আমি এইরূপ শুনিয়াছি।

১. একসময় ভগবান গোশৃঙ্গশালবন-দাবে অবস্থান করিতেছিলেন। সঙ্গে বহুসংখ্যক খ্যাতনামা স্থবির শিষ্য ছিলেন; যথা : আয়ুষ্মান সারিপুত্র, আয়ুষ্মান মহামৌদ্গল্যায়ন, আয়ুষ্মান মহাকাশ্যপ, আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধ, আয়ুষ্মান রৈবত, আয়ুষ্মান আনন্দ, এবং তদ্‌বৎ অপরাপর বহু খ্যাতনামা স্থবির শিষ্যগণ। আয়ুষ্মান মহামৌদ্গল্যায়ন সায়াহ্নসময়ে সমাধি হইতে উঠিয়া আয়ুষ্মান মহাকাশ্যপের নিকট উপস্থিত হইলেন, উপস্থিত হইয়া আয়ুষ্মান মহাকাশ্যপকে কহিলেন, ‘বন্ধু কাশ্যপ, চলো আমরা আয়ুষ্মান সারিপুত্রের নিকট যাই, তাঁহার নিকট যাইয়া ধর্ম শ্রবণ করি।’ ‘তথাস্তু বলিয়া আয়ুষ্মান মহাকাশ্যপ তাঁহার সম্মতি জানাইলেন। অনন্তর আয়ুষ্মান মহামৌদ্গল্যায়ন, আয়ুষ্মান মহাকাশ্যপ ও আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধ ধর্মশ্রবণের জন্য আয়ুষ্মান সারিপুত্রের নিকট উপস্থিত হইলেন। আয়ুষ্মান আনন্দ দেখিতে পাইলেন যে, আয়ুষ্মান মহামৌদ্গল্যায়ন, আয়ুষ্মান মহাকাশ্যপ ও আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধ ধর্মশ্রবণের জন্য আয়ুষ্মান সারিপুত্রের নিকট যাইতেছেন, তাহা দেখিয়া তিনি আয়ুষ্মান রৈবতের নিকট উপস্থিত হইলেন, উপস্থিত হইয়া আয়ুষ্মান রৈবতকে কহিলেন, ‘বন্ধু রৈবত, এই সৎপুরুষগণ ধর্মশ্রবণের জন্য আয়ুষ্মান সারিপুত্রের নিকট যাইতেছেন। চলো আমরাও ধর্মশ্রবণের জন্য তাঁহার নিকট যাই।’ ‘তথাস্তু বলিয়া আয়ুষ্মান রৈবত তাঁহার সম্মতি জানাইলেন। অনন্তর আয়ুষ্মান রৈবত ও আয়ুষ্মান আনন্দ ধর্মশ্রবণের জন্য আয়ুষ্মান সারিপুত্রের নিকট উপস্থিত হইলেন। আয়ুষ্মান সারিপুত্র দূর হইতে দেখিতে পাইলেন যে, আয়ুষ্মান রৈবত ও আয়ুষ্মান আনন্দ আসিতেছেন। তাঁহাদিগকে আসিতে দেখিয়া তিনি আয়ুষ্মান আনন্দকে কহিলেন, ‘স্বাগতম! আয়ুষ্মান আনন্দের আসিতে আজ্ঞা হউক। ভগবানের সমীপবর্তী উপস্থায়ক (সেবক) আয়ুষ্মান আনন্দের শুভাগমন হউক। বন্ধু আনন্দ, এই গোশৃঙ্গশালবন অতি রমণীয়, জ্যোৎস্নাপুলকিত রজনী, সর্বাঙ্গকুসুমিত শালবৃক্ষরাজি, মনে হয় যেন দিব্যগন্ধ চতুর্দিকে প্রবাহিত। বন্ধু আনন্দ, কীরূপ ভিক্ষু দ্বারা এই গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে?’ “বন্ধু সারিপুত্র, ভিক্ষু বহুশ্রুত, শ্রুতিধর ও শ্রুতি-সঞ্চয়ী হন। যে-সকল (বুদ্ধকথিত) ধর্মের আদিতে কল্যাণ, মধ্যে কল্যাণ ও অন্তে কল্যাণ, যে-সকল ধর্ম সার্থক ও ‘সব্যাঞ্জন’ এবং কেবল পরিপূর্ণ ও পরিশুদ্ধ ব্রহ্মচর্যই প্রকাশিত করে, এহেন ধর্ম (ভিক্ষু দ্বারা) বহুবার শ্রুত, (সুন্দররূপে) ধৃত, আবৃত্তি দ্বারা সুপরিচিত, মনন দ্বারা অনুবীক্ষিত, এবং প্রজ্ঞা দ্বারা সুপ্রবিষ্ট হয়। তিনি চারি পরিষদের নিকট সর্ব পাপানুশয় সমুদ্‌ঘাতের জন্য পরিমণ্ডল আকারে, সম্পূর্ণ পদব্যঞ্জনে ও আনুপূর্বিকভাবে ধর্মোপদেশ প্রদান করেন। বন্ধু সারিপুত্র, এইরূপ ভিক্ষু দ্বারাই গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে।”

২. ইহা বিবৃত হইলে, আয়ুষ্মান সারিপুত্র আয়ুষ্মান রৈবতকে কহিলেন, ‘বন্ধু রৈবত, আয়ুষ্মান আনন্দ যথাশক্তি স্বীয় মত বিবৃত করিয়াছেন, এখন আমরা আয়ুষ্মান রৈবতকেই জিজ্ঞাসা করিতেছি : বন্ধু রৈবত, গোশৃঙ্গশালবন রমণীয়, জ্যোৎস্নাপুলকিত রজনী, সর্বাঙ্গকুসুমিত শালবৃক্ষরাজি, মনে হয় যেন দিব্যগন্ধ চতুর্দিকে প্রবাহিত। বন্ধু রৈবত, কীরূপ ভিক্ষু দ্বারা গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে?’ ‘বন্ধু সারিপুত্র, ভিক্ষু সমাধিসুখে রমিত ও সমাধিরত হন, অধ্যাত্মে চিত্তের শমথ-সাধনে নিযুক্ত হন, নিত্য ধ্যায়ী বিদর্শন-সমন্বিত ও শূন্যাগার-নিবিষ্ট হন। বন্ধু সারিপুত্র, এইরূপ ভিক্ষু দ্বারাই গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে।’

৩. ইহা বিবৃত হইলে, আয়ুষ্মান সারিপুত্র আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধকে কহিলেন, ‘বন্ধু অনুরুদ্ধ, আয়ুষ্মান রৈবত যথাশক্তি স্বীয় মত বিবৃত করিয়াছেন। এখন আমরা আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধকেই জিজ্ঞাসা করিতেছি : বন্ধু অনুরুদ্ধ, গোশৃঙ্গশালবন রমণীয়, জ্যোৎস্নাপুলকিত রজনী, সর্বাঙ্গকুসুমিত শালবৃক্ষরাজি, মনে হয় যেন দিব্যগন্ধ চতুর্দিকে প্রবাহিত। বন্ধু অনুরুদ্ধ, কীরূপ ভিক্ষু দ্বারা গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে?’ ‘বন্ধু সারিপুত্র, ভিক্ষু দিব্যচক্ষে, বিশুদ্ধ ও লোকাতীত দৃষ্টিতে সহস্র (ভুবন) অবলোকন করেন। বন্ধু সারিপুত্র, যেমন চক্ষুষ্মান পুরুষ শ্রেষ্ঠ সৌধের উপর হইতে সহস্র নেমিমণ্ডল অবলোকন করেন, তেমনভাবেই ভিক্ষু দিব্যচক্ষে, বিশুদ্ধ ও লোকাতীত দৃষ্টিতে সহস্র লোক অবলোকন করেন। বন্ধু সারিপুত্র, এইরূপ ভিক্ষু দ্বারাই গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে।’

৪. ইহা বিবৃত হইলে, আয়ুষ্মান সারিপুত্র আয়ুষ্মান মহাকাশ্যপকে কহিলেন, ‘বন্ধু কাশ্যপ, আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধ যথাশক্তি স্বীয় মত বিবৃত করিয়াছেন, এখন আমরা আয়ুষ্মান মহাকাশ্যপকেই জিজ্ঞাসা করিতেছি : বন্ধু কাশ্যপ, গোশৃঙ্গশালবন রমণীয়, জ্যোৎস্নাপুলকিত রজনী, সর্বাঙ্গকুসুমিত শালবৃক্ষরাজি, মনে হয় যেন দিব্যগন্ধ চতুর্দিকে প্রবাহিত। বন্ধু কাশ্যপ, কীরূপ ভিক্ষু দ্বারা গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে?’ ‘বন্ধু সারিপুত্র, ভিক্ষু নিজে আরণ্যকে (অরণ্যবিহারী) হন এবং অরণ্যবিহারের প্রশংসা করেন; নিজে পিণ্ডচারী হন এবং পিণ্ডচর্যার প্রশংসা করেন; নিজে পাংশুকূলধারী হন এবং পাংশুকূলচর্যার প্রশংসা করেন; নিজে ত্রিচীবরধারী হন এবং ত্রিচীবরচর্যার প্রশংসা করেন; নিজে অল্পেচ্ছুক হন এবং অল্পেচ্ছার প্রশংসা করেন; নিজে সন্তুষ্ট হন এবং সন্তুষ্টিতার প্রশংসা করেন; নিজে প্রবিবেকী (বৈরাগ্যরত) হন এবং বিবেক-বৈরাগ্যের প্রশংসা করেন; নিজে অসঙ্গ হন এবং অসংসর্গের প্রশংসা করেন; নিজে আরব্ধবীর্য হন এবং বীর্যারম্ভের প্রশংসা করেন; নিজে শীলসম্পন্ন হন এবং শীলসম্পদের প্রশংসা করেন; নিজে সমাধিসম্পন্ন হন এবং সমাধিসম্পদের প্রশংসা করেন; নিজে প্রজ্ঞাসম্পন্ন হন এবং প্রজ্ঞাসম্পদের প্রশংসা করেন; নিজে বিমুক্তিসম্পন্ন হন এবং বিমুক্তিসম্পদের প্রশংসা করেন; নিজে বিমুক্তিজ্ঞানদর্শনসম্পন্ন হন এবং বিমুক্তিজ্ঞানদর্শনসম্পদের প্রশংসা করেন। বন্ধু সারিপুত্র, এইরূপ ভিক্ষু দ্বারাই গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে।’

৫. ইহা বিবৃত হইলে, আয়ুষ্মান সারিপুত্র আয়ুষ্মান মহামৌদ্গল্যায়নকে কহিলেন, ‘বন্ধু মৌদ্গল্যায়ন, আয়ুষ্মান মহাকাশ্যপ যথাশক্তি স্বীয় মত বিবৃত করিয়াছেন, এখন আমরা আয়ুষ্মান মহামৌদ্গল্যায়নকেই জিজ্ঞাসা করিতেছি : বন্ধু মৌদ্গল্যায়ন, গোশৃঙ্গশালবন রমণীয়, জ্যোৎস্নাপুলকিত রজনী, সর্বাঙ্গকুসুমিত শালবৃক্ষরাজি, মনে হয় যেন দিব্যগন্ধ চতুর্দিকে প্রবাহিত। বন্ধু মৌদ্গল্যায়ন, কীরূপ ভিক্ষু দ্বারা গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে?’ ‘বন্ধু সারিপুত্র, দুই ভিক্ষু অভিধর্ম-কথা আলোচনা করেন, তাঁহারা পরস্পর পরস্পরকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন, তাঁহারা পরস্পরের দ্বারা প্রশ্ন জিজ্ঞাসিত হইয়া উত্তর প্রদান করেন এবং গোলযোগ করেন না, এবং তাঁহাদের মধ্যে ধর্মযুক্ত কথাই প্রবর্তিত হয়। বন্ধু সারিপুত্র, এইরূপ ভিক্ষু দ্বারাই গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে।’

৬. অনন্তর আয়ুষ্মান মহামৌদ্গল্যায়ন আয়ুষ্মান সারিপুত্রকে কহিলেন, ‘বন্ধু সারিপুত্র, আমরা সকলে স্ব স্ব শক্তি অনুসারে স্বীয় স্বীয় মত ব্যক্ত করিয়াছি। এখন আমরা আয়ুষ্মান সারিপুত্রকেই জিজ্ঞাসা করিতেছি : বন্ধু সারিপুত্র, গোশৃঙ্গশালবন রমণীয়, জ্যোৎস্নাপুলকিত রজনী, সর্বাঙ্গকুসুমিত শালবৃক্ষরাজি, মনে হয় যেন দিব্যগন্ধ চতুর্দিকে প্রবাহিত। বন্ধু সারিপুত্র, কীরূপ ভিক্ষু দ্বারা গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে।’ ‘বন্ধু মৌদ্গল্যায়ন, ভিক্ষু চিত্তকে স্ববশে আনয়ন করেন এবং নিজে চিত্তের বশে অনুবর্তন করেন না, তিনি যেই ধ্যান-সমাপত্তিতে পূর্বাহ্ণে বিচরণ করিতে ইচ্ছা করেন সেই ধ্যান-সমাপত্তিতে পূর্বাহ্ণেই বিচরণ করেন, যেই ধ্যান-সমাপত্তিতে মধ্যাহ্নে বিচরণ করিতে ইচ্ছা করেন সেই ধ্যান-সমাপত্তিতে মধ্যাহ্নেই বিচরণ করেন, যেই ধ্যান-সমাপত্তিতে সায়াহ্নে বিচরণ করিতে ইচ্ছা করেন সেই ধ্যান-সমাপত্তিতেই সায়াহ্নে বিচরণ করেন। বন্ধু মৌদ্গল্যায়ন, যেমন রাজার কিংবা রাজমহামাত্রের কাপড়ের বাক্স বিবিধ পরিধানে পূর্ণ থাকে বলিয়া তিনি পূর্বাহ্ণে যে পোষাক পরিধান করিতে ইচ্ছা করেন পূর্বাহ্ণেই তাহা পরিধান করেন, মধ্যাহ্নে যে পোষাক পরিধান করিতে ইচ্ছা করেন মধ্যাহ্নেই তাহা পরিধান করেন, এবং সায়াহ্নে যে পোষাক পরিধান করিতে ইচ্ছা করেন সায়াহ্নেই তাহা পরিধান করেন, তেমনভাবেই ভিক্ষু চিত্তকে স্ববশে আনয়ন করেন এবং নিজে চিত্তের বশে অনুবর্তন করেন না, তিনি যেই ধ্যান-সমাপত্তিতে পূর্বাহ্ণে বিচরণ করিতে ইচ্ছা করেন উহাতে পূর্বাহ্ণেই বিচরণ করেন, যেই ধ্যান-সমাপত্তিতে মধ্যাহ্নে বিচরণ করিতে ইচ্ছা করেন উহাতে মধ্যাহ্নেই বিচরণ করেন, যেই ধ্যান-সমাপত্তিতে সায়াহ্নে বিচরণ করিতে ইচ্ছা করেন উহাতে সায়াহ্নেই বিচরণ করেন। বন্ধু মৌদ্গল্যায়ন, এইরূপ ভিক্ষু দ্বারাই গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে।’

৭. অনন্তর আয়ুষ্মান সারিপুত্র ওই আয়ুষ্মান স্থবিরগণকে কহিলেন, ‘বন্ধুগণ, আমরা সকলে যথাশক্তি স্ব স্ব মত ব্যক্ত করিয়াছি, এখন চলো আমরা ভগবানের নিকট উপস্থিত হই, উপস্থিত হইয়া তাঁহাকে এ বিষয় বলি। যেভাবে যাহা তিনি আমাদের নিকট ব্যক্ত করিবেন সেভাবে তাহা আমরা অবধারণ করিব।’ ‘তথাস্তু বলিয়া তাঁহারা আয়ুষ্মান সারিপুত্রের নিকট তাঁহাদের সম্মতি জানাইলেন। অনন্তর ওই আয়ুষ্মান স্থবিরগণ ভগবানের নিকট উপস্থিত হইলেন, উপস্থিত হইয়া ভগবানকে অভিবাদন করিয়া একান্তে উপবেশন করিলেন। একান্তে উপবিষ্ট আয়ুষ্মান সারিপুত্র ভগবানকে কহিলেন, “প্রভো, এইস্থানে আয়ুষ্মান রৈবত ও আয়ুষ্মান আনন্দ ধর্মশ্রবণের জন্য আমার নিকট উপস্থিত হন। প্রভো, আমি দূর হইতে আয়ুষ্মান রৈবত ও আয়ুষ্মান আনন্দকে আসিতে দেখিয়া আয়ুষ্মান আনন্দকে কহিলাম, ‘স্বাগতম, ভগবানের সমীপবিহারী উপস্থায়ক (সেবক) আয়ুষ্মান আনন্দের আসিতে আজ্ঞা হউক। বন্ধু আনন্দ, গোশৃঙ্গশালবন রমণীয়, জ্যোৎস্নাপুলকিত রজনী, সর্বাঙ্গ-কুসমিত শালবৃক্ষরাজি, মনে হয় যেন দিব্যগন্ধ চতুর্দিকে প্রবাহিত। বন্ধু আনন্দ, কীরূপ ভিক্ষুর দ্বারা এই গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে?’ প্রভো, ইহা বিবৃত হইলে, আয়ুষ্মান আনন্দ আমাকে কহিলেন, ‘বন্ধু সারিপুত্র, ভিক্ষু বহুশ্রুত, শ্রুতিধর ও শ্রুতিসঞ্চয়ী হন। যে-সকল (বুদ্ধকথিত) ধর্মের আদিতে কল্যাণ, মধ্যে কল্যাণ ও অন্তে কল্যাণ, যে-সকল ধর্ম সার্থক ও সব্যঞ্জন এবং কেবল পরিপূর্ণ ও পরিশুদ্ধ ব্রহ্মচর্য প্রকাশিত করে, এহেন ধর্ম (ভিক্ষুর দ্বারা) বহুবার শ্রুত, (সুন্দররূপে) ধৃত, আবৃত্তির দ্বারা সুপরিচিত, মনন দ্বারা অনুবীক্ষিত, এবং প্রজ্ঞা দ্বারা সুপ্রবিষ্ট হয়। তিনি চারি পরিষদের নিকট সর্ব পাপানুশয় সমুদ্‌ঘাতের জন্য পরিমণ্ডল আকারে, সম্পূর্ণ পদব্যঞ্জনে ও আনুপূর্বিকভাবে ধর্মোপদেশ প্রদান করেন। বন্ধু সারিপুত্র, এইরূপ ভিক্ষুর দ্বারাই গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে।’”

‘সাধু, সাধু, সারিপুত্র, যেভাবে বলিলে আনন্দ সত্যই তাহা ব্যক্ত করিতে চাহিলে সম্যক ব্যক্ত করিতে পারে। সারিপুত্র, সত্যই আনন্দ বহুশ্রুত, শ্রুতিধর ও শ্রুতিসঞ্চয়ী। (মৎকথিত) যে-সকল ধর্মের আদিতে কল্যাণ, মধ্যে কল্যাণ ও অন্তে কল্যাণ, যে-সকল ধর্ম সার্থক ও সব্যঞ্জন এবং কেবল পরিপূর্ণ ও পরিশুদ্ধ ব্রহ্মচর্য প্রকাশিত করে, এহেন ধর্ম (তাহার দ্বারা) বহুবার শ্রুত, সুন্দররূপে ধৃত, আবৃত্তির দ্বারা সুপরিচিত, মনন দ্বারা অনুবীক্ষিত ও প্রজ্ঞা দ্বারা সুপ্রবিষ্ট। সে চারি পরিষদের নিকট সর্ব পাপানুশয় সমুদ্‌ঘাতের জন্য পরিমণ্ডল আকারে, সম্পূর্ণ পদব্যঞ্জনে এবং আনুপূর্বিকভাবে ধর্মোপদেশ প্রদান করে।’

৮. “প্রভো, এইরূপে (আয়ুষ্মান আনন্দের মত) কথিত হইলে, আমি আয়ুষ্মান রৈবতকে কহিলাম, ‘বন্ধু রৈবত, আয়ুষ্মান আনন্দ যথাশক্তি স্বীয় মত ব্যক্ত করিয়াছেন, এখন আমরা আয়ুষ্মান রৈবতকেই জিজ্ঞাসা করিতেছি : বন্ধু রৈবত, গোশৃঙ্গশালবন রমণীয়, জ্যোৎস্নাপুলকিত রজনী, সর্বাঙ্গকুসুমিত শালবৃক্ষরাজি, মনে হয় যেন দিব্যগন্ধ চতুর্দিকে প্রবাহিত। বন্ধু রৈবত, কীরূপ ভিক্ষুর দ্বারা গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে?’ প্রভো, ইহা বিবৃত হইলে, আয়ুষ্মান রৈবত আমাকে কহিলেন, ‘বন্ধু সারিপুত্র, ভিক্ষু সমাধিসুখে রমিত ও সমাধিরত হন, অধ্যাত্মে চিত্তের শমথ-সাধনে নিযুক্ত হন, নিত্যধ্যায়ী, বিদর্শন-সমন্বিত ও শূন্যাগার-নিবিষ্ট হন। বন্ধু সারিপুত্র, এইরূপ ভিক্ষুর দ্বারাই গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে।’”

‘সাধু, সাধু, সারিপুত্র, যেভাবে বলিলে রৈবত সত্যই তাহা ব্যক্ত করিতে পারে। সারিপুত্র, সত্যই রৈবত সমাধিসুখে রমিত, সমাধিরত, অধ্যাত্মে চিত্তের শমথ-সাধনে নিযুক্ত, নিত্যধ্যায়ী, বিদর্শন-সমন্বিত ও শূন্যাগার-নিবিষ্ট।’

৯. “প্রভো, এইরূপে (আয়ুষ্মান রৈবতের মত) কথিত হইলে, আমি আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধকে কহিলাম, ‘বন্ধু অনুরুদ্ধ, আয়ুষ্মান রৈবত যথাশক্তি স্বীয় মত ব্যক্ত করিয়াছেন, এখন আমরা আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধকেই জিজ্ঞাসা করিতেছি : বন্ধু অনুরুদ্ধ, গোশৃঙ্গশালবন রমণীয়, জোৎস্নাপুলকিত রজনী, সর্বাঙ্গ-কুসুমিত শালবৃক্ষরাজি, মনে হয় যেন দিব্যগন্ধ চতুর্দিকে প্রবাহিত। বন্ধু অনুরুদ্ধ, কীরূপ ভিক্ষুর দ্বারা গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে?’ প্রভো, ইহা বিবৃত হইলে, আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধ আমাকে কহিলেন, ‘বন্ধু সারিপুত্র, ভিক্ষু দিব্যচক্ষে, বিশুদ্ধ ও লোকাতীত দৃষ্টিতে সহস্র লোক অবলোকন করেন। বন্ধু সারিপুত্র, যেমন চক্ষুষ্মান পুরুষ শ্রেষ্ঠ সৌধের উপর হইতে সহস্র নেমিমণ্ডল অবলোকন করে তেমনভাবেই ভিক্ষু দিব্যচক্ষে, বিশুদ্ধ ও লোকাতীত দৃষ্টিতে সহস্র লোক অবলোকন করেন। বন্ধু সারিপুত্র, এইরূপ ভিক্ষুর দ্বারাই গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে।’”

‘সাধু, সাধু, সারিপুত্র, যেভাবে বলিলে, অনুরুদ্ধ সত্যই তাহা ব্যক্ত করিতে চাহিলে সম্যক ব্যক্ত করিতে পারে। সারিপুত্র, অনুরুদ্ধ সত্যই দিব্যচক্ষে, বিশুদ্ধ ও লোকাতীত দৃষ্টিতে লোক অবলোকন করে।’

১০. “প্রভো, এইরূপে (আয়ুষ্মান অনুর্বদ্ধের মত) কথিত হইলে আমি আয়ুষ্মান মহাকাশ্যপকে কহিলাম, ‘বন্ধু মহাকাশ্যপ, আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধ যথাশক্তি স্বীয় মত ব্যক্ত করিয়াছেন, এখন আমরা আয়ুষ্মান মহাকাশ্যপকেই জিজ্ঞাসা করিতেছি : বন্ধু মহাকাশ্যপ, গোশৃঙ্গশালবন রমণীয়, জোৎস্নাপুলকিত রজনী, সর্বাঙ্গকুসুমিত শালবৃক্ষরাজি, মনে হয় যেন দিব্যগন্ধ চতুর্দিকে প্রবাহিত। বন্ধু মহাকাশ্যপ, কীরূপ ভিক্ষুর দ্বারা গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে।’ প্রভো, ইহা বিবৃত হইলে, আয়ুষ্মান মহাকাশ্যপ আমাকে কহিলেন, ‘বন্ধু সারিপুত্র, ভিক্ষু নিজে আরণ্যক (অরণ্যবিহারী) হন এবং অরণ্যবিহারের প্রশংসা করেন; নিজে পিণ্ডাচারী হন এবং পিণ্ডচর্যার প্রশংসা করেন; নিজে পাংশুকূলধারী হন এবং পাংশুকূলচর্যার প্রশংসা করেন; নিজে ত্রিচীবরধারী হন এবং ত্রিচীবরচর্যার প্রশংসা করেন; নিজে অল্পেচ্ছুক হন এবং অল্পেচ্ছার প্রশংসা করেন; নিজে সন্তুষ্ট হন এবং সন্তুষ্টিতার প্রশংসা করেন; নিজে প্রবিবেকী (বৈরাগ্যরত) হন এবং বিবেক-বৈরাগ্যের প্রশংসা করেন; নিজে অসঙ্গ হন এবং অসংসর্গের প্রশংসা করেন; নিজে আরব্ধবীর্য হন এবং বীর্যারম্ভের প্রশংসা করেন; নিজে শীলসম্পন্ন হন এবং শীলসম্পদের প্রশংসা করেন; নিজে সমাধিসম্পন্ন হন এবং সমাধিসম্পদের প্রশংসা করেন; নিজে প্রজ্ঞাসম্পন্ন হন এবং প্রজ্ঞাসম্পদের প্রশংসা করেন; নিজে বিমুক্তিজ্ঞানদর্শনসম্পন্ন হন এবং বিমুক্তিজ্ঞানদর্শনসম্পদের প্রশংসা করেন। বন্ধু সারিপুত্র, এইরূপ ভিক্ষুর দ্বারাই গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে।’”

‘সাধু, সাধু, সারিপুত্র, যেভাবে বলিলে, মহাকাশ্যপ সত্যই তাহা ব্যক্ত করিতে চাহিলে সম্যক ব্যক্ত করিতে পারে। সারিপুত্র, সত্যই মহাকাশ্যপ নিজে আরণ্যক এবং অরণ্যবিহারের প্রশংসাকারী; নিজে পিণ্ডাচারী এবং পিণ্ডচর্যার প্রশংসাকারী ইত্যাদি।’

১১. “প্রভো, এইরূপে (আয়ুষ্মান মহাকাশ্যপের মত) কথিত হইলে, আমি আয়ুষ্মান মহামৌদ্গল্যায়নকে কহিলাম, ‘বন্ধু মহামৌদ্গল্যায়ন, আয়ুষ্মান মহাকাশ্যপ যথাশক্তি স্বীয় মত ব্যক্ত করিয়াছেন, এখন আমরা আয়ুষ্মান মহামৌদ্গল্যায়নকেই জিজ্ঞাসা করিতেছি : বন্ধু মহামৌদ্গল্যায়ন, গোশৃঙ্গশালবন রমণীয়, জ্যোৎস্নাপুলকিত রজনী, সর্বাঙ্গকুসুমিত শালবৃক্ষরাজি, মনে হয় যেন দিব্যগন্ধ চতুর্দিকে প্রবাহিত। বন্ধু মহামৌদ্গল্যায়ন, কীরূপ ভিক্ষুর দ্বারা গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে?’ প্রভো, ইহা বিবৃত হইলে, আয়ুষ্মান মহামৌদ্গল্যায়ন আমাকে কহিলেন, ‘বন্ধু সারিপুত্র, দুই ভিক্ষু অভিধর্ম-কথা আলোচনা করেন, তাঁহারা পরস্পর পরস্পরকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন, তাঁহারা পরস্পরের দ্বারা প্রশ্ন জিজ্ঞাসিত হইয়া উত্তর প্রদান করেন এবং গোলযোগ করেন না, এবং তাঁহাদের মধ্যে ধর্মযুক্ত কথাই প্রবর্তিত হয়। বন্ধু সারিপুত্র, এইরূপ, ভিক্ষুর দ্বারাই গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে।’”

‘সাধু, সাধু, সারিপুত্র, যেভাবে বলিলে, মৌদ্গল্যায়ন সত্যই তাহা ব্যক্ত করিতে চাহিলে সম্যক ব্যক্ত করিতে পারে। সারিপুত্র, সত্যই মৌদ্গল্যায়ন (বিশিষ্ট) ধর্মকথক।’

১২. এইরূপে (আয়ুষ্মান সারিপুত্র বিষয়টি) বিবৃত করিলে, আয়ুষ্মান মহামৌদ্গল্যায়ন ভগবানকে কহিলেন, “প্রভো, অনন্তর আমি আয়ুষ্মান সারিপুত্রকে কহিলাম, ‘বন্ধু সারিপুত্র, আমরা সকলেই যথাশক্তি স্ব স্ব মত ব্যক্ত করিয়াছি, এখন আমরা আয়ুষ্মান সারিপুত্রকেই জিজ্ঞাসা করিতেছি : বন্ধু সারিপুত্র, গোশৃঙ্গশালবন রমণীয়, জ্যোৎস্নাপুলকিত রজনী, সর্বাঙ্গকুসুমিত শালবৃক্ষরাজি, মনে হয় যেন দিব্যগন্ধ চতুর্দিকে প্রবাহিত। বন্ধু সারিপুত্র, কীরূপ ভিক্ষু দ্বারা গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে?’ প্রভো, ইহা বিবৃত হইলে, আয়ুষ্মান সারিপুত্র আমাকে কহিলেন, ‘বন্ধু মৌদ্গল্যায়ন, ভিক্ষু চিত্তকে স্ববশে আনয়ন করেন এবং নিজে চিত্তের বশে অনুবর্তন করেন না, তিনি যেই ধ্যান-সমাপত্তিতে পূর্বাহ্ণে বিচরণ করিতে ইচ্ছা করেন সেই ধ্যান-সমাপত্তিতে পূর্বাহ্ণেই বিচরণ করেন, যেই ধ্যান-সমাপত্তিতে মধ্যাহ্নে বিচরণ করিতে ইচ্ছা করেন সেই ধ্যান-সমাপত্তিতে মধ্যাহ্নেই বিচরণ করেন, এবং যেই ধ্যান সমাপত্তিতে সায়াহ্নে বিচরণ করিতে ইচ্ছা করেন সেই ধ্যান-সমাপত্তিতে সায়াহ্নেই বিচরণ করেন। বন্ধু মৌদ্গল্যায়ন, যেমন রাজার কিংবা রাজ-মহামাত্যের কাপড়ের বাক্স বিবিধ পরিধানে পূর্ণ থাকে বলিয়া তিনি পূর্বাহ্ণে যে পোষাক পরিধান করিতে ইচ্ছা করেন পূর্বাহ্ণেই তাহা পরিধান করেন, মধ্যাহ্নে যে পোষাক পরিধান করিতে ইচ্ছা করেন মধ্যাহ্নেই তাহা পরিধান করেন, এবং সায়াহ্নে যে পোষাক পরিধান করিতে ইচ্ছা করেন সায়াহ্নেই তাহা পরিধান করেন, তেমনভাবেই ভিক্ষু চিত্তকে স্ববশে আনয়ন করেন এবং নিজে চিত্তের বশে অনুবর্তন করেন না, তিনি যেই ধ্যান-সমাপত্তিতে পূর্বাহ্ণে বিচরণ করিতে ইচ্ছা করেন সেই ধ্যান-সমাপত্তিতে পূর্বাহ্ণে বিচরণ করেন, যেই ধ্যান-সমাপত্তিতে মধ্যাহ্নে বিচরণ করিতে ইচ্ছা করেন সেই ধ্যান-সমাপত্তিতে মধ্যাহ্নেই বিচরণ করেন, যেই ধ্যান-সমাপত্তিতে সায়াহ্নে বিচরণ করিতে ইচ্ছা করেন সেই ধ্যান-সমাপত্তিতে সায়াহ্নেই বিচরণ করেন। বন্ধু মৌদ্গল্যায়ন, এইরূপ ভিক্ষুর দ্বারাই গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে।’”

‘সাধু, সাধু, মৌদ্গল্যায়ন, যেভাবে বলিলে, সারিপুত্র সত্যই ব্যক্ত করিতে চাহিলে সম্যক ব্যক্ত করিতে পারে। মৌদ্গল্যায়ন, সত্যই সারিপুত্র চিত্তকে স্ববশে আনয়ন করে এবং নিজে চিত্তের বশে অনুবর্তন করে না; ইত্যাদি।’

১৩. এইরূপে বিষয়টি বিবৃত হইলে, আয়ুষ্মান সারিপুত্র ভগবানকে কহিলেন, ‘প্রভো, কাহার উক্তি সুভাষিত?’ “সারিপুত্র, যুক্তিতে তোমাদের সকলের উক্তিই সুভাষিত। অধিকন্তু যেরূপ ভিক্ষুর দ্বারা গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে তৎসম্বন্ধে তোমরা আমার বক্তব্যও শ্রবণ করো। সারিপুত্র, ভিক্ষু ভোজনশেষে ভিক্ষান্নসংগ্রহ-কার্য হইতে প্রত্যাবৃত্ত হইয়া ধ্যানপদ্মাসন গ্রহণ করিয়া ঋজুভাবে দেহাগ্রভাগ রাখিয়া ও লক্ষ্যাভিমুখে স্মৃতি উপস্থাপিত করিয়া (এই দৃঢ়সংকল্পের সহিত) আসীন হন : ‘যে পর্যন্ত আমার চিত্ত অনাসক্ত এবং আসব হইতে বিমুক্ত না হইতেছে সে পর্যন্ত আমি এই ধ্যানাসন ভঙ্গ করিব না।’ সারিপুত্র, এইরূপ ভিক্ষুর দ্বারাই গোশৃঙ্গশালবন শোভমান হইতে পারে।”

ভগবান ইহা বিবৃত করিলেন। ওই আয়ুষ্মান স্থবিরগণ তাহা প্রসন্নমনে শ্রবণ করিয়া আনন্দ প্রকাশ করিলেন।

মহাগোশৃঙ্গ-সূত্র সমাপ্ত।

The Middle Discourses

|_A. The First Fifty

|__IV. The Greater Chapter on Pairs

MN32. মহাগোশৃঙ্গ-সূত্র

Translations [27]

English

繁體字

日本語

Français

Deutsch

Italiano

Español

Português

Русский

Norsk

Svenska

Srpski

Čeština

Slovenščina

हिंदी

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference