আমি এইরূপ শুনিয়াছি।

১. একসময় ভগবান শ্রাবস্তী-সমীপে অবস্থান করিতেছিলেন, জেতবনে, অনাথপিণ্ডিকের আরামে। ভগবান (সমবেত) ভিক্ষুদিগকে আহ্বান করিলেন, ‘হে ভিক্ষুগণ’। ভিক্ষুগণ প্রত্যুত্তরে ‘হাঁ ভদন্ত’ বলিয়া তাঁহাদের সম্মতি জানাইলেন। ভগবান কহিলেন :

২. হে ভিক্ষুগণ, যদি কোনো রজক (রঞ্জক) মলসংক্লিষ্ট মলগৃহীত বস্ত্রে নীল, পীত, লোহিত অথবা মঞ্জিষ্ঠা যেকোনো রং লাগায়, তাহাতে তাহার বর্ণ সুরঞ্জিত না হইয়া বরং কুরঞ্জিত হয়, অপরিশুদ্ধ হয়। ইহার কারণ কী? যেহেতু মূলবস্ত্র অপরিশুদ্ধ। সেইরূপ, হে ভিক্ষুগণ, সংক্লিষ্টচিত্তে দুর্গতিই অবশ্যম্ভাবী। পুনঃ, যদি কোনো রজক (রঞ্জক) পরিশুদ্ধ ও পরিষ্কৃত বস্ত্রে নীল, পীত, লোহিত অথবা মঞ্জিষ্ঠা যেকোনো রং লাগায়, তাহাতে তাহার বর্ণ সুরঞ্জিত ও পরিশুদ্ধ হয়। ইহার কারণ কী, যেহেতু মূলবস্ত্রই পরিশুদ্ধ। সেইরূপ, হে ভিক্ষুগণ, অসংক্লিষ্টচিত্তে সুগতিই অবশ্যম্ভাবী।

৩. হে ভিক্ষুগণ, চিত্তের উপক্লেশ (মালিন্যের কারণ) কী কী? অভিধ্যা বিষমলোভ চিত্তের উপক্লেশ, ব্যাপাদ (হিংসাপ্রবৃত্তি) চিত্তের উপক্লেশ, ক্রোধ উপক্লেশ, ‘উপনাহ’, ম্রক্ষ, ‘পর্যাস’, ঈর্ষা, মাৎসর্য, মায়া, শঠতা, ‘স্তম্ভ’, ‘সংরম্ভ’, মান, অতিমান, মদ ও প্রমাদ চিত্তের উপক্লেশ।

৪. হে ভিক্ষুগণ, ভিক্ষু অভিধ্যা বিষমলোভ চিত্তের উপক্লেশ জানিয়া তাহা পরিহার করেন। ব্যাপাদ (হিংসাপ্রবৃত্তি) ক্রোধ, উপনাহ, ম্রক্ষ, পর্যাস, ঈর্ষা, মাৎসর্য, মায়া, শঠতা, স্তব্ধতা, সংরম্ভ, মান, অতিমান, মদ ও প্রমাদ চিত্তের উপক্লেশ জানিয়া তৎসমস্ত পরিত্যাগ করেন।

৫. হে ভিক্ষুগণ, যেহেতু অভিধ্যা বিষমলোভ, ব্যাপাদ, ক্রোধ, উপনাহ, ম্রক্ষ, পর্যাস, ঈর্ষা, মাৎসর্য, মায়া, শঠতা, স্তব্ধতা, সংরম্ভ, মান, অতিমান, মদ ও প্রমাদ চিত্তের উপক্লেশ বিদিত হইবার ফলে ভিক্ষুর তৎসমস্ত দোষাবহ ধর্ম পরিক্ষীণ হয়, তিনি বুদ্ধে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হন : ‘তিনি ভগবান অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ, বিদ্যাচরণসম্পন্ন, সুগত, লোকবিদ, অনুত্তর দম্যপুরুষসারথি, দেবমনুষ্য সকলের শাস্তা, বুদ্ধ ভগবান।’ তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হন : ‘ভগবান কর্তৃক ধর্ম সুব্যাখ্যাত, তাহা ইহজন্মে ফলপ্রদ, কালাকালবিহীন, ‘এস, দেখ’ বলিয়া আহ্বান করে, লক্ষ্যাভিমুখী এবং বিজ্ঞগণের পক্ষে স্বসংবেদ্য।’ তিনি সংঘে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হন : ‘ভগবানের শিষ্যসংঘ, শ্রাবকসংঘ, সুপ্রতিপন্ন, সমীচীন-প্রতিপন্ন, চারিটি পুরুষযুগলে বিভক্ত, অষ্ট আর্যপুরুষ লইয়া গঠিত ভগবানের এই উন্নত শিষ্যসংঘ আহ্বানের যোগ্য, সমাদরের যোগ্য, দানদক্ষিণার যোগ্য, অঞ্জলির যোগ্য, জগতের পক্ষে অনুত্তর অদ্বিতীয় পুণ্যক্ষেত্র-স্বরূপ।’ যখন হইতে ক্রমশ তাঁহার ক্লেশ-অবধি (পতনকারণ) পরিত্যক্ত, অপগত, নির্গত, পরিক্ষীণ ও নিঃসারিত হয়, তিনি বুদ্ধে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া ‘বুদ্ধে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়াছি’ জানিয়া অর্থবেদ (কৃতার্থতাজনিত আনন্দবেগ) লাভ করেন, ধর্মবেদ লাভ করেন, ধর্ম-উপজাত প্রামোদ্য লাভ করেন, প্রমুদিতের মধ্যে প্রীতি জন্মে, প্রীতি-প্রফুল্লিতের দেহ প্রশান্ত হয়, তিনি প্রশান্তদেহে সুখ অনুভব করেন, এবং সুখী দেহীর চিত্ত সমাহিত হয়। ধর্ম এবং সংঘ বিষয়েও এইরূপ।

৬. হে ভিক্ষুগণ, যদি এহেন শীলসম্পন্ন, ধার্মিক ও প্রজ্ঞাবান ভিক্ষু উপাদেয় সূপব্যঞ্জনসহ পরিষ্কৃত ভিক্ষালব্ধ শালি-ওদন ভোজন করেন, তাহা তাঁহার পক্ষে অন্তরায় হয় না। যেমন মলসংক্লিষ্ট, মলগৃহীত বস্ত্র স্বচ্ছোদকে আসিয়া পরিশুদ্ধ ও পরিষ্কৃত হয়, তেমন, হে ভিক্ষুগণ, এহেন শীলবান, ধার্মিক ও প্রজ্ঞাবান ভিক্ষু বিবিধ উপাদেয় সূপব্যঞ্জনসহ পরিষ্কৃত ভিক্ষালব্ধ শালি-ওদন ভোজন করিলেও, তাহা তাঁহার পক্ষে অন্তরায় হয় না।*

৭. তিনি মৈত্রীসহগত চিত্তের দ্বারা প্রথম দিক বিস্ফুরিত করিয়া অবস্থান করেন, সেই নিয়মে দ্বিতীয় দিক, তৃতীয় দিক, চতুর্থ দিক, ঊর্ধ্ব, অধঃ, তির্যকক্রমে সর্বথা সর্বস্থান ব্যাপিয়া সর্বলোক মৈত্রীসহগত, বিপুল, মহদ্গত, অপ্রমেয়, অবৈর, অহিংস-চিত্তের দ্বারা বিস্ফুরিত করিয়া অবস্থান করেন। করুণাসহগত, মুদিতাসহগত, উপেক্ষাসহগত চিত্ত সম্বন্ধেও এইরূপ।

৮. তিনি প্রকৃষ্টরূপে জানেন : ‘ইহা আছে’, ‘আছে হীন’, ‘আছে উৎকৃষ্ট’, ‘আছে এই (ব্রহ্মবিহার) সংজ্ঞার উপরে নিঃসরণ বা বিমুক্তি।’ এইরূপে জানিবার ও দেখিবার ফলে কামাসব, ভবাসব, অবিদ্যাসব হইতে তাঁহার চিত্ত বিমুক্ত হয়, বিমুক্তচিত্তে ‘বিমুক্ত হইয়াছি বলিয়া’ জ্ঞান হয়। তিনি প্রকৃষ্টরূপে জানেন, ‘জন্মবীজ ক্ষীণ হইয়াছে, ব্রহ্মচর্যব্রত উদ্‌যাপিত হইয়াছে, অতঃপর আর অত্র আসিতে হইবে না।’ হে ভিক্ষুগণ, এই ভিক্ষুই স্নাত বলিয়া কথিত হন, যিনি অন্তর-স্নানের দ্বারা স্নাত হইয়াছেন।

৯. সেই সময়ে সুন্দরিক-ভারদ্বাজ ব্রাহ্মণ ভগবানের অদূরে উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি কহিলেন, ‘মহানুভব গৌতম কি বাহুকা (বাহুদা) নদীতে স্নান করিতে যান?’ ‘ব্রাহ্মণ, বাহুকা নদীতে কী প্রয়োজন, বাহুকা নদী কী করিবে?’ ‘হে গৌতম, বাহুকা যে বহুজনের নিকট মোক্ষসম্মতা, পুণ্যসম্মতা, মোক্ষদায়িনী, মুক্তিপ্রদা, পাপনাশিনী পুণ্যনদী বলিয়া স্বীকৃতা ও পরিচিতা। বহু লোক যে বাহুকা নদীতে কৃত পাপকর্ম প্রবাহিত করে।’ তৎপ্রসঙ্গে ভগবান গাথাযোগে ব্রাহ্মণকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন :

বাহুকা নামেতে নদী অধিকক্কা আর,
গয়া সুন্দরিকা তীর্থ মহিমা অপার
প্রয়াগ পবিত্র তীর্থ, নদী সরস্বতী,
আর এক আছে নদী পুণ্য বাহুমতী।
নিত্য স্নান করে বটে বুদ্ধিহীন জন,
কৃষ্ণকর্মা জলে মগ্ন না হয় শোধন।
কী করিবে বল পুণ্যনদী সুন্দরিকা,
অথবা প্রয়াগ তীর্থ অথবা বাহুকা?
বৈরযুক্ত, সকলুষ, পাপিষ্ঠ যে জন,
তীর্থ জলে পাপকর্ম না হয় শোধন।
শুদ্ধ যিনি, শুচি তিনি, নিত্য ‘ফল্গু’ তাঁর,
নিত্য ‘উপোসথ’ তাঁর শুদ্ধ আত্মা যাঁর।
যিনি শুদ্ধ, শুচিকর্মা, পবিত্র-হৃদয়,
নিত্য ব্রত, নিত্য কর্ম নিত্য তাঁর হয়।
হেথা স্নান করো, বিপ্র, শুনহ বচন,
সর্বভূতে ক্ষেমংকর হওরে ব্রাহ্মণ।
যদি নাহি তব কাছে অসত্যকথন,
প্রাণিহিংসা, প্রাণিহত্যা, জীবন-হনন,
চৌর্যবৃত্তি, চুরি-দোষ, অদত্তগ্রহণ,
যদি শ্রদ্ধাবান হও, দাও অকৃপণ,
গয়া গয়া কী করিবে, কিবা প্রয়োজন?
কূপ হবে গয়া তব, শুন হে ব্রাহ্মণ।

১০. ইহা বিবৃত হইলে সুন্দরিক-ভারদ্বাজ ব্রাহ্মণ ভগবানকে কহিলেন, ‘অতি সুন্দর, হে গৌতম, অতি মনোহর, হে গৌতম, যেমন, কেহ উল্টানকে সোজা করেন, আবৃতকে অনাবৃত করেন, বিমূঢ়কে পথপ্রদর্শন করেন, অথবা অন্ধকারে তৈলপ্রদীপ ধারণ করেন যাহাতে চক্ষুষ্মান ব্যক্তি রূপ (দৃশ্যবস্তু) দেখিতে পান, তেমন মহানুভব গৌতম কর্তৃক বিবিধ পর্যায়ে, বিবিধ যুক্তিতে, ধর্ম প্রকাশিত হইয়াছে। আমি সেই ভগবান গৌতমের, তৎপ্রবর্তিত ধর্মের এবং তৎপ্রতিষ্ঠিত ভিক্ষুসংঘের শরণাগত হইতেছি, আমি সেই ভগবান গৌতমের সন্নিধানেই প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা লাভ করিব।’ ব্রাহ্মণ ভগবৎ-সন্নিধানেই প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা লাভ করিলেন। উপসম্পন্ন হইয়া, ভিক্ষুপদে বৃত হইয়া, অচিরেই একাকী, উপক্লপ্ত, অপ্রমত্ত বীর্যবান ও সাধনাতৎপর হইয়া বিচরণ করিবার ফলে যাহার জন্য কুলপুত্রগণ সত্যসত্যই আগার হইতে অনাগারিকরূপে প্রব্রজিত হন, সেই অনুত্তর অদ্বিতীয় ব্রহ্মচর্য-পরিসমাপ্তিরূপ (শ্রামণ্যফল) দৃষ্টধর্মে (এ জীবনেই) স্বয়ং অভিজ্ঞা দ্বারা সাক্ষাৎকার করিয়া, তাহাতে আরোহণ করিয়া অবস্থান করিতে থাকেন এবং উন্নত জ্ঞানে জানিতে পারেন : ‘আমার জন্মবীজ ক্ষীণ হইয়াছে, ব্রহ্মচর্যব্রত উদ্‌যাপিত হইয়াছে, করণীয় কার্য কৃত হইয়াছে, অতঃপর আর অত্র আসিতে হইবে না।’ আয়ুষ্মান ভারদ্বাজ অর্হৎগণের অন্যতম হইয়াছিলেন।

বস্ত্রোপম-সূত্র সমাপ্ত।

The Middle Discourses

|_A. The First Fifty

|__I. The Chapter on the Root of All Things

MN7. বস্ত্রোপম-সূত্র

Translations [35]

English

繁體字

日本語

한국어

Français

Deutsch

Italiano

Español

Português

Русский

Nederlands

Norsk

Magyar

Srpski

Čeština

Polski

Slovenščina

Lietuvių Kalba

עִבְרִית

हिंदी

தமிழ்

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference