আমি এইরূপ শুনিয়াছি।

১. একসময় ভগবান নাদিকে এক ইষ্টক-নির্মিত গৃহে অবস্থান করিতেছিলেন। সেই সময়ে আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধ, আয়ুষ্মান নন্দিয় এবং আয়ুষ্মান কিম্বিল গোশৃঙ্গশালবন-দাবে অবস্থান করিতেছিলেন। অনন্তর ভগবান সায়াহ্নসময়ে সমাধি হইতে উঠিয়া গোশৃঙ্গশালবন-দাবে উপস্থিত হইলেন। দাবপাল দূর হইতে ভগবানকে আসিতে দেখিল, দূর হইতে আসিতে দেখিয়া দাবপাল ভগবানকে কহিল : ‘শ্রমণ, এই উদ্যানে প্রবেশ করিবেন না, যেহেতু এখানে তিনজন কুলপুত্র যথারুচি অবস্থান করিতেছেন, আপনি তাঁহাদের বিঘ্ন ঘটাইবেন না।’ আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধ ভগবানের সহিত দাবপালের আলাপ শুনিতে পাইলেন; তাহা শুনিতে পাইয়া তিনি দাবপালকে কহিলেন, ‘বন্ধু দাবপাল, তুমি ভগবানকে বারণ করিও না; আমাদের শাস্তা ভগবানই স্বয়ং এইস্থানে উপনীত হইয়াছেন।’ অতঃপর আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধ আয়ুষ্মান নন্দিয় ও আয়ুষ্মান কিম্বিলের নিকট উপস্থিত হইলেন, উপস্থিত হইয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, ‘আপনারা অগ্রসর হউন, আমাদের শাস্তা ভগবান স্বয়ং এস্থানে উপনীত হইয়াছেন।’ অতঃপর আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধ, আয়ুষ্মান নন্দিয় এবং আয়ুষ্মান কিম্বিল ভগবানের সংবর্ধনা করিয়া একজন ভগবানের হস্ত হইতে পাত্রচীবর গ্রহণ করিলেন, একজন আসন পাতিয়া রাখিলেন, এবং একজন পাদোদক-হস্তে অপেক্ষা করিলেন। ভগবান নির্দিষ্ট আসনে উপবেশন করিলেন, উপবিষ্ট হইয়া পাদ প্রক্ষালন করিলেন। আয়ুষ্মানগণও ভগবানকে অভিবাদন করিয়া সসম্ভ্রমে একান্তে উপবেশন করিলেন। একান্তে উপবিষ্ট আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধকে ভগবান কহিলেন :

২. ‘অনুরুদ্ধ, তোমাদের ক্ষমনীয় (সহনীয়) ও যাপনীয় কিছু আছে কি? ভিক্ষান্নের অভাবে তোমাদের কোনো কষ্ট হয় না তো?’ ‘ভগবন, আমাদের ক্ষমনীয় ও যাপনীয় কিছু আছে, কিন্তু, প্রভো, ভিক্ষান্নের অভাবে আমরা ক্লিষ্ট নহি।’ ‘অনুরুদ্ধ, তোমরা সমগ্রভাবে সানন্দে অবিবদমান, ক্ষীরোদক-সম হইয়া, পরস্পর পরস্পরকে প্রিয়চক্ষে দেখিয়া অবস্থান করো তো?’ ‘প্রভো, অবশ্যই আমরা সমগ্রভাবে সানন্দে অবিবদমান, ক্ষীরোদক-সম হইয়া, পরস্পর পরস্পরকে প্রিয়চক্ষে দেখিয়া অবস্থান করি।’ ‘অনুরুদ্ধ, তোমরা কী প্রকারে সমগ্রভাবে, সানন্দে অবিবদমান ও ক্ষীরোদক-সম হইয়া পরস্পর পরস্পরকে প্রিয়চক্ষে দেখিয়া অবস্থান করো?’ ‘প্রভো, ইহা আমার পক্ষে বিশেষ লাভ, পরম সৌভাগ্য যে, আমি এহেন সতীর্থগণের সহিত অবস্থান করিবার সুযোগ পাইয়াছি। এই আয়ুষ্মান সতীর্থগণের প্রতি প্রকাশ্যে ও গোপনে আমার মৈত্রীপূর্ণ কায়কর্ম, বাক্‌কর্ম ও মনঃকর্ম প্রবৃত্ত আছে। প্রভো, আমার এমন মনে হয় আমার পক্ষে নিজ চিত্তকে দূরে নিক্ষেপ করিয়া এই আয়ুষ্মান সতীর্থগণের চিত্তবশে অনুবর্তন করা বিধেয়। সত্যই আমি নিজের চিত্ত দূরে রাখিয়া এই আয়ুষ্মান সতীর্থগণের চিত্তবশেই অনুবর্তন করি। কায়া ভিন্ন বটে, কিন্তু আমাদের চিত্ত যেন একই।’ আয়ুষ্মান নন্দিয় এবং আয়ুষ্মান কিম্বিলও জিজ্ঞাসিত হইয়া এইরূপে উত্তর প্রদান করিলেন।

৩. ‘সাধু, সাধু, অনুরুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষুগণ! (এখন আমাকে বলো) তোমরা অপ্রমত্ত, আতাপী এবং সাধনা-তৎপর হইয়া অবস্থান করো তো?’ ‘প্রভো, অবশ্যই আমরা অপ্রমত্ত, আতাপী ও সাধনা-তৎপর হইয়া অবস্থান করি।’ ‘অনুরুদ্ধ, তোমরা ঠিক কীরকমে অপ্রমত্ত, আতাপী ও সাধনা-তৎপর হইয়া অবস্থান করো?’ ‘প্রভো, আমাদের মধ্যে যিনি প্রথম গ্রাম হইতে ভিক্ষান্ন লইয়া প্রত্যাগমন করেন তিনি আসনগুলি নির্দিষ্ট করিয়া রাখেন, জলের ঘটি ও ভোজনপাত্র যথাস্থানে সন্নিবেশিত করেন, ভোজ্য রাখিবার পাত্রের ব্যবস্থা করেন। যিনি শেষে গ্রাম হইতে ভিক্ষান্নসংগ্রহ-কার্য হইতে প্রত্যাগমন করেন, যদি ভুক্তাবশিষ্ট কিছু থাকে, ইচ্ছা করিলে তিনি তাহা ভোজন করেন, ইচ্ছা না করিলে তিনি তাহা অল্পতৃণাবৃত স্থানে নিক্ষেপ করেন, অথবা অল্পপ্রাণ-শূন্য জলে নিমজ্জিত করেন। তিনি আসনগুলি তুলিয়া রাখেন, জলের ঘটি ও ভোজ্যপাত্র তুলিয়া রাখেন, অবশিষ্ট ভোজ্য রাখিবার পাত্র রাখিয়া দেন, ভোজনস্থান মুক্ত করিয়া রাখেন। যদি তিনি দেখিতে পান জলের ঘটি, ভোজনপাত্র অথবা শৌচঘট রিক্ত ও শূন্য অবস্থায় আছে, তাহা তিনি জলপূর্ণ করিয়া যথাস্থানে স্থাপন করেন। যদি তাঁহার পক্ষে একাকী তাহা সম্পাদন করা সম্ভব না হয়, তাহা হইলে তিনি দ্বিতীয় ব্যক্তিকে হস্তসংকেতে ডাকিয়া উভয়ের হাতে ধরিয়া তাহা তুলিয়া রাখেন। প্রভো, আমরা অকারণ বাক্য উচ্চারণ করি না, আমরা পাঁচ দিন অন্তর সর্বরাত্রি ধর্মালোচনায় আসীন থাকি। প্রভো, এইরূপেই আমরা অপ্রমত্ত, আতাপী ও সাধনা-তৎপর হইয়া অবস্থান করি।’

৪. ‘সাধু, সাধু, অনুরুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষুগণ! (এখন আমাকে বলো) এইরূপে অপ্রমত্ত, আতাপী ও সাধনা-তৎপর হইয়া অবস্থান করিবার ফলে তোমাদের লোকাতীত সম্পদ, আর্যজ্ঞানদর্শনবিশেষ ও স্বচ্ছন্দবিহার আয়ত্ত হইয়াছে কি?’ ‘প্রভো, কেন হইবে না! প্রভো, আমরা যতক্ষণ ইচ্ছা কাম-সম্পর্ক হইতে বিবিক্ত হইয়া, অকুশল ধর্ম হইতে বিবিক্ত হইয়া, সবিতর্ক, সবিচার, বিবেকজ প্রীতিসুখমণ্ডিত প্রথম ধ্যান লাভ করিয়া উহাতে অবস্থান করি। প্রভো, এইরূপে অপ্রমত্ত, আতাপী ও সাধনা-তৎপর হইবার ফলে আমাদের এই লোকাতীত সম্পদ, আর্যজ্ঞানদর্শনবিশেষ ও স্বচ্ছন্দ-বিহার আয়ত্ত হইয়াছে।’

‘সাধু, সাধু, অনুরুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষুগণ! (এখন আমাকে বলো) এই স্বচ্ছন্দ-বিহার সমতিক্রম করিবার জন্য, এই ধ্যানবিহার নিরুদ্ধ করিবার জন্য তোমাদের অপর লোকাতীত সম্পদ, আর্যজ্ঞানদর্শনবিশেষ ও স্বচ্ছন্দ-বিহার আয়ত্ত হইয়াছে কি?’ ‘প্রভো, কেন হইবে না! প্রভো, আমরা যতক্ষণ ইচ্ছা বিতর্ক-বিচার-উপশমে অধ্যাত্ম-সম্প্রসাদী, চিত্তের একীভাব-আনয়নকারী, বিতর্ক-রহিত, বিচার-রহিত, সমাধিজ প্রীতিসুখমণ্ডিত দ্বিতীয় ধ্যান লাভ করিয়া উহাতে বিচরণ করি। প্রভো, উক্ত স্বচ্ছন্দ-বিহার সমতিক্রম করিবার জন্য উক্ত ধ্যানবিহার নিরুদ্ধ করিবার জন্য আমাদের এই লোকাতীত সম্পদ, আর্যজ্ঞানদর্শনবিশেষ ও স্বচ্ছন্দ-বিহার আয়ত্ত হইয়াছে।’

‘সাধু, সাধু, অনুরুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষুগণ! (এখন আমাকে বলো) এই স্বচ্ছন্দ-বিহার সমতিক্রম করিবার জন্য, এই ধ্যানবিহার নিরুদ্ধ করিবার জন্য তোমাদের অপর কোনো লোকাতীত সম্পদ আর্যজ্ঞানদর্শনবিশেষ ও স্বচ্ছন্দ-বিহার আয়ত্ত হইয়াছে কি?’ “প্রভো, কেন হইবে না! প্রভো, আমরা যতক্ষণ ইচ্ছা প্রীতিতেও বীতরাগ হইয়া উপেক্ষার ভাবে অবস্থান করি, স্মৃতিমান ও সম্প্রজ্ঞাত হইয়া স্বচিত্তে (প্রীতি-নিরপেক্ষ) সুখ অনুভব করি, যে ধ্যানস্তরে আরোহণ করিলে ‘ধ্যায়ী উপেক্ষা-সম্পন্ন ও স্মৃতিমান হইয়া (প্রীতি-নিরপেক্ষ) সুখে বিচরণ করেন’ বলিয়া আর্যগণ বর্ণনা করেন সেই তৃতীয় ধ্যান লাভ করিয়া উহাতে বিচরণ করি। প্রভো, স্বচ্ছন্দ-বিহার সমতিক্রম করিবার জন্য, উক্ত ধ্যানবিহার নিরুদ্ধ করিবার জন্য আমাদের এই লোকাতীত সম্পদ আর্যজ্ঞানদর্শনবিশেষ ও স্বচ্ছন্দ-বিহার আয়ত্ত হইয়াছে।”

‘সাধু, সাধু, অনুরুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষুগণ! (এখন আমাকে বলো) এই স্বচ্ছন্দ-বিহার সমতিক্রম করিবার জন্য, এই ধ্যানবিহার নিরুদ্ধ করিবার জন্য তোমাদের অপর কোনো লোকাতীত সম্পদ, আর্যজ্ঞানদর্শনবিশেষ ও স্বচ্ছন্দ-বিহার আয়ত্ত হইয়াছে কি?’ ‘প্রভো, কেন হইবে না! প্রভো, আমরা যতক্ষণ ইচ্ছা সর্বদৈহিক সুখ-দুঃখ পরিত্যাগ করিয়া, পূর্বেই সৌমনস্য-দৌর্মনস্য (মনের হর্ষ-বিষাদ) অস্তমিত করিয়া না-দুঃখ-না-সুখ, উপেক্ষা ও স্মৃতি দ্বারা পরিশুদ্ধ চিত্তে চতুর্থ ধ্যান লাভ করিয়া উহাতে বিচরণ করি। প্রভো, উক্ত স্বচ্ছন্দ-বিহার সমতিক্রম করিবার জন্য, উক্ত ধ্যানবিহার নিরুদ্ধ করিবার জন্য আমাদের এই লোকাতীত সম্পদ, আর্যজ্ঞাদর্শনবিশেষ ও স্বচ্ছন্দ-বিহার আয়ত্ত হইয়াছে।’

‘সাধু, সাধু, অনুরুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষুগণ! (এখন আমাকে বলো) এই স্বচ্ছন্দ-বিহার সমতিক্রম করিবার জন্য, এই ধ্যানবিহার নিরুদ্ধ করিবার জন্য তোমাদের অপর কোনো লোকাতীত সম্পদ, আর্যজ্ঞানদর্শনবিশেষ ও স্বচ্ছন্দ-বিহার আয়ত্ত হইয়াছে কি?’ “প্রভো, কেন হইবে না! প্রভো, আমরা যতক্ষণ ইচ্ছা সর্বাংশে রূপ-সংজ্ঞা অতিক্রম করিয়া, প্রতিঘ-সংজ্ঞা অস্তমিত করিয়া, নানাত্ব-সংজ্ঞা মনন না করিয়া ‘অনন্ত-আকাশ’ এই ভাবোদয়ে ‘আকাশায়তন’ নামক (প্রথম অরূপসমাপত্তি) লাভ করিয়া উহাতে বিচরণ করি। প্রভো, উক্ত স্বচ্ছন্দ-বিহার সমতিক্রম করিবার জন্য, উক্ত ধ্যানবিহার নিরুদ্ধ করিবার জন্য আমাদের এই লোকাতীত সম্পদ, আর্যজ্ঞানদর্শনবিশেষ ও স্বচ্ছন্দ-বিহার আয়ত্ত হইয়াছে।”

‘সাধু, সাধু, অনুরুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষুগণ! (এখন আমাকে বলো) এই স্বচ্ছন্দ-বিহার সমতিক্রম করিবার জন্য, এই ধ্যানবিহার নিরুদ্ধ করিবার জন্য তোমাদের অপর কোনো লোকাতীত সম্পদ, আর্যজ্ঞানদর্শনবিশেষ ও স্বচ্ছন্দ-বিহার আয়ত্ত হইয়াছে কি?’ “প্রভো, কেন হইবে না! প্রভো, আমরা যতক্ষণ ইচ্ছা সর্বাংশে আকাশায়তন সমতিক্রম করিয়া ‘অনন্ত বিজ্ঞান’ এই ভাবোদয়ে ‘বিজ্ঞানায়তন’ নামক (দ্বিতীয় অরূপসমাপত্তি)… সর্বাংশে ‘বিজ্ঞানায়তন’ সমতিক্রম করিয়া ‘কিছুই নাই’ এই ভাবোদয়ে ‘আকিঞ্চনায়তন’ নামক (তৃতীয় অরূপসমাপত্তি)… সর্বাংশে ‘আকিঞ্চনায়তন’ সমতিক্রম করিয়া ‘নৈবসংজ্ঞা-না-অসংজ্ঞায়তন’ নামক (চতুর্থ অরূপসমাপত্তি) লাভ করিয়া উহাতে বিচরণ করি। প্রভো, উক্ত স্বচ্ছন্দ-বিহার সমতিক্রম করিবার জন্য, উক্ত ধ্যানবিহার নিরুদ্ধ করিবার জন্য আমাদের এই লোকাতীত সম্পদ আর্যজ্ঞানদর্শনবিশেষ ও স্বচ্ছন্দ-বিহার আয়ত্ত হইয়াছে।”

‘সাধু, সাধু, অনুরুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষুগণ! (এখন আমাকে বলো) এই স্বচ্ছন্দ-বিহার সমতিক্রম করিবার জন্য, এই ধ্যানবিহার নিরুদ্ধ করিবার জন্য তোমাদের অপর কোনো লোকাতীত সম্পদ, আর্যজ্ঞানদর্শনবিশেষ ও স্বচ্ছন্দ-বিহার আয়ত্ত হইয়াছে কি?’ “প্রভো, কেন হইবে না! প্রভো, আমরা যতক্ষণ ইচ্ছা সর্বাংশে, নৈবসংজ্ঞা-না-অসংজ্ঞায়তন সমতিক্রম করিয়া ‘সংজ্ঞা-বেদয়িত-নিরোধ’ নামক (লোকোত্তর সমাপত্তি) লাভ করিয়া উহাতে বিচরণ করি। প্রজ্ঞা দ্বারা (বিমুক্তি) দর্শন করিবার ফলে আসব পরিক্ষীণ হয়। প্রভো, উক্ত স্বচ্ছন্দ-বিহার সমতিক্রম করিবার জন্য, উক্ত ধ্যানবিহার নিরুদ্ধ করিবার জন্য আমাদের এই লোকাতীত সম্পদ, আর্যজ্ঞানদর্শনবিশেষ ও স্বচ্ছন্দ-বিহার আয়ত্ত হইয়াছে। প্রভো, আমরা এই স্বচ্ছন্দ-বিহার হইতে উচ্চতর ও যোগ্যতর অপর কোনো স্বচ্ছন্দ-বিহার দেখি না।”

‘সাধু, সাধু অনুরুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষুগণ! (তোমরা সত্যই বলিয়াছ) এই স্বচ্ছন্দ-বিহার হইতে উচ্চতর ও যোগ্যতর অপর কোনো স্বচ্ছন্দ-বিহার নাই।’

৫. অনন্তর ভগবান আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধ, আয়ুষ্মান নন্দিয় ও আয়ুষ্মান কিম্বিলকে ধর্মকথা দ্বারা সত্য সন্দর্শন করাইয়া, সমুদ্দীপ্ত, সমুত্তেজিত ও সম্প্রহৃষ্ট করিয়া আসন হইতে উঠিয়া প্রস্থান করিলেন। আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধ, আয়ুষ্মান নন্দিয় ও আয়ুষ্মান কিম্বিল কিছুদূর ভগবানের অনুগমন করিয়া তথা হইতে প্রতিনিবৃত্ত আয়ুষ্মান নন্দিয় ও আয়ুষ্মান কিম্বিল আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধকে কহিলেন, ‘আমরা কি আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধকে এ কথা বলিয়াছি যে, আমরা এই এই ধ্যান-সমাপত্তি লাভ করিয়াছি, যাহার উপর নির্ভর করিয়া আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধ ভগবানের সম্মুখে আসবক্ষয় পর্যন্ত আমাদের সিদ্ধির বিষয় প্রকাশ করিলেন?’ ‘আয়ুষ্মানগণ কখনও আমাকে সে-কথা বলেন নাই। তথাপি আমি স্বচিত্তে আয়ুষ্মানগণের চিত্তের বিষয় বিদিত হইয়াছি। দেবতারাও আমাকে এ বিষয় জানাইয়াছেন। তাহার উপর নির্ভর করিয়াই আমি ভগবানের প্রশ্নের উত্তরে বিষয়টি বিবৃত করিয়াছি।’

৬. অনন্তর যক্ষ দীর্ঘ পরজন ভগবানের নিকট উপস্থিত হইলেন, উপস্থিত হইয়া সসম্ভ্রমে একান্তে দাঁড়াইল, একান্তে দাঁড়াইয়া যক্ষ দীর্ঘ পরজন ভগবানকে কহিল : ‘প্রভো, বৃজিগণের, বৃজিপুত্রগণের মহালাভ, মহাসৌভাগ্য যে, যে-স্থানে ভগবান তথাগত অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ অবস্থান করিতেছেন, সে-স্থানে তিনজন কুলপুত্র আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধ, আয়ুষ্মান নন্দিয় ও আয়ুষ্মান কিম্বিল উপস্থিত আছেন।’ দীর্ঘ পরজন যক্ষের উক্তি শুনিয়া পৃথিবীস্থ দেবগণ উহার প্রতিধ্বনি করিলেন, ‘সত্যই বৃজিগণের, বৃজিপুত্রগণের মহালাভ, মহাসৌভাগ্য যে, যে-স্থানে ভগবান তথাগত অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ অবস্থান করিতেছেন সে-স্থানে এই তিনজন কুলপুত্র : আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধ, আয়ুষ্মান নন্দিয় ও আয়ুষ্মান কিম্বিল উপস্থিত আছেন।’ পৃথিবীস্থ দেবগণের উক্তি শুনিয়া চতুর্মহারাজিক দেবগণ, চতুর্মহারাজিক দেবগণের উক্তি শুনিয়া ত্রয়স্ত্রিংশবাসী দেবগণ, ত্রয়স্ত্রিংশবাসী দেবগণের উক্তি শুনিয়া যামদেবগণ, যামদেবগণের উক্তি শুনিয়া তুষিতবাসী দেবগণ, তুষিতবাসী দেবগণের উক্তি শুনিয়া নির্মাণরতি দেবগণ, নির্মাণরতি দেবগণের উক্তি শুনিয়া পরনির্মিত-বশবর্তী দেবগণ, পরনির্মিত-বশবর্তী দেবগণের উক্তি শুনিয়া ব্রহ্ম-কায়িক দেবগণ প্রতিধ্বনি করিলেন, ‘সত্যই বৃজিগণের, বৃজিপুত্রগণের মহালাভ, মহাসৌভাগ্য যে, যে-স্থানে ভগবান তথাগত অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ অবস্থান করিতেছেন সে-স্থানে এই তিনজন কুলপুত্র : আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধ, আয়ুষ্মান নন্দিয় ও আয়ুষ্মান কিম্বিল উপস্থিত আছেন।’

৭. এইভাবে সেই ক্ষণে, সেই মুহূর্তে, ব্রহ্মলোক পর্যন্ত যক্ষের ধ্বনি পঁহুছিল। ভগবান কহিলেন, ‘দীর্ঘ, এইরূপই বটে, যথার্থই এইরূপ! দীর্ঘ, যেই কুল হইতে এই তিনজন কুলপুত্র আগার হইতে অনাগারিকরূপে প্রব্রজিত হইয়াছেন, যদি সেই কুল প্রসন্নচিত্তে এই তিনজন কুলপুত্রের (গুণাবলি) অনুস্মরণ করে, তাহা হইলে তাহা সেই কুলের দীর্ঘকাল হিত ও সুখের কারণ হইবে। দীর্ঘ, যে কুলবংশ হইতে এই তিনজন কুলপুত্র আগার হইতে অনাগারিকরূপে প্রব্রজিত হইয়াছেন যদি সেই কুলবংশ প্রসন্নচিত্তে তাঁহাদের (গুণাবলি) অনুস্মরণ করে, তাহা হইলে তাহা সেই কুলবংশের দীর্ঘকাল হিত ও সুখের কারণ হইবে। দীর্ঘ, যে গ্রাম, যে নিগম, যে নগর, যে জনপদ হইতে এই তিনজন কুলপুত্র আগার হইতে অনাগারিকরূপে প্রব্রজিত হইয়াছেন যদি সেই গ্রাম, সেই নিগম, সেই নগর এবং সেই জনপদ প্রসন্নচিত্তে তাঁহাদের (গুণাবলি) অনুস্মরণ করে, তবে তাহা উহাদের দীর্ঘকাল হিত ও সুখের কারণ হইবে। দীর্ঘ, যদি সকল ক্ষত্রিয়, সকল ব্রাহ্মণ, সকল বৈশ্য এবং সকল শূদ্র প্রসন্নচিত্তে তাঁহাদের (গুণাবলি) অনুস্মরণ করে, তবে তাহা তাহাদের দীর্ঘকাল হিত ও সুখের কারণ হইবে। দীর্ঘ, যদি সর্ব দেবলোক, মারলোক, ব্রহ্মলোক, সকল শ্রমণ-ব্রাহ্মণ ও সকল দেবতা ও মনুষ্য প্রসন্নচিত্তে তাঁহাদের (গুণাবলি) অনুস্মরণ করে, তবে তাহা তাহাদের দীর্ঘকাল হিত ও সুখের কারণ হইবে। দীর্ঘ, তুমি স্বচক্ষে দেখ, এই তিনজন কুলপুত্র বহুজনের হিতের জন্য, বহুজনের সুখের জন্য, লোকে অনুকম্পা বিতরণের জন্য, অর্থ, হিত ও সুখ বিধানের জন্য সাধনমার্গে অগ্রসর হইয়াছেন।’

ভগবান ইহা বিবৃত করিলেন। দীর্ঘ পরজন যক্ষ তাহা প্রসন্নচিত্তে শ্রবণ করিয়া আনন্দ প্রকাশ করিল।

ক্ষুদ্র-গোশৃঙ্গ-সূত্র সমাপ্ত।

The Middle Discourses

|_A. The First Fifty

|__IV. The Greater Chapter on Pairs

MN31. ক্ষুদ্র-গোশৃঙ্গ-সূত্র

Translations [25]

English

繁體字

日本語

Français

Deutsch

Italiano

Español

Português

Русский

Norsk

Čeština

Slovenščina

हिंदी

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference