর্মনস্য ও নৈরাশ্যে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখগ্রস্ত হইয়াছি, এই সমগ্র দুঃখসমষ্টির সমাপ্তি অল্পই দৃষ্ট হয়।’ এইরূপে প্রব্রজিত হইয়া তিনি লাভ, সৎকার ও খ্যাতি উৎপাদন করেন। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা আনন্দিত হন না, উহাতে সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি শীলসম্পদ লাভ করেন। ওই শীলসম্পদ দ্বারা তিনি আনন্দিত হন, কিন্তু সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না; অপ্রমত্ত হইয়া তিনি সমাধিসম্পদ লাভ করেন। ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা তিনি আনন্দিত হন, সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন। ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা তিনি আত্মপ্রশংসা করেন, অপরকে অবজ্ঞা করেন : ‘আমি সমাহিত ও একাগ্রচিত্ত; এই অপর ভিক্ষুগণ অসমাহিত ও বিভ্রান্তচিত্ত।’ তিনি ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা মত্ত হন, প্রমত্ত হন, প্রমাদগ্রস্ত হন, প্রমত্ত হইয়া দুঃখে অবস্থান করেন।

যেমন, হে ভিক্ষুগণ, সারার্থী, সারান্বেষী পুরুষ সারান্ব্বেষণে বিচরণ করিতে করিতে পুরোস্থিত বৃহৎ সারবান বৃক্ষের সার পরিহার করিয়া, আঁশ পরিহার করিয়া, মাত্র ত্বক ছিঁড়িয়া লইয়া উহাকেই সার মনে করিয়া প্রস্থান করিলে তাঁহাকে দেখিয়া চক্ষুষ্মান পুরুষ এ কথা বলিবেন : ‘এই ব্যক্তি সত্যই সার জানিতে পারেন নাই, আঁশ জানিতে পারেন নাই, ত্বক জানিতে পারেন নাই, ত্বকোদ্ভেদ জানিতে পারেন নাই, শাখাপল্লব জানিতে পারেন নাই। সে জন্য তিনি সারার্থী, সারান্ব্বেষী হইয়া সারান্বেষণে বিচরণ করিতে করিতে পুরোস্থিত বৃহৎ সারবান বৃক্ষের সার পরিহার করিয়া, আঁশ পরিহার করিয়া, মাত্র ত্বক ছিঁড়িয়া লইয়া উহাকেই সার মনে করিয়া চলিয়াছেন। সারের দ্বারা যাহা সারকৃত্য উহার মর্ম তিনি অনুভব করেন নাই।’

তেমনভাবেই, হে ভিক্ষুগণ, কোনো কোনো কুলপুত্র এই ভাবিয়া শ্রদ্ধায় আগার হইতে অনাগারিকরূপে প্রব্রজিত হন : ‘আমি জন্ম, জরা, মরণ, শোক, পরিদেবন, দুঃখ, দৌর্মনস্য ও নৈরাশ্যে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখগ্রস্ত হইয়াছি, এই সমগ্র দুঃখসমষ্টির সমাপ্তি অল্পই দৃষ্ট হয়।’ এইরূপে প্রব্রজিত হইয়া তিনি লাভ, সৎকার ও খ্যাতি উৎপাদন করেন। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা আনন্দিত হন না, উহাতে তাঁহার সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির বলে আত্মপ্রশংসা করেন না এবং অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি শীলসম্পদ লাভ করেন। ওই শীলসম্পদ দ্বারা তিনি আনন্দিত হন, কিন্তু সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি সমাধিসম্পদ লাভ করেন। ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা তিনি আনন্দিত হন, সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন। ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা তিনি আত্মপ্রশংসা করেন এবং অপরকে অবজ্ঞা করেন : ‘আমি সমাহিত ও একাগ্রচিত্ত; এই অপর ভিক্ষুগণ অসমাহিত ও বিভ্রান্তচিত্ত।’ তিনি ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা মত্ত হন, প্রমত্ত হন, প্রমাদগ্রস্ত হন, প্রমত্ত হইয়া দুঃখে অবস্থান করেন। হে ভিক্ষুগণ, ইহাকেই বলে—ভিক্ষু ব্রহ্মচর্যের মাত্র ত্বক গ্রহণ করিয়াছেন এবং তাহাতেই তিনি ইহার পরিসমাপ্তি লাভ করিয়াছেন।

৫. হে ভিক্ষুগণ, কোনো কোনো কুলপুত্র এই ভাবিয়া শ্রদ্ধায় আগার হইতে অনাগারিকরূপে প্রব্রজিত হন : ‘আমি জন্ম, জরা, মরণ, শোক, পরিদেবন, দুঃখ, দৌর্মনস্য ও নৈরাশ্যে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখগ্রস্ত হইয়াছি, এই সমগ্র দুঃখসমষ্টির সমাপ্তি অল্পই দৃষ্ট হয়।’ এইরূপে প্রব্রজিত হইয়া তিনি লাভ, সৎকার ও খ্যাতি উৎপাদন করেন। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা আনন্দিত হন না, উহাতে সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি শীলসম্পদ লাভ করেন, ওই শীলসম্পদ দ্বারা তিনি আনন্দিত হন, কিন্তু সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি সমাধিসম্পদ লাভ করেন। তিনি ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা আনন্দিত হন, কিন্তু সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি জ্ঞানদর্শন লাভ করেন। ওই জ্ঞানদর্শন দ্বারা তিনি আনন্দিত হন, সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন। তিনি ওই জ্ঞানদর্শন দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন, অপরকে অবজ্ঞা করেন : ‘আমি (ধর্ম) জানিয়া ও দেখিয়া বিচরণ করি; এই অপর ভিক্ষুগণ না জানিয়া, না দেখিয়াই বিচরণ করে।’ তিনি ওই জ্ঞানদর্শন দ্বারা মত্ত হন, প্রমত্ত হন, প্রমাদগ্রস্ত হন, প্রমত্ত হইয়া দুঃখে অবস্থান করেন।

যেমন, হে ভিক্ষুগণ, সারার্থী সারান্বেষী পুরুষ সারান্বেষণে বিচরণ করিতে করিতে পুরোস্থিত বৃহৎ সারবান বৃক্ষের সার পরিহার করিয়া, মাত্র আঁশ ছিঁড়িয়া লইয়া উহাকেই সার মনে করিয়া প্রস্থান করিলে তাঁহাকে দেখিয়া চক্ষুষ্মান পুরুষ এ কথা বলিবেন : ‘এই ব্যক্তি সত্যই সার জানিতে পারেন নাই, আঁশ জানিতে পারেন নাই, ত্বক জানিতে পারেন নাই, ত্বকোদ্ভেদ জানিতে পারেন নাই, শাখাপল্লব জানিতে পারেন নাই, সে জন্য তিনি সারার্থী, সারান্বেষী হইয়া সারান্বেষণে বিচরণ করিতে করিতে পুরোস্থিত বৃহৎ সারবান বৃক্ষের সার পরিহার করিয়া, মাত্র আঁশ ছিড়িয়া লইয়া উহাকেই সার মনে করিয়া চলিয়াছেন। সারের দ্বারা যাহা সারকৃত্য উহার মর্ম তিনি অনুভব করেন নাই।’ তেমনভাবেই, হে ভিক্ষুগণ, কোনো কোনো কুলপুত্র এই ভাবিয়া শ্রদ্ধায় আগার হইতে অনাগারিকরূপে প্রব্রজিত হন : ‘আমি জন্ম, জরা, মরণ, শোক, পরিদেবন, দুঃখ, দৌর্মনস্য ও নৈরাশ্যে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখগ্রস্ত হইয়াছি, এই সমগ্র দুঃখসমষ্টির সমাপ্তি অল্পই দৃষ্ট হয়।’ এইরূপে প্রব্রজিত হইয়া তিনি লাভ, সৎকার ও খ্যাতি উৎপাদন করেন। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা আনন্দিত হন না, উহাতে তাঁহার সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির বলে আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি শীলসম্পদ লাভ করেন। ওই শীলসম্পদ দ্বারা তিনি আনন্দিত হন, কিন্তু সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি সমাধিসম্পদ লাভ করেন। ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা তিনি আনন্দিত হন, কিন্তু সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি জ্ঞানদর্শন লাভ করেন। ওই জ্ঞানদর্শন দ্বারা তিনি আনন্দিত হন, সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন। তিনি ওই জ্ঞানদর্শন দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন, অপরকে অবজ্ঞা করেন : ‘আমি (ধর্ম) জানিয়া ও দেখিয়া বিচরণ করি; এই অপর ভিক্ষুগণ না জানিয়া, না দেখিয়া বিচরণ করে।’ তিনি ওই জ্ঞানদর্শন দ্বারা মত্ত হন, প্রমত্ত হন, প্রমাদগ্রস্ত হন, প্রমত্ত হইয়া দুঃখে অবস্থান করেন। হে ভিক্ষুগণ, ইহাকেই বলে ভিক্ষু ব্রহ্মচর্যের মাত্র আঁশ গ্রহণ করিয়াছেন এবং তাহাতেই তিনি উহার সমাপ্তি লাভ করিয়াছেন।

৬. হে ভিক্ষুগণ, কোনো কোনো কুলপুত্র এই ভাবিয়া [শ্রদ্ধায়] আগার হইতে অনাগারিকরূপে প্রব্রজিত হন : ‘আমি জন্ম, জরা, মরণ, শোক, পরিদেবন, দুঃখ, দৌর্মনস্য ও নৈরাশ্যে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখগ্রস্ত হইয়াছি, এই সমগ্র দুঃখসমষ্টির সমাপ্তি অল্পই দৃষ্ট হয়।’ এইরূপে প্রব্রজিত হইয়া তিনি লাভ, সৎকার ও খ্যাতি উৎপাদন করেন। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা আনন্দিত হন না, উহাতে তাঁহার সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি শীলসম্পদ লাভ করেন। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা আনন্দিত হন, কিন্তু সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি সমাধিসম্পদ লাভ করেন। তিনি ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা আনন্দিত হন, কিন্তু সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি জ্ঞানদর্শন লাভ করেন। তিনি ওই জ্ঞানদর্শন দ্বারা আনন্দিত হন, কিন্তু সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই জ্ঞানদর্শন দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই জ্ঞানদর্শন দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া [তিনি ‘সময়-বিমোক্ষ’ লোকসম্মত পরামুক্তি লাভ করেন। তিনি ওই সময়-বিমোক্ষ লাভ করিয়া আনন্দিত হন, সংকল্প পূর্ণ হইয়াছে মনে করেন। কিন্তু, হে ভিক্ষুগণ, ইহা সম্ভব যে, ওই ভিক্ষু সেই ‘সময়-বিমুক্তি’ হইতে চ্যুত হইবেন। যেমন, হে ভিক্ষুগণ, সারার্থী, সারান্বেষী পুরুষ সারান্বেষণে বিচরণ করিতে করিতে পুরোস্থিত বৃহৎ সারবান বৃক্ষের সার ছিঁড়িয়া লইয়া উহাকেই সার জানিয়া প্রস্থান করিলে তাঁহাকে দেখিয়া চক্ষুষ্মান পুরুষ এ কথা বলিবেন : ‘এই ব্যক্তি সত্যই সার জানিতে পারিয়াছেন, আঁশ জানিতে পারিয়াছেন, ত্বক জানিতে পারিয়াছেন, ত্বকোদ্ভেদ জানিতে পারিয়াছেন, শাখাপল্লব জানিতে পারিয়াছেন। সে জন্য তিনি সারার্থী, সারান্বেষী হইয়া সারান্বেষণে বিচরণ করিতে করিতে পুরোস্থিত বৃহৎ সারবান বৃক্ষের সার ছিঁড়িয়া লইয়া উহাকেই সার জানিয়া চলিয়াছেন। কিন্তু সারের দ্বারা যাহা সারকৃত্য তিনি উহার অর্থ অনুভব করেন নাই।’ তেমনভাবেই কোনো কোনো কুলপুত্র এই ভাবিয়া শ্রদ্ধায় আগার হইতে অনাগারিকরূপে প্রব্রজিত হন : ‘আমি জন্ম, জরা, মরণ, শোক, পরিদেবন, দুঃখ, দৌর্মনস্য ও নৈরাশ্যে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখগ্রস্ত হইয়াছি, এই সমগ্র দুঃখসমষ্টির সমাপ্তি অল্পই দৃষ্ট হয়।’ এইরূপে প্রব্রজিত হইয়া তিনি লাভ, সৎকার ও খ্যাতি উৎপাদন করেন। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা আনন্দিত হন না, উহাতে তাঁহার সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি শীলসম্পদ লাভ করেন। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা আনন্দিত হন, কিন্তু সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি সমাধিসম্পদ লাভ করেন। তিনি ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা আনন্দিত হন, কিন্তু সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি জ্ঞানদর্শন লাভ করেন। তিনি ওই জ্ঞানদর্শন দ্বারা আনন্দিত হন, কিন্তু সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই জ্ঞানদর্শন দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই জ্ঞানদর্শন দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি ‘সময়-বিমোক্ষ’ লাভ করেন। তিনি ওই ‘সময়-বিমোক্ষ’ লাভ করিয়া আনন্দিত হন, সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন। কিন্তু, হে ভিক্ষুগণ, ইহা সম্ভব যে, ওই ভিক্ষু সেই ‘সময়-বিমোক্ষ’ হইতে চ্যুত হইবেন। হে ভিক্ষুগণ, ইহাকেই বলে—ভিক্ষু ব্রহ্মচর্যের সারমাত্র গ্রহণ করিয়াছেন এবং তাহাতেই তিনি উহার সমাপ্তি লাভ করিয়াছেন।

৭. হে ভিক্ষুগণ, কোনো কোনো কুলপুত্র এই ভাবিয়া শ্রদ্ধায় আগার হইতে অনাগারিকরূপে প্রব্রজিত হন : ‘আমি জন্ম, জরা, মরণ, শোক, পরিদেবন, দুঃখ, দৌর্মনস্য ও নৈরাশ্যে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখে অবতীর্ণ হইয়াছি, এই সমগ্র দুঃখসমষ্টির সমাপ্তি অল্পই দৃষ্ট হয়।’ এইরূপে প্রব্রজিত হইয়া তিনি লাভ, সৎকার ও খ্যাতি উৎপাদন করেন। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা আনন্দিত হন না, উহাতে তাঁহার সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা আনন্দিত হন, কিন্তু সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি সমাধিসম্পদ লাভ করেন। তিনি ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা আনন্দিত হন, কিন্তু উহাতে তাঁহার সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি জ্ঞানদর্শন লাভ করেন। তিনি জ্ঞানদর্শন দ্বারা আনন্দিত হন, কিন্তু উহাতে তাঁহার সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই জ্ঞানদর্শন দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই জ্ঞানদর্শন দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি ‘সময়-বিমোক্ষ’ লাভ করেন। তিনি ওই ‘সময়-বিমোক্ষ’ লাভ করিয়া আনন্দিত হন, কিন্তু উহাতে তাঁহার সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই ‘সময়-বিমোক্ষ’ দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া] তিনি ‘অসময়-বিমোক্ষ’ লাভ করেন। হে ভিক্ষুগণ, ইহা অসম্ভব যে, ওই ভিক্ষু সেই ‘অসময়-বিমোক্ষ’ হইতে চ্যুত হইবেন।

যেমন, হে ভিক্ষুগণ, সারার্থী, সারান্বেষী পুরুষ সারান্বেষণে বিচরণ করিতে করিতে পুরোস্থিত বৃহৎ সারবান বৃক্ষের সার ছিঁড়িয়া লইয়া প্রস্থান করিলে তাঁহাকে দেখিয়া চক্ষুষ্মান পুরুষ এ কথা বলিবেন : ‘এই ব্যক্তি সত্যই সার জানিতে পারিয়াছেন, আঁশ জানিতে পারিয়াছেন, ত্বক জানিতে পারিয়াছেন, ত্বকোদ্ভেদ জানিতে পারিয়াছেন, শাখাপল্লব জানিতে পারিয়াছেন। সে জন্য তিনি সারার্থী, সারান্বেষী হইয়া সারান্বেষণে বিচরণ করিতে করিতে পুরোস্থিত বৃহৎ সারবান বৃক্ষের সার ছিঁড়িয়া লইয়া উহাকেই সার জানিয়া চলিয়াছেন। সারের দ্বারা যাহা সারকৃত্য তিনি উহার অর্থও অনুভব করিয়াছেন।’

তেমনভাবেই কোনো কোনো কুলপুত্র এই ভাবিয়া শ্রদ্ধায় আগার হইতে অনাগারিকরূপে প্রব্রজিত হন : ‘আমি জন্ম, জরা, মরণ, শোক, পরিদেবন, দুঃখ, দৌর্মনস্য ও নৈরাশ্যে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখে অবতীর্ণ হইয়াছি, দুঃখগ্রস্ত হইয়াছি, এই সমগ্র দুঃখসমষ্টির সমাপ্তি অল্পই দৃষ্ট হয়।’ এইরূপে প্রব্রজিত হইয়া তিনি লাভ, সৎকার ও খ্যাতি উৎপাদন করেন। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা আনন্দিত হন না, উহাতে তাঁহার সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই লাভ, সৎকার ও খ্যাতির দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি শীলসম্পদ লাভ করেন। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা আনন্দিত হন, কিন্তু উহাতে তাঁহার সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই শীলসম্পদ দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি সমাধিসম্পদ লাভ করেন। তিনি ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা আনন্দিত হন, কিন্তু উহাতে তাঁহার সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই সমাধিসম্পদ দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, অপ্রমত্ত হইয়া তিনি জ্ঞানদর্শন লাভ করেন। তিনি ওই জ্ঞানদর্শন দ্বারা আনন্দিত হন, কিন্তু উহাতে তাঁহার সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই জ্ঞানদর্শন দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই জ্ঞানদর্শন দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না, [অপ্রমত্ত হইয়া তিনি ‘সময়-বিমোক্ষ’ লাভ করেন। তিনি ওই ‘সময়-বিমোক্ষ দ্বারা আনন্দিত হন, কিন্তু উহাতে তাঁহার সংকল্প পরিপূর্ণ হইয়াছে মনে করেন না। তিনি ওই ‘সময়-বিমোক্ষ দ্বারা আত্মপ্রশংসা করেন না, অপরকে অবজ্ঞা করেন না। তিনি ওই ‘সময়-বিমোক্ষ’ দ্বারা মত্ত হন না, প্রমত্ত হন না, প্রমাদগ্রস্ত হন না,] অপ্রমত্ত হইয়া তিনি ‘অসময়-বিমোক্ষ’ লাভ করেন। হে ভিক্ষুগণ, ইহা অসম্ভব যে, ওই ভিক্ষু সেই ‘অসময়-বিমুক্তি’ হইতে চ্যুত হইবেন।

৮. হে ভিক্ষুগণ, এইরূপেই (জানিবে), লাভ, সৎকার ও খ্যাতি এই ব্রহ্মচর্যের ‘আশংসা’ (গৌরব) নহে, শীলসম্পদও নহে, সমাধিসম্পদও নহে, জ্ঞানদর্শনও নহে। যাহা অটল চিত্তবিমুত্তি উহার জন্যেই, হে ভিক্ষুগণ, এই ব্রহ্মচর্য-ইহাই সার, ইহাই পরিসমাপ্তি।

ভগবান ইহা বিবৃত করিলেন। ওই ভিক্ষুগণ প্রসন্নমনে তাহা শ্রবণ করিয়া আনন্দ প্রকাশ করিলেন।

মহাসারোপম-সূত্র সমাপ্ত।

The Middle Discourses

|_A. The First Fifty

|__III. The Chapter of Similes

MN29. মহাসারোপম-সূত্র

Translations [31]

English

繁體字

日本語

한국어

Français

Deutsch

Italiano

Español

Português

Русский

Norsk

Magyar

Srpski

Čeština

Slovenščina

Lietuvių Kalba

हिंदी

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference