আমি এইরূপ শুনিয়াছি।

১. একসময় ভগবান শ্রাবস্তী-সমীপে অবস্থান করিতেছিলেন, জেতবনে, অনাথপিণ্ডিকের আরামে। আয়ুষ্মান মহাচুন্দ সায়াহ্নসময়ে সমাধি হইতে উঠিয়া ভগবানের নিকট উপস্থিত হইলেন, উপস্থিত হইয়া ভগবানকে অভিবাদন করিয়া সসম্ভ্রমে একান্তে উপবেশন করিলেন। একান্তে উপবিষ্ট হইয়া আয়ুষ্মান মহাচুন্দ ভগবানকে কহিলেন, ‘প্রভো, আত্মতত্ত্ব কিংবা লোকতত্ত্ব সম্পর্কে জগতে যে নানাপ্রকার মিথ্যাদৃষ্টি (একাঙ্গদর্শন, একান্ত মত) উৎপন্ন হয়, আদিতে তৎসমস্ত মনন করিলে কি তৎসমস্ত মিথ্যাদৃষ্টি পরিত্যাগ করা হয়, তৎসমস্ত বর্জন করা হয়?’

২. চুন্দ, আত্মতত্ত্ব বা লোকতত্ত্ব সম্পর্কে জগতে যে-সকল মিথ্যাদৃষ্টি উৎপন্ন হয়, তৎসমস্ত দৃষ্টি যাহা অবলম্বন করিয়া উৎপন্ন হয়, যাহার উপর বিন্যস্ত থাকে এবং যে-ভিত্তির উপর চলে, তাহা আমার নহে, আমিও তাহা নহি, তাহা আমার আত্মা (নিজস্ব) নহে, এইরূপে তাহা যথাভূত, যথার্থভাবে, সম্যক প্রজ্ঞা দ্বারা দর্শন করিলে তৎসমস্ত মিথ্যাদৃষ্টি পরিত্যাগ করা হয়, বর্জন করা হয়।

৩. চুন্দ, ইহা সম্ভব যে, কোনো কোনো ভিক্ষু কামসম্পর্ক হইতে বিবিক্ত হইয়া, সর্ব অকুশল পরিহার করিয়া, সবিতর্ক, সবিচার এবং বিবেকজ প্রীতিসুখমণ্ডিত প্রথম ধ্যান লাভ করিয়া তাহাতে অবস্থান করেন। তখন তাঁহার মনে হইতে পারে, ‘আমি সৎলেখের দ্বারা বিচরণ করিতেছি।’ কিন্তু চুন্দ, আর্যবিনয়ে তাহাকে সল্লেখ বলে না, বলে দৃষ্টধর্ম-সুখবিহার, প্রত্যক্ষজীবনে সুখে বিচরণ। চুন্দ, ইহাও সম্ভব যে, কোনো কোনো ভিক্ষু বিতর্ক-বিচার-উপশমে অধ্যাত্মসম্প্রসাদী, চিত্তের একীভাব-আনয়নকারী, বিতর্কাতীত, বিচারাতীত, সমাধিজ প্রীতিসুখমণ্ডিত দ্বিতীয় ধ্যান লাভ করিয়া তাহাতে অবস্থান করেন। তখন তাঁহার মনে হইতে পারে, ‘আমি সল্লেখের দ্বারা বিচরণ করিতেছি।’ চুন্দ, আর্যবিনয়ে তাহাকে সল্লেখ বলে না, বলে দৃষ্টধর্ম-সুখবিহার, প্রত্যক্ষজীবনে সুখে বিচরণ।

