আমি এইরূপ শুনিয়াছি।

১. একসময় ভগবান শ্রাবস্তী-সমীপে অবস্থান করিতেছিলেন, জেতবনে, অনাথপিণ্ডিকের আরামে। ভগবান সমবেত ভিক্ষুদিগকে আহ্বান করিলেন, ‘হে ভিক্ষুগণ’। ভিক্ষুগণ ‘হাঁ ভদন্ত,’ বলিয়া প্রত্যুত্তরে তাঁহাদের সম্মতি জানাইলেন। ভগবান কহিলেন :

২. হে ভিক্ষুগণ, তোমরা শীলসম্পদে সম্পন্ন হইয়া প্রাতিমোক্ষসংবর দ্বারা সংবৃত হইয়া, আচারগোচরসম্পন্ন হইয়া, অনুমাত্র নিন্দনীয় আচরণে ভয়দর্শী হইয়া বিচরণ করো, শিক্ষাপদসমূহ গ্রহণ করিয়া চরিত্র শিক্ষা করো।

৩-১৮. হে ভিক্ষুগণ, যদি কোনো ভিক্ষু এই আকাঙ্ক্ষা করেন যে, তিনি সব্রহ্মচারী সতীর্থগণের নিকট প্রিয় হইবেন, মনোজ্ঞ ও গুরুস্থানীয় হইবেন, তাহা হইলে তাঁহাকে শীলসমূহ পরিপূর্ণ করিতে হইবে, অধ্যাত্মভাবে স্বচিত্তের শমথ (শান্তি) সাধনে নিযুক্ত থাকিতে হইবে, নিত্য ধ্যানরত থাকিতে হইবে, বিদর্শন-সমন্বিত হইতে হইবে, শূন্যাগার বা একাকী-বিহার (বাস) বর্ধিত করিতে হইবে।

যদি তিনি আকাঙ্ক্ষা করেন যে, তিনি চীবর, পিণ্ডপাত, শয্যাসন, রোগীপথ্য ও ভৈষজ্যোপকরণ লাভে লাভবান হইবেন;

যদি তিনি এই আকাঙ্ক্ষা করেন যে, তিনি যাহাদের প্রদত্ত চীবর, পিণ্ডপাত, শয্যাসন, রোগীপথ্য ও ভৈষজ্যোপকরণ উপভোগ করেন তাহাদের সেই সমীহ-সৎকার মহাফলপ্রসূ, মহার্থবহ হইবে;

যদি তিনি এই আকাঙ্ক্ষা করেন যে, তাঁহার যে-সকল জ্ঞাতি ও আত্মীয় মৃত ও লোকান্তরিত হইয়া প্রসন্নচিত্তে তাঁহাকে অনুস্মরণ করে, তাহা তাহাদের পক্ষে মহাফলপ্রসূ, মহার্থবহ হইবে;

যদি তিনি এই আকাঙ্ক্ষা করেন যে, তিনি অরতিসহ ও রতিসহ হইবেন, অরতি তাঁহার উপর আসিতে সমর্থ হইবে না এবং তিনি যেমন যেমন অরতি উৎপন্ন ইহতে থাকে, তাহা অভিভূত করিয়া বিচরণ করিবেন;

যদি তিনি এই আকাঙ্ক্ষা করেন যে, তিনি ভয়ভৈরবসহ হইবেন, ভয়ভৈরব তাঁহার উপর আসিতে সমর্থ হইবে না, এবং তিনি যেমন যেমন ভয়ভৈরব উৎপন্ন হইতে থাকে, তাহা অভিভূত করিয়া বিচরণ করিবেন;

যদি তিনি এই আকাঙ্ক্ষা করেন যে, তিনি শুদ্ধচিত্তায়ত্ত দৃষ্টধর্ম-সুখবিহারস্বরূপ চারি ধ্যান অনায়াসে ও স্বেচ্ছাক্রমে লাভ করিবেন;

যদি তিনি এই আকাঙ্ক্ষা করেন যে, যে-সকল রূপাতীত অরূপ, নিরাকার, শান্ত বিমোক্ষের অবস্থা আছে সে-সমস্ত অপরোক্ষানুভূতি লাভ করিয়া বিচরণ করিবেন;

যদি তিনি এই আকাঙ্ক্ষা করেন যে, ত্রিবিধ সংযোজন পরিক্ষীণ করিয়া তিনি স্রোতাপন্নরূপে অনধোগামী, প্রাপ্তিতে নিশ্চিত এবং সম্বোধিপরায়ণ হইবেন;

যদি তিনি এই আকাঙ্ক্ষা করেন যে, ত্রিবিধ সংযোজন পরিক্ষীণ করিয়া রাগদ্বেষমোহের স্বল্পতা সাধন করিয়া সকৃদাগামী-রূপে একবারমাত্র মর্ত্যে আগমন করিয়া দুঃখের অন্তসাধন করিবেন;

যদি তিনি এই আকাঙ্ক্ষা করেন যে, তিনি পঞ্চবিধ অবরভাগী (নিম্নস্বভাবগত) সংযোজন প্রহীন করিয়া অযোনিসম্ভূত ‘ঔপপাতিক’-রূপে, মর্ত্যে পুনরাগমনশীল না হইয়া, ঊর্ধ্ব দেবলোক হইতে পরিনির্বাণ লাভ করিবেন;

যদি তিনি এই আকাঙ্ক্ষা করেন যে, তিনি নিজের মধ্যে বহুবিধ ঋদ্ধি বা অলৌকিক শক্তি অনুভব করিবেন, এক হইয়া বহু, বহু হইয়া এক হইবেন, ইচ্ছাক্রমে আবির্ভাব-তিরোভাব সাধন করিতে পারিবেন, প্রাচীর প্রাকার ও পর্বত স্পর্শ না করিয়া লঙ্ঘন করিতে পারিবেন-আকাশে গমনের মতো; স্থলে (পৃথিবীতে) উঠানামা করিতে পারিবেন-উদকে (সলিলে) ডুবা-উঠার মতো; উদকে পদব্রজে গমন করিতে পারিবেন-স্থলে গমনের মতো; আকাশেও পর্যঙ্কবদ্ধ হইয়া (পদ্মাসন করিয়া) বিহঙ্গগণের মতো গমন করিতে পারিবেন; মহাকায় মহাশক্তিসম্পন্ন চন্দ্রসূর্যকে হস্ত দ্বারা স্পর্শ করিতে পারিবেন, চন্দ্রসূর্যের গায়ে হাত বুলাইতে পারিবেন, আব্রহ্মভুবন স্ববশে আনিতে পারিবেন;

যদি তিনি এই আকাঙ্ক্ষা করেন যে, তিনি দিব্য, পরিশুদ্ধ ও লোকাতীত শ্রোত্রধাতু দ্বারা উভয় শব্দ শুনিতে পারিবেন, যাহা দিব্য ও যাহা মানুষ, যাহা দূরে ও যাহা নিকটে;

যদি তিনি এই আকাঙ্ক্ষা করেন যে, তিনি স্বচিত্তে অপর ব্যক্তির চিত্তের অবস্থা প্রকৃষ্টরূপে জানিবেন, চিত্ত সরাগ হইলে সরাগ, বীতরাগ হইলে বীতরাগ, সদ্বেষ হইলে সদ্বেষ, বীতদ্বেষ হইলে বীতদ্বেষ, সমোহ হইলে সমোহ, বীতমোহ হইলে বীতমোহ, সংক্ষিপ্ত হইলে সংক্ষিপ্ত, বিক্ষিপ্ত হইলে বিক্ষিপ্ত, মহদ্গত হইলে মহদ্গত, অমহদ্গত হইলে অমহদ্গত, স-উত্তর হইলে স-উত্তর, অনুত্তর হইলে অনুত্তর, সমাহিত হইলে সমাহিত, অসমাহিত হইলে অসমাহিত, বিমুক্ত হইলে বিমুক্ত, অবিমুক্ত হইলে অবিমুক্ত বলিয়াই জানিতে পারিবেন;

যদি তিনি এই আকাঙ্ক্ষা করেন যে, তিনি বহু প্রকারে বহুবিধ পূর্বজন্ম অনুস্মরণ করিতে পারিবেন; যথা : এক জন্ম, দুই জন্ম, তিন জন্ম, চারি জন্ম, পাঁচ জন্ম, দশ জন্ম, বিশ জন্ম, ত্রিশ জন্ম, চল্লিশ জন্ম, পঞ্চাশ জন্ম, শত জন্ম, সহস্র জন্ম, এমনকি শতসহস্র জন্ম, বহু সংবর্তকল্প, বহু বিবর্তকল্প, বহু সংবর্ত-বিবর্তকল্প, অমুক জন্মে আমার এই ছিল নাম, এই ছিল গোত্র, এই ছিল বর্ণ এই ছিল আহার, এই ছিল সুখ-দুঃখভোগ, এই ছিল আয়ু-পরিমাণ; তাহা হইতে চ্যুত হইয়া আমি এই যোনিতে জন্মগ্রহণ করিয়াছি। এই প্রকারে আকার ও গতিসহ বহুবিধ পূর্বজন্ম অনুস্মরণ করিতে পারিবেন;

যদি তিনি এই আকাঙ্ক্ষা করেন যে, তিনি বিশুদ্ধ ও লোকাতীত দিব্যচক্ষু দ্বারা অপর জীবগণকে দেখিতে পাইবেন, তাহারা চ্যুত হইতেছে, পুনরায় উৎপন্ন হইতেছে, কর্মানুসারে গতিপ্রাপ্ত, হীনোৎকৃষ্ট, সুবর্ণ-দুর্বর্ণ, সুগত-দুর্গত, জীবসমূহকে জানিতে পারিবেন, এই সকল জীব কায়দুশ্চরিত্র, বাগ্‌দুশ্চরিত্র, মনোদুশ্চরিত্র-সমন্বিত, আর্যগণের নিন্দুক, মিথ্যাদৃষ্টিসম্পন্ন, মিথ্যাদৃষ্টিসম্ভূত কর্মপরিগ্রাহী হইবার ফলে দেহান্তে মৃত্যুর পর অপায়-দুর্গতি বিনিপাত-নরকে উৎপন্ন হইয়াছে; [পক্ষান্তরে] এই সকল জীব কায়সুচরিত্র, বাক্‌সুচরিত্র, মনঃসুচরিত্র-সমন্বিত, আর্যগণের নিন্দুক নহে, সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন, সম্যক দৃষ্টি-উদ্ভূত কর্মপরিগ্রাহী হইবার ফলে দেহান্তে মৃত্যুর পর সুগতি স্বর্গলোকে উৎপন্ন হইয়াছে; এইরূপে বিশুদ্ধ লোকাতীত দিব্যচক্ষু দ্বারা জীবগণকে দেখিতে পাইবেন, তাহারা চ্যুত হইয়া পুনরায় উৎপন্ন হইতেছে, স্ব স্ব কর্মানুসারে গতিপ্রাপ্ত, হীনোৎকৃষ্ট, সুবর্ণ-দুর্বর্ণ, সুগত-দুর্গত জীবগণকে প্রকৃষ্টরূপে জানিতে পারিবেন।

যদি তিনি এই আকাঙ্ক্ষা করেন যে, তিনি আসবক্ষয়ে অনাসব হইয়া দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষজীবনে, বর্তমান জন্মে) স্বয়ং অভিজ্ঞা দ্বারা চেতোবিমুক্তি ও প্রজ্ঞাবিমুক্তি সাক্ষাৎকার করিয়া তাহাতে অবস্থিত হইয়া বিচরণ করিবেন;

তাহা হইলে তাঁহাকে শীলসমূহ পূর্ণ করিতে হইবে, অধ্যাত্মভাবে চিত্তের শমথ বা শান্তিসাধনে নিযুক্ত হইতে হইবে, নিত্য ধ্যানরত থাকিতে হইবে, বিদর্শনসমন্বিত হইতে ইহবে, শূন্যাগার বা একাকীবিহার বর্ধিত করিতে হইবে।

অতএব, হে ভিক্ষুগণ, তোমরা শীলসম্পন্ন হইয়া, প্রাতিমোক্ষসংবর দ্বারা সংবৃত হইয়া, আচারগোচরসম্পন্ন হইয়া, নিন্দনীয় আচরণে ভয়দর্শী হইয়া বিচরণ করো, শিক্ষাপদসমূহ গ্রহণ করিয়া চরিত্র শিক্ষা করো।

এইরূপে যাহা বিবৃত হইল তাহা এই কারণেই বিবৃত হইয়াছে। ভগবান ইহা বিবৃত করিলেন। প্রসন্নমনে তাহা শ্রবণ করিয়া ভিক্ষুগণ আনন্দ প্রকাশ করিলেন।

আকাঙ্ক্ষণীয়-সূত্র সমাপ্ত।

The Middle Discourses

|_A. The First Fifty

|__I. The Chapter on the Root of All Things

MN6. আকাঙ্ক্ষণীয়-সূত্র

Translations [30]

English

繁體字

日本語

Français

Deutsch

Italiano

Español

Português

Русский

Norsk

Magyar

Srpski

Čeština

Polski

Slovenščina

हिंदी

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference