আমি এইরূপ শুনিয়াছি।

১. একসময় ভগবান শ্রাবস্তী-সমীপে অবস্থান করিতেছিলেন, জেতবনে, অনাথপিণ্ডিকের আরামে। আয়ুষ্মান সারিপুত্র (সমবেত) ভিক্ষুদিগকে আহ্বান করিলেন, ‘বন্ধুগণ’। প্রত্যুত্তরে ভিক্ষুগণ বন্ধুভাবে সম্মতি জানাইলেন। আয়ুষ্মান সারিপুত্র কহিলেন, লোকে ‘সম্যক দৃষ্টি’, ‘সম্যক দৃষ্টি’ বলে। কিসে আর্যশ্রাবক (ভগবানের উন্নত শিষ্য) সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, কিসে তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, কিসে বা তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া এই সদ্ধর্মে আগত (প্রবিষ্ট) হন? ‘আমরা আয়ুষ্মান সারিপুত্রের নিকট ইহার অর্থ জানিবার জন্য দূর হইতে আসিয়াছি। অতএব আয়ুষ্মান সারিপুত্রই ইহার অর্থ প্রতিভাত করুন। তাঁহারই মুখে ইহার অর্থ শ্রবণ করিয়া ভিক্ষুগণ অবধারণ করিবেন।’ ‘তাহা হইলে তোমরা শ্রবণ করো, উত্তমরূপে মনোনিবেশ করো, আমি তাহা বিবৃত করিতেছি।’ ‘তথাস্তু বলিয়া ভিক্ষুগণ সম্মতিজ্ঞাপন করিলেন। আয়ুষ্মান সারিপুত্র কহিতে লাগিলেন :

২. বন্ধুগণ, যেহেতু আর্যশ্রাবক অকুশল কী, অকুশল-মূল কী উভয়ই প্রকৃষ্টরূপে জানেন, কুশল কী, কুশল-মূল কী, তাহাও জানেন, ইহাতেই তিনি সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া তিনি সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন, প্রথম, অকুশল কী? প্রাণিহত্যা অকুশল, অদত্তগ্রহণ অকুশল, কামে ব্যভিচার অকুশল, মৃষাবাদ অকুশল, পিশুন বাক্য অকুশল, পরুষ বাক্য অকুশল, সম্প্রলাপ (বৃথা বাক্য) অকুশল, অভিধ্যা (লোভপ্রবৃত্তি) অকুশল, ব্যাপাদ (হিংসাপ্রবৃত্তি) অকুশল, মিথ্যাদৃষ্টি (একাঙ্গদর্শন) অকুশল। দ্বিতীয়, অকুশল-মূল কী? লোভ অকুশল-মূল, দ্বেষ অকুশল-মূল, মোহ অকুশল-মূল।

কুশল কী? প্রাণিহত্যা হইতে বিরতি কুশল, অদত্তগ্রহণ হইতে বিরতি কুশল, ব্যভিচার হইতে বিরতি কুশল, মৃষাবাদ হইতে বিরতি কুশল, পিশুন বাক্য, পরুষ বাক্য ও সম্প্রলাপ হইতে বিরতি কুশল, অনভিধ্যা কুশল, অব্যাপাদ কুশল, সম্যক দৃষ্টি কুশল।

কুশল-মূল কী? অলোভ কুশল-মূল, অদ্বেষ কুশল-মূল, অমোহ কুশল-মূল। যেহেতু আর্যশ্রাবক এইরূপে অকুশল কী, অকুশল-মূল কী জানেন, কুশল কী, কুশল-মূল কী তাহাও জানেন, তিনি সর্বাংশে রাগানুশয় (অন্তর্নিহিত রাগপ্রবৃত্তি) পরিত্যাগ করিয়া প্রতিঘানুশয় (আঘাতপ্রবৃত্তি) সমুচ্ছিন্ন করিয়া, অবিদ্যা পরিত্যাগ ও বিদ্যা উৎপাদন করিয়া, দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষজীবনে) দুঃখের অন্তসাধন করেন। ইহাতে আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন।

৩. ‘সাধু সাধু, সারিপুত্র!’ এইরূপে তাঁহার বিবৃতিতে আনন্দিত হইয়া এবং তাহা অনুমোদন করিয়া ভিক্ষুগণ আয়ুষ্মান সারিপুত্রকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘সারিপুত্র, অপর কোনো পর্যায় আছে কি যদ্বারা আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয় ও ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া তিনি সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন?’ সারিপুত্র কহিলেন, ‘হাঁ, আছে।’

৪. বন্ধুগণ, যেহেতু আর্যশ্রাবক আহার কী তাহা জানেন, আহার-সমুদয় কী তাহা জানেন, আহার-নিরোধ কী তাহা জানেন, আহার-নিরোধের পথ কী তাহাও জানেন, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয় ও ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন। আহার কী, আহার-সমুদয় কী, আহার-নিরোধ কী, আহার-নিরোধের পথই বা কী? বন্ধুগণ, জীবভূত সত্ত্বগণের স্থিতির জন্য, ভাবী জীবগণের অনুকূলতার জন্য চারি প্রকার আহার আছে। কী কী? প্রথম, কবলীকরণীয় (গলাধঃকরণীয়) আহার, স্থূল বা সূক্ষ্ম; দ্বিতীয়, স্পর্শ আহার; তৃতীয়, মনঃসঞ্চেতনা আহার; চতুর্থ, বিজ্ঞান আহার। তৃষ্ণা-সমুদয় (তৃষ্ণার উৎপত্তি) হইতে আহার-সমুদয়, তৃষ্ণা-নিরোধে আহার-নিরোধ এবং আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গই আহার-নিরোধের পথ। অষ্টাঙ্গ; যথা : সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি। যেহেতু এইরূপে আর্যশ্রাবক আহার কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, আহার-সমুদয়, আহার-নিরোধ, আহার-নিরোধের পথ কী তাহাও জানেন, তিনি সর্বাংশে রাগানুশয় পরিত্যাগ করিয়া, প্রতিঘানুশয় অপনোদন করিয়া, অস্মিতা ও মানানুশয় সমুচ্ছিন্ন করিয়া, অবিদ্যা পরিত্যাগ করিয়া, বিদ্যা উৎপাদন করিয়া, দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষজীবনে) দুঃখের অন্তসাধন করেন। বন্ধুগণ, ইহাতে আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয় ও ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া তিনি সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন।

৫. ‘সাধু সাধু, সারিপুত্র!’ এই বলিয়া ভিক্ষুগণ আয়ুষ্মান সারিপুত্রের বিবৃতিতে আনন্দিত হইয়া, তাহা অনুমোদন করিয়া, তাঁহাকে উপরন্তু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘সারিপুত্র, অপর কোনো পর্যায় আছে কি যদ্বারা আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয় ও ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন?’ সারিপুত্র কহিলেন, ‘হাঁ, আছে।’

৬. বন্ধুগণ, যেহেতু আর্যশ্রাবক দুঃখ কী তাহা জানেন, দুঃখসমুদয় কী, দুঃখনিরোধ কী জানেন, দুঃখনিরোধের পথ কী তাহাও জানেন, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয় এবং ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া তিনি সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন। প্রথম, দুঃখ কী? জন্ম দুঃখ, জরা দুঃখ, ব্যাধি দুঃখ, মরণ দুঃখ, শোক ও পরিদেবন দুঃখ, দৌর্মনস্য ও হতাশা দুঃখ, অপ্রিয়সংযোগ দুঃখ, প্রিয়বিয়োগ দুঃখ, ঈপ্সিত বস্তু লাভ না করিলে তাহাও দুঃখ, সংক্ষেপে পঞ্চোপাদান-স্কন্ধ-ই দুঃখ। ইহাই দুঃখ বলিয়া কথিত। দ্বিতীয়, দুঃখসমুদয় কী? যে তৃষ্ণা পৌনর্ভবিকা (পুনর্জন্মসাধিকা), নন্দিরাগসহগতা, তত্রতত্র অভিনন্দিনী (জন্ম-জন্মান্তর অভিলাষিণী), তাহাই দুঃখসমুদয়, দুঃখোৎপত্তির কারণ। ত্রিবিধ তৃষ্ণা; যথা : কামতৃষ্ণা, ভবতৃষ্ণা ও বিভবতৃষ্ণা (উচ্ছেদতৃষ্ণা)। ইহাই দুঃখসমুদয়। তৃতীয়, দুঃখনিরোধ কী? সেই তৃষ্ণারই অশেষ বিরাগ-নিরোধ, ত্যাগ, বিসর্জন, তাহা হইতে মুক্তি ও তৎপ্রতি অনাসক্তি, ইহাই দুঃখনিরোধ। চতুর্থ, দুঃখনিরোধের পথ কী? আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গই দুঃখনিরোধের পথ। অষ্টাঙ্গ; যথা : সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি। বন্ধুগণ, যেহেতু, এইরূপে আর্যশ্রাবক দুঃখ কী তাহা প্রকৃষ্টরূপে জানেন, দুঃখসমুদয় কী, দুঃখনিরোধ কী, দুঃখনিরোগামী প্রতিপদ কী তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, তিনি সর্বাংশে রাগানুশয় পরিত্যাগ করিয়া, প্রতিঘানুশয় অপনোদন করিয়া, অস্মিতা ও মানানুশয় সমুচ্ছিন্ন করিয়া, অবিদ্যা পরিত্যাগ ও বিদ্যা উৎপাদন করিয়া, দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষজীবনে) দুঃখের অন্তসাধন করেন। বন্ধুগণ, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয় এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন।

৭. ‘সাধু, সাধু, সারিপুত্র!’ এই বলিয়া ভিক্ষুগণ আয়ুষ্মান সারিপুত্রের বিবৃতিতে আনন্দিত হইয়া, তাহা অনুমোদন করিয়া, তাঁহাকে উপরন্তু প্রশ্ন করিলেন, ‘অপর কোনো পর্যায় আছে কি যদ্বারা আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয় এবং ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া তিনি সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন?’ সারিপুত্র কহিলেন, ‘হাঁ, আছে।’

৮. বন্ধুগণ, যেহেতু আর্যশ্রাবক জরামরণ কী তাহা প্রকৃষ্টরূপে জানেন, জরামরণ-সমুদয় কী তাহা জানেন, জরামরণ-নিরোধ কী জানেন, জরামরণ-নিরোধের পথ কী জানেন, ইহাতেই তিনি সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয় এবং ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া তিনি সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন। জরামরণ কী? জরামরণ-সমুদয় কী? জরামরণ-নিরোধ কী? জরামরণ-নিরোধের পথই বা কী? যাহা সেই সেই সত্ত্বের বা জীবের সেই সেই সত্ত্বনিকায়ে (জীবযোনিতে) জীর্ণতা, খণ্ডিতা, পলিতকেশতা, ত্বক-কুঞ্চিততা, আয়ুহানি, ইন্দ্রিয়গ্রামের পরিপক্বতা, তাহাই জরা নামে কথিত হয়। দ্বিতীয়, মরণ কী? যাহা সেই সেই সত্ত্বের বা জীবের, সেই সেই সত্ত্বনিকায়ে (জীবযোনিতে) চ্যুতি, চবনতা (পতনশীলতা), ভেদ, অন্তর্ধান, মৃত্যু, মরণ, কালক্রিয়া (কালকবলে পতন), স্কন্ধসমূহের ভেদ, কলেবর-নিক্ষেপ (দেহত্যাগ), জীবিতেন্দ্রিয়ের উপচ্ছেদ (জীবনক্রিয়ালোপ), তাহাই মরণ বলিয়া কথিত হয়। ইহা জরা, ইহা মরণ, তদুভয় একত্রে জরামরণ। তৃতীয়, জরামরণ-সমুদয়, জরামরণ-নিরোধ, এবং জরামরণ-নিরোধের পথ কী? জন্ম হইতে জরামরণ-সমুদয়, জন্মনিরোধেই জরামরণ-নিরোধ হয়, এবং আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গই জরামরণ-নিরোধের পথ। অষ্টাঙ্গ; যথা : সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি। যেহেতু এইরূপে আর্যশ্রাবক জরামরণ কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, জরামরণ-সমুদয়, জরামরণ-নিরোধ ও জরামরণ-নিরোধের পথ কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, তিনি সর্বাংশে রাগানুশয় পরিত্যাগ করিয়া, প্রতিঘানুশয় অপনোদন করিয়া, অস্মিতা ও মানানুশয় সমুচ্ছিন্ন করিয়া, অবিদ্যা পরিত্যাগ করিয়া, বিদ্যা উৎপাদন করিয়া, দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষজীবনে) দুঃখের অন্তসাধন করেন। বন্ধুগণ, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন।

৯. ‘সাধু, সাধু, সারিপুত্র!’ এই বলিয়া ভিক্ষুগণ আয়ুষ্মান সারিপুত্রের বিবৃতিতে আনন্দিত হইয়া, তাহা অনুমোদন করিয়া, তাঁহাকে উপরন্তু প্রশ্ন করিলেন, ‘অপর কোনো পর্যায় আছে কি যদ্বারা আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয় ও ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া তিনি সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন?’ সারিপুত্র কহিলেন, ‘হাঁ, আছে।’

১০. বন্ধুগণ, যেহেতু আর্যশ্রাবক ভব কী তাহা প্রকৃষ্টরূপে জানেন, ভব-সমুদয় কী, ভব-নিরোধ কী তাহা জানেন, ভব-নিরোধের পথ কী তাহাও জানেন, ইহাতেই তিনি সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া তিনি সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন। ভব কী? ভব-সমুদয় কী? ভব-নিরোধ কী? ভব-নিরোধের পথই বা কী? বন্ধুগণ, ভব ত্রিবিধ; যথা : কামভব, রূপভব ও অরূপভব। উপাদান হইতে ভব-সমুদয়, উপাদান-নিরোধে ভব-নিরোধ হয়, এবং আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গই ভব-নিরোধের পথ। অষ্টাঙ্গ; যথা : সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি। যেহেতু আর্যশ্রাবক ভব কী, ভব-সমুদয় কী জানেন, ভব-নিরোধ কী ও ভব-নিরোধের পথ কী তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, তিনি সর্বাংশে রাগানুশয় পরিত্যাগ করিয়া, প্রতিঘানুশয় অপনোদন করিয়া, অস্মিতা ও মানানুশয় সমুচ্ছিন্ন করিয়া, অবিদ্যা পরিত্যাগ করিয়া, বিদ্যা উৎপাদন করিয়া, দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষজীবনে) দুঃখের অন্তসাধন করেন। বন্ধুগণ, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন।

১১. ‘সাধু, সাধু, সারিপুত্র!’ এই বলিয়া ভিক্ষুগণ আয়ুষ্মান সারিপুত্রের বিবৃতিতে আনন্দিত হইয়া, তাহা অনুমোদন করিয়া, তাঁহাকে উপরন্তু প্রশ্ন করিলেন, ‘অপর কোনো পর্যায় আছে কি যদ্বারা আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয় এবং ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া তিনি সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন?’ সারিপুত্র কহিলেন, ‘হাঁ, আছে।’

১২. বন্ধুগণ, যেহেতু আর্যশ্রাবক উপাদান কী তাহা প্রকৃষ্টরূপে জানেন, উপাদান-সমুদয় কী তাহা জানেন, উপাদান-নিরোধ কী এবং উপাদান-নিরোধের পথ কী তাহাও জানেন, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন। উপাদান কী? উপাদান-সমুদয় কী? উপাদান-নিরোধ কী? উপাদান-নিরোধের পথই বা কী? উপাদান চারি প্রকার-কাম-উপাদান, দৃষ্টি-উপাদান, শীলব্রত-উপাদান ও আত্মবাদ-উপাদান। তৃষ্ণা-সমুদয় হইতে উপাদান-সমুদয়, তৃষ্ণা-নিরোধে উপাদান-নিরোধ, এবং আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গই উপাদান-নিরোধের পথ। অষ্টাঙ্গ; যথা : সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি। যেহেতু এইরূপে আর্যশ্রাবক উপাদান কী, উপাদান-সমুদয় কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, উপাদান-নিরোধ ও উপাদান-নিরোধের পথ কী তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, তিনি সর্বাংশে রাগানুশয় পরিত্যাগ করিয়া, প্রতিঘানুশয় অপনোদন করিয়া, অস্মিতা ও মানানুশয় সমুচ্ছিন্ন করিয়া, অবিদ্যা পরিত্যাগ করিয়া, বিদ্যা উৎপাদন করিয়া, দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষজীবনে) দুঃখের অন্তসাধন করেন। বন্ধুগণ, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন।

১৩. ‘সাধু, সাধু, সারিপুত্র!’ এই বলিয়া ভিক্ষুগণ আয়ুষ্মান সারিপুত্রের বিবৃতিতে আনন্দিত হইয়া, তাহা অনুমোদন করিয়া, তাঁহাকে উপরন্তু প্রশ্ন করিলেন, ‘অপর কোনো পর্যায় আছে কি যদ্বারা আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া তিনি সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন?’ সারিপুত্র কহিলেন, ‘হাঁ, আছে।’

১৪. বন্ধুগণ, যেহেতু আর্যশ্রাবক তৃষ্ণা কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, তৃষ্ণা-সমুদয় কী, তৃষ্ণা-নিরোধ কী, তৃষ্ণা-নিরোধের পথ কী তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, তিনি সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন। তৃষ্ণা কী, তৃষ্ণা-সমুদয় কী, তৃষ্ণা-নিরোধ কী, তৃষ্ণা-নিরোধের পথই বা কী? তৃষ্ণা ছয় প্রকার-রূপতৃষ্ণা, শব্দতৃষ্ণা, গন্ধতৃষ্ণা, রসতৃষ্ণা, স্পর্শতৃষ্ণা, ধর্মতৃষ্ণা। বেদনা হইতে তৃষ্ণা-সমুদয়, বেদনা-নিরোধে তৃষ্ণা-নিরোধ হয়, এবং আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গই তৃষ্ণা-নিরোধের পথ। অষ্টাঙ্গ; যথা : সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি ও সম্যক সমাধি। যেহেতু এইরূপে আর্যশ্রাবক তৃষ্ণা কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, তৃষ্ণা-সমুদয় কী, তৃষ্ণা-নিরোধ কী এবং তৃষ্ণা-নিরোধের পথ কী তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, তিনি সর্বাংশে রাগানুশয় পরিত্যাগ করিয়া, প্রতিঘানুশয় অপনোদন করিয়া, অস্মিতা ও মানানুশয় সমুচ্ছিন্ন করিয়া, অবিদ্যা পরিত্যাগ করিয়া, বিদ্যা উৎপাদন করিয়া, দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষজীবনে) দুঃখের অন্তসাধন করেন। বন্ধুগণ, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন।

১৫. ‘সাধু, সাধু, সারিপুত্র!’ এই বলিয়া ভিক্ষুগণ আয়ুষ্মান সারিপুত্রের বিবৃতিতে আনন্দিত হইয়া, তাহা অনুমোদন করিয়া, তাঁহাকে উপরন্তু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘অপর কোনো পর্যায় আছে কি যদ্বারা আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন?’ সারিপুত্র কহিলেন, ‘হাঁ, আছে।’

১৬. বন্ধুগণ, যেহেতু আর্যশ্রাবক বেদনা কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, বেদনা-সমুদয় কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, বেদনা-নিরোধ কী, বেদনা-নিরোধের পথ কী তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন। বেদনা কী, বেদনা-সমুদয় কী, বেদনা-নিরোধ কী, বেদনা-নিরোধের পথই বা কী? বেদনা ছয় প্রকার-চক্ষুস্পর্শজ বেদনা, শ্রোত্রস্পর্শজ বেদনা, ঘ্রাণস্পর্শজ বেদনা, জিহ্বাস্পর্শজ বেদনা, কায়স্পর্শজ বেদনা, মনঃস্পর্শজ বেদনা। স্পর্শ হইতে বেদনা-সমুদয়, স্পর্শনিরোধে বেদনা-নিরোধ হয়, এবং আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গই তৃষ্ণা-নিরোধের পথ। অষ্টাঙ্গ; যথা : সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি ও সম্যক সমাধি। যেহেতু এইরূপে তিনি বেদনা কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, বেদনা-সমুদয় কী, বেদনা-নিরোধ কী, বেদনা-নিরোধের পথ কী তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, তিনি সর্বাংশে রাগানুশয় পরিত্যাগ করিয়া, প্রতিঘানুশয় অপনোদন করিয়া, অস্মিতা ও মানানুশয় সমুচ্ছিন্ন করিয়া, অবিদ্যা পরিত্যাগ করিয়া, বিদ্যা উৎপাদন করিয়া, দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষজীবনে) দুঃখের অন্তসাধন করেন। বন্ধুগণ, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন।

১৭. ‘সাধু, সাধু, সারিপুত্র!’ এই বলিয়া ভিক্ষুগণ আয়ুষ্মান সারিপুত্রের বিবৃতিতে আনন্দিত হইয়া, তাহা অনুমোদন করিয়া, তাঁহাকে উপরন্তু প্রশ্ন করিলেন, ‘অপর কোনো পর্যায় আছে কি যদ্বারা আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন?’ সারিপুত্র কহিলেন, ‘হাঁ, আছে।’

১৮. বন্ধুগণ, যেহেতু আর্যশ্রাবক স্পর্শ কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, স্পর্শ-সমুদয় কী, স্পর্শ-নিরোধ কী, স্পর্শ-নিরোধের পথ কী তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন। স্পর্শ কী, স্পর্শ-সমুদয় কী, স্পর্শ-নিরোধ কী, স্পর্শ-নিরোধের পথই বা কী? স্পর্শ ছয় প্রকার-চক্ষুস্পর্শ, শ্রোত্রস্পর্শ, ঘ্রাণস্পর্শ, জিহ্বাস্পর্শ, কায়স্পর্শ, মনঃস্পর্শ। ষড়ায়তন হইতে স্পর্শ-সমুদয়, ষড়ায়তন-নিরোধে স্পর্শ-নিরোধ হয়, এবং আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গই স্পর্শ-নিরোধের পথ। অষ্টাঙ্গ; যথা : সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি ও সম্যক সমাধি। যেহেতু এইরূপে আর্যশ্রাবক দুঃখ কী তাহা প্রকৃষ্টরূপে জানেন, দুঃখসমুদয় কী, দুঃখনিরোধ কী, দুঃখনিরোধের পথ কী তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, তিনি সর্বাংশে রাগানুশয় পরিত্যাগ করিয়া, প্রতিঘানুশয় অপনোদন করিয়া, অস্মিতা ও মানানুশয় সমুচ্ছিন্ন করিয়া, অবিদ্যা পরিত্যাগ করিয়া, বিদ্যা উৎপাদন করিয়া, দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষজীবনে) দুঃখের অন্তসাধন করেন। বন্ধুগণ, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন।

১৯. ‘সাধু, সাধু, সারিপুত্র!’ এই বলিয়া ভিক্ষুগণ আয়ুষ্মান সারিপুত্রের বিবৃতিতে আনন্দিত হইয়া, তাহা অনুমোদন করিয়া, তাঁহাকে উপরন্তু প্রশ্ন করিলেন, ‘অপর কোনো পর্যায় আছে কি যদ্বারা আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া তিনি সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন?’ সারিপুত্র কহিলেন, ‘হাঁ, আছে।’

২০. বন্ধুগণ, যেহেতু আর্যশ্রাবক ষড়ায়তন কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, ষড়ায়তন-সমুদয় কী, ষড়ায়তন-নিরোধ কী, ষড়ায়তন-নিরোধের পথ কী তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, ইহাতেই তিনি সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন। ষড়ায়তন কী, ষড়ায়তন-সমুদয় কী, ষড়ায়তন-নিরোধ কী, ষড়ায়তন-নিরোধের পথই বা কী? আয়তন ছয় প্রকার-চক্ষু-আয়তন, শ্রোত্র-আয়তন, ঘ্রাণ-আয়তন, জিহ্বা-আয়তন, কায়-আয়তন, মন-আয়তন। নামরূপ-সমুদয় হইতে ষড়ায়তন-সমুদয়, নামরূপ-নিরোধে ষড়ায়তন-নিরোধ হয়, এবং আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গই ষড়ায়তন-নিরোধের পথ। অষ্টাঙ্গ; যথা : সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি। বন্ধুগণ, যেহেতু এইরূপে আর্যশ্রাবক দুঃখ কী তাহা প্রকৃষ্টরূপে জানেন, দুঃখসমুদয় কী, দুঃখনিরোধ কী, দুঃখনিরোধের পথ কী তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, তিনি সর্বাংশে রাগানুশয় পরিত্যাগ করিয়া, প্রতিঘানুশয় অপনোদন করিয়া, অস্মিতা ও মানানুশয় সমুচ্ছিন্ন করিয়া, অবিদ্যা পরিত্যাগ করিয়া, বিদ্যা উৎপাদন করিয়া, দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষজীবনে) দুঃখের অন্তসাধন করেন। বন্ধুগণ, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন।

২১. ‘সাধু, সাধু, সারিপুত্র!’ এই বলিয়া ভিক্ষুগণ আয়ুষ্মান সারিপুত্রের বিবৃতিতে আনন্দিত হইয়া, তাহা অনুমোদন করিয়া, তাঁহাকে উপরন্তু প্রশ্ন করিলেন, ‘অপর কোনো পর্যায় আছে কি যদ্বারা আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া তিনি সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন?’ সারিপুত্র কহিলেন, ‘হাঁ, আছে।’

২২. বন্ধুগণ, যেহেতু আর্যশ্রাবক নামরূপ কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, নামরূপ-সমুদয় কী, নামরূপ-নিরোধ কী, নামরূপ-নিরোধের পথ কী তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, ইহাতেই তিনি সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন। নামরূপ কী, নামরূপ-সমুদয় কী, নামরূপ-নিরোধ কী, নামরূপ-নিরোধের পথই বা কী? বেদনা, সংজ্ঞা, চেতনা, মনস্কার, স্পর্শ-ইহারা নাম; এবং চারি মহাভূতের উপাদান রূপ। বিজ্ঞান-সমুদয় হইতে নামরূপ-সমুদয়, বিজ্ঞান-নিরোধে নামরূপ-নিরোধ হয়, এবং আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গই নামরূপ-নিরোধের পথ। অষ্টাঙ্গ; যথা : সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি। বন্ধুগণ, যেহেতু, এইরূপে আর্যশ্রাবক দুঃখ কী তাহা প্রকৃষ্টরূপে জানেন, দুঃখসমুদয় কী, দুঃখনিরোধ কী, দুঃখনিরোধের পথ কী তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, তিনি সর্বাংশে রাগানুশয় পরিত্যাগ করিয়া, প্রতিঘানুশয় অপনোদন করিয়া, অস্মিতা ও মানানুশয় সমুচ্ছিন্ন করিয়া, অবিদ্যা পরিত্যাগ করিয়া, বিদ্যা উৎপাদন করিয়া, দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষজীবনে) দুঃখের অন্তসাধন করেন। বন্ধুগণ, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন।

২৩. ‘সাধু, সাধু, সারিপুত্র!’ এই বলিয়া ভিক্ষুগণ আয়ুষ্মান সারিপুত্রের বিবৃতিতে আনন্দিত হইয়া, তাহা অনুমোদন করিয়া, তাঁহাকে উপরন্তু প্রশ্ন করিলেন, ‘অপর কোনো পর্যায় আছে কি যদ্বারা আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া তিনি সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন?’ সারিপুত্র কহিলেন, ‘হাঁ, আছে।’

২৪. বন্ধুগণ, যেহেতু আর্যশ্রাবক বিজ্ঞান কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, বিজ্ঞান-সমুদয় কী, বিজ্ঞান-নিরোধ কী, বিজ্ঞান-নিরোধের পথ কী তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, ইহাতে আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন। বিজ্ঞান কী, বিজ্ঞান-সমুদয় কী, বিজ্ঞান-নিরোধ কী, বিজ্ঞান-নিরোধের পথই বা কী? বিজ্ঞান ছয় প্রকার-চক্ষুবিজ্ঞান, শ্রোত্রবিজ্ঞান, ঘ্রাণবিজ্ঞান, জিহ্বাবিজ্ঞান, কায়বিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞান। সংস্কার-সমুদয় হইতে বিজ্ঞান-সমুদয়, সংস্কার-নিরোধে বিজ্ঞান-নিরোধ হয়, এবং আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গই বিজ্ঞান-নিরোধের পথ। অষ্টাঙ্গ; যথা : সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি ও সম্যক সমাধি। বন্ধুগণ, যেহেতু এইরূপে আর্যশ্রাবক বিজ্ঞান কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, বিজ্ঞান-সমুদয় কী, বিজ্ঞান-নিরোধ কী, বিজ্ঞান-নিরোধের পথ কী, তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, তিনি সর্বাংশে রাগানুশয় পরিত্যাগ করিয়া, প্রতিঘানুশয় অপনোদন করিয়া, অস্মিতা ও মানানুশয় সমুচ্ছিন্ন করিয়া, অবিদ্যা পরিত্যাগ করিয়া, বিদ্যা উৎপাদন করিয়া, দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষজীবনে) দুঃখের অন্তসাধন করেন। বন্ধুগণ, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন।

২৫. ‘সাধু, সাধু, সারিপুত্র!’ এই বলিয়া ভিক্ষুগণ আয়ুষ্মান সারিপুত্রের বিবৃতিতে আনন্দিত হইয়া, তাহা অনুমোদন করিয়া, তাঁহাকে উপরন্তু প্রশ্ন করিলেন, ‘অপর কোনো পর্যায় আছে কি যদ্বারা আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া তিনি সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন?’ সারিপুত্র কহিলেন, ‘হাঁ, আছে।’

২৬. বন্ধুগণ, যেহেতু আর্যশ্রাবক সংস্কার কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, সংস্কার-সমুদয় কী, সংস্কার-নিরোধ কী, সংস্কার-নিরোধের পথ কী তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন। সংস্কার কী, সংস্কার-সমুদয় কী, সংস্কার-নিরোধ কী, সংস্কার-নিরোধের পথই বা কী? সংস্কার তিন প্রকার-কায়সংস্কার, বাক্‌সংস্কার ও চিত্তসংস্কার। অবিদ্যা-সমুদয় হইতে সংস্কার-সমুদয়, অবিদ্যা-নিরোধে সংস্কার-নিরোধ হয়, এবং আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গই সংস্কার-নিরোধের পথ। অষ্টাঙ্গ; যথা : সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি ও সম্যক সমাধি। বন্ধুগণ, যেহেতু এইরূপে আর্যশ্রাবক সংস্কার কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, সংস্কার-সমুদয় কী, সংস্কার-নিরোধ কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, সংস্কার-নিরোধের পথ কী তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, তিনি সর্বাংশে রাগানুশয় পরিত্যাগ করিয়া, প্রতিঘানুশয় অপনোদন করিয়া, অস্মিতা ও মানানুশয় সমুচ্ছিন্ন করিয়া, অবিদ্যা পরিত্যাগ করিয়া, বিদ্যা উৎপাদন করিয়া, দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষজীবনে) দুঃখের অন্তসাধন করেন। বন্ধুগণ, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন।

২৭. ‘সাধু, সাধু, সারিপুত্র!’ এই বলিয়া ভিক্ষুগণ আয়ুষ্মান সারিপুত্রের বিবৃতিতে আনন্দিত হইয়া, তাহা অনুমোদন করিয়া, তাঁহাকে উপরন্তু প্রশ্ন করিলেন, ‘অপর কোনো পর্যায় আছে কি যদ্বারা আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া তিনি সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন?’ সারিপুত্র কহিলেন, ‘হাঁ, আছে।’

২৮. বন্ধুগণ, যেহেতু আর্যশ্রাবক অবিদ্যা কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, অবিদ্যা-সমুদয় কী, অবিদ্যা-নিরোধ কী, অবিদ্যা-নিরোধের পথ কী তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন। অবিদ্যা কী, অবিদ্যা-সমুদয় কী, অবিদ্যা-নিরোধ কী, অবিদ্যা-নিরোধের পথই বা কী? দুঃখে অজ্ঞান, দুঃখ-সমুদয়ে অজ্ঞান, দুঃখ-নিরোধে অজ্ঞান, দুঃখনিরোধের পথে অজ্ঞান, ইহাই অবিদ্যা বলিয়া কথিত হয়। আসব হইতে অবিদ্যা-সমুদয়, আসব-নিরোধে অবিদ্যা-নিরোধ, এবং আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গই অবিদ্যা-নিরোধের পথ। অষ্টাঙ্গ, যথা: সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি। বন্ধুগণ, যেহেতু আর্যশ্রাবক এইরূপে অবিদ্যা কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, অবিদ্যা-সমুদয় কী, অবিদ্যা-নিরোধ কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, অবিদ্যা-নিরোধের পথ কী তাহাও জানেন, তিনি সর্বাংশে রাগানুশয় পরিত্যাগ করিয়া, প্রতিঘানুশয় অপনোদন করিয়া, অবিদ্যা পরিত্যাগ করিয়া, বিদ্যা উৎপাদন করিয়া, দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষজীবনে) দুঃখের অন্তসাধন করেন, বন্ধুগণ, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন।

২৯. ‘সাধু, সাধু, সারিপুত্র!’ এই বলিয়া ভিক্ষুগণ আয়ুষ্মান সারিপুত্রের বিবৃতিতে আনন্দিত হইয়া, তাহা অনুমোদন করিয়া, তাঁহাকে উপরন্তু প্রশ্ন করিলেন, ‘অপর কোনো পর্যায় আছে কি যদ্বারা আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া তিনি সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন?’ সারিপুত্র কহিলেন, ‘হাঁ, আছে।’

৩০. বন্ধুগণ, যেহেতু আর্যশ্রাবক আসব কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, আসব-সমুদয় কী, আসব-নিরোধ কী এবং আসব-নিরোধের পথ কী তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন। আসব কী? ত্রিবিধ আসব : কামাসব, ভবাসব, অবিদ্যাসব। অবিদ্যা-সমুদয় হইতে আসব-সমুদয়, অবিদ্যা-নিরোধে আসব-নিরোধ, এবং আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গই আসব-নিরোধের পথ। অষ্টাঙ্গ; যথা : সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি। বন্ধুগণ, যেহেতু এইরূপে আর্যশ্রাবক আসব কী তাহা প্রকৃষ্টরূপে জানেন, আসব-সমুদয় কী, আসব-নিরোধ কী প্রকৃষ্টরূপে জানেন, আসব-নিরোধের পথ কী তাহাও প্রকৃষ্টরূপে জানেন, তিনি সর্বাংশে রাগানুশয় পরিত্যাগ করিয়া, প্রতিঘানুশয় অপনোদন করিয়া অস্মিতা ও মানানুশয় সমুচ্ছিন্ন করিয়া, অবিদ্যা পরিত্যাগ করিয়া, বিদ্যা উৎপাদন করিয়া, দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষজীবনে) দুঃখের অন্তসাধন করেন। বন্ধুগণ, ইহাতেই আর্যশ্রাবক সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন হন, তাঁহার দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অচলচিত্তপ্রসাদসম্পন্ন হইয়া সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন।

আয়ুষ্মান সারিপুত্র ইহা বিবৃত করিলেন। ভিক্ষুগণ তাহা প্রসন্নমনে শ্রবণ করিয়া আনন্দ প্রকাশ করিলেন।

সম্যক দৃষ্টি-সূত্র সমাপ্ত।

The Middle Discourses

|_A. The First Fifty

|__I. The Chapter on the Root of All Things

MN9. সম্যক দৃষ্টি-সূত্র

Translations [37]

English

繁體字

日本語

한국어

Français

Deutsch

Italiano

Español

Català

Português

Русский

Norsk

Magyar

Srpski

Čeština

Polski

Slovenščina

Türkçe

Lietuvių Kalba

हिंदी

ગુજરાતી

বাংলা

Việt Ngữ

Bahasa Indonesia

සිංහල

ပြန်သွားရန်

ภาษาไทย

पाळिभासा (Pāli)

Reference