চুন্দ, ইহাও সম্ভব যে, কোনো কোনো ভিক্ষু প্রীতিতেও বিরাগী হইয়া, উপেক্ষার ভাবে অবস্থান করেন, স্মৃতিমান ও সম্প্রজ্ঞাত হইয়া স্বচিত্তে (প্রীতিনিরপেক্ষ) সুখ অনুভব করেন। আর্যগণ যে-ধ্যানস্তরে আরোহণ করিলে ‘ধ্যায়ী উপেক্ষাসম্পন্ন ও স্মৃতিমান হইয়া প্রীতিনিরপেক্ষ সুখে বিচরণ করেন’ বলিয়া বর্ণনা করেন, সেই তৃতীয় ধ্যানস্তরে উন্নীত হইয়া তাহাতে অবস্থান করেন। তখন তাঁহার মনে হইতে পারে, ‘আমি সৎলেখের দ্বারা বিচরণ করিতেছি’। চুন্দ, আর্যবিনয়ে তাহাকে সল্লেখ বলে না, বলে দৃষ্টধর্ম-সুখবিহার। না-দুঃখ-না-সুখ, উপেক্ষা স্মৃতি দ্বারা পরিশুদ্ধ চতুর্থ রূপধ্যান সম্বন্ধেও এইরূপ।

৪. চুন্দ, ইহাও সম্ভব যে, কোনো কোনো ভিক্ষু সর্বাংশে রূপসংজ্ঞা অতিক্রম করিয়া, প্রতিঘ-সংজ্ঞা অস্তমিত করিয়া, নানাত্ব-সংজ্ঞা মনন না করিয়া ‘আকাশ-অনন্ত’ এই ভাবোদয়ে আকাশানন্তায়তন নামক (প্রথম অরূপধ্যান) লাভ করিয়া তাহাতে বিচরণ করেন। তখন তাঁহার মনে হইতে পারে, ‘আমি সৎলেখের দ্বারা বিচরণ করিতেছি।’ চুন্দ, আর্যবিনয়ে ইহাকে সল্লেখ বলে না; বলে দৃষ্টধর্ম-সুখবিহার। বিজ্ঞানানন্তায়তন নামক দ্বিতীয় অরূপধ্যান, আকিঞ্চনায়তন নামক তৃতীয় অরূপধ্যান এবং নৈবসংজ্ঞা-না-অসংজ্ঞায়তন নামক চতুর্থ অরূপধ্যান সম্বন্ধেও এইরূপ।

৫. চুন্দ, এই স্থলেই সৎলেখ (শুদ্ধি-সংকল্প) করিতে হয়। যে স্থলে অপরে বিহিংস্রক, আমরা সে স্থলে অবিহিংস্রক হইব বলিয়া সৎলেখ করিতে হয়। যে স্থলে অপরে প্রাণাতিপাতী (প্রাণঘাতী) সে স্থলে আমরা প্রাণিহত্যা হইতে প্রতিবিরত হইব; যে স্থলে অপরে অদত্তগ্রহণকারী, পরস্বাপহারী, আমরা সে স্থলে অদত্তগ্রহণ (পরস্বাপহরণ) হইতে প্রতিবিরত হইব; যে স্থলে অপরে অব্রহ্মচারী সে স্থলে আমরা ব্রহ্মচারী, যে স্থলে অপরে মৃষাবাদী (মিথ্যাবাদী) সে স্থলে আমরা মৃষাবাদ হইতে প্রতিবিরত, সেই নিয়মে পিশুন বাক্য হইতে প্রতিবিরত, পরুষ (কর্কশ) বাক্য হইতে প্রতিবিরত, সম্প্রলাপ হইতে প্রতিবিরত হইব বলিয়া সল্লেখ করিতে হয়। যেখানে অপরে অভিধ্যালু (লোভপরায়ণ) সে স্থলে আমরা অনভিধ্যালু (অলোভী), যে স্থলে অপরে ব্যাপন্নচিত্ত (ক্রোধপরায়ণ) সে স্থলে আমরা অব্যাপন্নচিত্ত (অক্রোধী) হইব বলিয়া সল্লেখ করিতে হয়। যে স্থলে অপরে মিথ্যাদৃষ্টিসম্পন্ন সে স্থলে আমরা সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন, যে স্থলে অপরে মিথ্যা সংকল্পচিত্ত সে স্থলে আমরা সম্যক সংকল্পচিত্ত, যে স্থলে অপরে মিথ্যা বাক্‌সম্পন্ন সে স্থলে আমরা সম্যক বাক্‌সম্পন্ন, যে স্থলে অপরে মিথ্যা কর্মরত সে স্থলে আমরা সম্যক কর্মরত, যে স্থলে অপরে মিথ্যাজীবী সে স্থলে আমরা সম্যকজীবী, যে স্থলে অপরে মিথ্যা ব্যয়ামরত সে স্থলে আমরা সম্যক ব্যায়ামরত, যে স্থলে অপরে মিথ্যা স্মৃতিযুক্ত সে স্থলে আমরা সম্যক স্মৃতিযুক্ত, যে স্থলে অপরে মিথ্যা সমাধিরত সে স্থলে আমরা সম্যক সমাধিরত, যে স্থলে অপরে মিথ্যা জ্ঞানী সে স্থলে আমরা সম্যক জ্ঞানী, যে স্থলে অপরে মিথ্যা বিমুক্ত সে স্থলে আমরা সম্যক বিমুক্ত হইব বলিয়া সল্লেখ করিতে হয়। যে স্থলে অপরে স্ত্যানমিদ্ধ (তন্দ্রালস্য-অভিভূত) সে স্থলে আমরা স্ত্যানমিদ্ধবিহীন, যে স্থলে অপরে উদ্ধত সে স্থলে আমরা অনুদ্ধত, যে স্থলে অপরে সন্দিগ্ধ সে স্থলে আমরা অসন্দিগ্ধ (তীর্ণবিচিকিৎস), যে স্থলে অপরে ক্রোধস্বভাব সে স্থলে আমরা অক্রোধী, যে স্থলে অপরে উপনাহী (বৈরিদ্বেষী) সে স্থলে আমরা অনুপনাহী, যে স্থলে অপরে ম্রক্ষী সে স্থলে আমরা অম্রক্ষী, যে স্থলে অপরে পর্যাসী সে স্থলে আমরা অপর্যাসী, যে স্থলে অপরে ঈর্ষাপরায়ণ সে স্থলে আমরা ঈর্ষাহীন, যে স্থলে অপরে মাৎসর্যপরায়ণ সে স্থলে আমরা মাৎসর্যহীন, যে স্থলে অপরে শঠ সে স্থলে আমরা অশঠ, যে স্থলে অপরে মায়াবী সে স্থলে আমরা অমায়াবী, যে স্থলে অপরে স্তব্ধ সে স্থলে আমরা অস্তব্ধ, যে স্থলে অপরে অভিমানী সে স্থলে আমরা নিরভিমান, যে স্থলে অপরে দুর্ভাষ সে স্থলে আমরা সুভাষ, যে স্থলে অপরে পাপমিত্র সে স্থলে আমরা কল্যাণমিত্র হইব বলিয়া সল্লেখ করিতে হয়। যে স্থলে অপরে শ্রদ্ধাবিহীন সে স্থলে আমরা শ্রদ্ধাশীল, যে স্থলে অপরে হ্রীবিহীন (নির্লজ্জ) সে স্থলে আমরা হ্রীসম্পন্ন, যে স্থলে অপরে অননুতাপী সে স্থলে আমরা অনুতাপী, যে স্থলে অপরে অল্পশ্রুত সে স্থলে আমরা বহুশ্রুত, যে স্থলে অপরে কুসীত (হীনবীর্য) সে স্থলে আমরা আরব্ধবীর্য, যে স্থলে অপরে মূঢ়স্মৃতি সে স্থলে আমরা প্রতিষ্ঠিতস্মৃতি, যে স্থলে অপরে দুষ্প্রাজ্ঞ সে স্থলে আমরা প্রাজ্ঞ, যে স্থলে অপরে লৌকিক মতাবলম্বী, দৃঢ়গ্রাহী, দুষ্পরিহারী (নাছোড়বান্দা) আমরা সে স্থলে অ-লৌকিক মতাবলম্বী, অদৃঢ়গ্রাহী ও সুপরিহারী হইব বলিয়াই সল্লেখ করিতে হয়।

৬. চুন্দ, কুশল ধর্মে চিত্তোৎপাদ (চিত্তবৃত্তি) আমি বহুপকারী বলিয়া প্রকাশ করি, কায়বাক্যে তাহা অনুশীলনীয় বটে। অতএব চুন্দ, যে স্থলে অপরে বিহিংস্রক, সে স্থলে অবিহিংস্রক, যে স্থলে অপরে প্রাণঘাতী সে স্থলে প্রাণিহত্যা হইতে প্রতিবিরত, যে স্থলে অপরে অদত্তগ্রাহী (পরস্বাপহারী) সে স্থলে অদত্তগ্রহণ (পরস্বাপহরণ) হইতে প্রতিবিরত, যে স্থলে অপরে অব্রহ্মচারী সে স্থলে ব্রহ্মচারী, যে স্থলে অপরে মৃষাবাদী সে স্থলে মৃষাবাদ হইতে প্রতিবিরত, সেই নিয়মে পিশুন বাক্য হইতে প্রতিবিরত, পরুষ বাক্য হইতে প্রতিবিরত, সম্প্রলাপ হইতে প্রতিবিরত, যে স্থলে অপরে অভিধ্যালু (লোভপরায়ণ) সে স্থলে অনভিধ্যালু (অলোভী), যে স্থলে অপরে ব্যাপন্নচিত্ত (ক্রোধপরায়ণ) সে স্থলে অব্যাপন্নচিত্ত (অক্রোধী), যে স্থলে অপরে মিথ্যাদৃষ্টিসম্পন্ন সে স্থলে সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন, যে স্থলে অপরে মিথ্যা সংকল্পচিত্ত সে স্থলে সম্যক সংকল্পচিত্ত, যে স্থলে অপরে মিথ্যা বাক্‌সম্পন্ন সে স্থলে সম্যক বাক্‌সম্পন্ন, যে স্থলে অপরে মিথ্যা কর্মরত সে স্থলে সম্যক কর্মরত, যে স্থলে অপরে মিথ্যাজীবী সে স্থলে সম্যকজীবী, যে স্থলে অপরে মিথ্যা ব্যায়ামরত সে স্থলে সম্যক ব্যায়ামরত, যে স্থলে অপরে মিথ্যা স্মৃতিযুক্ত সে স্থলে সম্যক স্মৃতিযুক্ত, যে স্থলে অপরে মিথ্যা সমাধিরত সে স্থলে সম্যক সমাধিরত, যে স্থলে অপরে মিথ্যা জ্ঞানী সে স্থলে সম্যক জ্ঞানী, যে স্থলে অপরে মিথ্যা বিমুক্ত সে স্থলে সম্যক বিমুক্ত, যে স্থলে অপরে স্ত্যানমিদ্ধ (তন্দ্রালস্য-অভিভূত) সে স্থলে স্ত্যানমিদ্ধবিহীন, যে স্থলে অপরে উদ্ধত সে স্থলে অনুদ্ধত, যে স্থলে অপরে সন্দিগ্ধ সে স্থলে অসন্দিগ্ধ (তীর্ণবিচিকিৎস), যে স্থলে অপরে ক্রোধস্বভাব সে স্থলে অক্রোধী, যে স্থলে অপরে উপনাহী সে স্থলে অনুপনাহী, যে স্থলে অপরে ম্রক্ষী সে স্থলে অম্রক্ষী, যে স্থলে অপরে পর্যাসী সে স্থলে অপর্যাসী, যে স্থলে অপরে ঈর্ষাপরায়ণ সে স্থলে ঈর্ষাহীন, যে স্থলে অপরে মাৎসর্যপরায়ণ সে স্থলে মাৎসর্যহীন, যে স্থলে অপরে শঠ সে স্থলে অশঠ, যে স্থলে অপরে মায়াবী সে স্থলে অমায়াবী, যে স্থলে অপরে স্তব্ধ সে স্থলে অস্তব্ধ, যে স্থলে অপরে অভিমানী সে স্থলে নিরভিমান, যে স্থলে অপরে দুর্ভাষ সে স্থলে সুভাষ, যে স্থলে অপরে পাপমিত্র সে স্থলে কল্যাণমিত্র, যে স্থলে অপরে শ্রদ্ধাবিহীন সে স্থলে শ্রদ্ধাশীল, যে স্থলে অপরে হ্রীবিহীন সে স্থলে হ্রীসম্পন্ন, যে স্থলে অপরে অননুতাপী সে স্থলে অনুতাপী, যে স্থলে অপরে অল্পশ্রুত সে স্থলে বহুশ্রুত, যে স্থলে অপরে কুসীত সে স্থলে আরব্ধবীর্য, যে স্থলে অপরে মূঢ়স্মৃতি সে স্থলে আমরা প্রতিষ্ঠিতস্মৃতি, যে স্থলে অপরে দুষ্প্রাজ্ঞ সে স্থলে প্রাজ্ঞ, যে স্থলে অপরে লৌকিক মতাবলম্বী, দৃঢ়গ্রাহী ও দুষ্পরিহারী সে স্থলে লৌকিক মতাবলম্বী ও দৃঢ়গ্রাহী হইব না এবং সুপরিহারী হইব বলিয়া চিত্ত উৎপন্ন করিতে হয়।

৭. যেমন চুন্দ, কাহারও পক্ষে মার্গবিষম হইলে তাহার পক্ষে অপর এক সমমার্গই পরিক্রমের (পর্যটনের) উপায়, অথবা যেমন কাহারও পক্ষে কোনো তীর্থবিষম হইলে অপর এক সমতীর্থই পরিক্রমের বা পার হইবার উপায়, তেমন চুন্দ, বিহিংস্রক ব্যক্তির পক্ষে অবিহিংসা, প্রাণঘাতীর পক্ষে প্রাণিহত্যা হইতে বিরতি, অদত্তগ্রাহীর পক্ষে অদত্তগ্রহণ হইতে বিরতি, অব্রহ্মচারীর পক্ষে ব্রহ্মচর্য, মৃষাবাদীর পক্ষে মৃষাবাদ হইতে বিরতি, পিশুনভাষীর পক্ষে পিশুন বাক্য হইতে বিরতি, কর্কশভাষীর পক্ষে কর্কশ বাক্য হইতে বিরতি, সম্প্রলাপীর পক্ষে সম্প্রলাপ হইতে বিরতি, অভিধ্যালুর পক্ষে অনভিধ্যা, ব্যাপন্নচিত্তের পক্ষে অব্যাপাদ, মিথ্যাদৃষ্টিসম্পন্নের পক্ষে সম্যক দৃষ্টি, মিথ্যা সংকল্পবানের পক্ষে সম্যক সংকল্প, মিথ্যা বাক্যরত ব্যক্তির পক্ষে সম্যক বাক্য, মিথ্যা কর্মরত ব্যক্তির পক্ষে সম্যক কর্ম, মিথ্যাজীবীর পক্ষে সম্যক আজীব, মিথ্যা ব্যায়ামসম্পন্নের পক্ষে সম্যক ব্যায়াম, মিথ্যা স্মৃতিসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে সম্যক স্মৃতি, মিথ্যা সমাধিসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে সম্যক সমাধি, মিথ্যা জ্ঞানীর পক্ষে সম্যক জ্ঞান, মিথ্যা বিমুক্তের পক্ষে সম্যক বিমুক্তি, স্ত্যানমিদ্ধপরায়ণ ব্যক্তির পক্ষে স্তানমিদ্ধবিহীনতা, উদ্ধতের পক্ষে অনৌদ্ধত্য, সন্দিগ্ধের পক্ষে অসন্দিগ্ধতা, ক্রোধীর পক্ষে অক্রোধ, উপনাহীর পক্ষে অনুপনাহ, ম্রক্ষীর পক্ষে অম্রক্ষ, পর্যাসীর পক্ষে অপর্যাস, ঈর্ষাপরায়ণের পক্ষে ঈর্ষাহীনতা, মাৎসর্যপরায়ণের পক্ষে মাৎসর্যবিহীনতা, শঠের পক্ষে অশঠতা, মায়াবীর পক্ষে অমায়া, স্তব্ধের পক্ষে অস্তব্ধতা, অভিমানীর পক্ষে নিরভিমান, দুর্ভাষের পক্ষে সুভাষিতা, পাপমিত্রের পক্ষে কল্যাণমিত্রতা, প্রমত্তের পক্ষে অপ্রমাদ, শ্রদ্ধাহীনের পক্ষে শ্রদ্ধা, হ্রীবিহীনের পক্ষে হ্রী, অননুতাপীর পক্ষে অনুতাপ, অল্পশ্রুতের পক্ষে বহুশ্রুতি, কুসীতের (হীনবীর্যের) পক্ষে বীর্যারম্ভ, মূঢ়স্মৃতির পক্ষে স্মৃতিশীলতা, দুষ্প্রাজ্ঞের পক্ষে প্রজ্ঞাসম্পদ, এবং লৌকিক মতাবলম্বী, দৃঢ়গ্রাহী ও দুষ্পরিহারী ব্যক্তির পক্ষে লৌকিক মত অনবলম্বন, অদৃঢ়গ্রহণ এবং সুপরিহারিতাই পরিক্রম বা পরিত্রাণের উপায়।

৮. যেমন যত অকুশল ধর্ম সমস্ত অধোগমনের কারণ এবং যত কুশল ধর্ম সমস্তই ঊর্ধ্বগমনের উপায়, তেমন, চুন্দ, বিহিংস্রকের পক্ষে অবিহিংসা, প্রাণঘাতীর পক্ষে প্রাণিহত্যা হইতে বিরতি, অদত্তগ্রাহীর পক্ষে অদত্তগ্রহণ হইতে বিরতি, অব্রহ্মচারীর পক্ষে ব্রহ্মচর্য, মৃষাবাদীর পক্ষে মৃষাবাদ হইতে বিরতি, পিশুনভাষীর পক্ষে পিশুন বাক্য হইতে বিরতি, কর্কশভাষীর পক্ষে কর্কশ বাক্য হইতে বিরতি, সম্প্রলাপীর পক্ষে সম্প্রলাপ হইতে বিরতি, অভিধ্যালুর পক্ষে অনভিধ্যা, ব্যাপন্নচিত্তের পক্ষে অব্যাপাদ, মিথ্যাদৃষ্টিসম্পন্নের পক্ষে সম্যক দৃষ্টি, মিথ্যা সংকল্পবানের পক্ষে সম্যক সংকল্প, মিথ্যাবাক্যরত ব্যক্তির পক্ষে সম্যক বাক্য, মিথ্যা কর্মরত ব্যক্তির পক্ষে সম্যক কর্ম, মিথ্যাজীবীর পক্ষে সম্যক আজীব, মিথ্যা ব্যায়ামসম্পন্নের পক্ষে সম্যক ব্যায়াম, মিথ্যা স্মৃতিসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে সম্যক স্মৃতি, মিথ্যা সমাধিসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে সম্যক সমাধি, মিথ্যা জ্ঞানীর পক্ষে সম্যক জ্ঞান, মিথ্যা বিমুক্তের পক্ষে সম্যক বিমুক্তি, স্ত্যানমিদ্ধপরায়ণ ব্যক্তির পক্ষে স্তানমিদ্ধবিহীনতা, উদ্ধতের পক্ষে অনৌদ্ধত্য, সন্দিগ্ধের পক্ষে অসন্দিগ্ধতা, ক্রোধীর পক্ষে অক্রোধ, উপনাহীর পক্ষে অনুপনাহ, ম্রক্ষীর পক্ষে অম্রক্ষ, পর্যাসীর পক্ষে অপর্যাস, ঈর্ষাপরায়ণের পক্ষে ঈর্ষাহীনতা, মাৎসর্যপরায়ণের পক্ষে মাৎসর্যবিহীনতা, শঠের পক্ষে অশঠতা, মায়াবীর পক্ষে অমায়া, স্তব্ধের পক্ষে অস্তব্ধতা, অভিমানীর পক্ষে নিরভিমান, দুর্ভাষের পক্ষে সুভাষিতা, পাপমিত্রের পক্ষে কল্যাণমিত্রতা, প্রমত্তের পক্ষে অপ্রমাদ, শ্রদ্ধাহীনের পক্ষে শ্রদ্ধা, হ্রীবিহীনের পক্ষে হ্রী, অননুতাপীর পক্ষে অনুতাপ, অল্পশ্রুতের পক্ষে বহুশ্রুতি, কুসীতের (হীনবীর্যের) পক্ষে বীর্যারম্ভ, মূঢ়স্মৃতির পক্ষে স্মৃতিশীলতা, দুষ্প্রাজ্ঞের পক্ষে প্রজ্ঞাসম্পদ, এবং লৌকিক মতাবলম্বী, দৃঢ়গ্রাহী ও দুষ্পরিহারী ব্যক্তির পক্ষে লৌকিক মত অনবলম্বন, অদৃঢ়গ্রহণ এবং সুপরিহারিতাই ঊর্ধ্বগমনের উপায়।

৯. চুন্দ, স্বয়ং গভীর পাপপঙ্কে নিমগ্ন হইয়া অপরকে ওই পঙ্ক হইতে উদ্ধার করিবে, ইহা সম্ভব নহে। স্বয়ং পঙ্কনিমগ্ন না হইয়া পঙ্কনিমগ্ন অপর ব্যক্তিকে উদ্ধার করিবে, ইহা সম্ভব। চুন্দ, স্বয়ং অদান্ত, অবিনীত, অপরিনির্বৃত হইয়া অপরকে দমিত, বিনীত, পরনির্বৃত করিবে, ইহা সম্ভব নহে। স্বয়ং দান্ত, বিনীত, পরিনির্বৃত হইয়া অপরকে দমিত, বিনীত ও পরিনির্বৃত করিবে, ইহা সম্ভব। সেইরূপ, চুন্দ, বিহিংস্রকের পক্ষে অবিহিংসা, প্রাণঘাতীর পক্ষে প্রাণিহত্যা হইতে বিরতি, অদত্তগ্রাহীর পক্ষে অদত্তগ্রহণ হইতে বিরতি, অব্রহ্মচারীর পক্ষে ব্রহ্মচর্য, মৃষাবাদীর পক্ষে মৃষাবাদ হইতে বিরতি, পিশুনভাষীর পক্ষে পিশুন বাক্য হইতে বিরতি, কর্কশভাষীর পক্ষে কর্কশ বাক্য হইতে বিরতি, সম্প্রলাপীর পক্ষে সম্প্রলাপ হইতে বিরতি, অভিধ্যালুর পক্ষে অনভিধ্যা, ব্যাপন্নচিত্তের পক্ষে অব্যাপাদ, মিথ্যাদৃষ্টিসম্পন্নের পক্ষে সম্যক দৃষ্টি, মিথ্যা সংকল্পবানের পক্ষে সম্যক সংকল্প, মিথ্যা বাক্যরত ব্যক্তির পক্ষে সম্যক বাক্য, মিথ্যা কর্মরত ব্যক্তির পক্ষে সম্যক কর্ম, মিথ্যাজীবীর পক্ষে সম্যক আজীব, মিথ্যা ব্যায়ামসম্পন্নের পক্ষে সম্যক ব্যায়াম, মিথ্যা স্মৃতিসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে সম্যক স্মৃতি, মিথ্যা সমাধিসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে সম্যক সমাধি, মিথ্যা জ্ঞানীর পক্ষে সম্যক জ্ঞান, মিথ্যা বিমুক্তের পক্ষে সম্যক বিমুক্তি, স্ত্যানমিদ্ধপরায়ণ ব্যক্তির পক্ষে স্তানমিদ্ধবিহীনতা, উদ্ধতের পক্ষে অনৌদ্ধত্য, সন্দিগ্ধের পক্ষে অসন্দিগ্ধতা, ক্রোধীর পক্ষে অক্রোধ, উপনাহীর পক্ষে অনুপনাহ, ম্রক্ষীর পক্ষে অম্রক্ষ, পর্যাসীর পক্ষে অপর্যাস, ঈর্ষাপরায়ণের পক্ষে ঈর্ষাহীনতা, মাৎসর্যপরায়ণের পক্ষে মাৎসর্যবিহীনতা, শঠের পক্ষে অশঠতা, মায়াবীর পক্ষে অমায়া, স্তব্ধের পক্ষে অস্তব্ধতা, অভিমানীর পক্ষে নিরভিমান, দুর্ভাষের পক্ষে সুভাষিতা, পাপমিত্রের পক্ষে কল্যাণমিত্রতা, প্রমত্তের পক্ষে অপ্রমাদ, শ্রদ্ধাহীনের পক্ষে শ্রদ্ধা, হ্রীবিহীনের পক্ষে হ্রী, অননুতাপীর পক্ষে অনুতাপ, অল্পশ্রুতের পক্ষে বহুশ্রুতি, কুসীতের (হীনবীর্যের) পক্ষে বীর্যারম্ভ, মূঢ়স্মৃতির পক্ষে স্মৃতিশীলতা, দুষ্প্রাজ্ঞের পক্ষে প্রজ্ঞাসম্পদ, এবং লৌকিক মতাবলম্বী, দৃঢ়গ্রাহী ও দুষ্পরিহারী ব্যক্তির পক্ষে লৌকিক মত অনবলম্বন, অদৃঢ়গ্রাহিতা ও সুপরিহারিতাই পরিনির্বাণ লাভের উপায়।

১০. চুন্দ, মৎকর্তৃক এই সৎলেখ-পর্যায় (সৎলেখ-সূত্র) উপদিষ্ট হইল। চিত্তোৎপাদ-পর্যায়, পরিক্রম-পর্যায় (ঊর্ধ্বগমন-পর্যায়), উপরিভাব-পর্যায়, পরিনির্বাণ-পর্যায়, উপদিষ্ট হইল। চুন্দ, শাস্তার পক্ষে, শিষ্যগণের হিতৈষী, অনুকম্পাকারী শিক্ষকের পক্ষে অনুকম্পাপূর্বক শিষ্যগণের প্রতি যাহা কর্তব্য তাহা আমি তোমাদের প্রতি করিয়াছি। চুন্দ, তোমরা বৃক্ষমূলে, শূন্যাগারে, বিজনপ্রান্তে শয্যাসন গ্রহণ করিয়া ধ্যান করো। প্রমাদের বশবর্তী হইয়া পশ্চাৎ অনুতপ্ত হইও না, তোমাদের প্রতি ইহাই আমার অনুশাসন (অনুজ্ঞা)। ভগবান ইহা বিবৃত করিলেন। আয়ুষ্মান মহাচুন্দ তাহা প্রসন্নমনে শ্রবণ করিয়া আনন্দ প্রকাশ করিলেন।

সল্লেখ-সূত্র সমাপ্ত।

The Middle Discourses

|_A. The First Fifty

|__I. The Chapter on the Root of All Things

MN8. সল্লেখ-সূত্র

Translations [33]

English

繁體字

日本語

한국어

Français

Deutsch

Italiano

Español

Català

Português

Русский

Norsk

Magyar

Srpski

Čeština

Polski

Slovenščina

हिंदी

ગુજરાતી

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference